মডেল রাজ্য গঠনে সর্ব ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা খুব দ্রুত এগুচ্ছে: বিনা মন্তব্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দাবী সমূহ
জয়ন্ত দেবনাথ
আইন শৃংখলা, কর্মসংস্হান, মডেল রাজ্য গঠনে সর্ব ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা খুব দ্রুত এগুচ্ছে: ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষনে এই দাবী করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। কি কি বিষয় গুলি মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ভাষণে প্রাদান্য পেয়েছে এখানে মুলত বিনা মন্তব্যে সেই বিষয় গুলিই সংক্ষিপ্ত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এবার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিপ্লব কুমার দেব চতুর্থ বার আসাম রাইফেলস মাঠে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষন দিয়েছেন। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ভাষণের পরে ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রদত্ত বিজেপি-র ভিসন ডকুমেন্টের প্রসঙ্গটি সামনে আনার চেস্টা করেছেন। কিন্তু এই প্রতিবেদনটি যেহেতু শুধুই মুখ্যমন্ত্রীর ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষন প্রসঙ্গে তাই নির্বাচনের আগে কে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে আর কতটা বাস্তবায়ন হয়নি এই প্রসঙ্গে যাচ্ছিনা। ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের সকাল নাগাদ ভাষণের কিছুক্ষণ বাদে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তার সামাজিক মাধ্যমে সেই ভাষণের সংক্ষিপ্তসার তোলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের গোটা ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ই ছিল গত তিন বছরে রাজ্যের উন্নয়নে তার সরকার কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন এবং কোন কাজটি কতটা হয়েছে সেই বিষয়ের উপর। ভাষনের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যেটা বলেছেন সেটা হলঃ বর্তমান রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য হিসেবে তৈরি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রায় আধ ঘণ্টার ভাষণে তিনি প্রধান প্রধান যেসব বিষয় গুলি বলার চেস্টা করেছেন তার মধ্যে রয়েছে- ২০১৮-১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রেগুলার, ডাই-ইন-হারনেস, আউটসোর্সিং -এর মাধ্যমে নিযুক্ত সব মিলিয়ে মোট ২৩,০০১ জনের চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য সরকার প্রমোশন পলিসি-২০২১ চালু করেছে, যা এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। কর্মচারীদের এডহক ভিত্তিতে প্রমোশন দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
রাজ্যের মাথাপিছু গড় আয় ২০১৭-১৮ তে ছিল ১ লক্ষ ৪৪৪ টাকা এবং ২০২০-২১ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩১ হাজার ১২৮ টাকা। সিডি রেশিও ২০১৭-১৮'র শেষে ছিল ৪৮% ,২০২০-২১ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪%।
রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ সামগ্রিকভাবে উন্নতি লাভ করেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের হার কমেছে। রাজ্যের জন্য একটি ফরেনসিক ইউনিভার্সিটিরও অনুমোদন পাওয়া গেছে।
শক্ত হাতে করোনার মোকাবেলা করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে ২২টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির অনুমোদন রয়েছে যার মধ্যে একটি খুমলুঙের খেরেংবারে স্থাপন করা হবে। ১২ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৩২ লক্ষ ৪২ হাজার ৬০৫ টি কোভিড টিকা প্রদান করা হয়েছে। ১৮ ঊর্ধ্বদের মধ্যে ৯৩% টিকাকরণের প্রথম ডোজ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজ্য সরকার মাত্র ৩৯ দিন সময়ের মধ্যে ১৫৬ জন এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোভিড-রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে এমবিবিএস ডাক্তার, ডেন্টাল সার্জন, ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ান এবং নার্স সহ ৩২৬ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছে।
অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও পরিষেবা সহ রাজ্যে অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওনাল ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে হাসপাতলে ১০০- এর বেশি রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর ফলে চিকিৎসার জন্য বহিঃরাজ্যে যাওয়ার হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার "মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজে" শুকনো রেশন সামগ্রী বা নগদ টাকায়ও সহায়তা দেয়া হয়েছে।
করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের অন্তর্গত ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার গরিব অংশের পরিবারে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল প্রদান করছে রাজ্য সরকার যা আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে।
করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে 'মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ' এর মাধ্যমে রাজ্যের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার পরিবারকে রেশন সামগ্রী সহ নগদ ১ হাজার টাকা করে ডিবিটি করা হয়েছে।
ত্রিপুরা পুলিশ "সিটিজেন ফাইনান্সিয়াল সাইবার ফ্রডস রিপোর্টিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম" গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থায় অনলাইনে কোনো প্রতারণার ঘটনা ঘটলে সময় নষ্ট না করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ১১২ টোল ফ্রি নাম্বারে ফোন করে সহায়তা নিতে পারবেন।
রাজ্য সরকার ২০২২-২৫ তিন বছরে মিশন ফর কমার্শিয়ালাইজেসন অব জ্যাক ফ্রুট এন্ড পাইনাপেল প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পে চাষ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, সঠিক ব্যবস্থাপন ও জৈবিক চাষের সুবিধা থাকবে। এই প্রকল্পে ত্রিপুরায় ৩ লক্ষ ৬০০ হেক্টর এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল এবং আনারস চাষ করা হবে। গত তিন বছরে ৩৩.৬৫ মেট্রিক টন আনারস দুবাই ও কাতার ইত্যাদি দেশে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের প্রথম কিষান রেলের মাধ্যমে রাজ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের ফল অন্য রাজ্যে শুধু ৫০% খরচায় পাঠানো হয়েছে।
রাজ্য সরকার রাবার গাছ ভিত্তিক বাণিজ্যের প্রসারে ফার্নিচার ও প্লাইউড কারখানা স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে যেন বেসরকারি বিনিয়োগকরিরা উদ্যোগী হয় সেই লক্ষ্যে রাবার কাঠ ভিত্তিক শিল্প স্থাপনের জন্য বিশেষ শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।
"ত্রিপুরা আই টি ও আই টি ই এস স্টার্ট আপ স্কিম-২০১৯"এর আওতায় রাজ্যের যুবাদের পরিকাঠামোগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্টার্ট আপকে উৎসাহ দিতে কলেজগুলিতে ইনকিউবেটর তৈরি করা হবে।
পর্যটন ক্ষেত্রে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে ৭টি স্থানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে। ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। চা-পর্যটন প্রসারের পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধার্থে চা-বাগান এলাকায় রিসর্ট নির্মানের জন্য জায়গা অ্যালটমেন্ট প্রদান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যে মোট জাতীয় সড়কের সংখ্যা ৬টি।তাছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় সড়কের সংখ্যা ৩টি। মোট প্রকল্প ব্যয়ের পরিমাণ ১০হাজার ৭১৪কোটি টাকা। সর্বমোট জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১হাজার২৩ কিলোমিটার।এরমধ্যে ৫ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার ঘোষিত প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে।এছাড়া প্রস্তাবিত জাতীয় সড়কের জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
রাজ্যে সামগ্রিকভাবে 'ই-গর্ভনেন্সকে' প্রমোট করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা এবং সরকারি কাজে দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৮টি দপ্তর এবং অফিসে 'ই-অফিস' চালু করা হয়েছে। তাছাড়া "জাগ্রুত ত্রিপুরা" মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগন সরকারি বিভিন্ন কল্যাণমূলক স্কিম এবং পরিষেবা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
"মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগাযোগ যোজনায়" চলতি অর্থবছরে সরকারি কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে এই সুবিধা প্রদান করা হবে। এই কারণে অর্থবছরের বাজেটে ৭.৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
দেশের একশটি নগরের মধ্যে আগরতলাকে ভারত সরকার "স্মার্ট সিটি মিশনের আওতায় আরবান রিনিউয়্যাল এন্ড রেট্রোফিটিং কর্মসূচিতে" যুক্ত করেছে। রাজ্য সরকার লিচুবাগান জংশন থেকে নতুন টার্মিনাল ভবন পর্যন্ত আগরতলা এয়ারপোর্ট রোডকে দুই থেকে চার লেনে উন্নীত করছে। এতে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। যা আগামী ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্ব-সহায়ক দলের উদ্যোগীদের ৩টি ব্লকে ব্যাংক থেকে ৭ দিনের মধ্যে, ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন থেকে ৫ দিনের মধ্যে এবং গ্রামীণ সংস্থা থেকে ৩ দিনের মধ্যে ঋণ মঞ্জুর করার জন্য পাইলট বেসিসে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মৌলিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটিগুলোকে উৎসাহিত করতে "মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা" নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পঞ্চায়েত ও কর্মচারী ও আধিকারিকদের সম্মানিত করতে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, এক্সপোজার ভিজিটের আয়োজন করা হবে এবং গ্রামকে উৎসাহ প্রদান স্বরূপ নগদ অর্থমূল্য ৪ লক্ষ টাকা এবং ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।যেসব গ্রামে এইসব প্রকল্প ১০০% রূপায়িত হবে তাদের এই ইনসেনটিভ দেওয়া হবে।
রাজ্য সরকার "ত্রিপুরা গ্যারান্টেড সার্ভিসেস-টু-সিটিজেনস অ্যাক্ট,২০২০" এন্ড "ত্রিপুরা গ্যারান্টেড সার্ভিসেস-টু-সিটিজেনস রুলস,২০২০" গঠন করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নাগরিকদের পরিষেবা প্রদানের জন্য ১০১ টি পরিষেবার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
"মুখ্যমন্ত্রীর মডেল ভিলেজ স্কিম" নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬.০৫ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ সালের জন্য ৭.০৫ কোটি টাকা বাজেট সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূল্যায়ন কমিটি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটি নির্বাচিত করবে এবং তাদের প্রথম পর্যায়ে কাজকর্ম সম্পাদনের নিরিখে ১ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায় সম্পন্ন করার পর ২ কোটি টাকা ইনসেনটিভ হিসেবে দেওয়া হবে ।
রাজ্য সরকার "ত্রিপুরা এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড লিজিং বিল,২০২১" চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জমির মালিকের জমির অধিকার সুরক্ষিত করার পাশাপাশি এই বিলটি কৃষকদের লিজে চাষাবাদে স্বীকৃতি প্রদান করবে। তারা বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ, বীমা, বিপর্যয়ে ত্রাণ এবং সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা ও সহযোগিতা নিতে পারবেন। ১ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গাদার এর ফলে উপকৃত হবেন এবং সহজেই ঋণের সুবিধা নিতে পারবেন।
রাজ্য সরকার ১৯০৫ নম্বরটিকে "চিফ মিনিস্টার হেল্পলাইন নম্বর" হিসেবে চালু করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মাধ্যমে নাগরিকদের অভাব-অভিযোগ সহজেই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।'পাইলট বেসিসে' এই পরিষেবা ধলাই জেলায় চালু করা হবে।
মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ সালে ৮২ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে যেটা ২০১৭-১৮ এর তুলনায় ৯ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন বেশি। মাছের চাষের জলাশয় ৮০০.০৫ হেক্টর বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকা বেড়ে দাড়ি়েছে ২৯ হাজার ৫০৩.৩৯ হেক্টর। রাজ্যের মাছের উৎপাদন ২০১৮-২১ বছরে মোট ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন হয়েছে, যা ২০১৫ - ১৮ থেকে ৮ শতাংশ বেশি।
মাংসের উৎপাদনে রাজ্য ২০১৮-২১ তে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৪১৬ মেট্রিক টন হয়েছে যা প্রায় ২০১৫-১৮ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৮-২১ পর্যন্ত মোট ৮৭ কোটি ৩৪ লাখ ডিমের উৎপাদন হয়েছে ২০১৫-১৮ থেকে ২৩ শতাংশ বেশি।
NFHS4 ২০১৫-১৬ তুলনায় NFHS5 ২০১৯-২০ - এ লিঙ্গ অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি হাজার ৯৯৮ থেকে ১০১১। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা ৭৯.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৯.২ শতাংশ এবং শিশুদের টিকাকরন একই সময়ে ৫৪.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৯.৫ শতাংশ।
রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ভিলেজ হেলপ সেনিটাইজেশন নিউট্রেশন্যাল ডে পালন করেছে। সেজন্য অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সুপারভাইজার দের মোবাইল ফোন প্রদান করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে থেকে।
উইন্ড মনিটরিং স্টেশন স্থাপনের ক্ষেত্রে রাজ্যের ১১টি জায়গায় স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ এ রাজ্যে বায়ুচালিত শক্তি আহরণের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজ্যের বিদ্যুৎ ভোক্তাদের বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে ৪৫৯৪.৫৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে। ১৩৭২.২০ কোটি টাকায় নর্থ-ইস্টার্ন রিজিওনাল পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট এর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা রূপায়িত হচ্ছে ৩১৬.২২ কোটি টাকা খরচায় এবং প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা ৪১৭.৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে DDUGJY রূপায়নের ক্ষেত্রে ৩৫৮.৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
উন্নত মানের রাবার গাছ বৃদ্ধি এবং রাবার চাষীদের স্বার্থে ত্রিপুরা সরকার মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্প চালু করেছে। অটোমেটিক টায়ার মেনুফেকচারস অ্যাসোসিয়েশন এবং ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের সহায়তায় এই প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। আগামী পাঁচ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর এলাকায় রাবার চাষের লক্ষ্যমাত্র নেওয়া হয়েছে। প্রতি হেক্টর রাবার বাগান জমিতে ৩,০৫,৪৫২ টাকা খরচা করা হবে।
বর্তমান স্পেশাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু ট্রাইবেল সাব-স্কিম পরিবর্তন করে জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক গ্রামের সুসংহত বিকাশের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প চালু করবে। যেখানে ৫০ শতাংশ কিংবা ৫০০ জন লোক বাস করছে সেখানেই এই প্রকল্প কাজ করবে।
গ্যাস ফিলিং কম্পনেন্ট হিসাবে ২২.৬২ লক্ষ টাকা করে প্রতি গ্রামকে প্রদান করা হবে। প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নতুন গ্রামে এই টাকা কার্যকরী হবে। সবথেকে সফল তিনটি গ্রামকে ৫০ লক্ষ, ৩০ লক্ষ আর ২০ লক্ষ টাকার পুরস্কার প্রদান করা হবে।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সকল পরিবারের বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে অটল জলধারা মিশনের মাধ্যমে যা পূর্বের জল জীবন মিশনের মধ্যে পরিবর্তিত হবে।
ত্রিপুরা আগর উড পলিসি ২০২১ এর ১৯ জুলাই ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ লক্ষ আগর চারা লাগানোর লক্ষ্যমাত্র রাখা হয়েছে, চলতি বছরে ৫ লক্ষ গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২০২৫-এর মধ্যে ২০০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (আরবান) প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে মোট ৪৫ হাজার ৭৩৫টি ঘর অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ হাজার ৪২৮টি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে 'বেস্ট পারফর্মিং স্টেট' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ত্রিপুরা। তাছাড়া আগরতলাকে বেস্ট পারফর্মিং মিউনিসিপাল কর্পোরেশন এবং বিলোনীয়া কে বেস্ট পারফর্মিং মিউনিসিপাল কাউন্সিল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোমতী জেলায় সিটি গ্যাস ডিসট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করছে,যা এবছরের অক্টোবর মাস নাগাদ শুরু হবে। এই বিষয়ে ত্রিপুরা ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। এই রেললাইনের নিশ্চিন্তপুরে একটি রেল ইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ফেনী এবং বিলোনিয়ার মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে রেল মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এছাড়াও এমবিবি বিমানবন্দরে একটি আধুনিক সুবিধাসহ নতুন ইন্টিগ্রেটেড টার্মিনাল ভবনের নির্মাণও শেষের পথে।
৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে একটি ঐতিহাসিক প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে যেখানে সাব্রুমে অত্যাধুনিক আই সি পি, সেজ, মাল্টিমিডিয়া লজিস্টিক হাব এবং রেলওয়ে ইয়ার্ড তৈরি করা হবে। এর ফলে রাজ্যের সার্বিক অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে এবং ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়েতে পরিণত হবে।
সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে মিশন-১০০ প্রকল্পে "বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয়" স্থাপন করা হচ্ছে।ত্রিপুরাকে একটি শিক্ষামূলক হাব রূপে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে একটি খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে নতুন নতুন প্রকল্প সংযোজন ও সংস্কার সাধন করা হয়েছে ।
"ট্রান্সফর্মেশন অব অ্যাস্পিরেশনাল ব্লকস প্রকল্পের" অধীনে বারোটি পিছিয়ে পড়া ব্লককে দ্রুত উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নতুন উদ্যমে তা রূপায়ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।(লেখক একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও ত্রিপুরাইনফো-র সম্পাদক)