পাঁচের প্যাঁচে একাকীত্ব!
দেবারতি দত্ত
'একা! একা! পথ চলা, একা! একা! কথা বলা' ।
গানের লাইনগুলো কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে জীবনের সাথে। ' একা ' শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ব্যথা, কষ্ট, হতাশা, শোক, আর না পাওয়ার হাজারো যন্ত্রণা। পৃথিবীর আলো দেখার থেকে, আমরা যাত্রা শুরু করি শেষের দিকের। এই গোটা সফর তৈরি করি আমরা একাই। যে সব সম্পর্কের বাঁধনে আমরা জড়াই, তা ছিন্ন করেই শেষের ট্রেনে অন্তিম ঠিকানায় পৌঁছতে হবে। বিভিন্ন সম্পর্কের মায়াজাল আষটে পৃষ্টে আমাদেরকে বেঁধে রাখে। যার মায়া কাটাতে আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই স্বল্প। আমরা সবাই ক্ষণিকের অতিথি।
মায়ের কোলে শৈশব কাটে, বাবার যত্নে ধীরে ধীরে শৈশবের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। মনের বয়েস বাড়ার সাথে সাথে, ভাবনারা দিক পাল্টায়। অলীক স্বপ্নরাজ্যে গোপনে তার খেয়ালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। অনুভূতিরা দিশাহীন হয়ে ঘুড়ে বেড়ায়। কিন্তু মনের খুব গভীরে আবারও কেমন একাকীত্ব অনুভব হতে থাকে। সব পেয়েও না পাওয়ার তীব্র অভাব বুকের পাঁজরগুলো কে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। বলতে এবং বোঝাতে না পারার যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খায় আমাদের মন শরীর।
দেখতে দেখতে দুটো অধ্যায় কাটিয়ে এলাম। তিনে দাঁড়িয়ে ' দায়িত্ববোধ' যেখানে মুঠোয় লুকোনো প্রেম, আবদার, আদর, চাওয়া পাওয়া সবাই কে ছুটির আদেশ দেয়া হলো। মনের ঘরে ভিড় জমালো কর্তব্য, দায়িত্ব, অধিকারবোধ আরো ওজনদার সব জীবনের বিশেষনেরা। চলতে চলতে হঠাৎ হোঁচট খেলাম। দেখি, সেই একাকীত্ব দাঁড়িয়ে। আবারও তার সাথে গোপনে আলাপচারিতাটুকু শেষ করে নিলাম। সিঁড়ি ভেঙে আরো উপরে উঠলাম। দেখি মানুষেরা হারিয়েছে মনুষত্ব। অভাব ঘটেছে সভ্যতায়, ব্যবহারে, শৃঙ্খলতায়। সমাজ ডুবেছে অমানিশার অন্ধকারে। কুলুষিত হয়েছে মানুষের চিন্তাধারা। ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে সমাজে ভাঙ্গন ধরেছে।
তখন চারের অধ্যায় শিখিয়েছে সঠিক নেতৃত্ববোধ। যার স্পর্শে শাপমোচন ঘটবে এই সমাজের। এই দলাদলিতে আবারও একাকীত্ব কব্জা করেছে। চলতে চলতে, জীবনের শেষ অধ্যায়ের কবলে দাঁড়িয়ে। ' বার্ধক্য ' শব্দটায় মনের ও শরীরের সব জোর হ্রাস পায়। একেকটা দিন, শুধু একেকটা পরিণতির কথা মনে করায়। তাই, শেষের রাস্তায় অপেক্ষায় আছি, শুরুর অধ্যায়গুলোকে আবারো ফ্ল্যাশব্যাক করানো যায় কিনা। দেখি, একাকীত্ব পুড়ছে তার অন্তোষ্টিতে।