।। প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে ।।
অরিন্দম নাথ
(১) মে মাস । অনিশ্চয়তার মাস । বৃষ্টির অনিশ্চয়তা । এই বৃষ্টি । এই নেই । কবে বৃষ্টি হবে । কবে বৃষ্টি হবে না । হলপ করে কেউ বলতে পারে না । ইট মে রেইন । ইট মে নট রেইন । তাই মে মাস । 'মে'-তো অনেক কিছুর সঙ্গেই জোড়া যায় । আমার বন্ধু জলধর ভট্টাচার্য । পশ্চিম বাংলার কল্যাণীর বাসিন্দা । বার্তাজীবী । গতকাল বিকেলে অফিসে এসেছিল । কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে গেল । চল্লিশ পেরিয়ে গেল । এখনও বিয়ে করেনি । জলধর অর্থ মেঘ । আমার জন্য পরদেশী মেঘ ! ইট মে রেইন । মে নট রেইন ফ্রম দিস ক্লাউড । সন্ধ্যায় অফিস থেকে আর্লিই ফিরেছিলাম । গিন্নী ঘরে নেই । একাকী ঘরে বসে টিভিতে আইপিএলের ম্যাচ দেখছিলাম । সঙ্গে উল্টোপাল্টা ভাবনা । এমনি সময় মৌতাত এল । অনেক দিন পর ।
(২) আমার লিভার মাঝে মাঝে বিচিত্র আচরণ করে । অদ্ভুত এক এনজাইম ক্ষরণ করে ৷ জারক রস । এর সংস্পর্শে শর্করা জাতীয় খাবার মাদকে পরিণত হয় ৷ অজান্তেই মৌতাত আসে ৷ সাধারণ নেশার আমেজ থেকে ভিন্ন । এর রেশ আমাকে বিধাতার দরবারে নিয়ে যায় । বিধাতাকে তাঁর আবাসে পাই । একাই ছিলেন । তাঁর সর্বক্ষণের অনুচর শুম্ভ-নিশুম্ভকে পেলাম না । আমি মানিকজোড়ের খবর করলাম । তিনি হাসলেন । বললেন, একটি কাজে পাঠিয়েছেন ।
আমার মন থেকে কৌতূহল যাচ্ছিল না । কিছুটা অনিশ্চয়তাও । আর প্রশ্ন করা উচিত হবে কি । অথবা উচিত হবে না । যদি মাইন্ড করেন । মে-তে আটকে ছিলাম । আমাকে এই অবস্থা থেকে বিধাতাই মুক্তি দেন । থট-রিডিং করে বললেন,"আমরা আমাদের অনুচরদের প্রায়ই অন্যলোকে পাঠাই । সুনির্দিষ্ট মিশন দিয়ে ।
- খেয়েছে! কোথায় কি হয়ে যায়!
- একটি গল্প বলছি । এতে তোমার মনের অনেক জিজ্ঞাসা দূর হবে ।"
- প্রভু, আপনি অন্তর্যামী!
- মহর্ষি নারদ আমার মানসপুত্র । শ্রী বিষ্ণুর চেলা । সে ভীষণই জ্ঞানী ।
- প্রভু, মহর্ষির জ্ঞান সর্বজনবিদিত । আমারও এক প্রিয় চরিত্র । মাইনাস অবশ্য তাঁর ঝগড়া লাগানোর প্রবণতা ।
- নারায়ণ! নারায়ণ! তুমি এভাবে বলবে না । নারদ আসলে আমাদের চিফ রিপোর্টার । মুখ্য বার্তাবাহক । সে অকৃতদার । কোথাও মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি । সর্বত্র অবাধে ঘুরে বেড়ায় । শুধু একবার প্রেমে পড়েছিল ।
- আরেব্বাস! নারদমুনি প্রেম করেছিলেন! প্রভু প্রগলভতা প্রকাশের জন্য আমায় মাপ করবেন ।
- হয়েছে! হয়েছে! ঘুরতে ঘুরতে হিমালয়ের একটি স্থান একবার নারদের ভীষণ পছন্দ হয়ে যায় । একটি সুদৃশ্য বনাঞ্চল । সঙ্গে মনোরম একটি গুহা । পাশ দিয়ে বহে চলছে গঙ্গা নদী । সে সেখানে তপস্যায় মগ্ন হয়ে পড়ল । ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস গড়িয়ে যায় । বছর পেরিয়ে যায় । তাঁর তপস্যা ভঙ্গ হয় না । দেবরাজ ইন্দ্র প্রমাদ গুনল । ইন্দ্র আসলে আমাদের ঠিকাদার । মালদার ব্যবসায়ী । বছর বছর টেন্ডার করে আমরা ইজারা দিই । সে পরিসেবা প্রদান করে । বিনিময়ে সুযোগ সুবিধা নেয় । রিপোর্টার হিসাবে নারদ স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল তিন লোকেই যায় । ফলে অনেক দুর্নীতি তাঁর নজরে আসে । তাছাড়া জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা মিলিয়ে সে সবাইকে ইম্প্রেস করতে পারে । ইন্দ্র অনেক কাজেই গোজামিল দেয় । তার নৈতিক চরিত্রও খুব সুবিধার নয় । অহল্যার উপর তার আত্যাচারের কথা তোমরা জান । আমাদের পুরাণে স্থান পেয়েছে । পুরাণ আসলে ভিসিএনবি-র মত । ভিলেজ ক্রাইম নোট বুক । কিংবা আমাদের ক্রিমিনলজি বই । দেবর্ষি নারদকে অনেকদিন দেখতে না পেয়ে ইন্দ্র ভীত হয়ে পড়ল । স্পাই লাগিয়ে নারদের অবস্থান জানতে পারল । ইন্দ্র প্রমাদ গুনল । ভক্তের খোঁজে বিষ্ণু যদি এখানে এসে পৌঁছান । তার সব গোজামিলের খবর পেয়ে যাবেন । সব টেন্ডার বাতিল হয়ে যেতে পারে । সে নারদের তপস্যা ভঙ্গের উদ্যোগ নিল । কামদেবকে পাঠাল । কামদেব ইভেন্ট ম্যানাজার ।
- আমার এক বন্ধুর মত ।
- জানি । সে গুহার মুখে মেলা বসিয়ে দিল । গানবাজনা । নাচের আসর । পাশাপাশি ওয়াটার স্পোর্টস । বসন্তের আবহ সৃষ্টি করল । মনোরম বাতাস বইতে শুরু করল । গাছে গাছে নতুন পাতা গজাল । রঙের খেলা শুরু হল । ফুলে ফুলে গাছ সেজে উঠল । ভ্রমরের আনাগোনা শুরু হল । উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা, বিদ্যুৎপর্ণা, অদ্রিকা, অম্বিকাদের পাঠাল । এরা অপ্সরা । নাচগানের পাশাপাশি আগেও মুনি ঋষিদের প্রলুব্ধ করার কাজে এদের ব্যবহার হয়েছে ।
- বিশ্বামিত্র ও মেনকার গল্প আমি জানি ।
- ঠিক তাই । অপ্সরারা স্বল্পবসনা হয়ে জলকেলীতে মত্ত হল । নারদ সবই দেখছিল । কিন্তু সে নির্বিকার রইল । কামদেবের চেষ্টা কাজে এল না । সে ব্যর্থমনোরথ হয়ে ইন্দ্রের কাছে ফিরে এল ।
- তারপর?
- পেছন পেছন কিন্তু নারদও স্বর্গে ফিরে এল । মনে তার গর্ব । কামদেবের শর সে প্রতিহত করেছে । দেবাদিদেব মহাদেবও পারেননি । শ্রী বিষ্ণুও কামদেবের শরে বিদ্ধ হয়েছেন । আমার নামেও কিছু অপবাদ শুনে থাকবে ।
- শুনে থাকলেও বিশ্বাস করি না । সরস্বতী আপনার মানসকন্যা । তাছাড়া আপনাকে কখনও চারমাথা অবস্থায় দেখিনি ।
- নারদ এই কথা মহাদেবকে বলল । মহাদেব তাকে বললেন, "তুমি তোমার গর্বের কথা আমায় বলেছ ঠিক আছে ! ভুল করে কিন্তু বিষ্ণুকে বলতে যেও না ।"
শিবের উপদেশ নারদের মনঃপূত হল না । সে খুব দ্রুত শ্রীহরির বাসায় গেল । নিজের অভিজ্ঞতা রসিয়ে রসিয়ে ব্যক্ত করল। বিশেষকরে তার তপস্যা ভঙ্গ করতে না পেরে কামদেবের চেহারা কেমন হয়েছিল অভিনয় করে দেখাল । বিষ্ণু বললেন, "তাই নাকি! ইন্দ্র কিন্তু সফল হয়েছে । তুমি তপস্যা ছেড়ে ওঠে এসেছ ।"
- আসলেও তাই!
(৩) নারদ বললো, "আমি এমনিতেই আসতাম । আমারতো আপনার কাছে কোনও দাবী নেই ।"
বিষ্ণু বললেন,"তা বটে!" তিনি বুঝতে পারলেন নারদের মধ্যে অহমিকা এসেছে । এই অহমিকা ভাঙ্গতে হবে । বিষ্ণু মায়াবলে একটি সুন্দর শহর তৈরি করলেন । তারপর নারদকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ওপাশটায় ঘুরে আসতে বললেন । নারদও সেই ফাঁদে পা দিল । সাজানো শহরটি তার ভালো লাগলো । সেখানকার রাজা ছিল শীলনিধি । সে নারদকে বিশেষভাবে আপ্যায়ন করল । নারদ খুব ভালো হাত দেখতে পারত । রাজা নারদকে অনুরোধ করল তার মেয়ে বিশ্বমোহিনীর হাত দেখে দেবার জন্য । নারদ খুবই আগ্রহের সঙ্গে রাজকন্যার হাত দেখতে লাগল । ফেইস ইজ দ্য ইনডেক্স অফ মাইন্ড । তোমরা চেহারা দেখে একটি মানুষ সম্পর্কে আইডিয়া করার চেষ্টা কর ।
- কিন্তু পারিকি! দ্রাবিড়দের ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা সম্ভব !
- পারবে! পারবে! অভিজ্ঞতা দিয়ে সবকিছু সম্ভব । করমর্দন করলে অপরপক্ষের মানুষটির উষ্ণতা জানা যায় । হৃদ্যতা বুঝতে পার । বিশ্বমোহিনীর হাতের উষ্ণতায় নারদ মুগ্ধ হয় । মেয়েটির উপর থেকে চোখ ফেরাতে পারেন না ।
- যাকে বলে, লভ এট ফ্রাস্ট সাইট অবস্থা !
- ঠিক তাই । সে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকে । হাতের রেখা বিচার করে আরও অবাক হয় । এই মেয়ের স্বামী অমরত্ব লাভ করবে । বিশ্বের অধীশ্বর হবে । নারদ মনে মনে ঠিক করে রাজকন্যাকে বিয়ে করবে ।
এদিকে নারদের মুখ থেকে সবকিছু জেনে রাজা মেয়ের স্বয়ংম্বর সভার আয়োজন করেন । নারদ ঠিক করে স্বয়ংবরে পাত্র হিসাবে অংশগ্রহণ করবে । সে তার রূপ নিয়ে চিন্তিত ছিল । শ্রী বিষ্ণুকে স্মরণ করল । তিনি নারদের সামনে উদ্ভাসিত হলেন । আরাধ্য প্রভুকে সে তার বাসনা খুলে বলল । স্বয়ংবর সভায় পাত্র হিসেবে উপস্থিত থাকতে চায় । বিষ্ণুর কাছে একটিই আব্দার‚ "প্রভু! আমাকে আপনার রূপ প্রদান করুন । বিশ্বমোহিনী সেই রূপ দেখে মুগ্ধ হবে । আমাকে বরমাল্যে বরণ করবে ।"
বিষ্ণু মনে মনে হাসলেন । তাঁর অন্য প্ল্যান ছিল । মুখে বললেন, 'তথাস্তু!'
নারদের রূপ বদলে গেল । তার মুখের চেহারা তখন বানরের মত । সে বুঝতে পারছিল না । শিব কিছু একটা আচ করতে পেরেছিলেন । তিনি তাঁর দুইজন অনুচরকে ব্রাহ্মণ বেশে সেখানে পাঠিয়েছেন । ঠিক যেমন আমি শুম্ভ-নিশুম্ভকে একটি মিশনে পাঠিয়েছি । স্বয়ংবর সভায় তারা বসেছিল নারদের দুইপাশে । সবাই তার রূপ দেখে মুচকি মুচকি হাসছিল । অনুচর দুজন নারদকে উত্যক্ত করছিল । আর বলছিল, "মহাশয়! একবার আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখুন ।" অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নারদ চুপ রইলো ।
- আসলে প্রেমে পড়লে মানুষ বেওড়া হয়ে যায় । বুদ্ধি-শুদ্ধি হারিয়ে ফেলে ।
- স্বয়ংবর শুরু হতেই বিষ্ণু তাঁর মনমোহন রূপ নিয়ে হাজির হলেন । বলাবাহুল্য বিশ্বমোহিনী তাঁকেই বরমাল্য পরাল ।
এবার নারদের সম্বিৎ ফিরল । ইতিমধ্যে সে একটি পাত্রের জলে নিজের চেহারা দেখতে পেয়েছে । প্রথমেই তার রাগ পড়ল শিবের দুই অনুচরের উপর । সে তাদের রাক্ষস হয়ে জন্মানোর অভিশাপ দিল ।
- মহর্ষি নারদের রাগ এবং হতাশা যুক্তিযুক্ত । ওনার সঙ্গে ছল করা হয়েছে ।
- এবার নারদ আয়নায় নিজের চেহারা দেখল । ততক্ষণে সে তার নিজের রূপ ফিরে পেয়েছে । এবার সে বিষ্ণুর মুখোমুখি হল, "আপনি নিজেকে ভক্তের ভগবান রূপে প্রচার করেন! কিন্তু এতটাই স্বার্থপর ! পরশ্রীকাতর । আমি নিশ্চয় জীবনে কিছু পূণ্য অর্জন করেছি । অভিশাপ দিচ্ছি, "আপনি মানুষ হয়ে জন্মাবেন । আমার ভালোবাসার ধন থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন । বিবাহিত হয়েও আপনি আপনার স্ত্রীর থেকে দূরে থাকবেন । আপনি আমার আরাধ্য । আমাকে বানরের চেহারা দিয়েছিলেন । এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে বানরদের সাহায্য নিতে হবে ।
- রামায়ণের কাহিনী!
(৪) "ঠিক তাই!", বিধাতা ওনার গল্প চালিয়ে যান, " নারদের অভিশাপেই বিষ্ণু অযোধ্যায় রাম হয়ে জন্ম নিয়েছিল । অবতার শ্রীরামচন্দ্র । স্ত্রী সীতার কাছ থেকে বহুদিন আলাদা থাকতে হয়েছিল তাঁকে ।"
- "অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি,
তারও হলো বনবাস রাবণ করে দুর্গতি।
আগুনেও পুড়িল না ললাটের লেখা হায় ।।"
- তোমাদের নজরুল ইসলামের গানের পঙক্তি ।
এখানে রাবণের কথা বলা হয়েছে । সে আসলে অভিশপ্ত শিবের দুই অনুচরের একজন । অপরজন তার ভাই কুম্ভকর্ণ ।
- কিন্তু প্রভু পরদেশী মেঘের সঙ্গে এই গল্পের সংযোগ কোথায়?
- পরদেশী মেঘ!
- আই মিন পশ্চিম বাংলার জলধর ভট্টাচার্য ! বার্তাজীবী ।
- তুমি কি মনে কর এইসব শাপ-অভিশাপের রিভিউ হয় না ! নারদের দেওয়া অভিশাপ লঘুপাপের গুরুদণ্ড । তাই নারদকেও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে ।
- আমাদের ক্ষেত্রে কিন্তু বিচারকেরা জেনারেল একসেপশন পান । সৎ বিশ্বাসে নেওয়া ডিসিশনে ভুল থাকলেও অপরাধ হিসাবে বিবেচ্য হয় না ।
- নারদ একাধারে বাদী এবং বিচারক !
- তা ঠিক! কিছুটা বুঝলাম ।
- জলধর সম্পর্কে তুমি কি জান?
- বিশেষ কিছুই জানি না ।পরোপকারী ছেলে । বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে । কল্যাণী জেলায় । বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী । পড়াশোনা মোক্রামপুর স্কুলে । পশ্চিম মেদিনীপুরে । জামাইবাবুর বাড়িতে থেকে । হায়ার সেকেন্ডারি পাস । তারপর সংস্কৃত টোল থেকে ডিপ্লোমা । ছোটবেলায় খুব ডানপিটে ছিল । এখন বোকা । আমি একবার তাকে এক মুসলমান বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম । রাত্রি বেলা । মুরগির মাংস দিয়ে খেয়ে ফিরলাম । পথছ বা খাবার সময় একদম প্রতিবাদ করেনি । পরে কথা প্রসঙ্গে বুঝলাম কিছু কিন্তু কিন্তু আছে । আবার বলল, তার জীবনের এক স্মরণীয় মুহূর্ত ! বোকা কোথাকার!
- বোকা বলতে পার না ! খবর নাও ।
- আপনি কি আমার উপরও স্পাই লাগিয়েছেন ? আমি কাদের সঙ্গে মিশি । কাদের সঙ্গে চলি জানতে? শুম্ভ-নিশুম্ভ কি এই কাজেই গিয়েছে?
- পুলিশের লোকদের সন্দেহ বাতিকগ্রস্থ হওয়া ভালো! তবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয় !
- না, প্রভু! অনধিকার চর্চার জন্য আমায় মাপ করবেন । জলধরবাবুর একটি ঘটনা আমার ভালো লাগেনি । একবার বিনা টিকিটে রেল সফর করার দুইজন বান্ধবীসহ ধরা পড়েছিল । তারপর এমন স্পিন ছুড়লো যে টিটি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তোয়াজ করতে বাধ্য হয় ।
- স্পিন বলটা কি ছিল শুনি ।
- পত্রিকার জনমত কলামে টিটির বিরুদ্ধে উৎকোচ এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগ ছাপিয়ে দিয়েছিল । টিকিট চেকাররা দুর্নীতিগ্রস্থ হয় । সবাই সেই অভিযোগ বিশ্বাস করেছিল । তারাও পত্রিকার শক্তি বুঝতে পারে । তারপর নিজেরাই পত্রিকার ব্যবসা শুরু করে ।
- তাহলে চিন্তা কর ! ওকে কি বোকা বলবে?
- জলধরবাবু খুব পরোপকারী । ত্রিপুরার একজন রুগী গিয়েছিল কলকাতায় । রুগিনী । ডাক্তার দেখাতে । উনি মদত করেন । সেই সূত্রেই সখ্যতা । সুস্থ হওয়ার পর মেয়েটিকে নিয়ে তারাপীঠ বেরিয়ে আসে । একটি লটারির টিকিট কাটে । মেয়েটির নামে । টাকা জলধরবাবু দেন । টিকিটিতে একটি পুরস্কার লাগে । একটি স্কুটার । তারপর অনেক দৌড়ঝাঁপ করে স্কুটার বিক্রি করে মেয়েটিকে টাকা দিয়ে যায় । এটাকি বোকামি নয়!
-তোমার সমস্যা হচ্ছে, তুমি ভিতরে ভিতরে ধর্মবিদ্বেষী । তারাপীঠের নাম নিতেই তুমি এইকথা বললে ।
- 'প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে;' আপনিও ভুল বুঝলেন ! আধ্যাত্মিকতা আমাকে ভীষণভাবে ভাবায় ৷ আমার কাছে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা একদমই ভিন্ন ৷ ধর্ম একটি বহুবিধ বিষয় ৷ আধ্যাত্মিকতা একটি সম্পূর্ণ সত্তা । আমাদেরকে মানবিক ও সত্যান্বেষী করে তোলে ৷ পক্ষান্তরে ধর্ম বিভ্রান্তি ছড়ায় ৷
- মানছি ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা আলাদা বিষয় । তোমার মনে সংশয় আসার কারণ একটি বড় অংশের মানুষের জাগতিক কষ্ট । একশ্রেণীর গোড়া ধর্মবিশ্বাসী লোক এইসব সম্পর্কে উদাসীনতা দেখায় । বিশ্বের মন্দির, মসজিদ, গির্জায় যত ধন জমে আছে তা ব্যয় করলে দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার প্রভূত উন্নতি সম্ভব । কিন্তু সেটা হবে না । ধার্মিকরাই এটা করে না । তবে তোমার জলধর ভীষণ পরোপকারী । সে মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হলেও মানুষের সেবায় ন্যস্ত ।
- প্রভু ব্যক্তি জলধর নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই । সমষ্টি নিয়ে সন্দীহান । বিশেষতঃ ধর্ম কিন্তু অসংখ্য । পক্ষান্তরে আধ্যাত্মিকতার কোনও শাখা-প্রশাখা নেই । ধর্ম আপনার কথা বলে । আধ্যাত্মিকতা আমার কাছে সবকিছু । এরমধ্যে আপনিও অন্তর্ভুক্ত । ধর্ম মানুষের সৃষ্ট নিয়মে চলে । আধ্যাত্মিকতা আপনার দান ।
বিধাতার প্রতিবাদ শুনি না । তাকিয়ে দেখি মৌতাত কেটে গেছে । টিভিতে আইপিএল ম্যাচ চলছে । আমি উপভোগ করি ।