"আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি একজন শিক্ষকের যতটুকু না ক্লাসরুমের ভিতর দায়িত্ব, তার থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব ক্লাসরুমের বাইরে।"
অধ্যাপক সৈকত দাস শর্মা'র সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আলোচক সৌম্যদীপ দেব।
সৌম্য : আপনার যাপনে বিজ্ঞান, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ। কেনো? কখনো ভেবেছেন?
সৈকত : আমরা যখন বড়ো হয়েছি, তখন বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস অনেকের মধ্যেই ছিল। বাড়ির বড়রা এমনকি পাড়ার বড়রাও গল্পের বই পড়ার জন্য খুব উৎসাহিত করতেন। বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে অনেক বাড়িতেই নিয়মিত বই আসত। আমাদের বই পড়া শুরু হত অমর চিত্রকথা, হাঁদা-ভোঁদা, বাটুল, নন্টে-ফন্টে, অরণ্যদেব-এর কমিকস পড়ে। একটু বড় হলে হাতে চলে আসত ‘শুকতারা’ আর অবশ্যই ‘আনন্দমেলা’। মুখিয়ে থাকতাম কখন নতুন সংখ্যা বেরুবে। এখন বুঝতে পারি সার্বিক বিকাশের জন্য ঐ ধরনের শিশু সাহিত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর বয়সে পরিচয় ঘটেছিল ফেলুদা, কাকাবাবু-সন্তু, প্রফেসর শঙ্কু, পান্ডব গোয়েন্দা, টেনিদা, ঘনাদা এবং শার্লক হোমসের সঙ্গে। নিয়ম করে বইমেলা থেকে বই কেনা হত। এরপর শুরু হল শরৎ সাহিত্য পড়া। আমার মা কে দেখতাম রাত জেগে গল্পের বই পড়তেন। ধীরে ধীরে আমার মধ্যেও এই অভ্যাস তৈরি হল। মা প্রচুর বই লাইব্রেরী থেকে এনে দিত। আমি সেগুলি গোগ্রাসে গিলতাম। কলেজে পড়ার সময় রাত জেগে উপন্যাস পড়তাম। এই পড়ার অভ্যাসটা পরবর্তীকালে গবেষণা করার সময় খুব কাজ দিয়েছিল। আর পড়ার এই অভ্যাস শিক্ষকতার পেশায় কতটুকু প্রভাব ফেলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সৌম্য : আমরা দেখেছি বিজ্ঞান নির্ভর বেশ কিছু আর্টিকেল আপনি লিখেছেন, বিশেষত পত্রপত্রিকায়। কোন ভাবনা কাজ করে এসবের পেছনে ?
সৈকত : আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি একজন শিক্ষকের যতটুকু না ক্লাসরুমের ভিতর দায়িত্ব, তার থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব ক্লাসরুমের বাইরে। পড়াশোনার একটা বড় উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের মনে লজিক তৈরি করা। জীবনের সমস্যাগুলি যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে তার সমাধানের পথ সৃষ্টি করা। এর জন্য সবাইকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে বা বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে তা কিন্তু নয়। এমনকি আমি খুব বেশি পড়াশোনা না-ই করতে পারি, কিন্তু তাতে আমার বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার মধ্যে তো কোন বাধা নেই। মানুষ যতবেশি বিজ্ঞান মনস্ক হবে তার পক্ষে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া বা সেই সমস্যাকে সমাধান করা তত সহজ হবে। একটা উদাহরন দেই – এই অতিমারিতে করোনা সংক্রমণ রোধ করার জন্য সাবান জলে হাত ধোওয়াটা খুব প্রয়োজনীয়। কেউ হয়তো বা নাই জানতে পারেন, যে কি মেকানিজম বা পদ্ধতিতে সাবান জলের সংস্পর্শে করোনা ভাইরাসের মৃত্যু ঘটে। সবার বিজ্ঞানের এই দুরূহ তত্ত্বকে বোঝার কোন দরকার নেই। কিন্তু কেউ যদি বুঝতে পারেন যে সাবান জলে হাত ধুলে করোনা ভাইরাস তাঁর হাতে থাকে না, তবে সেটাই তো যথেষ্ট। অতটুকু বিজ্ঞানমনস্ক কিন্তু আমাদের হতেই হবে। বিজ্ঞান সবার জন্য―যিনি বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন তাঁর জন্যও আর যিনি কোন দিন স্কুলে যাননি তাঁর জন্যও। বিজ্ঞানের ফলাফলটা তো সবাইকেই ভুগতে হয়। বিজ্ঞান নির্ভর আর্টিকেল লেখার একটাই উদ্দেশ্য, যাতে সব অংশের মানুষকে বিজ্ঞানের সুফলগুলি সম্বন্ধে একটু ওয়াকিবহাল করা যায়।
সৌম্য : ব্যথার ঔষধের পেটেন্ট পেয়েছিলেন আপনি। এই বিষয়ে জানতে চাই।
সৈকত : ওপিয়াম মানে আফিম গাছ থেকে কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হলো থিবেইন। থিবেইনের কোন ঔষধীয় গুণ নেই। কিন্তু অনেকগুলি কার্যকরী ঔষধ - এর থেকে তৈরি করা হয়। যেমন- অক্সিকোডন যা ব্যথা উপশমকারী এবং অ্যান্টিটিউসিভ্ এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। আছে নালোক্জোন বা নালট্রেক্জোন যা ওপিয়াম ওভারডোজ বা অ্যালকোহল এডিকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই সবগুলি ঔষধ পাওয়া যায় ১৪-হাইড্রোক্সিকোডিনোন নামে একটি অন্তর্বর্তী যৌগ থেকে। আমরা থিবেইন থেকে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ১৪-হাইড্রোক্সিকোডিনোন তৈরি করেছি। এই নতুন পদ্ধতিতে উৎপন্ন যৌগটির পরিমাণ ও গুণগতমান যথেষ্ট ভাল। ২০১৫ সালে এই গবেষণালব্ধ ফলাফলটি ইন্ডিয়ান পেটেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
সৌম্য : ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির অভাব রয়েছে এই রাজ্যে। যেখানে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কাজ করার সুযোগ পায়। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনা করছেন এই রাজ্যে- বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন কাজের সুযোগ এখানে কতটা লভ্য ?
সৈকত : ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিগুলিতে মৌলিক গবেষণার সাথে সাথে ওখানকার স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যও গবেষণা হয়। CSIR বা কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ- এর ল্যাবরেটরিগুলি এই দিক থেকে অগ্রগণ্য। একটা উদাহরণ দেই- যোরহাটে অবস্থিত CSIR ল্যাবরেটরি “নর্থ-ইস্ট ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি" (NEIST) সেখানকার গ্রামীন বেকার অংশের মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য অনেকগুলি টেকনোলজির উদ্ভাবন করতে পেরেছে। যেমন- রুম ফ্রেশনার, কৃষিজাত বর্জ্য পদার্থ যেমন ধানের খোসা দিয়ে কম্পোজিট বোর্ড তৈরীর পদ্ধতি, মশা দমনকারী ভেষজ লিকুইড ভ্যাপোরাইজার, ডাস্ট ফ্রী চক তৈরির পদ্ধতি ইত্যাদি অনেক টেকনোলজির বিকাশ ঘটিয়ে বহু এন্টারপ্রেনারকে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দিয়েছে এই ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিটি। প্রসঙ্গত আমাদের পাশের রাজ্য আসামেই এগারো-বারোটা ন্যাশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি আছে।
বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় অংশই বিভিন্ন রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে প্রজেক্ট এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণা চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রচুর অনুদান দেয়। তাই ল্যাবরেটরিগুলিতে রিসার্চ প্রজেক্টের ছড়াছড়ি, ওরা ঝাঁকে ঝাঁকে সদ্য পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের প্রজেক্ট এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে। প্রজেক্ট চলাকালীন সময়ে ভালো মাত্রায় ফেলোশিপ দেওয়া হয়। এই সময়ে ছেলেমেয়েরা গবেষণার কাজ শেখে এবং কী করে সমাজের টেকনিক্যাল সমস্যাগুলির সমাধান করা যায় তা হাতে কলমে আয়ত্ত করে। এতে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীও হতে পারে ছেলেমেয়েরা। কর্মহীন অবস্থায় বাড়িতে বসে থাকতে হয় না। আমাদের রাজ্যে ওই ধরনের ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি স্থাপনের খুব প্রয়োজন। তাতে আমাদের রাজ্যের একটা বড় অংশের ছেলে-মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের বিরাট সুযোগ তৈরি হবে। নতুন নতুন এন্টারপ্রেনারশিপ গড়ে উঠবে। তৈরি হবে ভবিষ্যতের মানব সম্পদ।
সৌম্য : গুরুকুল ভিত্তিক শিক্ষা সময়ের সাথে রূপান্তরিত হয়ে প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক শিক্ষা। এখন এসে গেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্রত্যেক বছর আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু না কিছু পরিবর্তন আসছে। শিশুর শৈশব ও অভিযোজন কতটা চ্যালেঞ্জিং? ভারতীয় শিক্ষার ভিত্তিতে নতুন শিক্ষানীতি 2022 কতটা প্রভাব ফেলতে পারে ?
সৈকত : আমি প্রথাগত শিক্ষায় বিশ্বাসী এবং মনে করি কোন বিষয়কে সঠিকভাবে বুঝতে গেলে মন দিয়ে টেক্সট বই পড়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ টেক্সট বই চিন্তার উন্মেষ ঘটায়, ভাবতে শেখায়। শিক্ষা তখনই সম্পূর্ণ হয় যখন ছাত্র-ছাত্রী তাকে অনুভব করতে পারে, যা শিখল সেটার প্রয়োগ করতে পারে। তার জন্য ক্লাসরুমের পড়াশোনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি কোনদিনই ক্লাস রুমের পরিপূরক হতে পারবে না। এই অতিমারিতে আমাদের কোনো উপায় ছিল না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের মধ্যে ক্লাস রুমের অভাব যতটুকু সম্ভব পুষিয়ে দিতে। নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে মাস্টারমশাইরা অসাধ্য সাধন করেছেন। কিন্তু ক্লাসরুমের মজাটাই আলাদা, তার কোনো বিকল্প হতে পারে না।
আর শিশুর শৈশবটা কেমন করে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। একটা বড় অংশের শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবকরা মনে করেন ঐ কচিকাঁচাদের মগজে বেশি পড়া ঠেসে ঠেসে ঢোকানো খুব প্রয়োজন। ছোট্ট শিশুদের কাঁধে বইয়ের ব্যাগের বিরাট বোঝা, কঠিন কঠিন সিলেবাসের বোঝা, নানারকম অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্টের বোঝা এবং সঙ্গে প্রচুর পরিমানে ক্লাস নোট ও হোমওয়ার্কের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এত চাপের কারণে শিশুর শৈশব যে দিশাহারা। তার নিজস্বতা, স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিশুর পড়াশোনা হতে হবে চাপমুক্ত, আনন্দময়। তবেই না সে নতুন কিছু ভাবতে পারবে। পড়াশোনাটা শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতায় নম্বর পাওয়ার জন্য নয়। শুধু গাদা গাদা নম্বর পেয়ে কি হবে যদি না এই নম্বরের সাথে চিন্তা, চেতনা ও ভাবনা না থাকে।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে মাল্টিডিসিপ্লিনারি পড়াশোনার কথা বলা হয়েছে তাতে অনেকগুলি বিভিন্ন ধরনের বিষয় একসাথে পড়ার সুযোগ থাকবে। গণিতের সঙ্গে ইতিহাস পড়া যাবে বা অর্থনীতির সঙ্গে পদার্থবিদ্যা। এই বহুমুখী পড়াশোনার ফলে ছেলেমেয়েদের কোন বিষয়কে অ্যানালিসিস করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যেমন আমার মতে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের সাহিত্যপাঠ খুব প্রয়োজন। সাহিত্য না পড়লে চিন্তার গভীরতা সৃষ্টি হয় না, কল্পনাশক্তি বিকশিত হয়না। আর কল্পনা না থাকলে বিজ্ঞান কী করে হবে? নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি হয়ত এই গ্যাপটাকেই পূরণ করবে। এছাড়া, নতুন প্রজন্ম আবহাওয়ার পরিবর্তন, সেনিটেশন, পলিউশন এইসব সমস্যা নিয়ে হাতে কলমে কাজ করতে পারবে। একসঙ্গে বিজ্ঞান, সাহিত্য, হিউম্যানিটিস, ইঞ্জিনিয়ারিং বৃত্তিমূলক শিক্ষা, সফট্ স্কিল এবং বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে এবং তার প্রতিফলন দেখা যাবে কর্ম জীবনে।
সৌম্য : বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি আপনি বাংলা সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক। পছন্দের লেখক কে কে?
সৈকত: আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার। অন্য অনেকের মত উঁনার সৃষ্ট 'কালবেলা'র মাধবীলতা ও অনিমেষ আমার খুব প্রিয় চরিত্র। আমার মতে মাধবীলতার মত এত শক্তিশালী নারী চরিত্র বাংলা সাহিত্যে বিরল। এছাড়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বাণী বসু, নারায়ণ সান্যাল, সত্যজিৎ রায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ে'র লেখা খুব ভালোলাগে।
সৌম্য: খোয়াইতে আপনার দীর্ঘ কর্মজীবন অতিবাহিত হয়েছে। শহরটি কেমন? আজও অবচেতনে খোয়াই যান? শহরের মধ্যে বয়ে চলা অন্তরস্রোতটি উপলব্ধি করেছেন কখনো?
সৈকত: খোয়াই আমার প্রথম কর্মস্থল। আমার মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে খোয়াই। ওখানকার মানুষের প্রাণোচ্ছ্বাস ও আন্তরিকতা সত্যি ব্যতিক্রমী। সহজ, সরল, প্রাণবন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সাহচর্যে খোয়াইতে আমার দিনগুলি বড়ই ভাল কেটেছে। শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা চোখে পড়ার মত। আবার কাজ করার ইচ্ছা রইল খোয়াইতে।
সৌম্য : আপনার পছন্দের বই তালিকা সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈকত : খুব পছন্দের বই গুলি হল সমরেশ মজুমদারে'র 'কালবেলা', ' উত্তরাধিকার' , 'সাতকাহন'। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে'র 'প্রথম আলো' , 'পূর্ব-পশ্চিম'। নিমাই ভট্টাচার্যে'র 'মেমসাহেব', শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে'র 'চরিত্রহীন' ও 'পথের দাবী' । নারায়ণ সান্যালে'র 'বিশ্বাসঘাতক' এবং শৈলেশ দে’র 'আমি সুভাষ বলছি' ।
সৌম্য: খেলার মাঠের বদলে অনলাইন গেইম বিদ্যালয়ের বদলে জুম লার্নিং,ডিজিটাল জগতের প্রবল হাতছানি, নিউক্লিয়ার পরিবারের ধারণা, সামাজিক অস্থিরতা-ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেবল রিক্ত হয়ে এগিয়ে চলছে। যেখানে পায়ের তলায় মাটি নেই। কী বলবেন?
সৈকত: শৈশব থেকে বড় হওয়াটা কেমন যেন পাল্টে গেল। শিশুর কান্না থামানোর জন্য, বায়না থামানোর জন্য তার ছোট্ট হাতে তুলে দেওয়া হয় মোবাইল ফোন। সে যেন বড় হয়ে উঠছে ভার্চুয়াল জগতে। মা-বাবারা কি বুঝতে পারেন না এর ফল কী ভয়ঙ্কর হতে পারে? দিনকে দিন বাচ্চাগুলি হয়ে উঠছে অনুভূতিহীন, আবেগহীন। পাড়ার পিসি, মাসি, কাকু, মামা সব হয়ে গেছে আঙ্কেল, আন্টি। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করার বিরামহীন চাপে শৈশব দিশেহারা। ওরা এখন বিকেলবেলায় খেলতে যায় না। একটু বড় হলে ওরা হয়ে যাচ্ছে আরও যান্ত্রিক। বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডাও দেয় না ওরা। খালি race, race আর race। কত কিছুর আনন্দ থেকে ওরা বঞ্চিত!সূক্ষ সূক্ষ অনুভূতিগুলি, ছোট ছোট ভালো লাগার মুহূর্তগুলি, সংবেদনশীলতা অনেকটাই অনুপস্থিত ওদের মধ্যে। ওদের জন্য খুব কষ্ট হয়। পড়াশোনা, শিক্ষার একটা অন্যতম উদ্দেশ্য আপনজনদের নিয়ে ভালোভাবে থাকা। এই ছেলেমেয়েগুলি যখন বড় হবে তখন ওদের মধ্যে আমরা যদি আত্মকেন্দ্রিকতা, আবেগহীনতা, অনুভূতিহীনতা দেখি তখন কিন্তু ওদের দোষ দেওয়া যাবে না। দোষটা সম্পূর্ণ আমাদের বড়দের।
সৌম্য: নতুন কী বিষয় নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চান?
সৈকত: ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। এই সুযোগ যখন পেয়েছি তখন প্রতিটি মুহূর্তেই নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ভালবাসি ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক বিকাশে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, উদ্দেশ্য থাকে ওরা যাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারে। একটা সময়ে আমি গবেষণায় নিমগ্ন থাকার কথা ভাবতাম। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে আমার পুরো সময়টাই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিয়োজিত। এতে বিরাট আনন্দ পাওয়া যায়। ওদের উৎকর্ষতাই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য।