ঐ সাতটা দিন

দেবারতি দত্ত

'ভালোবাসি' বলতে কোনো দ্বিধা নেই আমার। লুকিয়েই বা রাখবো কেন বলতে পারেন? আমরা যারা ভালোবাসি, বছরের ঐ সাতটা দিন, মন থেকে নিয়ম করে পালন করি। বাকি উৎসবগুলো যদি কোনো নির্দিষ্ট দিনে পালন করা যায়, তবে ঐ সাতটা দিনকে নিয়ে কেন এত বিদ্রুপ? কেন এত হাসাহাসি? কেনই বা বলা হয় নতুন যুগের আদিখ্যেতা? আমরা যারা ভালবাসতে জানি, ঐ সাতটা দিন, আমাদের কাছে একেকটা উৎসবের মতো। যেমনভাবে আমরা ভালোবেসে, দুর্গাপূজা, দেওয়ালি, ঈদ, ক্রিসমাস পালন করে থাকি উৎসবের মেজাজে। ঠিক একইভাবে, উৎসবের অভিধানে নতুন করে লিপিবদ্ধ করা হলো 'ঐ সাতটা দিন' কে। কি? ভুল হল কথাও? আবার বলবেন না তো সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি? ভালোবাসারও কি আবার কোনো নির্দিষ্ট দিন বা সপ্তাহ হয়? তাহলে আপনারা ভুল করছেন। ভালোবাসাও বাকি ধর্মের মতই। ভালোবাসতে জানা মানুষদের অভিধানে আরেকটা ধর্ম। তাহলে দোষ কোথায় বলতে পারেন? খুব আদর যত্ন করে ঐ সাতটি দিনের নাম রাখা হয়েছে। এখানে আর লিখলাম না। আমি জানি, আপনারা সকলেই এই নাম গুলোর সাথে বহু বছর পরিচিত।

মেয়েটাও ছিল আমাদের দলেরেই। ঐ সাতটা দিন তার কাছে ছিল সাতটা স্বপ্ন, সাতটা বিশ্বাস, সাতটা অপেক্ষা। আজ থেকে, সাতদিনের রঙিন খাম গুলোতে লেখা হলো সাতটা নাম।

গোলাপের সোহাগ-

মেয়েটি খুব গোলাপ ভালোবাসতো। তাই ছেলেটি গুনে গুনে সাতটি লাল গোলাপ উপহার এ মেয়েটিকে দিল। কি জানি পছন্দ হলো কিনা? ছেলেটি জিজ্ঞেস করল "কিরে কিছু বলছিস না যে?" মনে হল, মেয়েটি বলল 'ভালোবাসি'।

মনে মনে নয়, মুখে বল-

মেয়েটি বারবার ছেলেটির মুখে একটা কথাই শুনতে চেয়েছিল 'ভালোবাসি তোকে'। আজও ঠিক এমনটাই শুনবে বলে অপেক্ষায় ছিল মেয়েটি। ছেলেটি এসে পাশে বসে মৃদু স্বরে বলল- ' খুব ভালোবাসি তোকে'। এই কথাটিই তো তুই শুনতে চেয়েছিলে বারবার, তাই না?

একটা চকলেট চাই-

ছেলেটি ভাবছিল তার জন্য কোন চকলেটা নেবে। মেয়েটি খুব চকলেট পছন্দ করে। বাচ্চাদের মত আবদার করতেই থাকে। ভাবলাম পাগলিটা বসেই থাকবে পথ চেয়ে, যতক্ষণ না চকলেট তার হাতে পায়। তাই কিছু চিন্তা না করেই, চকলেটের একটা বড় হেম্পার কিনে,ছেলেটি চলেই গেল তার চকলেট গার্লের কাছে।

লাল হলুদ টেডি-

ছোটবেলায় দেখতাম, আমার ছোট বোন খুব সুন্দর করে, টেডি দিয়ে ঘর সাজাতো। ছোটবেলায় জন্মদিনে তার দাবি থাকতো একটা টেডির। আমিও নিয়ম করে প্রত্যেক বছর তাকে ঐ পুতুলটা কিনে দিতাম। কয়েক বছর ধরে টেডির দাবিদার অন্য কেউ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দোকানে দোকানে লাল-হলুদ সব ঐ পুতুলদের মেলা। কিন্তু কেনার সময় মনে হল,এই ছোটদের মাঝখানে আমি খুবই বেমানান। তাই টেডি আর কেনাই হলো না, আমার গুড়িয়া টার জন্য। প্রথমে একটু অভিমান করল আমার টেডি গার্ল। তারপর, নিজের মতো করে আমার না আনার কারণটাও বুঝে গেল সে।

প্রমিজ কর-

'সারা জীবন আমায় এভাবেই আগলে রাখবি, প্রমিজ করে বল আমায়' মেয়েটি বলতো ছেলেটিকে।

আজও এই কথাটি শোনার জন্যই ছেলেটি ছুটে এসেছিল তার কাছে। মনে-মনে ছেলেটি বলল- 'ভালোবাসবো তোকে মৃত্যুর পরেও'। এটাই আমার প্রমিজ তোর কাছে। শুনতে পাচ্ছিস? চিৎকার করে বলল ছেলেটি। মনে হল চাপা গলায় কেও উত্তর দিলো 'প্রমিজ'? আমিও বললাম- 'প্রমিজ'।

বুকে আগলে রাখ আমায়-

আজ সকাল সকাল ছেলেটি তার একমাত্র ভরসার জায়গায় চলে এসেছিল। যেখানে সে গত সাত মাস ধরে আসছে। কত কথা, কত ঝগড়া, কত আবদারে ভরা এই সাত মাস। বরাবরই আক্ষেপ ছিল মেয়েটির যে,

জড়িয়ে ধরে একে অপরকে, খোলা আকাশের নিচে একসাথে, পূর্ণিমা দেখা হয়নি তাদের কতকাল। একে অপরের বুকে মাথা রেখে কাব্য করা হয়নি কতটা বছর। তাই গত বছরই দাবি রেখেছিল, এ বছর তাকে জড়িয়ে ধরে কাটাতে হবে একটা গোটা পূর্ণিমা রাত। পুরোটা না পারলেও, আংশিক পেরেছিল বলে মনে হল ছেলেটির। গোটা রাত্তির না হোক, একটা দিনের অর্ধেকটা সময়ই কাটিয়েছিল তাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু তাদের এই আদুরে মুহূর্তে বাধ সাধল প্রকৃতি। মুষলধারে

বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরল ছেলেটি। আসার আগে, মেয়েটিকে কাল দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলো।

একটু ঠোঁটের স্পর্শ-

আজ একান্ত ব্যক্তিগত একটা দিন। যার জন্য আজ মেয়েটি নয়,ছেলেটি অপেক্ষা করে বসেছিল। এই দিন টার পুরো দাবিদার মেয়েটি। জড়িয়ে ধরে ছেলেটি মেয়েটিকে চুমু খেলো। আজও ছেলেটির বুকে ঠিক একই রকমের অনুভূতি হয়। তার নিজেকে নতুন বলে মনে হয় তার প্রেয়সীর কাছে। চোখ বন্ধ করল ছেলেটি। একটা আলতো ছোঁয়া অনুভব করল সে। ভেবেছিলো এই সাতদিনের অনুভূতিগুলো মেয়েটির সাথে ভাগ করে নেবে। কিন্তু কফিনে শুয়ে মানুষটা কি পারবে, তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে- ' বল শুনতে পাচ্ছি'।

এমনভাবেই হয়তো ছেলেটি বাঁচিয়ে রাখবে তার ভালোবাসাকে, ঐ সাতটি দিনের মধ্যে দিয়ে, আমৃত্যু। চলে আসার আগে একটা ডায়েরি রেখে এসেছিল মেয়েটির কফিনের পাশে। তাতে লেখা ছিল সাতদিনের একেকটা অনুভূতি, একেকটা বিশ্বাস। " পরের বছর আবারও পালন করব এই সাতটা দিন, অপেক্ষায় থাকিস", মনে মনে বলল ছেলেটি। কারণ, ছেলেটি বিশ্বাস করে ভালবাসার কোনো মৃত্যু হয় না। যার কেউ নেই, তার আছে শুধু অপেক্ষা। আর এই অপেক্ষাই দুজনকে বারবার ভালবাসতে শেখাবে। এভাবেই আজীবন লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে এক অনন্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
15.02.2022A. senguptaIllustration of the topic is unique