সংবাদের ইতিহাসে বিজয়ের ৫০
নন্দিতা দত্ত
ত্রিপুরা বিধানসভায় গৃহীত এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে সাধারণ মানুষের সমস্ত মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে ইয়াহিয়া খান ওতার অনুরাগীরা বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে অকথ্য অত্যাচার নিপীড়ন অরাজকতা চাপিয়ে দিয়েছে ত্রিপুরার গণতান্ত্রিক বিবেক তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। ট নতুন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের জন্য সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।-- ৭১ সালের এপ্রিল মাসে দৈনিক সংবাদ-এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫0 বছর পর সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আজ ১৬ ই ডিসেম্বর পেছন ফিরে তাকালে সেই সময়ের মিডিয়া বিশেষ করে ত্রিপুরার সংবাদপত্রের ভূমিকার কথা আবার জানতে ইচ্ছে করে।
৫০ বছর আগে সংবাদ পত্রের ভূমিকা একটি স্বাধীনতাকামী জাতিকে কতটা উদ্ধুদ্ধ করেছিল,তা ইতিহাসে লেখা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক গবেষণায় নতুন তথ্য পাওয়া যাবে,যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সময়ের সাক্ষী হয়ে দেশ কিভাবে দেশ হয় তা উপলব্ধি করার সুযোগ থাকবে।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এক আবেগের জন্ম দিয়েছে।মাটি,ভাষা,জলবায়ু আমাদের (ত্রিপুরার)এক, কাঁটাতারের বেড়া আমাদের রাজনৈতিক সীমান্ত হলেও মনমানসিকতায় বাংলাদেশ আমাদের ই দেশ।অবিভক্ত ভারতের মানচিত্রে ত্রিপুরা র অবস্হানে এবং ১৯৪৭ বা ১৯৭১ এরাজ্যে চলে আসা নাগরিকদের অন্তরাত্মায় ভিটামাটির গন্ধ এখনো অনুভব করেন।১৯৭১ এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে এবং আপামর রাজ্যবাসীর আন্তরিকতায় লক্ষ লক্ষ লোক এভূমে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১০ মাসে১৫ লক্ষাধিক মানুষের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং মুক্তিযোদ্ধা দের উৎসাহ দিতে মুক্তিযুদ্ধের নানা খবর নিয়ে দৈনিক সংবাদ-পত্রগুলি মানুষের বিশ্বাস কে মজবুত করেছিল। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরট্যাঙ্কার উড়িয়ে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে পাল্লা দিয়ে লড়ছে মুক্তিযোদ্ধা রা।এই খবর গুলো কেউ কেউ পত্রিকা পড়েই সবিস্তারে বর্ণনা করতেন।
প্রচারমাধ্যম যুদ্ধের একটি বিশেষ হাতিয়ার।সেই সময় বর্তমানের মত তথ্যপ্রযুক্তি ইন্টারনেট কেন্দ্রিক নয় , টেলিগ্রাফ এবং বেতার নির্ভর হয়েও একটি দেশের স্বাধীনতা র সপক্ষে হাতিয়ার ছিল। সংবাদ পত্রেরএর মাধ্যমে একদিকে যেমন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় অন্যদিকে সাধারণের মনোবল বাড়ানোর হাতিয়ার করা যায়।
২৫শে মার্চ ঢাকার নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়ার খবর আগরতলায় পৌঁছায় আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন আগরতলায় পৌঁছানোর পর। ২৯শে মার্চ চট্টগ্রামের আওয়ামি লীগনেতা আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিক অনিলভট্টাচার্যের মেলার মাঠের বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমনের সমস্ত তথ্য তুলে ধরেন। অনিল ভট্টাচার্য তখন অমৃতবাজার পত্রিকা যুগান্তর এবং আগরতলার পিটিআইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।পরদিন রাজ্যের কাগজ এবং দেশের নানা পত্রে সেই খবর প্রকাশিত হয়। অনিল ভট্টাচার্যর সেই বাড়ি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক ঠিকানা হয়ে উঠে।
১৯৭১ এর২রা এপ্রিল মেলার মাঠের বাড়িতে আওয়ামী লিগের অনেক কর্মকর্তাবসে জরুরি সভাকরেন।সেই সভা থেকেই তৎকালীন পূর্ব বাংলায় গনহত্যা বন্ধে-সম্মিলিত জাতিসংঘের কাছে জনগণের পক্ষে প্রথম দাবী উচ্চারিত হয়।"ষ্টপ জেনোসাইড"প্রস্তাব ।এর খসড়া প্রস্তুত করেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক সুভাষ চক্রবর্তী ও কম্পাস সাময়িকী র সাংবাদিক অমর রাহা। প্রস্তাবে র প্রতিলিপি জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের কাছে পাঠানো হয়েছে এসংবাদ পিটিআই এর যুদ্ধসংবাদ কভার করতে আসা মধু গুহরায় সেটি খবর করলে সমস্ত জাতীয় কাগজে পরদিন বিস্তারিত ভাবে প্রকাশিত হয়।
বিভিন্ন ভারতীয় দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও ভারতীয় সংবাদ সংস্থা, বিদেশি সংবাদপত্র, বেতার ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা মুক্তিযুদ্ধের ১0 মাসে দফায় দফায় ত্রিপুরা এসেছেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাদের অনেকেই যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে রণাঙ্গনে গেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা নিউইয়র্ক টাইমস রয়টার্স এর সাংবাদিকরা বাইরে থেকে এসেছিলেন। এরা কেউ আগরতলায় থেকেছেন কেউবা গেছেন বাংলাদেশের ভেতরে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তি সংগ্রামের ছবি ক্যামেরায় তুলে ধরতে গেছেন আলোকচিত্রশিল্পী রা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার অবস্থান সামরিক দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে হিসেবেও গুরুত্ব ততটাই ছিল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশের জাতীয় স্তরের প্রধান প্রধান পত্রিকার সম্পাদকদের ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ রাখতেন সংবাদপত্র এবং খবর মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা জোগানো খবর, প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো।সারা দেশের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত কাগজে বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে প্রকাশিত সংবাদ তখন সাধারণ জনগণের মধ্যে উৎসাহ উৎকণ্ঠা আবেগের জন্ম দিয়েছে যার ফলে সংবাদ মাধ্যমের গ্রহনযোগ্যতা উতুঙ্গে পৌঁছে যায়।
সেই সময়কার সংবাদ পত্রে র প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন কাগজের সাংবাদিক এবং আলোকচিত্রীদের কর্মস্থল হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ আসাম মেঘালয় ত্রিপুরার সীমান্ত অঞ্চল।
দৈনিক সংবাদ, জাগরণ, সমাচার, নাগরিক ইত্যাদি পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের খবর সহ সংবাদ নিবন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নিয়মিত প্রকাশিত হতো। বিভিন্ন রাজ্য থেকে সাংবাদিক এবং পূর্ব বাংলা থেকে আসা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষাব্রতী, কবি লেখক শিল্পীদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে নিয়মিত লেখা আগরতলার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।
ত্রিপুরার সাপ্তাহিক পত্রিকা দৈনিক পত্রিকায় পূর্ব বাংলা থেকে আসা সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকেজানা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খবরও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতো। যুদ্ধের খবর কেবল নয়, নানা দুর্দশা, আক্রমণ, সীমান্তে গোলা বর্ষণ ত্রিপুরাতে জনঢল সমস্ত খবরই জনসাধারণের মধ্যে আশঙ্কার পাশাপাশি দেশের মুক্তির বার্তা বহন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ভারত সরকারের ভূমিকা ভারতীয় মিডিয়ার প্রচার বিশ্ববাসীকে সজাগ করে তুলেছিল।
১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর যেভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং ঢাকার সঙ্গে বহির্বিশ্বের সমস্ত প্রচারমাধ্যমের যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, তাতে সর্বভারতীয় দৈনিক পত্রিকা সংবাদ সংস্থা এবং খবরের বিভিন্ন সংস্থা গুলি ত্রিপুরার দৈনিক সংবাদ ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের ওপর নির্ভর শীল হয়ে পড়ে।
২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি এমএ হান্নান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রচার করেছিলেন গ্রেফতার হওয়ার আগে শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ারলেস এর মাধ্যমে এবিপি পাঠিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম প্রচার শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের কোন এক গোপন জায়গা থেকে।
ট্রান্সমিটার এর দুর্বলতার কারণে কলকাতায় বসে স্বাধীন বাংলা বেতার শোনা সম্ভব হতো না, কিন্তু আগরতলা থেকে ঠিকঠাক শোনা যেত বলে আগরতলা খবর সং গ্রহের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠা সম্ভব হয়।এরপর কিছুদিন ত্রিপুরার সীমান্তের অজ্ঞাত অঞ্চল থেকে বেতারে সংবাদ প্রচার হয়েছে।
১৯৭১ আগরতলা দৈনিক সংবাদ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক ভূপেন দত্ত ভৌমিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তা বর্তমান প্রজন্মের জানা প্রয়োজন।আরো বেশি জানা প্রয়োজন এ প্রজন্মের প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের। কতটা সাহস এবং জনগনের কাছে দায়বদ্ধ থাকলে পরে প্রতিবেশী ছোট্ট রাজ্যের ছোট পত্রিকাটি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষের দুর্দশার কথা সংগ্রামের কথা পাকবাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা। শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঐতিহাসিক আহ্বান জানান এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই ভাষণ এর ক্যাসেট আগরতলায় ছড়িয়ে পড়ে।
সেই উদাত্ত আহ্বান সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে হয়ে উঠল চেতনার ডাক। ওপার বাংলা থেকে আসা রাজনৈতিক ছাত্রযুবক, মুক্তিকামী জনগন সাহায্য প্রত্যাশী সকলের আশ্রয় স্থল দৈনিক সংবাদ এর বাঁশ টিনের অফিস ঘরটি।
সেই সময়ের কথা মনে করে তৎকালীন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী লিখেছেন "যুগান্তর পত্রিকার বিশেষ সংবাদ দাতা অনিল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী সুনন্দা ভট্টাচার্যর অপার ভালোবাসায় তাদের মেলারমাঠ স্থিত আবাসখানি ২৪ঘন্টা বাংলাদেশের শরণাগত দের জন্য উন্মুক্ত ছিল
বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী ছাত্র যুব নেতা রাজনীতিবিদ এমন কেউ নেই যে অপার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ।অনিলদার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী সারা বিশ্বের মানুষের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাঁর ঘরটিকে মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুম বানিয়ে ফেলেছিলেন। দেশ-বিদেশের সাংবাদিকরা ভূপেনদা ও অনিলদা সহযোগিতা পেয়েছেন।"
বিকচ চৌধুরীর স্মৃতিচারণে উঠে আসে- দৈনিক সংবাদ এর দপ্তর ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণকেন্দ্র। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের তরফে অনেকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংযোগ রাখতেন বাংলাদেশের এমএলএ সাচ্চু ভাই। আর দৈনিক সংবাদ অফিসে বসে দিনরাত পাকসেনাদের বিভিন্ন বেতার বার্তা ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টারের মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন অধ্যাপক মিহির দেব। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সফল অভিযান পাকসেনাদের ঘায়েল করতে সক্ষম হয়েছিল। অধ্যাপক ট্রানজিস্টার এর সামনে বসে দিনে ১৮ ঘন্টার বেশি সময় ব্যয় করতেন। তার দেওয়া বার্তা দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হলে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে রীতিমতো সাগ্রহে তা গ্রহণ করা হতো। তিনি আমাকে ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর রাতে হাতে কিছু টাকা ও তারিখ সুটকেস দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলেন কাল বাংলাদেশ স্বাধীন হবে তোমাকে যে ভাবেই হোক ঢাকায় পৌঁছতে হবে। আগরতলা বিমানবন্দর তখন সাধারণ যাত্রীদের জন্য নিষিদ্ধ। সেনাবাহিনীর তদানীন্তন কতৃপক্ষ উইং কমান্ডার কেকে শাহ্ র কাছে পরিচয় দিলে তিনি জানান জেনারেল অরোরা( সংযুক্ত বাহিনীর পূর্ব রণাঙ্গনের সর্বাধিনায়ক) আগরতলা বিমানবন্দর আসবেন তিনি অনুমতি দিলে ঢাকা যেতে পারি।
সময়ে জেনারেল এলে আমি পরিচয় দিয়ে যেতে চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। এবং আনন্দবাজার পত্রিকার বরুণ সেনগুপ্ত ও আমি দুজনে ঢাকা যাই পরবর্তী সংবাদ সংগ্রহ করতে। সারাবিশ্বের মিডিয়ার ঢল ঢাকায়। আগরতলা থেকে কুমিল্লা হয়ে দেশ-বিদেশের একদল সাংবাদিকদের সঙ্গে এলেন অনিল ভট্টাচার্য ভূপেন দত্ত ভৌমিক এবং আলোকচিত্রশিল্পী রবীন সেনগুপ্ত।
আগরতলা সেইসময় সর্বভারতীয় সংবাদ জোগানোর কেন্দ্রস্থল ,দেশের অগ্রনী ইংরেজি দৈনিক দ্যষ্টেটসম্যানের বার্তা সম্পাদকের ঘনঘন টেলিগ্রাম আসে তৎকালীন সংবাদ প্রতিনিধি কল্যানব্রত চক্রবর্তীর কাছে , ত্রিপুরার সীমান্ত অঞ্চল দূরে পূর্ব বাংলা র ভেতরে কি ঘটছে জানাতে।কারন ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সমস্ত সূত্র।তাই ত্রিপুরার প্রতিনিধি কে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
দৈনিক সংবাদে র ভূপেন দত্ত ভৌমিকের তত্ববধানে দৈনিক সংবাদ যে বাংলাদেশের গনমাধ্যমের ভূমিকা পালন করে ছিল।ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য, বিপুল মজুমদার,বিকচচৌধুরী ,রবীন সেনগুপ্ত ছিলেন সেই সময়ের খববের চারটি স্তম্ভ।আর দৈনিক সংবাদে র অফিসঘরে বা কলেজ টিলার কোয়াটারে রেডিওর নব ঘুরিয়ে যে বার্তা মিহির দেব যে খবর সংগ্রহ করতেন তা মুক্তিযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর নিরাপত্তা সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ছোট বড় সংবাদ পত্রের পাশাপাশি সাময়িক পত্রিকা, লিফলেট মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিল।
এছাড়া গনমাধ্যমের অন্য শাখার ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গান লেখা গান গাওয়া,নাটক -আলোচনা, স্বাধীনতার উন্মাদনায় বাড়তি উতসাহ জুগিয়েছে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিজস্ব সিডিউলে অনুষ্ঠান প্রচার মুক্তি যোদ্ধাদের মধ্যে যে আলো জালিয়ে ছিল, অন্যদিকে দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় উদাত্ত কন্ঠের অভয় আহ্বান তার সংবাদ পরিক্রমা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীত চমকপ্রদ তথ্য সমৃদ্ধ পাঠ শ্রোতাদের কাছে অন্যভুবন হয়েউঠে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সব মিলিয়ে ত্রিপুরার মিডিয়া অন্যরাষ্টের নয় যেন স্বদেশের ই।এই ভূমিকা পালন করে গেছে ধারাবাহিক ভাবে।
১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ভুপেন বাবু ঢাকায় যেতে পারেন নি ১৮ ই কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় গেলেন এবং লিখলেন, গতকাল যখন চাঁদপুরে পৌছেছিলাম, দেখলাম উৎফুল্ল জনতার ভীড়। জয়বাংলা জয়ভারত,জয় ইন্দিরা ধ্বনিতে মুখরিত।প্রান আনন্দে নাচছে,বয়সের কোন ভেদাভেদ নেই,ধর্মের কোন ভেদাভেদ নেই।গাড়ী থামার আগেই আমাদের কেউ জড়িয়ে ধরেছেন।সমগ্র বাংলাদেশ আনন্দে ফেটে পড়ছে। ভয়ার্ত মুখগুলোতে আবার সেই পবিত্র হাসি।
মিডিয়া গনমাধ্যম।শুধুমাত্র খবরের কাগজ পড়ে জনগন সমস্ত খবর জেনেছে।চোখ দিয়ে সোস্যালমিডিয়া বা অন্তর্জালে দেখা নয়।অন্তর দিয়ে অনুভব করা যা খবরের কাগজের অক্ষর গুলোই পেরেছে,সেই বিশ্বাসযোগ্যতা ধরতে। তখনকার সংবাদ মাধ্যমের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল,খবর বিজ্ঞপ্তি নয় বিজ্ঞাপন নয়,খবর সতর্ক করে খবর সত্যিকে জ্ঞাপন করে আপন হয়ে উঠে।