হাইকোর্টের রায় -এর কারনেই বিবাহিত মেয়েরাও ডাই ইন হার্নেস স্কিমের সুবিধা পাবেন

পুরুষোত্তম রায় বর্মন

সম্প্রতি রাজ্যের একমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানিয়েছেন, রাজ্যের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিবাহিত কন্যাদের ডাই-ইন-হারনেস স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ডাই-ইন-হারনেস এ অন্তর্ভুক্ত হলেন বিবাহিত কন্যারা।

প্রকৃত সত্য আড়াল করে কৃতিত্ব নেওয়ার অপচেষ্টার অতি সাম্প্রতিক নজির ডাই-ইন-হারনেস স্কিম নিয়ে মন্ত্রিসভার তথাকথিত সিদ্ধান্ত ও মন্ত্রীর ঘোষণা। উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে বিবাহিত কন্যারা ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে। উল্লেখ্য ১৯.০৫.২০১৭ সনে রাজ্য সরকার ডাই-ইন-হারনেস স্কিম সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিবাহিত কন্যারা কোন অবস্থাতেই ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের আওতায় আসবে না। বিজ্ঞপ্তির সংশ্লিষ্ট অংশটি হুবহু এইরকম

"Married daughter(s) under any circumstances shall not come under the purview of the Die-in-harness Scheme".

বিবাহিত কন্যাদের ডাই-ইন-হারনেস স্কিমে চাকরি পাওয়ার অনুপযুক্ত বলা সংবিধানের সমতার ধারণার পরিপন্থী এবং লিঙ্গ সমতা বিরোধী। নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক। ২০১৯ সনে ডাই-ইন-হারনেস স্কিম থেকে বিবাহিত কন্যাদের বাদ দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন জনৈক দেবশ্রী চক্রবর্তী। দেবশ্রী চক্রবর্তীর মা অনিতা চক্রবর্তী আরক্ষা দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মারা যান ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য ছিলেন মৃত কর্মচারী। দুই কন্যা ও স্বামী মৃত কর্মচারীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। দেবশ্রী বিবাহিত কন্যা। বেকার। মার মৃত্যুর পর ডাই-ইন-হারনেস স্কিমে চাকুরীর জন্য আবেদন করেন। বিবাহিত কন্যা স্কিমের আওতায় আসেন না এই বলে আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এরপরে রিট মামলা । আবেদনকারীর পক্ষে আমরাই লড়েছিলাম। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ কুরেশী ১৮.১২.২০১৯ এ দেবশ্রীর দায়ের করা রিট মামলা মঞ্জুর করেন। রিট মামলার রায়ে উচ্চ আদালত বিভিন্ন হাইকোর্টের রায়ের নজির উল্লেখ করে বলেন, যে ডাই-ইন-হারনেস স্কিম থেকে বিবাহিত কন্যাদের বাদ দেওয়া অসাংবিধানিক এবং এই কারণে ১৯.০৫.২০১৭ ইং জারি করা ডাই-ইন-হারনেস স্কিম সংক্রান্ত বিবৃতির যে অংশে বলা হয়েছে বিবাহিত কন্যারা কোন অবস্থাতেই এই স্কিমের আওতায় আসবে না সেই অংশটুকু খারিজ করে দেন। শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন আবেদনকারীর মায়ের কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর কারণে আবেদনকারীর চাকরির আবেদন বিবেচনা করে নিষ্পত্তি করার জন্য।

অর্থাৎ উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে ১৮.১২.২০১৯ থেকেই বিবাহিত কন্যারা ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত আরো কয়েকটি মামলায় একই রায় দেন।

রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতের একক বিচারপতি রায় মেনে নিতে পারেনি। যারা মহিলা সশক্তি করনের নামে বাজার গরম করছেন তারা উচ্চ আদালতের একক বিচারপতির রায়কে মেনে নিতে পারেননি। তারা হজম করতে পারেননি যে, বিবাহিত কন্যাদের ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের আওতায় চাকরি দিতে হবে। তাই রাজ্য সরকার বিচারপতি কুরেশীর দেওয়া রিট মামলার রায়গুলোকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সনে চারটি রিট আপিল দাখিল করেন। রিট আপিলের নাম্বারগুলো হল ডব্লিউ এ ৮০/২০২০, রাজ্য সরকার ও অন্যরা বনাম দেবশ্রী চক্রবর্তী , ডব্লিউ এ ১৪৭/ ২০২০, রাজ্য সরকার ও অন্যরা বনাম পূজা দত্ত, রিট আপিল নাম্বার ডব্লিউ এ ১২৪/২০২০, রাজ্য সরকার ও অন্যরা বনাম হামসাথি রিয়াং, ডব্লিউ এ ৪৫৩/২০২০, রাজ্য সরকার ও অন্যরা বনাম সংযুক্তা দে, রিট আপিল নাম্বার ডব্লিউ এ ৪৬১/২০২০, রাজ্য সরকার ও অন্যরা বনাম গোপা দেবনাথ ।

রিট আপিল গুলোর শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো সাওয়াল করা হয় ডাই-ইন-হারনেস স্কিম থেকে বিবাহিত কন্যাদের বাদ দেওয়াকে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বলে। রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ নারী বিদ্বেষী ও সমতা বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপিত করে রিট আপীলগুলোর শুনানিতে।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মোহান্তি ও বিচারপতি এস জি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সনে প্রদত্ত রায়ে চারটি রিট আপিল খারিজ করেন এবং একক বিচারপতির রায়কে বহাল রাখেন। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে সুস্পষ্ট পর্যবেক্ষণে বলেছেন , "Therefore a Die-in-harness policy in as much as it operates as a disqualification in the case of a married women, as against a married man, must be held to be discriminatory and such policy, tested in the touchstone of Article 14 to 16 of the Constitution cannot be held to be valid. As a result we find no merit in the appeals. Resultantly the Appeals, stand dismissed."

উচ্চ আদালতের রায় মেনে ইতিমধ্যে পূজা দত্ত বিবাহিত কন্যা হওয়া সত্ত্বেও ডাই-ইন-হারনেস স্কিমে চাকরি পেয়ে গেছেন। অন্য রিট আবেদনকারীদেরও চাকরি দিতে সরকার বাধ্য।

যেহেতু ১৯.০৫.২০১৭ এর বিজ্ঞপ্তির যে অংশ দ্বারা বিবাহিত কন্যা কন্যাদের ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল সেই অংশ উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে গেছে। তাই বিবাহিত কন্যারাও ডাই-ইন-হারনেস স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। তাই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত / মন্ত্রীর ঘোষণা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা এবং প্রকৃত সত্য আড়াল করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা। এখানে উল্লেখ্য বর্তমান সরকার ডাই-ইন-হারনেস স্কিমের পরিধি অনেক কাটছাঁট করেছে। এই স্কিমে চাকরি পাওয়ার সুযোগ অনেক সংকুচিত করা হয়েছে। এখন ৫০ বছরের পূর্বে কর্মরত অবস্থায় মারা যেতে হবে। না হলে চাকরি নেই।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.