রাজার কূটনৈতিক তৎপরতায় আনারস
পান্নালাল রায়
দেশজুড়ে ত্রিপুরার আনারসের সুখ্যাতি। এখন বিদেশেও যাচ্ছে তা।কে না জানে ত্রিপুরার এই রসালো ফলের কথা! নানা ফলের জন্য যেমন নানা জায়গার নাম, তেমনই আনারসের কথা উঠলেই যেন এসে যায় ত্রিপুরার কথা। এখন আনারসের উৎপাদন বাড়িয়ে,দেশ বিদেশে তা পাঠিয়ে ত্রিপুরার আর্থিক সমৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে। চলছে নানা উদ্যোগ। কয়েক দশক আগে মূলতঃ আনারসকে ভিত্তি করেই ত্রিপুরার নালকাটায় ন্যারামেক-এর ফল প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও করা হয়েছিল। কিন্তু এসবের অনেক আগেই ত্রিপুরার দূরদর্শী রাজা বীরবিক্রম তাঁর কূটনৈতিক তৎপরতায় আনারসের ব্যবহার করেছিলেন। তিনি দেশীয় রাজ্য সমূহের রাজন্যবর্গের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যে দেশের নানা প্রান্তে তাদের কাছে প্রীতি উপহার হিসেবে পাঠাতেন এই রসালো ফলটি। এমনকি তদানীন্তন ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও রাজা নিয়মিত আনারস পাঠাতেন।
বীরবিক্রমের রাজত্বকালে আনারস যেন ত্রিপুরার 'ব্র্যান্ড এম্বেসেডার' হয়ে উঠেছিল। কখনও গাড়োয়াল,কখনও পান্না রাজ্য, আবার কখনওবা বাংলার মুর্শিদাবাদে রেলে পার্সেল করে এই ফল পাঠানো হতো।সবাই ত্রিপুরার আনারসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মুর্শিদাবাদের নবাব প্রতি প্রীতি উপহার হিসেবে তাঁর রাজ্যের আমও পাঠিয়েছিলেন ত্রিপুরার রাজার কাছে। বীরবিক্রমের রাজত্বকালে রাজ প্রশাসনের কাছে আসা বহির্রাজ্যের বেশ কিছু চিঠিপত্রে ধরা পড়ে রাজার আনারস কূটনীতির চিত্রটি। দেশীয় রাজ্য সমূহের রাজন্যবর্গের সঙ্গে বীরবিক্রমের সুসম্পর্ক ছিল।বলা যায় উত্তর পূর্বাঞ্চলে তিনি এক নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন।রাজন্য বর্গের সঙ্গে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতেন রাজা। প্রীতি উপহার হিসেবে তাদের কাছে পাঠাতেন ত্রিপুরার রসালো সুমিষ্ট আনারস।
১৯৩৯ সালের ২২ জুন পান্নার রাজার ব্যাক্তিগত সচিব ত্রিপুরার রাজার নিজ তহবিল সচিবকে চিঠি লিখে আনারস পাঠানোর জন্য ত্রিপুরার রাজাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তিনি আনারসের প্রশংসা করেও লিখছেন-"which were all nice and fresh"।১৯৩৯ সালের ১৩ জুন ভাবনগর রাজ্যের মহারাজা সাহেব আনারসের পার্সেল প্রাপ্তির জন্য ত্রিপুরার রাজাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
নাশিপুরের রাজা বাহাদুর আনারস পাঠানোর জন্য ত্রিপুরার রাজাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন অনুরূপ ভাবে।১৯৩৯ সালের ১৩ জুন নাশিপুর রাজের কলকাতা আধিকারিক ত্রিপুরার রাজার নিজ তহবিল সচিবকে চিঠি লিখে তা জানাচ্ছেন। এরকম ঢোলপুর,তেহরি গাড়োয়াল,গোয়লিয়র রাজ্যসমূহের রাজাদের কাছ থেকেও আনারসের প্রাপ্তি স্বীকার করে ত্রিপুরার রাজাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। প্রশংসা করা হয় ত্রিপুরার আনারসের।১৯৩৮ সালের ১০ জুন মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুরের ব্যাক্তিগত সচিব চিঠি লিখে আনারস পাঠানোর জন্য ত্রিপুরার রাজাকে নবাবের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন এই রসালো ফল নবাবের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। জানা যায়,১৯৩৯ সালের ১৭ জুন এবং ১৯৪২ সালের ২১ জুন মুর্শিদাবাদ থেকে ত্রিপুরার রাজার জন্য আম পাঠানো হয়েছিল।
দেশীয় রাজাদের পাশাপাশি তদানীন্তন ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছেও মহারাজা বীরবিক্রম আনারস পাঠিয়েছিলেন।আসামের গভর্ণর ও বাংলার গভর্ণরের কাছেও গিয়েছিল ত্রিপুরার আনারস এবং প্রশংসিত হয়েছিল।১৯৩৯ সালের ৩রা জুন বাংলার গভর্ণরের মিলিটারি সেক্রেটারি চিঠি লিখে প্রীতি উপহার হিসেবে আনারস পাঠানোর জন্য বীরবিক্রমের প্রশংসা করেছেন। এইভাবে দেশীয় রাজন্য বর্গ সহ ইংরেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আনারস যেন এক বড় ভূমিকা নিয়েছিল।রাজার কূটনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত হয়েছিল আনারস।