ত্রিপুরাতে মোদীজী-র শ্লোগানটাই সত্য- 'জান হে তো জাহান হে'

রাজীব দত্ত

আসছে বছর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসেই ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন। সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচন সম্পন্ন হল। এই রাজ্যের মানুষ এই পুর নির্বাচনকে সেমি ফাইনাল ধরেই পথে নেমেছিলেন ভোট দিতে। কিন্তু অন স্ক্রিনে সারা দেশ দেখল নির্বাচনের নামে কি কি হয়েছে। সব গুলো বিরোধী দল অভিযোগ তোললো নির্বাচনের নামে হয়েছে শুধু প্রহসন আর লুকোচুরি খেলা। বলা যেতে পারে শাসকদল বিজেপি এক প্রস্থ প্রফেশনাল প্লেয়ারদের মতো শরীর গরম করে নিল ২০২৩-এর নির্বাচনের আগেই।



এই নির্বাচন মিটতেই আবার শুরু করোনা। এক্সপার্টদের ধারনা এই করোনা-করোনা করে এই বছরের অর্ধেক সময়ও গোল্লায় যাবে। একটি সরকার পরিবর্তন হল ২০১৮ সালে এর মাত্র এক বছর পরেই ২০১৯ সালের মার্চ থেকেই দেশ কার্যত লকড। ২০-২১ এভাবেই কাটলো। ২২-এর শুরু, করোনাও শুরু। ২০২৩-এ তো বিধানসভা নির্বাচনের জন্যে মহড়াই শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে তিন বছর আমরা লকড হয়েই থাকলাম। বাকী সময়টুকু কাটল রাজনৈতিক চর্চা, ভোটের নামে মারামারি আর পূজানুষ্ঠান করেই। আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি এই তিন-সাড়ে তিন বছরে আমাদের বেকারদের কথা! ছাত্রছাত্রীদের কথা! ছোট-মাঝারী ব্যাবসায়িদের কথা! ভেবে দেখেছি কর্মহীন এরাজ্যের প্রায় চৌদ্দ লক্ষ বেকারদের কথা? ঠিক কত সংখ্যক শিক্ষিত বেকার এই মুহূর্তে চাকুরীর বয়স হারিয়ে পথে বসেছে! স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কত! ঠিক কত সংখ্যক বেকার কাজ হারিয়েছে! রাজ্যে কটা কল-কারখানা হয়েছে! কত পুঁজি এসেছে? কতজন বেকার স্বনির্ভর হয়েছে! প্রস্তাবিত এইমসের কি খবর! মিস কলে চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতির কি হাল! মুখ্যমন্ত্রীর জন দরবারও এখন বন্ধ। বলে লিস্ট শেষ করা যাবেনা। এবং এই প্রশ্নগুলি করার অবকাশও আমাদের ছিলনা। তাই বর্তমান সরকারের আমলে কি কাজ হয়েছে এই প্রশ্নটাই অবান্তর। কারন ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ডাবল ইঞ্জিনকে করোনা ভাইরাস এক বছরের মাথাতেই বিকল করে দিয়েছে। এখন সেই বিখ্যাত গানের লাইনটির মতো আমাদের অবস্থা, ‘গাড়ী চলেনা, চলেনা, চ-লে-না রে… গাড়ী চলেনা’।



এই রাজ্যের ৬০ সদস্য বিশিষ্ট বিধানসভা ক্ষেত্রে গত তিন- সাড়ে তিন বছরে উন্নয়নের ছবিটা বড় ক্লিশে। আর হবে নাই বা কেন! সরকারে থাকা ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের ভেতরে বাইরে প্রথমদিন থেকেই কোন্দল। শরীক দলও প্রথম থেকেই গা ছাড়া ভাব। ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া হাতে গোনা দুই তিন জন মন্ত্রী দিয়েই চলছে সরকার। এক আশ্চর্য রকমের নীরবতা চলছে দলের অভ্যন্তরে-প্রশাসনে সর্বত্র। কথায় আছে, ‘খেতের ফসল খেতেই নষ্ট হয়’। সমাজকল্যাণ থেকে অর্থ, মৎস্য দপ্তর থেকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন, কৃষি, শিল্প বিদু্ত ইত্যাদি সবগুলি দপ্তরই এখন সাইনবোর্ড সর্বস্ব। মন্ত্রীরাও সব নিদ্রায় আছেন যেন। মাঝে মধ্যে তুঘলকি ফরমান আর বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শিক্ষা দপ্তর ফোঁস-ফাঁস করলেও ল্যাজেগোবরে অবস্থা। তাই মন্ত্রী সাহেব বাধ্য হয়েছেন, বাইরের রাজ্য থেকে এন জি ও-দের হায়ার করে এনে স্মার্ট করতে শিক্ষা দপ্তরকে। মৎস্য মন্ত্রী অসুস্থ, বয়েস হয়েছে অনেক। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীদের ঠিক কবে মাঠে দেখা গেছে মনে নেই। অর্থমন্ত্রী আছেন, কিন্তু অর্থই নেই কোষাগারে তো তিনি করবেনটা কি! বিদ্যুৎ দপ্তরের বেশীরভাগ মিটারই নষ্ট, মানে পুরো দপ্তরটাই বসে গেছে। রইল শিল্প দপ্তর, কে করবে ইনভেস্ট এই রাজ্যে! গত ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর ধরে বহু সামিট হল ফাইভস্টার হোটেল বুক করে, খানাপিনা করে কিন্তু শিল্পের দেখা কই। একসময়ে এই রাজ্যের বেকাররা তবুও কন্ট্রাক্টে কিছু কাজ পেতো। এখন সব বাইরের রাজ্যের কন্ট্রাক্টর’রা এসে এই রাজ্যে কাজ করছে। এখানকার বেকাররা কাজই পায়না। আইটি সেক্টরে বিশাল কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারতো, কিন্তু সেই গুঁড়েও বালি। আগের কোম্পানী গুলির কাছেই কোন কাজ নেই।



এতক্ষন শুধু সরকারের কথা বললাম। জানি গোস্যা করবেন অনেক নেতা মন্রীই। তাই বিরোধীদের কথা বলে ব্যালেন্স করার একটু চেষ্টা করা যাক। বিরোধী কণ্ঠ গুলি দীর্ঘদিন সরকারে থাকতে থাকতে ক্ষমতা তাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তাই বিধানসভার ওয়েলেও উনারা এখনও প্রকৃত বিরোধী হয়ে উঠতে পারলেন না। এই মুহূর্তে বিরোধীদলের টার্গেট মানুষের কথা বলা নয়, দেশের কথা বলা নয়। একটাই লক্ষ, নিজেদের হারিয়ে যাওয়া জমি যেনতেন প্রকারেণ ফিরে পাওয়া। তাই বিধানসভা হোক কিংবা রাজপথে, মানুষের উন্নয়ন নয়, রাজনীতিটাই আজ তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। আসলে উনারা এখনও বিশ্বাস করতে পারেন নি যে, উনারা ক্ষমতায় নেই। ‘এই করেননি, এই করেছিলাম আমাদের আমলে’, এই বলে বলে শুধু ক্রেডিট নিতেই ব্যাস্ত। বেশীরভাগ প্রাক্তন মন্ত্রী-বিধায়ক অসুস্থ, বয়সের কারনে ঘরে বসে গেছেন। থাকলেও এলাকায় বেরোতে পারেন না।



অন্যদিকে যে মানুষগুলি তাদের ভোট দিয়েছিল তাদের অবস্থা শোচনীয়। রইল কংগ্রেস। মিরাক্কেল কিছু না ঘটলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। তিপ্রা মথা এখন পাহাড় ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। সদ্য তৃনমূলী কিছু লিডার খেলাধুলা শেষে এখন হাঁপাচ্ছে। দেখা নেই। রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা ক্ষেত্রেরই একই হাল। নুন্যতম যে কাজগুলি করার কথা ছিল বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের অর্থে বা বিভিন্ন প্রকল্পে সেই কাজগুলিও হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ এর জন্যে কষ্ট পাচ্ছে। দেশের এবং রাজ্যের অর্থনীতির যা হাল, আমার তো মনে হয় আগামী পাচ-দশ বছরে কোন নতুন প্রকল্প বা উন্নয়নের কাজ করা অসম্ভব! বিমানবন্দর বা রাস্তাঘাট যা হচ্ছে সেগুলি অনেক আগের প্রকল্প। এখন শুধু রিমোটে বোতাম টেপার কাজ চলছে। তাই দোষারোপ করে কোন লাভ নেই। সাধারণ মানুষকেই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে। কে আসবে, কে যাবে! কি হল, কি হলোনা! এই প্রশ্নগুলিই আজ অবান্তর। বেঁচে থাকার লড়াইটা দিন কে দিন আরও কঠিন হচ্ছে। একটাই স্লোগানে আমাদের বেঁচে থাকার অস্ত্র হতে পারে, ‘স্ট্রাগল ফর এক্সিস্টেন্স’। অর্থাৎ মোদীজী-- র শ্লোগানটাই সত্য 'জান হে তো জাহান হে'।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
14.01.2022Dhitisree Saha..The words are absolutely right .. No matter which government comes, the first thing we see is how much they have done for the people .. In any case, ordinary people have to work hard to eat. this is real and normal..
13.01.2022Samiran Shilত্রিপুরাতে BJP সরকার আসার আগে কত লক্ষ শিক্ষিত এবং যোগ্য যুবক-যুবতি চাকুরীর বয়স হারিয়েছে সে হিসাবটাও নিশ্চই আপনার কাছে রেয়েছে ? এবং ওরা হয়তো রাস্তায়ও বসার সাহসটুকুও দেখাতে পারেনি | যাদের স্বভাবিক ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন কিছুই অবশিষ্ট নেই এবং কারোর কারোর ত মস্তিষ্ক বিকৃতিও ঘটেছে |