৩ ডিসেম্বর আমার কাছে কেন স্মরণীয় !
বিকচ চৌধুরী
হঠাৎ মনে পড়ল আজ তেসরা ডিসেম্বর ! একান্ন বছর আগে ১৯৭১ সালের ঠিক এ দিনে গোটা আগরতলা শহর জুড়ে চলছিল নাইট লোড শেডিং! তারই মধ্যে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে আমরা গাড়ির হেড লাইট কাগজে ঢেকে দিয়ে বন্ধুর বড় ভাই শঙ্কর রায়চৌধুরী-র বিয়েতে বরযাত্রী যাই প্রায় ঘন কালো অন্ধকারে! শিবনগর থেকে
ইন্দ্রনগর। আমি তখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক। মধ্যরাতে রেডিওতে শোনা গেলো দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
এ ঘোষণা যখন হয় তখন মধ্য রাত্রি পেরিয়ে। বিয়ে বাড়িতেই খবর এলো আমাকে সেই মুহূর্তেই ছুঁটে যেতে হবে।
ধীরেন বাবু (পত্রিকা অফিসের কর্মী) একজন স্কুটার আরোহীকে সঙ্গে নিয়ে হাজির। সেই রাত্রেই যুদ্ধাহত কিছু মুক্তি যোদ্ধার জন্যে কিছু জীবনদায়ী ওষুধ ওপারে পৌঁছে দেবার জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-র সংসদ সাচ্চু ভাই এস ও এস পাঠিয়েছেন। আমাদের অনতিবিলম্বে বিশালগড়ের কোনাবন সীমান্তে পৌঁছুতে হবে। সেই রাতেই প্রয়াত সম্পাদক ভূপেন দত্ত ভৌমিকের নির্দেশে কুঞ্জবন এলাকার শ্রদ্ধেয় বন্ধু দাম বাবু-র সৌজন্যে একটি উইলিস জিপ জোগাড় হয় এবং রাত একটা নাগাদ কোনবন সীমান্তে ভূপেনদা-র নির্দেশে আমি এবং দৈনিক সংবাদের উল্টোদিকের একটি ক্লাবের দুইজন তরুণ সদস্য (স্মৃতি যদি বিপথে পরিচালিত না করে, তবে তাঁদের নাম সম্ভবত সুরেশ ঘোষ ও জগন্নাথ ঘোষ) সেই জীবনদায়ী ওষুধ যথাস্থানে পৌঁছে দিই। এখানে উল্লেখ্য যে সরকারি ভাবে ৩ ডিসেম্বর যুদ্ধ ঘোষনা হলেও, মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছিলো ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ-এর কাল রাত্রির পর থেকেই। আর আগরতলা সেই ২৬ মার্চ থেকেই হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সূতিকাগার !