ইনফো-র মেগা ক্যুইজ: বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের উপস্হিতিতে জ্ঞান চর্চার এক ভিন্নতর অনুষ্ঠান
নন্দিতা দত্ত
ক্যুইজ শব্দটির উৎপত্তির ইতিহাস ঘেঁটে যা জানা গেছে: স্কটল্যান্ড- এর ডাবলিনের অধিবাসী রিচার্ড ডালী তার এক বন্ধুকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি শব্দ সারা শহরের মানুষের মুখে ছড়িয়ে দিতে বললেন। ডালি ছিলেন থিয়েটারের কর্মী। তিনি তার কর্মীদের ইংরেজিতে Quiz শব্দটি লিখে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন সারা শহরে দেয়ালে সেটি লিখে দিতে। পরদিন এই শব্দটি সারা শহরের মানুষকে কৌতুহলী করে তুলল। অনেকে মনে করেন এই ঘটনার পর ক্যুইজ শব্দটি ইংরেজি ভাষায় জায়গা করে নেয়। এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তবে মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যুইজ তার বর্তমান রূপ ও অর্থ নিয়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
যে প্রশ্নটা নিয়ে শুরু করেছিলাম তার উত্তর আমরা জানি লুক ও ম্যাথু বর্ণিত সুসমাচারে যীশুর জন্ম তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। অনেক সময় ক্যুইজে প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করা হয়ে থাকে। মানুষের মনের খিদে মেটানোর জন্য নানা পদ্ধতির মধ্যে ক্যুইজও বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
ক্যুইজ মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটায়, মানুষকে কৌতুহলী করে, প্রতিযোগিতামূলক অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মানুষ আনন্দ পায়। এই আনন্দের সঙ্গে থাকে জ্ঞান অন্বেষণ।
খেলাচ্ছলে ক্যুইজে অংশ নিয়ে পরবর্তীতে অনেককেই দেখা গেছে যেকোনো সময় যেকোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি সাধারন ভাবে দিতে পারেন। ত্রিপুরা ইনফো- র ষোড়শী মেগা ক্যুইজে এমন বাস্তব চিত্র দেখা যায়। যারা প্রতিযোগী তাদের চেয়েও বেশি টেনশানে ভোগেন আডিয়েন্স বা দর্শক। একটু ভুলের কোন মাফ নেই ক্যুইজে।
যেমন বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা কবে এটা আমাদের কাছে সহজ একটি প্রশ্ন। কেননা আমরা জানি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় ত্রিপুরার মহারাজা অর্থ সাহায্য করেছিলেন। এবং এটাও ক্যুইজের প্রশ্ন। উত্তরটাও ত্রিপুরা ইনফো-র মেগা ক্যুইজেই জানা গেছে।
আমাদের সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডারে নাড়া পড়লে অজানা থাকেনা এই প্রশ্নের উত্তর। সাধারণ জানা বিষয় কখন হয়? যখন আমাদের নিত্য শোনা শব্দ টা বা শব্দ গুলো সময় মত মনে চলে আসে। বা অন্য ভাবে বলতে গেলে আমাদের সব সময় পড়াশোনা করে সমস্ত কিছু মগজে রাখতে হয়। তাই পড়াশোনাটা করতে হয়।
ছোট বড় সবাই যারা ক্যুইজ ভালোবাসেন অংশগ্রহণ না করলেও দর্শকের আসনে বসেও অংশীদারিত্ব উপভোগ করা যায়। ইনফো ক্যুইজে অনেকে করেনও তাই। শুধু নতুন কিছু জানার আগ্রহ থেকে অনেকে দিনভর বসে থাকেন।
আর দিলীপ রায়, প্রদীপ সরকারের মত আরো অনেকেই আছেন যারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। ২০০৬ সালে শুরু ইনফো-র ষোড়শী মেগা ক্যুইজ ২০২১ -এ কৈশোরে পৌঁছে গেছে। যারা ছোটবেলায় মা বাবার হাত ধরে দেখতে আসতো, তাদের কেউ কেউ এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আর ইনফো ক্যুইজ পরিবারের অন্যতম সদস্য জয়ন্ত দেবনাথ এর কন্যা অক্সিলিয়াম গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী মধুজা দেবনাথ (মাহি)-কে তো এবছর রিতিমতো ক্যুইজ মাস্টারের ভূমিকাতেই দেখা গেল। মোট কথায় বাচ্চাদের মধ্যে এক্সট্রা লার্নিং-এর একটা অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইনফো-র এই প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। এই প্রজন্মকে বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার একটা অভিনব দৃষ্টান্ত ইনফো-র মেগা ক্যুইজ।
ইনফো ক্যুইজ নব প্রজন্মকে শুধু এক্সট্রা লার্নিং -এর রাস্তা দেখাচ্ছেনা, অনুসন্ধানী হতেও অনুপ্রানিত করছে। এই ক্যুইজকে ঘিরে ছাত্র বেকারদের মধ্যে সারা বছরের প্রস্তুতি তার ভবিষ্যৎ গড়তেও সাহায্য করছে। প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার জন্য যারা প্রস্তুতী নেন তাদের জন্যও এই মেগা ক্যুইজের আসর একটি বিশাল টেস্টিং সেন্টার।
প্রতি বছরের মতো এবারও ইনফো-র মেগা ক্যুইজকে নিয়ে উৎসাহ ছিল ব্যাপক। রবীন্দ্র ভবন এর এক নং হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তাই সকালে অনুষ্ঠানের শুরু থেকে রাত সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠানের শেষ অব্দি নিজেকে সেরা প্রমান করার জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন উপস্হিত প্রত্যেকে। রাজ্যজুড়ে ক্যুইজ জ্বর গতবছর কোভিড সংক্রমনের কারনে অন্যরকম হওয়ায় এবারের উৎসাহ দ্বিগুন মাত্রায় ছিল।
ইনফো-র এই ক্যুইজে অংশ নিতে আসা অডিয়েন্স যেভাবে প্রতিযোগি হয়ে ওঠেন, তাতে অনুমান করা যায় এর ব্যাপকতা। ত্রিপুরা ইনফো ডটকমের এই আয়োজন একজন মানুষকে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করে। শুধু সন তারিখ নয়, ইতিহাস ভুগোল সাহিত্য সম্পর্কে শুধু জানা নয়, কোন পরিস্থিতিতে কবে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, বা বর্তমান সময়ের জলন্ত সমস্যা খেলাধুলার হাল হকিকতের সাথে সিনেমা সম্পর্কে ও জানতে হবে। এভাবেই এই মঞ্চ থেকেই জানতে পারি এবছর বিশ্বভারতী শতবর্ষে পা দিল।
খুব সাধারন প্রশ্ন থেকে কনফিউজ করা প্রশ্ন শুনে হোঁচট খাওয়া, খুব কাছাকাছি গিয়ে ভুল উত্তর সব মিলিয়ে এক প্রানবন্ত দিন। এর মধ্যে থাকে মাঝে মাঝে ইনফো ডটকমের সুহৃদদের মঞ্চে উজ্জ্বল উপস্থিতি, ক্যুইজ মাষ্টারদের উজ্জ্বল উপস্থিতি, সঞ্চালকের অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রন আর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে স্বতস্ফূর্ত হাততালি।
ইনফো-র এই মেগা ক্যুইজ সত্যিই আজ এ শহরের এক বার্ষিক উৎসব। যার অপেক্ষা সারা বছরের। ইভেন্টটিকে সাজাতে বিভিন্ন পেশার এত গুনী লোকের অংশ গ্রহণ সত্যিই অন্য কোন ইভেন্টে বিরল। স্পন্সরশিপে এগিয়ে আসা সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ক্যুইজ পরিচালনায় দিনভর এত লোকবল শুধু ব্যবসায়িক সফলতার ছবি আঁকেনা, এমন সফলতার ছবি আঁকে, যা এশহরের ঐতিহ্য ও পরম্পরার সাথে রাজ্যের তথা দেশের বাস্তব অবস্হার এক উজ্জ্বল মানচিত্রও আঁকে বটে।