চেন্নাই, কলকাতা এখন আগরতলায়

প্রদীপ চক্রবর্তী

এই শহর আগরতলার এবং জেলা ও ব্লক স্তরে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। অধিকাংশ ল্যাবের নানা ধরনের রোগের পরীক্ষার ফলাফলের কোন রুপ বিশ্বাস যোগ্যতা নেই। বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবেই কি করে?খবর হলো এই সব ল্যাবের কোন ধরনের অনুমোদন নেই।স্বাস্হ্য দপ্তর থেকে অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু খবর নিয়ে জানা গেছে অনুমোদন ছাড়াই চলছে এইসব তথাকথিত ল্যাব।নিয়ম অনুযায়ী ল্যাব খোলার জন্য প্রাথমিক শর্ত পরিকাঠামো এবং ল্যাব টেকনেশিয়ান। কিন্তু দেখা গেছে শহর আগরতলায় যে সব ল্যাব রয়েছে সেগুলির অধিকাংশগুলিতে এগুলোর ধারে কাছে কিছু নেই। এক এক জন ল্যাব টেকনিশিয়ান দিনে ছয় থেকে সাতটি ল্যাবে যায়। তাড়াতাড়ি মল,মূত্র,রক্ত,কফ পরীক্ষা করে রিপোর্ট এ শ্রীহস্তের ছাপ দিয়ে অন্য ল্যাবে ছুটেন।

এখন তো এদের হয়েছে পোয়াবারো। কেননা নানা পরীক্ষার জন্য বেশ কিছু অ্যাপস বেড়িয়ে গেছে। এগুলো সেট করেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফলাফল বা রিপোর্ট পাওয়া যায়। প্রিন্ট আউট ও বেরিয়ে আসে।তবে শতকরা দেশটিতে এ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। বাদবাকি গুলিতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এখানেই যত গলদ। ভুলভাল রিপোর্ট ধরিয়ে দেয়া হয় রোগীদের। তাঁর ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন চিকিৎসক। সেখানেই যত বিভ্রাট এবং গন্ডগোল। ভুল রিপোর্টে ভুল চিকিৎসা হয়। রোগীদের সাধারণ রোগ জটিল হয়ে যায় এবং ক্রমশঃ মৃত্যুর পথে এগিয়ে যায় রোগী। মুড়ি মুড়কির মত গজিয়ে উঠা ব্যাঙের ছাতার মত তথাকথিত ল্যাবগুলি দুহাতে অর্থ লুটছে,প্রান যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। উদ্বেগের বিষয় হল এই সব প্যাথ গুলির সাথে নানা চিকিৎসকের বোঝাপড়া থাকে। মূলত এ কারণেই চিকিৎসকরা রোগী দেখার পর যে ব্যবস্হাপত্র দিয়ে থাকেন তাতে অবধারিত ভাবে থাকে নানা পরীক্ষার সুপারিশ। এরা বলেই দেন কোথায়,কোন ল্যাবে পরীক্ষা করাতে হবে। ব্যস এবার আপনাকে ছুটতে হবে সেই ল্যাবে। প্রথমে খূজে বের করতে হবে সেই সব তথাকথিত "রেপুটেড এন্ড রিলাইব্যাল" ল্যাব।এবার গলা বাড়িয়ে দিন, এদের কাটার সুবিধার জন্য। এরা তো বসেই আছে ঝোপ বুঝে কোপ মারার জন্য।আর সেই সাথে পকেট ও লুট করবে ওরা। এবার রিপোর্ট নিয়ে গেলে সদাশিব চিকিৎসক ব্যবস্হা পত্র লিখে দিয়ে পরের তারিখ বলে দেবেন আসার জন্যে। উদ্বেগের ব্যাপার প্রায় অধিকাংশ চিকিৎসক বা তাদের সহকারীদের কাছে নির্দিষ্ট ল্যাবের নামধাম লেখা প্রিন্টেড টোকেন থাকে। সহকারীরা এগুলো রোগীর হাতে তুলে দেন। প্রায় আশি শতাংশ চিকিৎসকই অর্থের জন্য এতো লুলোপ এরা প্যাথের স্লিপ ধরিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না।

আবার অনেক চিকিৎসক নিজেই চেম্বারের পাশে ল্যাব খুলে বসেছেন। এখানেই যতসব ব্যাপার। আবার কিছু চিকিৎসক আছেন যাঁরা বিভিন্ন ল্যাবের সাথে জুড়ে বসে আছেন। চিকিৎসক বলার আগেই এরা আপনার রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য পাগল হয়ে উঠে। অদ্ভুত সব কাণ্ড।

অথচ এজিএমসি,আইজিএম রয়েছে। ওখানকার ল্যাবের পরিকাঠামো উন্নত, টেকনিশিয়ান রাও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।পরিচালনগত ত্রুটির কারণে সাধারণ মানুষ এদুটির পরিষেবা নিতেই পারছেন না। আই ইজিএমের সব ইউনিট এখন উন্নত মানের, চিকিৎসকরা ও বেশ ভালো, বিশেষ করে এদের পরিষেবায় রোগী ও এদের পরিজনরা এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতে কি হবে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।

এই সব ল্যাবগুলির এখন রমরমা। যাদের অর্থ আছে তাঁরা কলকাতা,চেন্নাই, হায়দরাবাদ,ব্যাঙ্গালোরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সাথে টাই আপ করেছেন। বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রা আগরতলা আসছেন,রোগী দেখছেন, পাইকারি হারে ইনভেস্টিগেশন করাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাজার টাকা নিয়ে থাকেন রোগী দেখার জন্য।আর বাদবাকি তো ল্যাব নিচ্ছে। বাইরের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল আগরতলায় এদের সেন্টার খুলেছে। ওখানেও টাইআপ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখছেন, নানা ধরনের পরীক্ষা করাচ্ছেন,তারপর রেফার করে দিচ্ছেন চেন্নাই, হায়দরাবাদ, কলকাতা,ব্যাঙ্গালোর এ তাদের হাসপাতালে।এটা অনস্বীকার্য এই সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রা এখানে আসায় রাজ্যবাসী উপকৃত হচ্ছেন। রোগীদের প্রথমেই বহিরাজ্যে ছুটতে হচ্ছে না। অনেকেই ভালো হয়ে যাচ্ছেন এদের ব্যবস্হাপত্রে।

এখন চিকিৎসার জন্য রোগীদের জমিজমা বেচে চেন্নাই ছুটতে হচ্ছে কম। এখন রোগী ধরতে চিকিৎসকদের ছুটে আসতে হচ্ছে আগরতলায়।

ভাল কথা, কয়েকটি রেপুটেড প্যাথলজিকাল ল্যাব আগরতলায় সেন্টার খুলেছে, পরিকাঠামো গড়ে তুলে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু যারা টেকনিশিয়ান তাদের কি ধরনের যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ রয়েছে তা সাধারনের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।বলতে পারবে কতৃপক্ষ।

ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে যে ধরনের তথ্য তল্লাস,তদারকী প্রয়োজন তা একেবারেই গোল্লায়। মুড়ি মুড়কির মত গজিয়ে ওঠা এই সব ল্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.