আমি আজ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত এবং ক্রুদ্ধ

শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ

আমি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত এবং ক্রুদ্ধ। আমার নবতিপর বাবা সলিল দেববর্মণ আজ আগরতলায় সকালের দিকে তাঁর মত দানের জন্য ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। বাবার ভোট কেন্দ্র ছিল আম্বেদকার বয়েজ হোস্টেল। বাবাকে সেই ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য দশ বারোজন অল্প বয়স্ক ছেলের দল ঘিরে দাঁড়ায়। প্রথমে ওরা বাবাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারপর শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে। বাবার বুকে পেস মেকার বসানো হয়েছে। ছেলেগুলি ধাক্কাধাক্কি শুরু করলেও বাবা তবু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন বাবার বুকে ওরা ধাক্কা দেয়। বাবা মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে কোনওভাবে টাল সামলে নেয়। তারপর আর একজন বাবার বুক পকেটে হাত ঢুকিয়ে কিছু উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাবা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সেই ছেলেটি বাবার দু হাত খামচে দেয়। তাতে বাবার দু হাতে রক্ত মরে জমাট বেঁধে যায়। জনা কয়েক পুলিশ শুধু এসব ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল ! বাবা তবু অশ্লীল গালগালাজ এবং শারীরিকভাবে নিগৃহ সইয়েও ভোট দিয়েই বেরিয়ে এসেছিল। আমার বক্তব্য হল বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শ যাইহোক না কেন, তাঁকে কেন ভোটদানে বিরত রাখার অপচেষ্টা করা হয়? কেন তাকে অশ্লীল গালিগালাজ সহ দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়? এই ছেলেগুলি কারা? কোন আদর্শ পরিবারে এদের জন্ম? কী শিক্ষাদীক্ষায় এরা বেড়ে উঠেছে? কী ভাবে এরা একজন নব্বুই বছর বয়সী ব্যক্তির ওপর এমন জঘন্য আক্রমণ চালায়? এরা জানে সলিল দেববর্মণের পরিচয়? এরা জানে ত্রিপুরার ষাট, সত্তর এবং আশির দশকের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সলিল দেববর্মণের অবদান কতখানি? এরা জানে ত্রিপুরার নাট্য আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে গেলে সলিল দেববর্মণের নামোল্লেখ ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ? এরা জানে কিম্বদন্তী অভিনেতা এবং সত্যজিৎ রায়ের মানসপুত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ত্রিপুরার এই ভূমিপুত্র সলিল দেববর্মণের ব ড় প্রশংসক ছিল? এরা জানে ১৯৯'এ রবীন্দ্র ভবনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সলিল দেববর্মণকে সম্বর্ধিত করেছিলেন? ... আজ গুন্ডামী করে কাকে এরা খিস্তি খেঊড় করেছে? ত্রিপুরার সংস্কৃতির প্রতি ত্রিপুরার ঐতিহ্যের প্রতি এদের বিন্দুমাত্র জ্ঞানগম্যি নেই? বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিএম বলে কথা নয়; একজন সিনিয়র সিটিজেনের ওপর আক্রমণ করতে কোন পরিবার শেখায়? অগ্রজদের প্রতি কেন শ্রদ্ধা থাকবে না? রাজ্যটির প্রতি ভালোবাসা নেই? এমন লুচ্চামির মাধ্যমে বহিঃরাজ্যে কী মেসেজ পাঠাচ্ছে এরা? এই গুন্ডারা কী যে কোনও পলিটিক্যাল পার্টির কলঙ্ক নয়? কলঙ্ককে বাহবা দিলে সেই কলঙ্কই কী একদিন সেই ঘর বিধ্বস্ত করবে না? ... রাজ্যবাসীর আমি এই প্রশ্নগুলির উত্তর চাই। উত্তর হয়তো মিলবে না। সাড়া হয়তো নাও পেতে পারি। এমনিতেই লক্ষ্য করছি সামাজিক গণ মাধ্যমেও গত কয়েক বছর ধরে আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে জঘন্য এবং কুরুচিকর ব্যক্তি আক্রমণ চালানো হচ্ছে এবং দেখেছি প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক - এইসব কুরুচিকর আক্রমণে অনেকে বহু মজাও লুটছেন। এতে কিন্তু ত্রিপুরার ভালো হচ্ছে না মোটেই । রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরার ভাবমূর্তি কিন্তু নষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমিও আখেরে জন্মভূমি ত্রিপুরা ছাড়তে বাধ্য হবো। নিজের প্রফেশন এবং সাহিত্য সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশ বিদেশে ত্রিপুরার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কখনও চেষ্টার কসুর করি নি। এই বিষয়ে ত্রিপুরার পলিটিক্যাল লিডারদের চাইতে আমার প্রচেষ্টার পরিমাণ বেশি। আজ এর খতিয়ান দিয়ে কী লাভ ! কিন্তু এমন গুন্ডামী আর আক্রমণ চলতে থাকলে বিকল্প সংস্থানের কথা আমায় ভাবতেই হবে! এতে রাজ্যের যদি মঙ্গল হয় - তাতেও আমি খুশি !


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.