হীরার রাজত্বে স্বর্নযুগের ঝঙ্কার

প্রদীপ চক্রবর্তী

আবার ফিরে এসেছে গলায় চেইন, হাতেও চেইন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই চেইন গুলো সোনার এবং হাতের গুলোও তাই। যে যত পারে তত মোটা বানাচ্ছে। অনেকেই চেইনগুলি ঝুলিয়ে রাখে বাইরে যাতে অন্যদের নজরে পড়ে। এগুলো নাকি ষ্টেটাস সিম্বল। হক কথা। এদেরকেই তো আমল দেবে সাধারণ মানুষ ।ষ্টেটাস সিম্বল না থাকলে আমল দেবে কে, তা এলাকায়, বা পার্টির অফিসে।বলি এগুলো কারা ঝুলাচ্ছে? বিগত বাম জমানার শেষ পাঁচ বছরে এসবের রমরমা ছিল। নুতন সরকার আসার পর ষ্টেটাস সিম্বল ভ্যানিস হয়ে যায়। কিন্তু এখন আবার সেই একই অবস্থা। সাধারণ মানুষের কিন্তু ভিরমি খাওয়ার অবস্থা।

ভিরমি তো খাবেই, ছানাবড়া চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। ঘন ঘন ঢোক গিলতে হয়। হবেনা? গ্রামের লোকজন যারা শহরে আসেন, রিকশা চালান তাঁরা তো বলছেন গ্রামে কাজ নেই, সংসার চালাবেন কি করে? তাই রিকশা চালানই ওদের সম্বল।

গলায় ঝুলানো যাদের, তাদের বড় অংশ নাকি বেআইনি ব্যবসার সাথে যুক্ত। কিছু দিন আগে চিওরন্জন এলাকার এক যুবকের বাড়ী কালী পূজা ছিল। সেই পূজায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল এক শ্রেণীর উর্দি পড়াদের দল।ভীড় সামাল দিতে পুলিশকে নাকি হ্যাপা সামলাতে হয়েছিল।

এই যে প্রতিবেদন তা কিন্তু তরুণ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির পক্ষে মানানসই নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা যদি একটু গাঝাড়া দিয়ে উঠেন অনেকেই কিন্তু গারদে মেতে হবে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে রাজ্যবাসী। ভাবমূর্তি অনেকটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে তরুন মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর অনেক স্বপ্ন রয়েছে, স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার দায়দায়িত্ব যেমন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার, প্রশাসনের তেমনি দলের কর্মকর্তাদেরও ।

চলার পথে অনেক কিছু কানে আসে, আবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাঁচার জন্য প্রানপন লড়াইর নুতন নুতন কৌশল।শুনে, দেখে ভিরমি খাওয়ার অবস্থাও হয়। এই তো কিছুদিন আগের কথা।এক ভদ্রলোক কে দেখতাম সকালে একগাড়ী তো বিকালে আর এক গাড়ী নিয়ে বের হতে। একদিন বলছিলাম আপনার গাড়ী কটা? উওর শুনে ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। তাঁর চটাপট উওর ছিল "আমি নিজেও জানিনা, আমার কটা গাড়ী"।বুঝুন অবস্থা, উনি নিজেই জানেন না উনার কটা গাড়ী, মানে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। তাও কি কখনো হয় ? হ্যাঁ, হয়, অন্তত তাদের কাছে ,আইনি বা বেআইনি পথে বিস্তর কামাই যাদের আছে।ওই ভদ্রলোক কিন্তু পরবর্তী সময় পুলিশের জালে উঠল, এনডিপিএস এ কমাস জেলে ছিলেন। সাধারণ এই আইনে যাদের আটক করা হয় তাদের অন্তত ৬মাস জেলে থাকতে হয়, ৬মাসের আগে বিধি অনুযায়ী জামিন হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে হয়তো তা হয়নি। এই তো কদিন আগে তাকে দেখা গেল বিলাস বহুল গাড়ী নিয়ে বের হতে। নিজেই ড্রাইভ করেন। এই ভদ্রলোক কে গ্রেফতার করা হয়েছিল ভূয়ো নামে গাড়ী রেজিস্ট্রেশন করে ওই গাড়ী দিয়ে পাচার বানিজ্য করার অভিযোগ। গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন যার নামে তিনি একজন মহিলা চিকিৎসক, নিজেই জানেন না উনার গাড়ী থাকার খবর। অবাক কান্ড। উনার গাড়ী আছে অথচ নিজেই জানেন না এ কেমন কথা! কোথায় আছি আমরা? নিশ্চয়ই এমন আরো অনেক গাড়ী আছে অন্যদের নামে অথচ যাদের নামে তাঁরা অন্ধকারে। এতো পারিপার্শ্বিক তথ্য ও সংবাদ। সকাল বিকাল বিলাসবহুল গাড়ি চালান, নতুন নতুন, অথচ নিজেই জানেন না উনার গাড়ীর সংখ্যা কত, তাও হয় নাকি কখনো? আসলে এটাই পাচার বানিজ্যর সাথে যারা তাদের কৌশল বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞ দের অভিমত।

ড্রাগসের স্বর্গ রাজ্য ত্রিপুরার দ্বিতীয় পর্বে উল্লেখ করা হয়েছিল গোল্ডেন ট্রাংগেল রং কথা। খান্তলাং হল সেই গোল্ডেন ট্রাংগেল। ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মায়ানমার সীমান্তের সংযোগস্হল। ওখানে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কমান্ড পোষ্ট রয়েছে। বেশ কজন সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওখানে সফরও করেছেন। এখন ওই এলাকার সীমান্ত পথে বিএসএফের কঠোর নজরদারি ও টহলদারি রয়েছে। অন্তত খবরাখবর এমনই। ওই এলাকা থেকে যেসব খবরা খবর আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে বা বলা হচ্ছে যে একটু দূরে সরে গিয়ে পাচার বানিজ্যের সাথে যুক্ত ক্যারিয়াররা ড্রাগস জাতীয় পন্য নুতন নুতন কায়দায় আমদানি করছে। চার পাঁচ হাত হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে নির্দেশিত স্হানে। খবর হলো এই যে বিপুল পরিমাণ ড্রাগস রাজ্যে ঢুকছে তার বড় অংশ পাচার করে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। বিএসএফের চোখে ধুলো দিয়ে সেগুলো নানা পথে পাচার হচ্ছে। সোনামুড়া, সীমনা, খোয়াইর আশারামবাড়ী,বাচাইবাড়ী, বেলবাড়ী ,রাগনা এবং শিলাছড়ি দিয়ে। এদের কাছে নাকি এটা তেমন ব্যাপার নয়। এপার থেকে ওপারে ছোট ছোট বাজারের ব্যাগ ছূড়ে দেয়া হয়। টাকার লেনদেনও ব্যাগের মধ্য দিয়ে যেমন হচ্ছে তেমনি হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। আবার নাকি লেনদেন হচ্ছে কলকাতার শিয়ালদহ, হাওড়া এবং মুকুন্দপুরে রং হোটেল গুলোতে।সহজ পথ, চিন্তা ভাবনা নেই। চিকিৎসা রং নামে একেক জনের কাছে নাকি বিস্তর বেআইনি অর্থ থাকছে।

যত আইন কঠোর, যত কড়াকড়ি ততই নাকি ফাঁক থাকে ওদের কাছে। সেই ফাঁক ফোকড় তো ওরা ব্যবহার করছেই সেই সাথে নিত্য নতুন কৌশল। ভূলে গেলে চলবে না যে এই কদিন আগে আখাউড়া স্থলবন্দরে আশ্রম চৌমুহনীর স্যুট কোট পড়া টাই লাগানো এক ধূপধূরস্ত যুবককে বায়ার আটক করেছিল বিএসএফ। তবু নাকি বহু ফাঁক ফোকড় থেকে যায় এবং ফাঁক ফোকড় গলে এপার ওপার চলে যায় ড্রাগস। বাংলাদেশ রং আইন খুবই কঠোর। ধরা পড়লেই ঝুলিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও চলছে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বনে সেই পাচার বানিজ্য। (পরবর্তী পর্যায়ে জুয়েলারি ও গবাদি পশু পাচার পর্ব)


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.