।। পেনশনার ।।

অরিন্দম নাথ

একমাস হলো পেনশনে এসেছি । প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হতো । রবিবারের পর সোমবার এসেছে ভাবতাম । এখন এমনটা হয় না । বরং খুব উপভোগ করছি । বাড়িতে থাকলে অন্য এক পেনশনারের সঙ্গ পাই । একটি মিনিরত্নে ছিল । তবে কিছু স্পেশালিটি আছে । এখন সে দাঁড়িয়ে আছে সামনের চৌমাথায় । আমরা থাকি নন্দননগরে । আমার রুমটি দোতলায় । পূব দিকের জানালার সামনে বসে আছি । কাঁচের স্লাইডিং জানালা ৷ যেকোনো একটি দিকের পাল্লা পুরোপুরি খোলা যায় ৷ এখন ডান পাশের অংশ খোলা ৷ চেয়ার আর জানালার মধ্যে একটি কাঠের টেবিল ৷ ফৌজি ভাষায় সিধা সামনে । পঁচাশ গজ দূর মে কাঁঠাল কা একেলা প্যার ৷ ইসিকে বাড়তি হুঁয়ে দূরতক মেরা আমরূখ্ ৷ আধা-বাঁয়ে দুশো গজকে দূরি পর একেলা তিন-মঞ্জিলা বিল্ডিং ৷ ইসিকে ডাইনে কিনারা লেকে বাড়তি হুঁয়ে দূরতক মেরা বাঁয়ে-হাত ৷ আধা-ডাইনে দুশো গজকে দূরি পর একেলা নাড়িয়ল কা প্যার ৷ ইসিকে বাড়তি হুঁয়ে দূরতক মেরা ডাইনে-হাত ৷ বাঁয়ে-হাতসে লেকড় ডাইনে-হাত তক্ ইলাকা মেরা নজরমে আতা হ্যাঁ ৷ আমার বন্ধুর পজিশন আমরুখ্ বরাবর । রাস্তার অপরপাশে । সে চৌমাথার এক পরিত্যাক্ত টেলিফোন পোল । বি এস এন এল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ।

সম্প্রতি সে আমাকে একটি গল্প শুনিয়েছে । এ'বছর ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসের ঘটনা । ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের শহরতলী । একটি ছোট্ট জনপদ হোস্টোমেল। এক ডাক্তার দম্পতির বাস । আল্লা ভলোশিনোভিচ ও ভাদিম স্মিরনভ । ফেব্রুয়ারিতে রুশ সেনারা কিয়েভে প্রবেশ করে । তাঁদের মেয়ে বাইরে থাকতো । বাবা-মাকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে । তাঁরা যান না । একদিন সত্যি সত্যি রুশ সেনারা হোস্টোমেলে ঢুকে । সেদিন মার্চের এগারো তারিখ । ঘরের জানালায় বাইনোকুলার হাতে ডাক্তারবাবু শঙ্কিত চিত্তে রুশ সেনাদের অত্যাচার দেখেন । পুরো পাড়া কাঁপিয়ে বেশ কয়েকটি রাশিয়ান ট্যাংক এগিয়ে আসছিল তাঁদের বাড়ির দিকে । হঠাৎ ট্যাংকের অগ্রগতি থেমে যায় । রুশ সেনারা মনে করে, এটি একটি কানাগলি । কারণ, সেখানে চৌমাথার মোড়ে দাঁড়িয়েছিল একটি পরিত্যাক্ত টেলিফোন খাম্বা । পরদিনই ডাক্তার দম্পতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান । রুশ সেনারা আবার আসে । মার্চ মাসের শেষ অবধি তাদের ধ্বংসলীলা চালায় । বাড়িতে ফিরে দেখেন দরজা জানালা ভেঙ্গে গেছে । সর্বত্র গোলাগুলির চিহ্ন । তাঁরা টেলিফোন পোস্টটিকে মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানান ।

অথচ টেলিফোন পোলটিকে সরানোর জন্য তাঁরা সবসময় সরব থাকতেন । খুঁটির কারণে ওই মোড় অবধি গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হত । অনেকেই এর আগে ডাক্তার বাবুদের পাড়া অবধি যেত না । রোগীরা কানাগলি ভেবে এড়িয়ে চলতো । যেমন এখানে নেশাগ্রস্থ চালকেরা পেনশনার খাম্বাটিকে এড়িয়ে চলে । পাস দেয় । ভাগ্যিস এখানে নদী বা সেতু নেই । অন্যথায় সেতুকে পাস দিতে গিয়ে জলে চুবানি খেত ।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.