আমরা গর্বিত ভারতীয়
শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ
বহু জাতি আর ভাষার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের দেশ। প্রত্যেকটি জাতিগোষ্ঠী তাদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের মাধ্যমে এই সুপ্রাচীন দেশকে উজ্জ্বলতর করে তুলেছে। বিবিধ রঙের সমন্বয়ে গড়ে উঠা এই বৈচিত্র্যই আমাদের দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই বৈচিত্র্যের মধ্যে কিছু রঙ মিশিয়েছি আমরা ত্রিপুরিরাও। আবহমান কাল হতে আমরা এই মহান দেশের সন্তান। আমাদের অস্তিত্বের কথা সর্ব প্রথম উল্লিখিত হয়েছিল চাইনিজ রাজবংশের ইতিহাস "মিং শিলু" গ্রন্থে। সেখানে আমরা উল্লিখিত হয়েছিলাম ‘’দি-উ –লা’’ নামে। পরবর্তীকালে বেদবেদান্ত এবং "মহাভারত’’এ আমাদের রাজত্বকে কিরাতদেশ নামে অভিহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে ত্রিপুরিরা চন্দ্রবংশ জাত রাজা দ্রুহ্যুর বংশধর।
৬৫ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের আরও আগেই ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে উঠেছিল আমাদের সাম্রাজ্য। মধ্যযুগে মহারাজা বিজয়মাণিক্যের আমলে আমাদের সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছিল বিশালাকার। মোগল বাদশাহ আকবর’ও তখন সংপ্রশসার দৃষ্টিতে এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাঁর সভাসদ আবুল ফজল ‘’আইন –ই - আকবরী’’তে ত্রিপুরার সামরিক শক্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন। প্রশংসা করেছিলেন ত্রিপুরিদের অমিত পরাক্রমশালী বলে ।
১৮৪জন রাজা ত্রিপুরার শাসনকার্য পরিচালনা করে গিয়েছেন। আমরা কখনও কোনও শক্তির অধীনস্থ ছিলাম না। কয়েক হাজার বছর ধরে সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তা নিয়ে যে ক’টি প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী ভারতীয় উপমহাদেশে বেঁচে থাকতে পেরেছে - আমরা তাদের মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশেরা আমাদের সম্মান করতো। তাই বজায় ছিল আমাদের স্বাধীন সত্তা এবং সার্বভৌমত্ব। আমরা ত্রিপুরিরা আজও তাই গর্ব করে বলি, ‘’ আমরা এমন এক প্রাচীন জনগোষ্ঠী - যারা কখনও বিদেশি শক্তির কাছে স্বাধীনতা হারায় নি। আমরা ‘’পরাধীনতা’’র কলঙ্ক থেকে মুক্ত।‘’
ব্রিটিশ আমলে আমাদের রাজত্বকে বলা হতো ‘’প্রিন্সলি স্টেট’’ ! বাংলা ভাষায় অবশ্য ব্রিটিশ শাসিত ভারতে আমাদের ‘’করদ রাজ্য’’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রিপুরি জনগোষ্ঠীর নামকরণ করা হয়েছে ‘’উপজাতি’’ হিসেবে। যাইহোক, ব্রিটিশদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল তিক্ত মধুর। আমাদের শাসনকার্যে ব্রিটিশেরা সরাসরি কখনই হস্তক্ষেপ করেনি। তবে বিভিন্ন রকম চাপ ছিল অবশ্যই। আগরতলায় যে স্বাস্থ্য সদন গড়ে উঠেছিল তার নাম দেওয়া হয়েছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল হস্পিট্যাল। এ ছিল সেই প্রভাবেরই ফল।
তবে ব্রিটিশেরাও যে আমাদের সত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল তার নথীবদ্ধ প্রমাণ রয়েছে বহু। আমাদের রাজা প্রয়াত হলে ব্রিটিশেরা ১৩বার গান স্যালুটের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাতো ! ওই সময়ের প্রেক্ষিতে এ রকম গান স্যালুট ছিল আমাদের স্বাধীন সত্তা আর সার্বভৌমত্বের প্রতি এক বিশাল সম্মান।