চিত্র সাংবাদিকের উপর পুলিশী বর্বর অকত্য নির্যাতন ও মায়াকান্না !

পুরুষোত্তম রায় বর্মন

১৭ই মে রাত্রিতে চিত্রসাংবাদিক নিতাই দে রাধানগর পেট্রোল ডিপোয় গিয়েছিলেন দ্বিচক্রযান এর জন্য পেট্রোল সংগ্রহ করতে। এ সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী তাঁর উপর বিনা কারণে চড়াও হয়। তাকে অহেতুক হেনস্থা করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কলেজ টিলা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি অরিন্দম রায় । দুস্কৃতিকারীরা স্থানীয় হোমরা চোমড়া। তাই পুলিশ দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিতাই দে কে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ গাড়িতে তোলে । তুলেই শুরু হয় মারধর । অকথ্য গালিগালাজ। পূর্ব থানায় নিয়ে মারধর করা হয়। প্রায় বিবস্ত্র করা হয়। জোর করে মুখে মদ ঢেলে দেওয়া হয়। সারা রাত্রি ধরে চলে শারীরিক মানসিক নির্যাতন ইন্সপেক্টর অরিন্দম রায়ের নেতৃত্বে। ২০ তারিখ আমি, কৌশিক ও মৃন্ময় গিয়েছিলাম নিতাই দের বাড়িতে। তার কাছ থেকে ঘটনা শুনলাম। খাকি পোশাক পরিহিত একদল হিংস্র গুন্ডা কিভাবে একজন নাগরিকের উপর অত্যাচার করেছেন তার বিবরণ শুনে আমরা শিহরিত হয়েছি। ভাবছিলাম কোথায় আছি আমরা। নিতাই দে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী পেশাজীবী। তার উপর সংঘটিত পুলিশি গুন্ডামির খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়েছেন। সাংবাদিকদেরও নাগরিকদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে ইন্সপেক্টর অরিন্দম রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নেতারা মন্ত্রীরা নিতাইয়ের বাড়ি যাচ্ছেন । কুমিরের কান্না কাঁদছেন। এমন এক খানা ভাব করছেন যেন তারা দুঃখিত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ছাড়বেনই ছাড়বেন। এগুলো মায়াকান্না। বরখাস্ত কোন শাস্তি নয়। কিছুদিন পর যখন ঘটনা পুরনো হয়ে যাবে , আরো নতুন নতুন দুর্ঘটনা সংঘটিত হবে , আরো ভয়ানক রকমের পুলিশী সন্ত্রাস, পুলিশী গুন্ডামি ও দুষ্কৃতিকারীদের তাণ্ডবের খবর আসবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই নিতাই দে-র ঘটনা বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাবে। সেসময় অরিন্দম রায়ের বরখাস্তের আদেশ তুলে নেওয়া হবে। সসম্মানে তার পুনরাবির্ভাব ঘটবে আরো বড় ধরনের গুন্ডামি ও নিপীড়নের সনদ নিয়ে। নেতা-মন্ত্রীরা যারা নিতাই দের বাড়িতে ভিড় করছেন তাদের কাছে আমাদের বিনীত প্রশ্ন , নিতাই দের দায়ের করা অভিযোগ মূলে কেন এখনও অরিন্দম রায়ের বিরুদ্ধে এফ আই আর নথিভূক্ত হলো না? কেন অরিন্দম রায়কে এখনও গ্রেফতার করা হলো না? এমনিতে পান থেকে চুন খসলেই পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে। একজন পুলিশ অফিসার যখন ভয়ঙ্কর ফৌজদারি অপরাধ করেন তখন শুধুই সাময়িক বরখাস্ত। এফআইআর নয়, গ্রেফতার নয়। কারণ হচ্ছে পুলিশকে বড় দরকার। শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে, সৎ নাগরিকদের বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের বিরুদ্ধে শাসকদের বড় সহায় পুলিশ বাহিনী। সে কারণেই পুলিশের মধ্যে যারা সৎ ভাবে, আইনিভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেন , তারা শাসকদের নেকনজরে থাকেন। তাদের ঘনঘন বদলি, গুরুত্বহীন পোস্টিং । আর অরিন্দম রায়ের এর মত অফিসারদের মাথায় শাসকদের আশীর্বাদ । তাদেরকে বরাভয়। কুছ পরোয়া নেহি। চালিয়ে যাও। শত অপরাধেও কিচ্ছু হবেনা। দিনকে রাত বানাও। সৎ নাগরিককে মদ্যপ বানাও। ক্ষমতার ব্যাভিচারে উন্মত্ত হও। সব ধামাচাপা দেব। ভয় নেই । তোমরা যখন বড় ধরনের ঘটনা করবে এবং তা প্রকাশ হয়ে যাবে আমাদের একটু অভিনয় করতে হবে। ভুল না বুঝে আমাদের উপর ভরসা রাখবে।

আমরা যারা অন্যায়ের প্রতিকার চাই, যারা নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে তাদের শাস্তি চাই, যারা সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করে তাদের শাস্তি চাই, আমাদেরও দায়িত্ব আছে। ব্যবস্থাটা যখন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তখন অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়াই করতে হয়। না হলে শুধু বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব সারলে অন্যায়কারিরা দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে কুকর্ম অবাধে চালিয়ে যায়। আরও বেপরোয়া ও দুর্বিনীত হয়ে ওঠে। সাংবাদিক বন্ধুরাও এই বিষয়টা নিশ্চয়ই মনে রাখবেন। কুমিরের মিষ্টি হাসিতে ভুললে পরে কিন্তু ভুগতে হবে সবাইকে। নিতাই দে তে শেষ হবে না। দেখছেন না কিভাবে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিভাবে সাধারণ নাগরিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিভাবে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে আমাদের রাজ্য।

আমরা ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস অর্গানিজেশন এর তরফ থেকে শুধু বিবৃতি দিয়েই আমাদের দায়িত্ব পালিত হয়েছে মনে করিনা। আমরা নিতাই দের বাড়িতে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র সহমর্মিতা জানাতে নয়, তাকে এই আশ্বাস টুকু দিতে যে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তার পাশে থাকবো। কারণ আজ যদি নিতাই অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য লড়াই ছেড়ে দেয় তাহলে কিন্তু আগামী দিনে আমরা যে কেউ নিতাই হতে পারি। আমরা নিতাই কে বলেছিলাম উচ্চ আদালতে নিতাই এর জন্য আমরা মামলা লড়বো। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের দায়বদ্ধতা। একথা চাউর হতেই কি এত মায়া কান্না।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.