বন ও জৈব বৈচিত্র্য সুরক্ষায় চাই সচেতনতা
পান্নালাল রায়
কিছু দিন আগে ত্রিপুরার উদয়পুরের সুখসাগরে বহুসংখ্যক পরিযায়ী পাখির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। চোরা শিকারিদের হাতে ব্যাপক হারে এই পাখির মৃত্যু ঘটেছে বলে ধারণার পাশাপাশি এমন কথাও চাউর হয়েছিল যে,সুখসাগর সংলগ্ন শস্য ভূমিতে কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের জন্যই এই অঘটন।যাই হোক,এব্যাপারে পরিবেশবিদদের তৎপরতায় বন বিভাগের তদন্ত শুরু হয়।মৃত পাখির ময়নাতদন্ত হয়। বিষয়টি আদালতেও গড়ায়। জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। মাননীয় উচ্চ আদালত পরিযায়ী পাখির সুরক্ষায় সরকারকে নির্দেশ দেন।এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দায়িত্বশীল আধিকারিক,পক্ষী বিশারদ ও পরিবেশবিদদের নিয়ে কমিটি গড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
উদয়পুরের সুখসাগরের মতো ঘটনা ঘটেছে বরাক উপত্যকার শনবিলে। সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির নিধন যজ্ঞ ঘটেছে।শনবিল হচ্ছে করিমগঞ্জ জেলার এক বিরাট জলাশয়। শীতকালে অবশ্য তার বেশিরভাগই শুকিয়ে শস্যভূমিতে পরিণত হয়। কিন্তু বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলে টই টুম্বুর।শনবিল তখন পর্যটকদেরও এক আকর্ষণ। শীতকালে শনবিলে এক ঘুড়ি উৎসবেরও আয়োজন হয়।আর বিলের যেখানটায় জল থাকে সেখানে উড়ে আসে দূরদূরান্তের পরিযায়ী পাখির দল। এবার শনবিলের ছোটবিল অংশে চোরা শিকারিদের হাতে পাখির নিধন যজ্ঞে পরিবেশবিদ সহ প্রকৃতি প্রেমী মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।অভিযোগ উঠেছে এবিষয়ে বন বিভাগের নীরবতারও।শনবিলে আগের মতো আর পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে না।কারণ হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এখানে এসে লোভী মানুষের খাদ্যে পরিণত হয় তারা। এবার পরিযায়ী পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে ওঠে চোরা শিকারিরা।কৃত্রিম ভাবে পাখির ডাকের রেকর্ড বাজিয়ে পরিযায়ীদের ফাঁদে ফেলা হয়। এভাবেই শিকার করা হয় শত শত পাখি। অবিলম্বে পাখির নিধন যজ্ঞ বন্ধ করার জন্য পরিবেশবিদরা বনবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উপরের খন্ডচিত্র কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পরিযায়ী পক্ষী নিধনও নতুন কিছু নয়। পাখিদের তথাকথিত আত্মহত্যার জন্য খ্যাত জাটিঙ্গাতেও ঘটে পক্ষী নিধন।পাহাড় শীর্ষে তীব্র বেগে বাতাস আর ঘন কুয়াশায় দিশেহারা পাখিরা অন্ধকার রাতে নিচে আলোর উৎস মুখের দিকে উড়তে থাকলে স্হানীয় মানুষেরা বাঁশের আঁকশি দিয়ে তাদের শিকার করে। পরিবেশবিদ ও পক্ষী প্রেমীরা অবশ্য এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।গত কয়েক বছরে অবশ্য জাটিঙ্গায় পাখির আগমন ও মৃত্যুর ঘটনা অনেক কমেছে। যাইহোক, সর্বদা সর্বত্র এধরনের অনাচার অত্যাচার চলছে প্রকৃতির উপর।আর সব মিলিয়ে বন ও জৈব বৈচিত্র্য আজ যেন হুমকির মুখে। একদিকে বনাঞ্চল দ্রুত হ্রাস এবং অপরদিকে বন্য প্রাণী হত্যার ঘটনায় মানুষেরই বিপদ ঘনীভূত হচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সমূহে নিঃসন্দেহে এই বিপদের মাত্রা আরও অনেক বেশি।
নানা প্রজাতির উদ্ভিদ আর প্রাণীকুল নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চল হচ্ছে জৈব বৈচিত্রের এক ঐশ্বর্যশালী ভান্ডার। পৃথিবীর ২৫টি জৈব বৈচিত্রের হটস্পট-এর মধ্যে ইন্দো-বার্মা জৈব বৈচিত্র্য হটস্পটের অধীন উত্তর পূর্বাঞ্চলের স্হান ৬ষ্ঠ।এই অঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্যের বেশিরভাগই বনাঞ্চল।ফল,ফুল,বনজ সম্পদ আর নানা বন্য প্রাণীতে ভরপুর সবুজ শ্যামলিমার এই উত্তর পূর্বাঞ্চল।
গোটা দেশে যত প্রজাতির ফুল রয়েছে তার পঞ্চাশ শতাংশই রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলে।এই অঞ্চলে এমন অনেক মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট রয়েছে যাতে অনেক কঠিন রোগও সেরে যায়। অরুণাচল প্রদেশে রয়েছে এরকম ২০০ মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট, ত্রিপুরায় রয়েছে ১৯৪, নাগাল্যান্ডে ৫২৬, মেঘালয়ে ৮৩৪। শুধু গাছপালাই নয়, বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, পতঙ্গের এক চমকপ্রদ ঠিকানাও উত্তর পূর্বাঞ্চল।এই অঞ্চলে ১৬০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী,৫৪১ প্রজাতির পাখি,৩৬২৪ প্রজাতির কীট পতঙ্গ এবং মাছ রয়েছে ২৩৬ প্রজাতির।এই অঞ্চলের অন্যতম অরণ্য সম্পদ হচ্ছে হাতি আর একশৃঙ্গ গন্ডার। এশিয়ান হাতির ঘর হিসেবে ধরা হয় উত্তর পূর্বাঞ্চলকে।
শুধুমাত্র বনজ সম্পদ হিসেবেই নয়, উত্তর পূর্বাঞ্চলে ঐতিহ্যর সাথি হচ্ছে হাতি। ত্রিপুরার ইতিহাস পর্যালোচনায় যেমন বারংবার হাতির প্রসঙ্গ আসবে, তেমনই ব্যতিক্রম নয় পূর্বোত্তরের অন্য রাজ্যও।এক সময় ত্রিপুরার মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতো হাতি। সম্রাট আকবরের মন্ত্রী আবুল ফজলের মতে সম্রাটের পিলখানার উৎকৃষ্ট হাতি ছিল ত্রিপুরার। আবার এই হাতির জন্যই মোগলদের হাতে ত্রিপুরা আক্রান্ত হয়েছে। আবার ত্রিপুরার সিংহাসনে রাজা বদলও ঘটেছে হাতির কারণে। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে অরণ্যের এই আপাত নিরীহ প্রাণীটি।কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দ মাণিক্য তাঁর সিংহাসন সুনিশ্চিত করার জন্য মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে হাতি উপহার দিয়েছিলেন। ত্রিপুরার মতো অসমেও হাতি ঐতিহ্যের সাথি। মহাভারতের যুগ থেকেই বহমান এই ঐতিহ্য। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে প্রাগজ্যোতিষের রাজা ভগদত্তের হাতি ত্রাসের সঞ্চার করেছিল পান্ডব সেনাদের মধ্যে। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তাঁর ভ্রমণ বিবরণীতে অসমের সমৃদ্ধ হাতির কথা উল্লেখ করে গেছেন।মণিপুরের ইতিহাসেও অনুল্লেখ্য নয় হাতি। রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্রের রাজ্য ফিরে পাবার ঘটনার সঙ্গেও যেন জড়িয়ে আছে হাতি।
শুধু হাতি কেন, অন্যান্য বন্য জন্তু,পক্ষী এমনকি পতঙ্গও জড়িয়ে আছে এই অঞ্চলের ইতিহাস, কিংবদন্তি আর সংস্কৃতির সঙ্গে। তাই জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি বন নির্ভর মানুষের জীবন জীবিকার জন্যও বন ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কার্যত ঘটছে তার বিপরীত ঘটনা। নির্বিচারে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের বিভিন্ন রাজ্যে অবলীলায় চলছে বৃক্ষমেধ। ত্রিপুরায় খাদ্য ও পানীয় জলের অভাবে পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলে নেমে আসছে হাতির দল।তেলিয়ামুড়া অঞ্চলের চাকমাঘাট, উত্তর মহারানীপুর, কৃষ্ণপুর ইত্যাদি এলাকায় আঠারো মুড়া পাহাড়ের বন্য হাতির দল নেমে এসে তান্ডব চালাচ্ছে।গত দেড় বছরে বন্য হাতির দল ফসলের খেত, মানুষের বাড়িঘর তেমন তছনছ করেছে, তেমনই কয়েকজনকে পিষে মেরেও ফেলেছে। বনাঞ্চল ধ্বংস হবার ফলে হাতিদের খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই পাহাড় থেকে তারা নেমে আসছে সমতলের জনপদে। আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ত্রিপুরার তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের তিনটি বাইসনও ক'দিন আগে লোকালয়ে চলে এসেছিল। বাইসনের হামলায় দু'জন আহত হয়।এই ভাবে বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য বন্য প্রাণীরা যেমন বিপন্ন হচ্ছে, তেমনই মানুষও নানা সময়ে নানা ভাবে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়া স্টেট ফরেস্ট রিপোর্ট(আইএসএফআর), ২০২১ অনুসারে উত্তর পূর্বাঞ্চলে মোট বনভূমি রয়েছে ১লক্ষ ৬৯হাজার ৫২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। আর এই অঞ্চলের মোট ভৌগোলিক এলাকা হলো ২লক্ষ ৬২ হাজার ১৭৯ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ এই অঞ্চলের মোট ভৌগোলিক এলাকার অর্ধেকের বেশি রয়েছে বনভূমি। গোটা দেশের মোট বনভূমির ২৩.৭৫ শতাংশ রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যে।পূর্বোত্তরে বনাঞ্চলের পরিমাণ জাতীয় হারের চেয়ে অনেক বেশি হলেও আত্মসন্তুষ্টির কোনো অবকাশ নেই।কারণ পূর্বোত্তরের মতো এলাকায় যতটা বনভূমি থাকা প্রয়োজন ততটা আজ আর সুরক্ষিত থাকছে না। দিনে দিনে বনভূমির পরিমাণ কমছে। আর এই কারণে বাড়ছে নানা সমস্যা। নানা সময়ে নানা অঞ্চলে খরা, বন্যার তান্ডব, খেতে অজন্মা, কখনও অনাবৃষ্টি, কখনও অতিবৃষ্টি ইত্যাদির শিকার হচ্ছে উত্তর পূর্বাঞ্চল। আইএসএফআর রিপোর্ট,২০২১ অনুসারে গত দু'বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলোতে ১,০২০ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি হ্রাস পেয়েছে। এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি বন হারিয়েছে অরুণাচল প্রদেশ,২৫৭ বর্গ কিলোমিটার।সব চেয়ে কম,মাত্র ১ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি হ্রাস পেয়েছে সিকিমে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত দুই বছরে ত্রিপুরা হারিয়েছে ৪ বর্গ কিলোমিটার বনভূমি।অবশ্য আগেকার বছর গুলোতে ত্রিপুরায় বনভূমি হ্রাস পাবার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল।২০১১-১৩ সালে তা ছিল ১১১বর্গ কিঃমিঃ,২০১৩-১৫ সালে ৫৫বর্গ কিঃমিঃ এবং ২০১৫-১৭ সালে বনভূমি হ্রাস পেয়েছিল ১৬৪বর্গ কিঃমিঃ। গোটা দেশের তুলনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে বনভূমি হ্রাস পাবার পরিমাণ অনেক বেশি। পরিবেশগত কারণে এই অঞ্চলের পক্ষে তা নিঃসন্দেহে বিপদের। জনজাতিদের চিরাচরিত জুম চাষ এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পূর্বোত্তরে বনভূমি হ্রাস পাবার পরিমাণ বেশি বলে মনে করা হয়।জুম চাষের জন্য পাহাড়ে অগ্নিসংযোগে বন ধ্বংস হয়। অবশ্য এখন পূর্বোত্তরে জুম চাষের পরিমাণ কমছে। বাড়ছে সমতলের আধুনিক কৃষি ব্যবস্হার প্রয়োগ।ব্যবহৃত হচ্ছে নানা কৃষি প্রযুক্তি। এছাড়া রাস্তাঘাট, কলকারখানা, রেলপথ সহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য যাতে বনাঞ্চলের ক্ষতি না হয় সেদিকেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।বলাই বাহুল্য, তারপরও এই সব কারণে বনভূমির ক্ষতি কিছুটা হচ্ছে।তার পাশাপাশি রয়েছে চোরাই কাঠ কারবারিদের দৌরাত্ম্য।রাতের আঁধারে চলছে ব্যাপক হারে বৃক্ষমেধ।সাফ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল।
যাইহোক, বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বন সৃজনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর আনুষ্ঠানিক ভাবে বনমহোৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। অনেক এলাকায় সবুজ গাছপালা যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই অনেক রুক্ষ প্রান্তরে ব্যাপক বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে সবুজ অরণ্য। গোটা দেশে কিংবা উত্তর পূর্বাঞ্চলে সর্বত্র বনাঞ্চল হ্রাস পাবার পরিমাণ যেমন এক নয়, তেমনই বনসৃজনের পরিমাণও এক নয়। কোথাও দ্রুত বনাঞ্চল কমছে। যে হারে কমছে সেই হারে বন গড়ে উঠছে না। আবার কোথাও বন ধ্বংসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন বনাঞ্চল।
এবার আসা যাক বন্য প্রাণীর কথায়। নির্বিচারে বন ধ্বংসের পাশাপাশি বিপদ নেমে আসছে বন্য প্রাণীর উপরও। মাঝে মাঝে অসমে একশৃঙ্গ গন্ডার হত্যার খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।চোরা শিকারিদের তৎপরতা,হাতি মানুষের সংঘাত ইত্যাদি ছাড়াও রেল গাড়ির নিচে কাটা পড়ে কিংবা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অনেক হাতির মৃত্যু ঘটে। চোরা শিকারিদের লোভের বলি হয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলে কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণী হয়তো ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। একসময় ত্রিপুরার জম্পুই পাহাড়ে উড়ন্ত বিড়াল বলে এক বিরল প্রজাতির প্রাণীর কথা জানা গিয়েছিল।এখন আর তার অস্তিত্বের কথা শোনা যায় না। মাংসের লোভেও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপর আক্রমণ নেমে আসে। চোরাগুপ্তা শিকারের বিরুদ্ধে বন দফতরের অভিযানও চলে। ত্রিপুরার তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের বিরল প্রজাতির এক বাইসন হত্যার ঘটনায় রাজ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কিংবা মাংসের লোভে প্রাণী হত্যা ছাড়াও বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডেও অনেক সময় প্রাণহানি ঘটে বন্যপ্রাণীর। শুধু বনভূমি নয়, এই অঞ্চলের নদী নালায়ও মাঝে মাঝে পাওয়া যায় সম্পদের সন্ধান। এমনটাই হচ্ছে বহু আলোচিত বরাকের ডলফিন, এখন আর যার দেখা পাওয়া ভার!
তবে বিপর্যয়কর নানা খবরাখবরের মাঝে কিছু কিছু আশার খবরও আছে।চোরা শিকারিদের হাতে যেমন পরিযায়ী পাখির নিধন ঘটছে, তেমনই পরিবেশ প্রেমীরা সহ সাধারণ মানুষও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।বন ও জৈব বৈচিত্র্য সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বন বিভাগের উদ্যোগে কিছু দিন আগে দক্ষিণ ত্রিপুরার অমরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে গজরাজ উৎসব। সুসজ্জিত কয়েকটি হাতি নিয়ে অমরপুরে এক বর্ণাঢ্য মিছিলের মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। অনুরূপ ভাবে সিপাহিজলায় চিতা উৎসব,গন্ডছড়ায় পরিযায়ী পাখি উৎসব ইত্যাদির আয়োজন হয়। উৎসবের নামাকরণ যাই হোক না কেন,সব ক্ষেত্রেই ছিল বন ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান। এরকম প্রচেষ্টায় মানুষের মধ্যে অবশ্যই সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে তা আরও বাড়াতে হবে।বনের সঙ্গে যে আমাদের জীবন জড়িয়ে আছে, বিশেষত পূর্বোত্তরে, তা আরও বেশি করে অনুধাবন করতে হবে। বনমহোৎসব উদযাপিত হয়,হয় বৃক্ষরোপণও।কিন্তু দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়।পরম যত্নে বড় করে তুলতে হবে সেই গাছ।হাতি,একশৃঙ্গ গন্ডার,ক্লাউডেড লেপার্ড,সাঙ্গাই,গয়াল, চশমা বানর ইত্যাদি পূর্বোত্তরের অরণ্য ঐশ্চর্য সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই বন সৃজন, বন সুরক্ষা সহ জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় চাই আরও সচেতনতা, আরও প্রচার, চাই এবিষয়ে ধারাবাহিক তৎপরতা।