HIRA- মডেলে দ্রুত এগুচ্ছে ত্রিপুরা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
জয়ন্ত দেবনাথ
2018 সালে বিধানসভা ভোটের আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভোট প্রচারে এসে বলেছিলেন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটালে তিনি ত্রিপুরাবাসীকে HIRA উপহার দেবেন। গত 4 জানুয়ারী তিনি এখানে একটি সরকারী অনুষ্টানে ভাষন দিতে গিয়ে বললেন, ত্রিপুরার মানুষ HIRA মডেলের সুফল পেতে শুরু করেছেন। আস্তাবলের সরকারী জনসভা মন্ঞে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বললেন, বছরের শুরুতে মা ত্রিপুরা সুন্দরীর আশীর্বাদে আরো তিনটি উপহার পাচ্ছেন ত্রিপুরাবাসী।
প্রথম উপহার - সংযোগের।
দ্বিতীয় উপহার - মিশন 100 বিদ্যা জ্যোতি স্কুল।
তৃতীয় উপহার - ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার।
প্রধানমন্ত্রীর দাবী, ভারসাম্যহীন উন্নয়ন ভালো নয়, একবিংশ শতাব্দীর ভারত এগিয়ে যাবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার উন্নয়ন এবং সবার প্রচেষ্টায়।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, দিল্লীর বৈষম্যে কিছু রাজ্য অগ্রগতির বদলে আড়ালেই রয়ে গেছিল, কোনো কোনো রাজ্যের মানুষ মৌলিক সুযোগ-সুবিধার জন্য আকুল হয়ে থাকতো, এই ভারসাম্যহীন উন্নয়ন ভালো নয়। যুগ যুগ ধরে ত্রিপুরার মানুষ এখানেও এটাই দেখে এসেছে। বিগত সরকারের সময় উন্নয়নের কোনো রূপরেখা, পরিকল্পনা ছিল না। এর আগে দুর্নীতির গাড়ি এখানে থামার নাম নেয়নি, উন্নয়নের গাড়িতে ব্রেক দিয়ে রাখা হয়েছিল। যে সরকার আগে এখানে ছিল তারা ত্রিপুরার উন্নয়নে কোনো দৃষ্টি দেয়নি। বা উন্নয়নে তেজি আনার কোন ইচ্ছা তাদের ছিল না। দারিদ্র্য আর পশ্চাৎপদতা ত্রিপুরার মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে 2018 সালে আমি ত্রিপুরাকে 'হিরা' মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। H মানে হাইওয়ে। I মানে ইন্টারনেট। R মানে রেলওয়ে। এবং A মানে এয়ারওয়েজ। এই মডেল কর্মসূচী অনুযায়ী আজ ত্রিপুরা তার সংযোগ উন্নত করছে, 'HIRA' মডেলে ত্রিপুরা আজ তার সংযোগ বাড়াচ্ছে, ডাবল ইঞ্জিন সরকার -এর সুফল এটা।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ডাবল ইঞ্জিনের সরকার মানে সম্পদের অধিকার ব্যবহার। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার মানেই সংবেদনশীলতা। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার মানে জনগণের হাতে জন সমৃদ্ধির ক্ষমতা। সবকা সাথ সবকা বিকাশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ত্রিপুরায় শিক্ষার্থীদের জন্য বহু নয়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় শেখার সমান জোর দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপুরার ছাত্ররা মিশন-100, 'বিদ্যা জ্যোতি' প্রকল্পের গুনগত শিক্ষার সাহায্যও পেতে চলেছে। কিশোর-কিশোরীদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। করোনার এই কঠিন সময়ে আমাদের তরুণদের যাতে শিক্ষার ক্ষতি না হয় সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। সারাদেশে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার প্রচারণা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা দিতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ত্রিপুরার কানেক্টিভিটি ভালো হচ্ছে। আমরা ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বে সংযোগের প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। ত্রিপুরা এখন এই অঞ্চলে একটি বাণিজ্যিক করিডোর হয়ে উঠছে। রেল/সড়ক সম্পর্কিত অনেক প্রকল্প এতে অবদান রেখেছে। ত্রিপুরার গ্রামীন এলাকা বদলাতে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি লাল কেল্লা থেকে বলেছিলাম যে এখন আমাদের নিজেদেরই সুবিধাভোগীদের কাছে প্রকল্পগুলি নিয়ে যেতে হবে। আমি সুখি যে আজ ত্রিপুরা বিপ্লব দেব- এর নেতৃত্বে এই দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। যখন ত্রিপুরা তার শাসনের ৫০ বছর পূর্ণ করেছে তখন এই রেজুলেশন নিজেই একটি বড় অর্জন। ত্রিপুরার গরীব অভাবীদের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার পাকা ঘর দেওয়া হচ্ছে। বিপ্লব দেব - এর আন্তরিক প্রচেষ্টার কারনেই ত্রিপুরার এত বিশাল সংখ্যক মানুষ একসাথে এত গুলি ঘর পেয়েছেন। বিপ্লব দেব - এর তথ্যনিষ্ট জোড়ালো দরবারের মুখে ভারত সরকারকে ঘর প্রধানের নিয়ম পাল্টাতে হয়েছে। এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের বাড়ির জন্য প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা থেকে বাঁশের পণ্য আজ দেশ বিদেশে যাচ্ছে। বাঁশের ব্যাপক ব্যবহারে প্লাস্টিকের বিকল্প দিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে৷ এখানে তৈরি হচ্ছে বাঁশের ঝাড়ু, বাঁশের বোতল, বিস্কিট, এ ধরনের পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। বাঁশের পণ্য তৈরিতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
কৃষকদের জন্য এখানে বিপুল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। সুগন্ধি ধান, আদা, হলুদ এবং মরিচ চাষে ত্রিপুরার কৃষকদের জন্য একটি বিশাল বাজার অপেক্ষা করছে। রাজ্যের ক্ষুদ্র কৃষকরা এখন কিষাণ রেল ব্যবহার করে তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠায়।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ত্রিপুরায় ডাবল ইন্জিনের সরকার খুব ভাল কাজ করছে। বিপ্লব দেব - এর সুযোগ্য ও বলিষ্ট নেতৃত্বের কারনেই আজ ত্রিপুরার অগ্রগতির ঘোরা দুরন্ত গতিতে ছুটছে। আগামী দিনে এখানে অগ্রগতির ঘোরা আরো দ্বিগুন গতি পাবে বলে আস্তাবলের সরকারী জনসভায় জানালেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।