‘লক্ষ্য ২০৪৭-ত্রিপুরা’
জয়ন্ত দেবনাথ
‘লক্ষ্য ২০৪৭’ হল ত্রিপুরা সরকারের একটি নথি, যা ভারতের 'আজাদী কা অমৃত মহোৎসব' এবং ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যে উন্নীত হওয়ার ৫০ তম বর্ষে গত ২১ জানুয়ারী ২০২২-এ গৃহীত একটি দীর্ঘ মেয়াদি কাজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রূপরেখা। আগামী ২৫ বছরে অর্থাৎ ২০৪৭ সাল নাগাদ ত্রিপুরার উন্নয়ন সূচক বা ত্রিপুরার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিভাবে কতটা করা হবে তার একটা প্রাথমিক ইচ্ছার কথা এতে উল্লেখ রয়েছে। বাস্তবে কতটা কি হবে তা পরের কথা। কিন্তু “লক্ষ্যা ২০৪৭ রূপরেখা”-এর পরিকল্পনায় যে সমৃদ্ধ ত্রিপুরার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে এই স্বপ্ন ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যে উন্নীত হওয়ার ৫০ বছর আগে থেকেই এরাজ্যের মানুষ দেখে আসছেন। ন্যূনতম সামজিক চাহিধা গুলিও পুরন হচ্ছিলনা বলেই এরাজ্যের মানুষ একসময় রাজন্য শাসনের সমস্যার পাহাড় থেকে মুক্তি চেয়েছিল।কিন্তু বাস্তব হল-এখনো এরাজ্যের মানুষকে জলের দাবীতে পথ অবরোধ করতে হয়। পাহাড়ী এলাকায় বহুলোকের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিধাই এখনো পূরণ হয়নি। কিন্তু দেশে 'আজাদী কা অমৃত মহোৎসব' চলছে। তবে এটাও বাস্তব সত্য যে সব স্বপ্ন সত্য হয়না। আবার এমনটাও শোনা যায় স্বপ্নে বাস্তব ধরা দিয়েছিল বলে অনেকেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন। তাই স্বপ্ন দেখতে মানা নেই। তাই সময় নষ্ট না করে প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক ২০৪৭ সালের মধ্যে ত্রিপুরাকে একটি উন্নত রাজ্যে উন্নীত করতে “লক্ষ্য ২০৪৭”-এর স্বপ্নের নথিটি-তে কি কি বলা আছে-
“লক্ষ্যা ২০৪৭”-এর ঘোষিত স্বপ্নের নথিতে উপস্থাপিত উন্নয়ন সূচক গুলিকে ছয়টি বিস্তৃত সেক্টরে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন ১। পরিবেশ সংক্রান্ত ২। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত, ৩। শাসন, শিল্প ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত, ৪। অবকাঠামো, যোগাযোগ ও লজিস্টিকস ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংক্রান্ত, ৫। প্রাথমিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংক্রান্ত ৬। সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংক্রান্ত। ছয়টি সেক্টরে মোট ২৫১টি উন্নয়ন সূচক চিহ্নিত করা হয়েছে যা বিস্তৃত ভাবে রাজ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন পরিষেবার প্রাপ্যতাকে ২০৪৭ সাল-এর মধ্যে নিশ্চিত করবে ।
“লক্ষ্যা ২০৪৭”-এর স্বপ্নের নথিটি-তে বলা আছে- নথিটি রাজ্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক নির্বাহীদের প্রায় চার মাসের কঠিন পরিশ্রমের ফসল। তাতে একথাও বলা আছে যে নথিটি রাজ্যের বহু শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের ‘ইনপুট’ এবং ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ নিয়ে পরিমার্জিত করা হয়েছে। একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ নথিটি-র বহু কিছু পুনর্বিবেচনা করেছেন।
“লক্ষ্যা ২০৪৭”-এর স্বপ্নের নথিটি-তে বলা আছে- সেক্টর ভিত্তিক শ্রেণীবদ্ধ উন্নয়ন সূচক গুলি রুপায়নের জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে৷ এই চিহ্নিত সূচক গুলির মধ্যে কিছু, কাজ রয়েছে যেগুলি শেষের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বা কিছু কাজ চলছে যেগুলি আগামী ৫ বা ১০ বছরের অনেক কম সময়ের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে।এই দলিলটিতে কাজের যে রোড ম্যাপের কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে কোন বিতর্ক এড়াতে বলা হয়েছে, সব কাজের অগ্রগতির উপর সর্বদা দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে সময়ের আগেই শেষ করা হবে এসব কাজ। আরও বলে রাখা আছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, উদ্ভাবনী ধারণা এবং কাজের পদ্ধতির সাথে তাল মিলিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে কৌশল পুনঃপ্রণয়ন এবং সংশোধন করতে হতে পারে এবং কার্যকরী সময়ের মধ্যে বাস্তব ক্ষেত্রের অবস্থান বিবেচনায় এসব সংশোধন করা হবে।
একথা সত্য যদি বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে “লক্ষ্য ২০৪৭” নথি অনুযায়ী কাজকর্ম চলে তাহলে রাজ্য স্তরের সমস্ত নীতি নির্ধারক এবং ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের থেকে শুরু করে জেলা, ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েত/গ্রাম উন্নয়ন কর্মীদের আগামী দিনে যেকোন উন্নয়ন মূলক কাজ কর্মে এই নথিটি দৃঢ়ভাবে নয়া দিশা ও নির্দেশনা দেবে। রাজ্যে বিনিয়োগকারী বাড়বে। পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের এতে সুবিধা হবে। এটি ২০৪৭ সালের মধ্যে ত্রিপুরাকে একটি উন্নত রাজ্যের মর্যাদায় নিয়ে যেতে পারে।
এবারে দেখা যাক ২০৪৭ সালের মধ্যে ত্রিপুরাকে একটি উন্নত রাজ্যে উন্নীত করতে “লক্ষ্যা ২০৪৭”-এর ঘোষিত স্বপ্নের নথিতে উপস্থাপিত উন্নয়ন সূচক গুলিকে যে ছয়টি বিস্তৃত সেক্টরে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে তার কোন সেক্টরের উন্নয়নে প্রধান প্রধান কি কি সুপারিশ করা হয়েছে বা কি কি বলা আছে-
১) পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সেক্টর
বনজ পণ্যের মূল্য পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
রাজ্যের বনাঞ্চলে বর্তমানে অত্যন্ত ঘন বনের গঠন বিদ্যমান 8.5% বনাঞ্চলে। তা 40%-এ উন্নীত করা হবে।
জিএসডিপিতে বনায়ন খাতের অবদান 25% বৃদ্ধি করা হবে।
বন খাতে বেসরকারী বিনিয়োগ 1000 কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
সংরক্ষিত এলাকার বাইরেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হবে।
আগর-কাঠের অর্থনীতিকে 10,000 কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
সব বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা করা হবে।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টের 90.00% সবুজ প্রযুক্তিতে চলবে।
২) গভর্নেন্স সেক্টর
ন্যায়বিচার দ্রুত এবং সাধারন মানুষের খুব সহজ লভ্য করা হবে।
কর্মসংস্থান/নিয়োগ ক্ষেত্রে অনলাইনে সব হবে।
দক্ষতা ও পুনঃস্কিলিংয়ের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হবে।
পঞ্চায়েত/ওয়ার্ড স্তর পর্যন্ত তথ্যের প্রবাহ সহজ করা হবে।
সমস্ত নাগরিকের কাছে অনলাইনে সব পরিষেবা এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সহ ঘরের দরজায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ভূমি সম্পদের ডাটা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করা হবে।
রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স সেটআপকে শক্তিশালী করা করা হবে।
রাজ্যে HAM রেডিও নেটওয়ার্ক বাড়ানো হবে।
আইটি-তে দক্ষ সরকারি কর্মীবাহিনী বাড়ানো হবে।
সকল বাসস্থানে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হবে।
কাগজ বিহীন অনলাইনে অফিসের ফাইল চলবে।
সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ওয়ান-স্টপ পরিকাঠামো থাকবে।
পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অংশ গ্রহণ 33% করা হবে।
রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর 75% কে শিল্প বাহিনী-র উপযোগী হিসাবে প্রশিক্ষিত করা হবে।
সমস্ত জায়গায় পৃথক সংযোগে মিটারযুক্ত জল সরবরাহ হবে।
সকল বসতিতে পাবলিক টয়লেট, রাস্তায় আলো থাকবে।
সমস্ত পঞ্চায়েত/ভিসি গুলিতে তথ্য কেন্দ্র থাকবে।
সরকারী অফিসার কর্মকর্তাদের দেশে ও বিদেশে এক্সপোজার ভিজিট বাড়ানো হবে ।
সমস্ত জায়গায় সমন্বিত পার্কিং ব্যাবস্থা থাকবে।
বস্তি মুক্ত ত্রিপুরা গড়া হবে।
সমস্ত জায়গায় 24 X 7 পানীয় জল সরবরাহ থাকবে। নগর-শহরের ১০% বাড়িতে পানীয় জলের চাহিধা বৃষ্টির জল সংগ্রহের ব্যাবস্থাপনায় নিশ্চিত করা হবে।
সমস্ত প্রধান সড়কে এক্সক্লুসিভ সাইকেল ট্র্যাক এবং পথচারী লেন থাকবে।
স্মার্ট আরবান গভর্নেন্স — সবশহরে ট্রাফিক সিগন্যাল, বন্যার সতর্কতা, সিসিটিভি, নিরাপত্তা সতর্কতা, ওয়াই-ফাই ইত্যাদি থাকবে।
ULB-এর জন্য রাজস্ব ব্যয়ের 100% স্ব-অর্থায়ন হবে।
৩) শিল্প ও বিনিয়োগ খাত
কৃষিতে কর্মশক্তির নির্ভরতাকে বিদায় জানানো হবে ।
শুকরের মাংস রপ্তানির মাত্রা 20 মিলিয়ন কেজিতে বৃদ্ধি করা হবে।
ব্যাংক ক্রেডিট ডিপোজিট অনুপাত 80% করা হবে।
ইকো-ট্যুরিজমের প্রচারের জন্য 25টি বন পথের উন্নয়ন করা হবে।
ইকো পার্ক এবং উদ্যান গুলিতে ইকো ট্যুরিজমের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ‘টুরিস্ট ফুটফল’ 10 গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
রাবারে মূল্য সংযোজন 10 গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
আইটি সেক্টরে 1000 নয়া স্টার্ট আপের প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সমস্ত সংগঠিত কর্মশক্তির 20% থাকবে আইটি সেক্টরে ।
আমদানি সহ বাংলাদেশের মাধ্যমে ব্যবসা ও বাণিজ্য আরও বাড়ানো হবে।
শিল্প উৎপাদনের মূল্য 50,000 কোটি টাকা করা হবে।
জাতীয় প্রয়োজনের 25% আগরবাত্তি ত্রিপুরা থেকে রপ্তানী হবে।
সমস্ত শহুরে পরিবারের জন্য সরাসরি PNG সংযোগ প্রদান করা হবে।
যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রতি বছর 1,00,000 জনকে নতুন করে ট্রনিং দেওয়া এবং 25,000 জনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুনরায় ট্রনিং দেওয়া হবে।
তাঁত ও হস্তশিল্প সেক্টরে লেনদেন 1,000 কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।
বিশেষ এবং সবুজ চা উৎপাদন বৃদ্ধির মাত্রা 20% বাড়ানো হবে।
ত্রিপুরা হবে বাঁশ ও বেতের পণ্যের হাব।
প্রতিটি বাড়িতে 24x7 পাওয়ার সাপ্লাই নিশ্চিত করা হবে।
প্রতি 10 কিলোমিটারে রাস্তার ধারের বিভিন্ন সুবিধা (Wayside amenities) থাকবে।
কাজের চাহিদা কমাতে স্ব-উৎপন্ন কার্যক্রমের প্রচার প্রসার বাড়ানো হবে।
GSDP-তে পর্যটন ক্ষেত্রের অবদান 2047 সালের মধ্যে 15%-এ উন্নীত করা হবে।
20টি পর্যটন সার্কিটকে আরও বিকশিত করা হবে।
25,000 হোম স্টে-র সুবিধা সৃষ্টি সহ রাজ্যে পর্যটকদের আবাসন সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
চা, চিকিৎসা, ইকো, অ্যাডভেঞ্চার ক্ষেত্রে পর্যটকদের উপস্থিতি 20% বৃদ্ধি করা হবে।
ত্রিপুরায় পর্যটকদের পদচারণা বার্ষিক 30,00,000 করা হবে।
মোট কর্মসংস্থানের 15% পর্যটন খাতে সৃষ্টি করা হবে।
প্রতি বছর 20,000 ব্যক্তিকে আতিথেয়তা সেক্টরে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
৪) অবকাঠামো, যোগাযোগ এবং লজিস্টিকস সেক্টর
গ্রামীণ এলাকায় প্রতি দিন প্রতি জনে 70 লিটার হিসাবে চব্বিশ ঘন্টা নিশ্চিত জল সরবরাহ করা হবে।
সেচের আওতায় আনা হবে ৮0% চাষযোগ্য এলাকা।
150 কিলোমিটার নদীর নাব্যতা বাড়ানো হবে।
সমস্ত জেলা সদর দপ্তর এবং মহকুমা সদর দফতরের সাথে চার লেনের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
সমস্ত ব্লকের কাঁচা রাস্তার সাথে পাকা রাস্তার দুই লেনের সংযোগ হবে।
সব বাসস্থানের সাথে মধ্যবর্তী লেন সড়ক যোগাযোগ (Intermediate Lane road connectivity) থাকবে।
প্রতি 10 কিলোমিটার অন্তত নদীতে সেতু হবে।
সমস্ত রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, হেলিপ্যাড, নদী বন্দর, পর্যটন স্থান, ইকো পার্ক, আন্তর্জাতিক সীমান্তে 4 লেনের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
সমস্ত রাজ্য সড়ক 4 লেন হবে।
প্রধান শহরে রিং রোড, বাইপাস এবং সার্ভিস লেন থাকবে।
বিমানবন্দর থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত হালকা মেট্রো বা মনো রেল থাকবে।
পুরো রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সমস্ত শহুরে সুবিধার ব্যাবস্থা করা হবে।
রাজ্যের সমস্ত পাড়ায় বাসস্থানের পাশেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অ্যাক্সেস থাকবে।
সমস্ত প্রধান সড়কে ধীরগতির এবং দ্রুত চলমান গাড়ির জন্য পৃথক ব্যাবস্থা থাকবে।
সমস্ত জেলা সদর এবং উপ-বিভাগের সাথে রেল সংযোগ করা হবে।
ভারত-বাংলাদেশের চারটি স্থানে রেল যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে।
সমস্ত প্রতিবেশী রাজ্যের সাথে রেল যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে।
ত্রিপুরায় ফ্লাইং ট্রেনিং স্কুল গড়ে তোলা হবে।
ডেডিকেটেড হেলিকপ্টার পরিষেবা সহ সমস্ত ব্লক পর্যন্ত এয়ার কানেক্টিভিটি (হেলিপ্যাড) গড়ে তোলা হবে।
সাতটি জায়গায় আন্তর্জাতিক সংযোগ গড়ে তোলা হবে।
প্রোটোকল রুট এক্সটেনশন সহ সাতটি নদীতে বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের সাথে নৌপথ সংযোগ স্থাপন করা হবে।
ত্রিপুরার মধ্যে 150 কিলোমিটারের অভ্যন্তরীণ জল পরিবহন ব্যাবস্থা গড়ে তোলা হবে।
চারটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সাথে আন্তঃরাজ্য বাস পরিষেবা গড়ে তোলা হবে।
উন্নত রেল ইয়ার্ড গড়ে তোলা হবে।
সমস্ত জেলায় আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (আরটিএ) স্থাপন করা হবে।
সকল শহরে সিটি বাস সার্ভিস থাকবে।
পার্কিং নীতি বাস্তবায়ন করা হবে।
সমস্ত জেলায় ড্রাইভিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন স্থাপন করা হবে।
দক্ষতা বাড়াতে বাণিজ্যিক ড্রাইভারদের প্রশিক্ষন দেওয়া হবে।
মোট বহরের সর্বোচ্চ 25% পেট্রোল/ডিজেল যান থাকবে।
ত্রিপুরায় লজিস্টিক পরিষেবার বিকাশ ঘ্টানো হবে।
৫) প্রাথমিক খাত
কমপক্ষে 25% জমিতে জৈব চাষ।করা হবে।
সমস্ত প্রধান ফসলের উৎপাদনশীলতা তিনগুণ করা হবে।
কৃষকদের প্রকৃত আয় বর্তমান স্তর থেকে 5 (পাঁচ) গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
নিট ফসলি জমির ৮0% জন্য নিশ্চিত সেচ সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রতিটি RD ব্লকে ফসল কাটার পরের কাজ গুলির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গঠন করা হবে।
উদ্যানজাত ফসলের উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি করা হবে।
কৃষি খাতে ফসল কাটার পর লোকসান 10% এ নামিয়ে আনা হবে।
কৃষিতে মূল্য সংযোজন 20 গুণ বৃদ্ধি করা হবে (প্রকৃত মূল্য)।
হর্টিকালচারে ফুল চাষের সুবিধা দ্বিগুণ করা হবে।
কৃষিতে ঋণ চারগুণ (বাস্তব মূল্য) বাড়ানো হবে।
৮0% ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উন্নত বীজ ব্যবহার করা হবে।
বর্তমান বর্জ্য জমির 13.90% পুনরুদ্ধার করা হবে।
পশুপালনের পাশাপাশি মৎস্য খাতের খাদ্যের প্রয়োজনে স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে লক্ষ্য করে ভুট্টা এবং অন্যান্য পশুখাদ্য ফসল উৎপাদন বাড়ানো হবে।
কৃষিতে আইটি অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো হবে।
ডিম উৎপাদন চারগুণ করা হবে।
মাংস উৎপাদন চারগুণ করা হবে।
দুধ উৎপাদন তিনগুণ বাড়ানো হবে।
মাছের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করা হবে।
মৎস্য উৎপাদনের জন্য জলাশয় 50% বৃদ্ধি করা হবে।
৬) সামাজিক সেক্টর
শিক্ষায় প্রাথমিক স্তরে সমস্ত শিশুর 100% স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করা হবে।
সমস্ত উচ্চ এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলিতে ICT এবং ভোকেশনাল ল্যাব থাকবে।
সমস্ত মিড-ডে মিল রান্নাঘরে পরিষ্কার জ্বালানী; সকল প্রতিষ্ঠানে হল থাকবে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ড্রপআউট 0% করা হবে।
50% ছাত্রর স্নাতক স্তরে উত্তরণ নিশ্চিত করা হবে।
রাজ্যের মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
সমস্ত স্কুল ও কলেজে খেলার মাঠ থাকবে।
সমস্ত স্কুল ও কলেজে ফুটবল এবং জিমনেসিয়াম সুবিধা থাকবে।
100% বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বতন্ত্র শিক্ষামূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
রাজ্যের 10% শিশুকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের 100% কর্ম/বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ব্যাবস্থা থাকবে।
রাজ্য এবং আঞ্চলিক চাহিদা মেটাতে আইন শিক্ষা ব্যাবস্থার বিশেষ ভাবে বিকাশ ঘটানো হবে।
স্কুল শিক্ষকদের জন্য ক্যাডার সার্ভিস এবং দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যাবস্থা থাকবে।
কমপক্ষে 1000টি স্কুলে থিংকারিং ল্যাব (tinkering labs) স্থাপন করা হবে।
অনলাইন রেশন কার্ড সংক্রান্ত পরিষেবা এবং যাবতীয় প্রাত্যহিক পরিসেবা দোরগোড়ায় ডেলিভারির ব্যবস্থা করা করা হবে।
PDS এর মাধ্যমে বিতরণ করা সমস্ত আইটেমের 50% ত্রিপুরায় প্রক্রিয়াকরন হবে।
স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য ত্রিপুরায় চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করার ব্যাবস্থা করা হবে।
ত্রিপুরায় বিশেষ এবং সুপার স্পেশালিটি স্বাস্থ্য পরিষেবা গুলিতে পর্যাপ্তততা আনা হবে৷
মাতৃকালীন মৃত্যুর হার 30-এ নামিয়ে আনা হবে।
টিকা দেওয়ার মাত্রা 100% করা হবে।
অপুষ্টি দূর করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা কমপক্ষে ৮0% করা হবে।
ত্রিপুরাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
সমস্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য লাভজনক কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা গড়ে তোলা হবে।
সমস্ত গ্রামকে মডেল গ্রামে রূপান্তর করা হবে।
সমস্ত PwD-দের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা হবে।
সমস্ত পাবলিক প্লেসে PwD-দের ‘অ্যাক্সেসযোগ্য’ পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
সকল প্রবীণ নাগরিক/নিঃস্ব/অনাথদের বিভিন্ন মাত্রায় 100% প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া হবে।
মানসিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য 100% প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সর্বাঙ্গীণ বৃদ্ধির জন্য আধুনিক সুবিধা সহ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সাংকেতিক ভাষার সুবিধা্দি গড়ে তোলা হবে।
মাদক মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলা হবে।
ST, SC, OBC এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের দক্ষতা উন্নয়ন রাজ্যের বাকি অংশের ছেলেমেয়েদের সমানে উন্নীত করা হবে।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ত্রিপুরাকে অগ্রনী রাজ্য হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
স্বচ্ছ এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠনে যুবসমাজকে বিশেষ ভাবে গড়ে তোলা হবে।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হ্য় যে, রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে উপরে উল্লেখিত সুপারিশ বা প্রতিশ্রুতি গুলি গত ৫০ বছর ধরেই রাজ্যের বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসছে। গত ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে বিজেপিও তাদের ‘ভিসন ডকুমেন্ট’-এ কম বেশী এসব কথাই ফলাও করে বলেছিল। বাস্তবে এসব প্রতিশ্রুতির কতটা রূপায়ণ হয়েছে বা হচ্ছে তা এটা ত্রিপুরাবাসী মাত্র সবারই জানা। তাই এক্ষেত্রে ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ ডকুমেন্টে বর্নিত বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি গুলির বাস্তবে বাস্তবায়ন কতটা হবে বা করা যাবে তার উত্তরের জন্যেও আমাদের ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে। কেননা, ছয়টি সেক্টরে যে ২৫১টি উন্নয়ন সূচক চিহ্নিত করা হয়েছে বা বিস্তৃত ভাবে রাজ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন পরিষেবার প্রাপ্যতাকে ২০৪৭ সাল-এর মধ্যে নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার জন্য কত পরিমাণে টাকা চাই তার কিন্তু হিসাব ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ ডকুমেন্টে নেই। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে মানা নেই। তাই আমরা ‘২০৪৭’ পর্যন্ত স্বপ্নের সোনালী ভবিষ্যতের আশায় থাকবো। ( লেখক একজন সিনিয়র সাংবাদিক )