"সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ যেখানে শেষ করেতে হয় , সেখানে যা সংবাদে আসে না - তা থেকেই গল্প লেখার মোড় তৈরি হয়।"
সংবাদিক ও লেখিকা নন্দিতা দত্তে'র মুখোমুখি প্রাবন্ধিক সৌম্যদীপ দেব
সৌম্য : দীর্ঘদিন ধরে আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমানে কাজ করে চলেছেন।যতটা জানি খুব ব্যস্তার মধ্যে দিয়ে আপনার দিন কাটে। পরিবার আপনার কাছে সময় চায়। কিভাবে সবটা সামলাচ্ছেন?
নন্দিতা : আমি ঘরের কাজ ও বাইরের কাজকে আলাদা করে ভাবি না । দুটো ক্ষেত্রকেই গুরুত্বদেই ভালোবেসে, দায়বদ্ধতা আছে এই ভেবে।
কাজের জগৎ আর ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মধ্যে কাঁটাতার নেই । আর আমার বৃহৎ পরিবারের ( আমার কাজের জায়গা এবং পারিবারিক জীবন) সবার ভালোবাসা,স্নেহ - শাসন জীবন তরীকে এক অদ্ভুত গতিময়তা দিয়েছে । যা আমার কাছে এক বিশেষ ছন্দে বাধা । আলাদা করে কী সামলাবো ? আমাকেই সবাই মিলে সামলে রেখেছে ।
সৌম্য : আমরা জানি আপনি বিভিন্ন সংস্থার হয়েও নারীদের জন্য নানান কাজে যুক্ত থাকেন। বিশেষত ত্রিপুরায় নারীদের গ্লোবাল পরিচিতি পাওয়ার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে আপনার ধারণা?
নন্দিতা : প্রথম কথা হলো আমাদের পড়াশোনা বড্ড কম। ভৌগলিক কারণে যখন পিছিয়ে ছিলাম, কোলকাতা থেকে বই কিনে এনে পড়তে হতো তখন সেটা যেমন করেছি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছোট পরিসরে হলেও আলোচনা শোনার সুযোগ হতো। আকাশবাণীর যুববানী বিভাগে যখন কাজ শুরু করি, প্রতিদিন নতুন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতাম। কারণ রেডিওর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যেতে হতো বিষয়ের বৈচিত্র্য নিয়ে।
তখন যারা যুববানীতে ডিবেট, ক্যুইজের জন্য অংশ নিতেন সেই প্রতিযোগীদের থেকে যেন এগিয়ে থাকতে পারি,সেই মাপে পড়াশোনা করতাম। এখন হাতের কাছেই সমস্ত তথ্য পেয়ে যাই,তাই তথ্য সংগ্রহ করার পরিশ্রমটা করতে হয় না । খুব ছোট পরিসরে নিজেকে প্রশ্ন করলে একটা উত্তর পাই। পড়াশোনা করি না। নিজের রাজ্যের অনেক কিছু ( একাডেমিক বা খেলাধূলার খবর) জানি না। নিজের ক্ষেত্রেই কেমন যেনো সিলেবাসের ( নির্দিষ্ট) মতো পড়ি।
আমি একদম গোড়া থেকে যেহেতু ভাবছি,তাই পড়াশোনাটা করা জরুরী । যে পড়াশোনা শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য তার কথা বলিনি। জীবনের জন্য যে পড়াশোনা তাতে আমার রাজ্যের তৃনমূল স্তরের মেধাবী মেয়ে ( যেকোন ক্ষেত্রে কৃষি কাজ থেকে রাজমিস্ত্রির যোগালী, মিউনিসিপ্যালিটির সাফাই কর্মী থেকে চিকিৎসা ব্যবস্থার ডেডিকেটেড সেবাকর্মী থেকে ঘরের কাজে সহযোগী) যেই হোন না কেন তার কাজটা তিনি কিভাবে করছেন সেটা দেখার চেষ্টা করি। বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের মেয়েদের তাদের মধ্যে স্বশক্তিকরণের চেষ্টা আছে,তাদের দেখি। এখানেই বুঝেছি কেউ যদি আন্তরিক ভাবে নিজের উন্নতির কথা ভাবে,আখেরে তার পরিবারের ,সমাজের , রাজ্যের এবং দেশেরই উন্নতি। একজন মেয়ে যদি তার পরিবারের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে,তাহলে তিনি সমাজের জন্য নিতে পারেন। যেকারণে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্হাপনায় দেখেছি উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত না মেনে সম্মিলিত চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। খেলাধূলার ক্ষেত্রে দীপা কর্মকার , অর্শিয়া বর্তমান সময়ে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ।
বিজ্ঞান গবেষক, অধ্যাপক, চিত্রশিল্পী, ডাক্তার, সঙ্গীতশিল্পী,নৃত্যশিল্পী, ইঞ্জিনীয়ার, ব্যাঙ্কিং সেকটারের কর্মী, বিজ্ঞাপনে মডেল, অভিনয় শিল্পী আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের মেয়েরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে , দায়িত্ব পূর্ণ পদে নিযুক্ত আছে ।
ত্রিপুরায় মেয়েদের গ্লোবাল পরিচিতির ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি কেনো আপনার মনে হলো বুঝলাম না!
হ্যাঁ, আপনার প্রশ্ন যদি কবি - গল্পকার - সাহিত্যিকদের ঘিরে হয় তাহলে বলবো বাংলায় লিখছেন যাঁরা( সারা পৃথিবী জুড়ে) তাঁদের ক'জনের নাম জানি বা ক'টা বই সাধারণ মানুষ জানেন বা পড়েন?
আজকে এই উপমহাদেশে আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী,নবনীতা দেবসেন ,সেলিনা হোসেনে'র নাম বাংলা সাহিত্য বা তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া ক'জন জানেন? বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, ফলত পরিচিতির সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হলো কে কী লিখছেন তার কতটা প্রকাশিত হচ্ছে, প্রকাশিত হলে পাঠক আদৌ কতটা আছে ? নিজেদের চেনাগন্ডির মধ্যে লেখক - পাঠক।
আমাদের ব্যস্ত জীবন শৈলী তে আমরা এখন শুধু বই পড়ার মধ্য দিয়ে বিনোদনে আটকে নেই। আমাদের অবসর এখন সিরিয়াল মুখী সোস্যাল মিডিয়া নির্দেশিত ঘেরাটোপে। অনেকেই আমরা হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ছাত্র হয়ে জীবনানন্দ দাশে'র লেখাকে রবীন্দ্রনাথে'র কোট বলে উল্লেখ করি নির্দ্ধিধায়, সদ্য লেখা কোন কবিতাকে বলে ফেলি শঙ্খ ঘোষে'র! না, এতে দোষের কিছু নেই। সবার সব কিছু জানা থাকবে এ ভাবনাটা ঠিক নয়। কারণ জ্ঞানের এই বিশাল ভান্ডার থেকে কতটুকু জানি। বলতে গেলে 'মহাভারত' লেখা হয়ে যাবে।
মূল কথা যে যোগ্য তার কাজকে চেপে রাখা যায় না।
লেখালেখির ক্ষেত্রে রাজ্যে পরিচিতি গড়ে উঠুক । গোষ্ঠী - গন্ডির বেড়াজাল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসাটাই জরুরি । এই সময়ে সারা ত্রিপুরায় যাঁরা লিখছেন তাঁদের কটা বই সব অংশের লেখকরা পড়েন? ব্যক্তিগত ভাবে রাজ্যের প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি নতুন যাঁরা লিখছেন,তাদের যত যত বই কিনেছি সবার সব গল্পগুলোই তো পড়া হয় না। শুরুতেই বলেছি পড়তে হবে। পড়ার বিকল্প কিছু নেই। আমি পড়লেই হবে না পড়া লেখাটার আলোচনাও করতে হবে। যত আলোচনা হবে, চর্চা হবে, ততই সমস্যাগুলো ফিকে হয়ে আসবে।
সৌম্য : আপনার প্রবন্ধের চেয়ে নিবন্ধের সংখ্যাধিক। নিবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে বিষয় কী আপনি আগেই ভেবে রাখেন নাকি তাৎক্ষণিকতা থেকে সম্পন্ন করেন?
নন্দিতা : লেখালেখির মূল জায়গা সংবাদপত্র । তাই সংবাদপত্রের চাহিদা অনুযায়ী ফিচার লেখা হয় বেশি। তবে ততক্ষণাৎ লিখতে হয় কখনো কখনো । আবার অনেক সময় কিছু তথ্য,কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানতে হয় সরাসরি সংশ্লিষ্ট জনগনের সাথে কথা বলে, ফিল্ড স্টাডি করে। সুতরাং ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। ইটস্ ডিপেন্ডস অন মানে সবটাই প্রয়োজন ভিত্তিক।
সৌম্য : উওর- পূর্বাঞ্চলের এমন কয়েকজন গল্পকারের নাম বলুন যাঁদের গল্প আপনি পাঠককে পড়তে বলবেন?
নন্দিতা : সিলেবাসের গন্ডিতে কী লেখক কে বন্দী করা যায়? আমার যার গল্প পড়তে ভালো লাগে,অন্য আরেক জনের ভালো নাও লাগতে পারে? সময়, বিষয়, লেখার স্টাইল নিয়ে আমি পড়তে পড়তে অবাক হয়ে ভাবি এভাবেও ভাবা যায়? পড়তে পড়তে ভাবি এতো লেখক - লেখিকার মধ্যে ক'জনের নাম জানি, ক'জনের লেখা পড়ার সুযোগ পাই ? লিটল ম্যাগাজিনে হয়তো এমন একটা গল্প পড়লাম যার একটা ঘোর লেগে থাকে, কিন্ত আমার অক্ষমতার কারণে সেই লেখকের দ্বিতীয় লেখাটা হয়তো আর পড়া হয়ে ওঠে না ।
আর এমনও হয় একজন লেখকের একটি লেখা পড়ে যতটা মুগ্ধ হয়েছি , পরের লেখাটা পড়ে তেমন ভালো লাগেনি। নিবিড় পাঠে কোন লেখক দীর্ঘদিন সঙ্গী হন? আমার পড়ার ক্ষেত্রে গল্প, উপন্যাসের চেয়ে প্রবন্ধ - ফিচার পড়ার তালিকাটা দীর্ঘ । সব চেয়ে বড়ো কথা আমার কাছে ভালোলাগাটা অন্যের কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে। তাই আমি ব্যক্তি বিশেষের নাম উল্লেখ করতে পারছি না।
সৌম্য : মহাশ্বেতা দেবী, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, বেবী হালদার, তসলিমা নাসরিন,বাণী বসু, তিলোত্তমা মজুমদার প্রমুখের লেখা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্তরে বেশি করে পাঠ্য হওয়া উচিত -আপনি কী মনে করেন?
নন্দিতা : উঁনাদের লেখা তো কোন সিলেবাসে আছে ( বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়) তা আমার জানা নেই। তবে আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাশ্বেতা দেবী পাঠ্য ছিলেন।
তবে ত্রিপুরার স্কুল- কলেজ- ইউনিভার্সিটিতে রাজন্যকালে নারীর অবস্থান এবং বর্তমানে নারী, ত্রিপুরার প্রকৃতি, নারী-পুরুষের জীবন স়ংগ্রাম, প্রতিদিনকার যাপনে মানুষের মনোগত পরিবর্তন, পারিবারিক জীবনের পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তা- চেতনার বিকাশে যে পরিবর্তন , সেগুলি যে সমস্ত গল্প, উপন্যাসে স্পষ্ট ধরা পড়েছে সেগুলি থেকে যা ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদেরকে রাজ্য সম্পর্কে জানতে সহায়তা করবে এবং তা নিয়েই বিশ্বের দরবারে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সেই গল্প, উন্যাসকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি পরিপূর্ণ লেখক তালিকা অবশ্যই তৈরি করা দরকার।
সৌম্য : নারী অবমাননার কোন দিকটি আপনাকে বেশি করে ভাবায়?
নন্দিতা : মানুষ মাত্রেই অবমাননার স্বীকার হতে হয়। নারীদের ক্ষেত্রে একটু বেশি । কারণ বর্তমান সময়ে মানুষের ধৈর্য বড়ো কম।নএকজন অন্যজনকে সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে না। সাধারণ ছোট্ট ছোট্ট অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সামান্য সহবৎ টুকু ভুলে যায়, একটা অহেতুক প্রতিযোগী মন অন্যকে স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠা বোধ করে। এগুলি থেকে রাগ,ক্রোধ এবং হিংসা বাড়ছে। আর অবমাননার বহিঃপ্রকাশ তো এগুলিই । সুযোগ পেলেই হেয় করা কথায় কথায় বাড়ির কনিষ্ট সদস্যের সামনে শিশুটির মাকে অপমান করে শিশুটির মধ্যে নারী অবমাননার বীজ বপন করে দেওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। কালে কালে শিশুটির মধ্যে এই বিষয়টি জাঁকিয়ে বসে। ঘর থেকেই শুরু হওয়া এই বিষয়টা আমাকে ভাবায়।
সৌম্য : কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করতে চাইবেন যা আপনাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল?
নন্দিতা : এমন অনেক অভিজ্ঞতা আছে, বিভিন্ন নারীর জীবনের যুদ্ধের কথা , যা তার একার নয়। প্রতিষ্ঠানগত। এমন অনেক অনেক ঘটনা বিশেষ কিছু উল্লেখ করছি না। কারণ মানসিক বিপর্যয়কে আঁকড়ে ধরে না রেখে বেরিয়ে আসার পথটা খুঁজে নিতে হয়।
সৌম্য : " বলছি শোনো" তে আপনার আলোচক নির্বাচন, আলোচ্য বিষয় ও পক্ষান্তরে ব্যতিক্রমী প্রশ্ন সমূহ অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো । কেনো মনে হয়েছিলো এমন আয়োজন করার কথা ?
নন্দিতা : দেশে দেশে সময়ের সাথে নতুন কিছু করে যুব প্রজন্ম । তাদের সাথে কথা বলে দেখার চেষ্টা করি। ওদের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি।এখন কত রকমের কাজ করছে ওরা। আমাদের প্রজন্ম ওদের প্রজন্মকে আত্মকেন্দ্রিক বলি, ওদের সাথে আমাদের ভাবনার এতো অমিল কেন ?
এরা ঝুঁকি নিতে জানে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী। বয়সের বিস্তর ফারাক স্বত্বেও এই প্রজন্মের ভাবনা গুলো জানতে এবং আমাদের প্রজন্মকে জানাতেই এই আয়োজন ছিলো এবং আমার ফেসবুকে বলছি শোনোর দর্শক স্রোতার যে রেশিও তাতে পরবর্তীতে সমীক্ষায় দেখা গেছে আগের প্রজন্মই নবীন প্রজন্মের কথা শুনেছেন বেশি।
সৌম্য : বিভিন্ন সংস্থার হয়ে নানা কাজ,নারীদের নিয়ে কাজ সহ বিভিন্ন কাজের জন্য বহু সম্মাননা লাভ করেছেন। তার পরেও কী মনে হয় যা পাওয়ার কথা ছিলো তা অধরাই থেকে গেলো?
নন্দিতা : না সেভাবে ভাবি না । আমার সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি কাজের সূত্রে বহু মানুষের সাথে যোগাযোগ যা আমার জীবনের অক্সিজেন, আমৃত্যু যেনো এই যোগাযোগটা ধরে রাখতে পারি। তবে আজকাল স্মৃতির বিড়ম্বনা লজ্জিত করে।
সৌম্য : অমিয়দেবরায় স্মৃতি পুরস্কার ( আগরতলা প্রেসক্লাব) কুঞ্জবালা দেবী এয়োয়ার্ড ( উত্তর পূর্বাঞ্চল) লাভলি মিডিয়া এওয়ার্ড (পূর্বাঞ্চল)
সরোজিনী নাইডু এওয়ার্ভ ( জাতীয় স্তরে হ্যাঙ্গার প্রোজেক্ট আয়োজিত) প্রাপ্তি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কী বিশেষ স্বীকৃতির নির্ণায়ক বলে মনে করেন?
নন্দিতা : সাংবাদিকতায় কেনো, যে কোন পেশায় পুরস্কার কাজের স্বীকৃতি। এখন বিষয়টাকে কে কিভাবে দেখবেন তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। একটা পুরস্কার অনেকটাই দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়, পরবর্তী কাজ করার ক্ষেত্রে। নিজের কাজ করার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠ থাকা একটা ধারাবাহিক পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার পথে হয়তো উৎসাহ জোগায়। আমি সাংবাদিকতার যে ক্ষেত্রটায় কাজ করেছি এখন কাজের ধরন পাল্টেছে ,আমি অন্যধারার কাজ করছি। আজীবন সা়ংবাদিক হিসেবে ডাকসাইটে পরিচিত যিনি , সেই সা়ংবাদিক বেঁচে থাকেন তাঁর সাহসী, সত্যনিষ্ঠ কলমের জন্য।
সৌম্য : সাংবাদিকতা থেকে লেখিকা হয়ে ওঠার পথটা কেমন ছিলো - কুসুমাস্তীর্ণ নাকি কণ্টকাকীর্ণ?
নন্দিতা : লিখতাম অনেক আগে মূলত স্কুলে পড়ার সময় থেকে স্কুল ম্যাগাজিনে । পরবর্তীতে লিটল ম্যাগাজিন বন্ধুরা মিলে। একসময় লিটল ম্যাগাজিন ( রাবন,ইয়ার) বন্ধ হয়ে যায়। ধারাবাহিক নয় মাঝে মাঝে ত্রিপুরা দর্পণে লিখতাম। কবি নকুল রায়ে'র সম্পাদনায় স্থানীয় কাগজে ছোটদের পাতায় ছড়া-কবিতা লিখেছি।
আকাশবাণীর অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট লিখতাম, নাটক এবং ফিচারও। 'আজকের ফরিয়াদ' পত্রিকায় কাজ করার সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে গল্প কবিতা ও লিখতাম।
সাংবাদিক হিসেবে সংবাদ যেখানে শেষ করেতে হয় , সেখানে যা সংবাদে আসে না - তা থেকেই গল্প লেখার মোড় তৈরি হয়। কুসুম না কাঁটা সেটা বোঝার সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন শারদ স়ংখ্যায় গল্প তো লিখছি , কখনো ফিচার।
সৌম্য : আগামীদিনে কী বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান , যা হবে অভিনব?
নন্দিতা : না, সেরকম কিছু এখনো ভাবিনি।
সৌম্য : কোথাও ঘুরতে যেতে বলা হলে কোথায় যেতে চাইবেন?
নন্দিতা : বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেই হলো, রাইমা সাইমার উৎসে যেতে চাই, আর ম্যাকলাক্সিগঞ্জ - নামটার মধ্যে কী এক জাদু , যদি কখনো সম্ভব হয়।
আর একবার আমি যে বিমানে থাকবো সেই বিমান হাইজ্যাক হবে এমন বিমানযাত্রা।
সৌম্য : আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন, গল্পকার নন্দিতা দত্ত কী উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছেন। তাঁর পাঠক জানতে চায়?
নন্দিতা : আমার আখ্যান সংগ্রহে উপন্যাসোপম তিনটি কাহিনি আছে। সম্পূর্ণ উপন্যাস তিনটে শুরু করেছিলাম । কবে শেষ করতে পারবো জানি না। এখন লিখছি না।