।। মাৎস্যন্যায় ।।

অরিন্দম নাথ

এবছর পূজোয় খুবই গরম পড়েছিল । সেইসঙ্গে খাটনি গিয়েছে । শারীরিক যত না, মানসিক তার চেয়ে বেশি । তাই সপ্তাহের শেষে শনিবার বেশ একটু রিলাক্স ছিলাম । পরদিন রবিবার । অফিস বন্ধ । কিছুটা তাড়া কম । সন্ধ্যার পর ছাদে বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করছিলাম । অনেকদিন পর কৈশোরের স্মৃতি মনে এলো । সন্ধ্যার পর শনি-মঙ্গলবারে দাদা-কাকারা তিননাথের আসর বসাতেন । একাকী তাদের ছড়া গাইতে বেশ মজা লাগছিল ।

"এক পয়সার পান আনি তিন খিলি সাজায়,

সাধুরে ভাই কলিতে তিন নাথের মেলা ।

এক পয়সার তৈল আনি তিন বাতি সাজায়,

বাতি জ্বালিয়া দিলে নিভে নারে এ কিরে আজব লীলা,

সাধুরে ভাই কলিতে তিন নাথের মেলা ।"

এমনই সময়ে মৌতাত এলো । আপনারা যারা আমার লেখার সঙ্গে অবগত এই মৌতাত সম্পর্কে জানেন । অপরিচিতদের জ্ঞাতার্থে কয়েকটি কথা বলছি ৷ আমার শরীরে একটি অ্যানামলি আছে ৷ প্রথমে জানতাম না ৷ কয়েক বছর হল বুঝতে পেরেছি ৷ আমার লিভার থেকে সময় সময় এক বিচিত্র এনজাইম ক্ষরণ হয় ৷ জারক-রস । এর প্রভাবে শর্করা জাতীয় খাবার মাদকে পরিণত হয় ৷ ফলে অজান্তেই আমি বেশ নেশার আমেজ পাই ৷ মৌতাত আসে । এমনি মৌতাতের মুহূর্তে বিধাতার দরবারে পৌঁছনোর গ্রিণকার্ড মিলে যায় ৷ আমি পৌঁছে যাই বিধাতার আবাসে । এইভাবে আমি কয়েক দফা সফর করেছি ৷ যার বর্ণনা অন্যত্র দিয়েছি ৷ এইভাবে বেশ কয়েকবার যাবার সুবাদে বিধাতার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে । তাঁকে আগের মত ভয় করি না । বাইরে তাঁকে কাঠখোট্টা দেখালেও অন্তরে হৃদয়বান । আমার মত উদ্ভট প্রাণীটিকে, আর যাইই হোক অপছন্দ করেন না । বরঞ্চ জ্ঞান দেবার সুযোগ পেয়ে তৃপ্ত হন । সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে দুই অনুচর থাকে । বলাবাহুল্য তাদের সঙ্গেও আমার সখ্যতা হয়ে গেছে ৷ মানিকজোড় । শুম্ভ-নিশুম্ভ । দুই যমজ ভাই ৷ অসুরের মত চেহারা ৷ তবে ব্যবহার অমায়িক ৷ আগের জন্মে এঁদের একজন ছিলেন অংকের অধ্যাপক ৷ অপরজন কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান পড়াতেন ৷ দুইজনই ছিলেন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ।

পরকাল হল একটি কাল্পনিক জগতের ধারণা । মৃত্যু পরবর্তী জীবন । এই ধারণা অনুযায়ী মানুষের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার আত্মপরিচয় থেকে যায় ।একধরনের চেতনার অস্তিত্ব । চিত্রগুপ্ত বিধাতার এক্সিকিউটিভ স্টাফ ৷ তাঁর সহকর্মীদের মর্ত্য-ফেরত লোকদের আত্মার মধ্য থেকে নিয়োগ করা হয় । নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন বিধাতার নির্বাচিত একটি কমিটি ৷ এই কমিটির চ্যায়ারমেন এবং সদস্যদের দেব-দেবীদের মধ্য থেকেই বাছা হয় ৷ চিত্রগুপ্ত এবং তাঁর সহকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট সময় চাকুরী করেন । তারপর অবকাশে যান ৷ অনেকেই প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি করেন ৷ খারাপ কাজ করলে শাস্তি পান ৷ ভালো কাজ করলে ইনসেন্টিভ মেলে ৷ স্বর্গ এবং মর্ত্যের টুরিস্ট স্পট ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মেলে ৷ সঙ্গে আমোদ প্রমোদের প্যাকেজ ৷

বিধাতার আবাসে পৌঁছেই শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে দেখা হয় । আমাকে পেয়ে মানিকজোড় খুবই খুশি । আমার কাছ থেকে মর্ত্যের খবর নেয় । আমাকে এক নতুন খবর শুনায় । রুদ্র নাকি বিধাতার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন । পিতৃপক্ষে পার্বতী মর্ত্যে এসেছিলেন । মহাদেবও এসেছিলেন । তিনি এক্সটেনসিভ্ ট্যুর করেছেন । এই চিঠি ট্যুরের ফলশ্রুতি । চিঠি পেয়েই বিধাতা ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেছেন । শুম্ভ-নিশুম্ভ আমাকে নিয়ে যায় বিধাতার কাছে । তিনি একটি ঘরে বসেছিলেন । আমি আগে এই ঘরে আসিনি । বেশ কয়েকটি বড় আকারের অ্যাকোরিয়াম । বিভিন্ন ধরনের জ্বলজ প্রাণী দেখতে পাচ্ছিলাম । তিনি একটি অ্যাকোরিয়ামের সামনে বসেছিলেন । একাগ্রচিত্তে । আমার দিকে একপলক দেখলেন । ঈশারায় একটি টুলে বসতে বললেন । আমি আজ্ঞা পালন করলাম । অ্যাকোরিয়ামের উপর লেখা 'মাৎস্যন্যায়' ।

আমি কিছু ধারনা করার চেষ্টা করলাম । ইতিমধ্যে বিধাতার পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে । তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, "ওহে ছোকরা !বল মাৎস্যন্যায় কি?"

আমি মাথা চুলকে বলি, "

মাৎস্যন্যায় সংস্কৃত শব্দ ।আক্ষরিক অর্থ 'মাছের ন্যায়'। বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে । মানুষের সমাজেও অনেক সময় অরাজকতা বিরাজ করে । নৈরাজ্য কায়েম হয় । সমাজের ধনীরা গরীবদের শোষণ করে । সবল দুর্বলকে আঘাত করে । ক্ষমতাবান অবহেলিতকে নিষ্পেষণ করে । তখন বলা হয় 'মাৎস্যন্যায়' বিরাজ করছে । ইতিহাসে পড়েছি । রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বঙ্গদেশে 'মাৎস্যন্যায়' দেখা গিয়েছে । প্রায় একশো বছর এই অবস্থা কায়েম ছিল ।

ভালো বললে ! কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এই সম্পর্কে বলা হয়েছে ।

- আপনি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পড়েছেন ?

- পড়েছি বলেইতো এই গবেষণা । অ্যাকোরিয়ামটির নাম 'মাৎস্যন্যায়' । বিচারের অভাবে ক্ষমতাবান দুর্বলকে গ্রাস করে । যেন বড় মাছ ছোট মাছকে খাচ্ছে । স্বাভাবিক খাদ্য খাদকের খাওয়া নয় । আমি দেখতে চাইছি ছোট মাছেরা কিভাবে বড় মাছদের অত্যাচার থেকে বেরিয়ে আসে ।

- ইন্টারেস্টিং!

- ইন্টারেস্টিংতো বটেই! তুমি এই অ্যাকোরিয়ামে কি দেখতে পাচ্ছ?

.- যেন একটি পুকুর । এরই বাস্তুতন্ত্র । অ্যাকোরিয়ামের নীচে আপনি মাটি দিয়েছেন ।

- ঠিক ! অজীব উপাদান । সঙ্গে জল, বায়ু এবং অজৈব লবণ ।

- এইগুলি জলজ উদ্ভিদকে

পুষ্টি জোগায় ।

- ঠিক । এরপর আছে সজীব উপাদান । তুমি বল কি দেখতে পাচ্ছ?

- জলে ভাসমান শেওলা । শালুক । পদ্ম । হাইড্রিলা । এইগুলিকে আমারা উৎপাদক বলি ।

- ঠিক । এরপর আছে খাদক ।

- আমি চোখবুজে মাধ্যমিকে শেখা পুকুরের বাস্তুতন্ত্র বলে যাই, 'প্রাইমারি খাদক । মশার লার্ভা । জ্বলজ মাছি । ঘাসফড়িং । সেকেন্ডারি খাদক ছোট ছোট মাছ ।

ব্যাঙ । সর্বোচ্চ খাদক । বড় মাছ । রাক্ষুসে মাছ । বক ।

সারস । মাছরাঙা । পানকৌড়ি ।

- এই বাস্তুতন্ত্র ছাড়া আর কি কিছু তোমার নজরে আসছে?

- না ভগবান !

- তুমি তাকিয়ে দেখলে দেখবে বড় মাছেরা ছোট মাছকে সহজে খেয়ে ফেলছে । সর্বোচ্চ খাদকের কাছে খাবারের কোনও অভাব নেই । আবার অনেক ছোট মাছ এই রাক্ষুসে মাছদের সঙ্গে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে । যেন তাদের ফেউ ।

আমি একটুখানি তাকানোর পর বিধাতার কথার সত্য অনুভব করি । প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি খাদকের ক্ষেত্রে এই বিচ্যূতি চোখে আসে না । এখানে খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক যেন ভীষণ কঠোর । দেখামাত্র খেয়ে ফেলার রেওয়াজ । আমি বিধাতার কাছে আমার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করি ।

তাঁর মধ্যে নির্বিকার একটি ভাব ফুটে ওঠে । তিনি একপলক কি যেন ভাবেন । তারপর বিশাল অ্যাকোরিয়ামের একটি কোনায় আমার দৃষ্টি নিয়ে যান । সেখানে মাছেদের জটলা যেন একটু বেশি । যেন কোনও সমাবেশ চলছে । বিষ্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করি বাস্তুতন্ত্র সেখানে যেন অনুপস্থিত । বেশ একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক । খাওয়া-খাওয়ি আঢ়ালে আবঢালে চলে । আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে, "এরা কী বিদ্রোহী?"

- এদেরকে বিদ্রোহী বলার এখনও সময় আসেনি । ওরা জালের প্রত্যাশায় আছে ।

- জাল !

- হ্যা, জাল । শুধুমাত্র জাল আর কাল 'মাৎস্যন্যায়' থেকে প্রাণীকে মুক্তি দিতে পারে ।

- কালের কথাতো বুঝতে পারছি ।

'মা কুরু ধন জন যৌবন গর্বং ,

হরতি নিমেষাৎ কাল: সর্বম ।

মায়াময়মিদমখিলম হিত্বা ,

ব্রহ্মপদং প্রবিশাশু বিদিত্বা ।।

..... ধন, জন ও যৌবনের গর্ব না করাই ভাল । কারণ কাল বা সময় এই সকলকে নিমেষে গ্রাস করে ফেলে । এই অখিল জগত মায়াময় । তাই আপনার চরণে আশ্রয় গ্রহন করাই মানুষের পক্ষে ভালো।

- ঠিক । মানুষের চিন্তা এবং মননের ফসলকে আমি দাম দিই । এই যেমন আমি তোমাকে তত্ত্বকথা বলছি । এর আইডিয়া আমি একজন মানুষের কাছ থেকে নিয়েছি । ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় । ভদ্রলোক কিছুটা আলাদাভাবে সবকিছু দেখেন । আবারও তোমাকে ধন্যবাদ । তুমি খুবই সহজে বিষয়টি বলতে পেরেছো । যখন তোমাদের সমাজের বৃহৎ অংশের মানুষ মনুষ্যত্ব হারায় তখন বুঝবে মাৎস্যন্যায় কায়েম হয়েছে । মানুষের মৃত্যু একটি অপ্রিয় সত্য । কিন্তু মনুষ্যত্বের মৃত্যু পীড়া দেয় । ছোট মাছ বড় মাছের থেকে পরিত্রাণ পেতে জালের খোঁজ করে । জাল ছাড়া বড়মাছকে ওরা আটক করতে পারবে না ।

- কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি ।

- এই জাল দুই রকমের । ফিজিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল ।

- ফিজিক্যাল জালের সঙ্গে তোমরা পরিচিত ।

- বেড়জাল, নেটজাল, গ্রেণেড জাল, কনি জাল, ফেলুইনজাল, ধর্মজাল এমনি সব জাল ।

- ঠিক তাই । সাইকোলজিক্যাল বা মনস্তাত্ত্বিক জাল একটু ভিন্ন ধরনের । যেমন ধর মহাভারতের কথা ।

- আবার মহাভারত ! আমাকে সবাই ক্ষেপায় । কথায় কথায় মহাভারত নিয়ে আসার জন্য !

- মহাভারততো আসবেই !

- না এমনি বললাম । মহাভারত আসলে প্রতিটি সৃজনশীল মানুষের চিন্তায় এবং মননে বিরাজ করে ।

- মহাভারতে জরাসন্ধের মৃত্যু সাইকোলজিক্যাল জালের কল্যাণে ।

- এর ঠিক আগে 'মাৎস্যন্যায়' বিরাজ করছিল । ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদূর, কৃপ প্রভৃতি মহানুভবরা সবকিছু জেনেও অধর্ম সহ্য করে যাচ্ছিলেন । পাণ্ডবদের পাঁচ ভাইয়ের কেউই পাণ্ডুর জারজ সন্তান নন । আমি ঔরসজাত বলবো না । ঔরস হচ্ছে কোল । সেই অর্থে কোলেপিঠে মানুষ করলেই ঔরসজাত । তাঁরা ক্ষেত্রজ সন্তান । তাঁদের অধিকার নিয়ে কৌরবদের মনে সন্দেহ থাকা অর্বাচীন নয় । কিন্তু পাণ্ডবরা ভীষণই শক্তিশালী । কৌরবদের পাল্লা দিতে তাঁরাই সক্ষম ।

- আমি এভাবে কখনও চিন্তা করিনি ।

- অপরদিকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ মর্ত্যে বিরাজ করছেন । আমাদের কূটনীতিক । তিনি যাদবদের প্রতিনিধি । যাদবরা তখন কোনঠাসা । কংসকে হত্যা করায় জরাসন্ধ রেগে লাল । তিনি ছিলেন কংসের শ্বশুর । তাঁর দুই যমজ মেয়ে বিধবা হয়ে ঘরে ফিরে এসেছে । জরাসন্ধের ভয়ে যাদবরা মথুরা ছেড়ে দ্বারকায় পালিয়ে গেছে । দ্বারকা বদ্বীপ হওয়ায় অনেকটা সুরক্ষিত ।

- শ্রীকৃষ্ণ এত বলশালী । তিনিতো ইচ্ছে করলেই সম্মুখ সমরে নামতে পারতেন !

- তিনি তাহলে সেই মাইলেজ পেতেন না । মাৎস্যন্যায়ের অবসান হত না । তিনি যুধিষ্ঠিরকে রাজসূয় যজ্ঞের পরামর্শ দিলেন । এই বিষয়ে সাহায্য করবেন । তবে একটি শর্ত জুড়ে দিলেন । জরাসন্ধকে বধ করতে সাহায্য করতে হবে । যুধিষ্ঠির রাজি হলেন ।

- তারপর ?

- তারপরের ইতিহাস তুমি জানো । প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ চর মারফত জরাসন্ধের বাড়ির সব খবর সংগ্রহ করলেন । তখন জরাসন্ধ ছিয়াশিজন রাজাকে বন্দী করে রেখেছেন । একশো পুরলে সবাইকে মহাদেবের নামে বলি দেবেন ।

- মহাদেব বলি কি গ্রহণ করতেন?

- সে নীলকণ্ঠই বলতে পারবেন । শ্রীকৃষ্ণ তারপর পরিকল্পনা করেন । এই পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে শ্রীকৃষ্ণ, ভীম এবং অর্জুন জরাসন্ধের আবাসে যান । রাত্রিতে । ব্রাম্মণের বেশে । সম্মুখ দরোজা দিয়ে না ঢুকে সাইডের দরোজা দিয়ে ঢুকলেন । তথাপি জরাসন্ধ তাঁদের সমাদর করলেন । পা ধুয়ে দিতে চাইলেন । তখন কেশব নিজেদের পরিচয় দিলেন । শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে সম্মুখ সমরে কুস্তি লড়ার জন্য আহ্বান করলেন । তিনজনের যেকোনও একজনের সঙ্গে । জরাসন্ধ ভীমকে বেছে নিলেন । আর এতেই মনস্তাত্ত্বিক জালে আবদ্ধ হলেন । শ্রীকৃষ্ণ কিংবা অর্জুনকে বেছে নিলে ফল হয়তো অন্যধারা হতো । শ্রীকৃষ্ণ মনস্তাত্ত্বিক গেম খেলেছিলেন । তিনি জানতেন জরাসন্ধের অহংবোধ প্রচণ্ড ।

- ঠিক তাই ।

- কুস্তি শুরু হলো । প্রায় মাসখানেক চললো । ভীম সমানে পাল্লা দিলেন । শ্রীকৃষ্ণ ভীমকে বলতেন যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল খরচ না করতে । এটাও একটা মনস্তাত্ত্বিক চাল । নীলমাধব এটা করেছেন নিজের সাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য । পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কৌশল । এই অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণ মোক্ষম চাল দিলেন । তিনি ভীমকে ইশারায় বললেন জরাসন্ধের পায়ে ধরে শরীর চিরে ফেলার জন্য ।

- কারণ আমি জানি । জরাসন্ধের জন্ম রহস্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এর কারণ । জরাসন্ধের বাবা ছিলেন রাজা বৃহদ্রথ । তিনি বিয়ে করেছিলেন কাশী রাজার যমজ দুই মেয়েকে । রাজা দুই স্ত্রীকেই সমান ভালোবাসতেন । দুজনের কারওই কোন সন্তান ছিল না । ঋষি চন্দকৌশিকের তখন ভীষণ নামডাক । তিনি একবার রাজার কাছে এসেছিলেন । কথায় কথায় রাজা তাঁর দুঃখের কথা জানালেন । মুনি রাজাকে একটি মন্ত্রপূত আম দিলেন । স্ত্রীদের খাওয়ালে তাঁরা সন্তান জন্ম দিতে পারবেন । বৃহদ্রথ আমটি দুই ভাগ করে দুই স্ত্রীকে খাওয়ালেন । এর ফলে দুই স্ত্রী অর্ধেক বাচ্চার জন্ম দিলেন । রাজা রেগে গিয়ে অর্ধাংশ দুইটি বনে ফেলে দিলেন । সেই বনে জরা নামে এক রাক্ষসী বসবাস করতো । সে দুইটি অর্ধাংশ দেখতে পেয়ে যুক্ত করে একটি পূর্ণ বাচ্চার সৃষ্টি করলো । সন্ধ অর্থ যুক্ত করা । জরা ও সন্ধ যুক্ত করে জরাসন্ধ ।

- বা ! তুমি খুবই সুন্দর করে বললে । ভীমের হাতে জরাসন্ধের মৃত্যু হলো । শ্রীকৃষ্ণও কিন্তু মৃত্যু এড়াতে পারেননি । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অনেকটা পরের কথা । যাদবদের মধ্যে তখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে । এই অবস্থায় একদিন শ্রীকৃষ্ণ জঙ্গলে একটি গাছের নীচে বিশ্রাম করছিলেন । জরা নামে এক ব্যাধ তাঁর পাকে পশুদের পা ভেবে শর নিক্ষেপ করে । সেই আঘাতে তিনি মারা যান । ব্যাধও তির ছুড়েছিল খাদ্যের সন্ধানে । বড়মাছ এবং ছোটমাছ তাই আপেক্ষিক । মানুষের ক্ষেত্রে এই জালের সৃষ্টি হয় পেট, পেটের নীচের এবং উপরের ক্ষুধার তাড়নায় । পেটের ক্ষুধা ভূখমারির কারণে । পেটের নীচের ক্ষুধা যৌন তাড়নায় । পেটের উপরের ক্ষুধা চিন্তা ও মননের । মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধা বিপজ্জনক । এইভাবেই কালচক্র বয়ে যায় ।

- ভগবান একটি প্রশ্ন করার ছিল ।

- বলেই ফেল ।

- জরাসন্ধের জন্ম কি সত্যি ঘটনা ? এভাবে কি মানুষের জন্ম সম্ভব? এটা কি পুরুষের এক্স এবং ওয়াই ক্রমোজমের সংযুক্তি ?

- তোমার চিন্তাকে আমি সাধুবাদ জানাই । তোমার মাথায় আর কি কিলবিল করছে ?

- আপনি অন্তর্যামী !

- তুমি ভাবছো এইসব বিজ্ঞাপন ! শ্রীকৃষ্ণ, জরাসন্ধ, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, পাণ্ডব, কৌরবদের জন্ম রহস্যাবৃত করে তোমাদের উপর মনস্তাত্ত্বিক গেম খেলা হয়েছে !

আমার মনের ভাব বিধাতার মুখে শুনে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি । মৌতাত কেটে যায় । মহাদেবের চিঠির কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে যাই ।




You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
18.10.2021Tapas PaulBeautiful.
18.10.2021Tapas PaulBeautiful.
18.10.2021Debashis BhattacharjeeVery interesting.
18.10.2021Chinmoy RoyWonderful.