মধুমেহ/ ডায়াবেটিস : আজকের যুগের আলোচিত ব্যাধি

ড.হৈমন্তী ভট্টাচার্জী

May 23, 2025

মধুমেহ, যা ডায়াবেটিস নামেই বেশি পরিচিত, এটি একটি গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদী রোগ। এটি এমন একটি অবস্থা যখন আপনার রক্তে গ্লুকোজ (শর্করা) এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হলো:

* শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা: ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন যা রক্তে থাকা গ্লুকোজকে শরীরের কোষগুলিতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, যাতে কোষগুলি শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। যদি অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না করে, তাহলে গ্লুকোজ কোষে ঢুকতে পারে না এবং রক্তে জমা হতে থাকে।

* শরীর উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে না পারা (ইনসুলিন প্রতিরোধ): এক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না, ফলে গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে না এবং রক্তে এর মাত্রা বেড়ে যায়।

রক্তে দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ মাত্রার গ্লুকোজ থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, যেমন - কিডনি, চোখ, স্নায়ু, হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী।

মধুমেহের প্রধান প্রকারভেদ

টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ক্ষেত্রে শরীর নিজেই ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে (বিটা কোষ) নষ্ট করে দেয়, ফলে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এটি সাধারণত অল্প বয়সে বা কৈশোরে দেখা যায়।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার। এই ক্ষেত্রে শরীর হয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না, অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্থূলতা এবং জিনগত কারণ এর জন্য দায়ী।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভবতী অবস্থায় ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এটি সাধারণত শিশুর জন্মের পর ঠিক হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

মধুমেহের কিছু সাধারণ লক্ষণ:

* অতিরিক্ত তৃষ্ণা

* ঘন ঘন প্রস্রাব

* অতিরিক্ত ক্ষুধা

* হঠাৎ ওজন হ্রাস

* ক্লান্তি

* ঝাপসা দৃষ্টি

* যেকোনো ধরনের ক্ষত বা কাটা ধীরে ধীরে সারে।

হাত ও পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি

মধুমেহ সম্পূর্ণভাবে সারানো সম্ভব না হলেও সঠিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এর জটিলতাগুলো কমানো যায়।

ইদানিংকালে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে ভারতে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা জীবনযাপন, জিনগত প্রবণতা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:

জীবনযাত্রার পরিবর্তন

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন: এটি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত ওজন ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা (Insulin resistance) বাড়ায়, যার ফলে শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ স্থূলতার কারণ।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা (Sedentary Lifestyle) আধুনিক জীবনযাত্রায় কায়িক শ্রমের অভাব বেড়েছে। মানুষ এখন হাঁটাচলা বা শারীরিক ব্যায়ামের বদলে যান্ত্রিক পরিবহন ও বসে থাকার কাজ বেশি করে। শারীরিক কার্যকলাপ কম হলে ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা কমে যায়।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, উচ্চ চিনিযুক্ত পানীয় এবং উচ্চ ক্যালরি ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়েছে। এই ধরনের খাবার অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী।

মানসিক চাপ ও ঘুম কম হওয়া: দীর্ঘক্ষণ কাজ করা, অনিয়মিত ঘুমের চক্র এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের হরমোন ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

শহরায়ন: শহরগুলিতে জীবনযাত্রার ধরন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, যা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

জিনগত কারণ

পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কারো ডায়াবেটিস থাকে (বিশেষ করে বাবা-মা বা ভাই-বোন), তাহলে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। জিনগত প্রবণতা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।

জাতিগত প্রবণতা: কিছু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যদিও এর সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ভারতীয়দের মধ্যে ইনসুলিন প্রতিরোধের প্রবণতা বেশি বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

অন্যান্য কারণ

বয়স বৃদ্ধি: সাধারণত ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

কিছু রোগ: অগ্ন্যাশয়ের রোগ, পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম (PCOS) এবং গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) এর মতো কিছু রোগ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরিবেশ দূষণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পরিবেশ দূষণ এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

রোগ নির্ণয়ের উন্নতি: বর্তমানে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের পদ্ধতি উন্নত হওয়ায় এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় অনেক সময় রোগীরা দ্রুত রোগটি শনাক্ত করতে পারেন, যা মোট আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে হতে পারে।

এই কারণগুলোর সম্মিলিত প্রভাবের কারণে ইদানিংকালে মধুমেহ রোগের প্রকোপ অনেক বেড়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি।

মধুমেহ (ডায়াবেটিস) একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদিও সম্পূর্ণ নিরাময় সবসময় সম্ভব নয়, তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

এখানে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

* শর্করা নিয়ন্ত্রণ: সাদা চাল, ময়দার রুটি, মিষ্টি, চিনিযুক্ত পানীয় (যেমন সফট ড্রিঙ্কস), কেক, পেস্ট্রি, ফাস্ট ফুড এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এই ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়।

* ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল (কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল যেমন - পেয়ারা, শসা, আনারস, জাম, জামরুল, তরমুজ, নাসপাতি), ডাল, এবং গোটা শস্য (যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, বাজরা, বার্লি) খান। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধ করে।

* প্রোটিন: ডিম সেদ্ধ, ডাল, মাছ (বিশেষ করে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ যেমন সারডিন, স্যামন, ম্যাকেরেল) ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।

* স্বাস্থ্যকর তেল: স্বাস্থ্যকর তেল, যেমন অলিভ অয়েল, এবং বাদাম খেতে পারেন।

* ছোট ছোট ভাগে খাওয়া: একবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খান।

* পর্যাপ্ত জল পান: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি মেটাবলিজম ঠিক রাখতে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম:

* হাঁটাচলা: প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন।

* অন্যান্য ব্যায়াম: সাইক্লিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম, হালকা অ্যারোবিক্স বা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

* খাওয়ার পর হাঁটা: খাবারের পরে ৫০০ ধাপ হাঁটা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৩. কিছু বিশেষ ঘরোয়া উপাদান:

* মেথি: এক টেবিল চামচ মেথি সারারাত অল্প জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে এই জল পান করুন এবং মেথিগুলো খেয়ে নিন। মেথি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে খুব উপকারী।

* আমলকী: আমলকী ক্রোমিয়াম সমৃদ্ধ যা ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এক চা চামচ আমলকীর রস বা গুঁড়ো এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে হলুদের সাথে মিশিয়ে।

* দারুচিনি: এক গ্লাস গরম জলে আধা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।

* করলা: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা খুব উপকারী। এতে চ্যারিটিন এবং মোমোরডিসিন নামক উপাদান থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খালি পেটে করলার রস অথবা ভাতের সঙ্গে করলা সেদ্ধ খেতে পারেন।

* জাম: জামের বীজের গুঁড়ো জলে গুলে খালি পেটে খেলে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

* সজনে পাতা: সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ইষদুষ্ণ জলের সঙ্গে এক চামচ এই পাউডার খেলে রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

* পেঁয়াজ: পেঁয়াজ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

* আম পাতা: আম পাতায় থাকা এনজাইম ম্যাঙ্গিফেরিন রক্তে শর্করা বৃদ্ধি রোধ করে। কিছু আম পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল খালি পেটে পান করতে পারেন।

* তুলসী পাতা: তুলসী পাতার রস রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে অনেক সাহায্য করে। রোজ জলের মধ্যে তুলসী ফুটিয়ে সেই জল খেতে পারেন।

* আদা: আদা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আদা দিয়ে চা পান করতে পারেন।

৪. জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা জরুরি।

স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ধ্যান, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য রিলাক্সেশন টেকনিকের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো এবং দিনের বেলা ঘুমানো বা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা এড়িয়ে চলা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং রোগকে জটিল করে তোলে।

নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা: চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে আপনার পরিকল্পনা ঠিক করুন।

এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, তবে এগুলি কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ বা ওষুধের বিকল্প নয়। ডায়াবেটিস একটি গুরুতর রোগ, তাই অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলন।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.