উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কেন উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি নিয়ে পড়া উচিত?
ডাঃ কিশোর রায়
আজকের সময়ে আমরা এমন একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি যা আমাদের জীবনধারা এবং কর্ম সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এর আগে যে সমস্ত শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল তার মতো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবও বিশ্বব্যাপী আয়ের মাত্রা বাড়ানোর এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সম্ভাবনা রাখে। এর সাহায্যে, অনেক ধরনের প্রযুক্তি সম্ভাব্য নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরি করা হয়েছে যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র জুড়ে থাকা প্রযুক্তিগুলির একটি গোষ্ঠী ,চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে প্রাধান্য দিয়েছে। এগুলির মধ্যে ডেটা সায়েন্স (ডিএস), আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং (এমএল), অ্যাডভান্সড রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স (এআরএম), ক্লাউড কম্পিউটিং (সিসি), এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) প্রধানত পুরো বিশ্বকে নতুন আকার দিতে পারে । এটি প্রত্যাশিত যে, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের ন্যায় বেশিরভাগ প্রযুক্তিগত কাজ ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে রূপান্তরিত হতে চলছে।
এখানে সুস্পষ্ট প্রশ্নটি হল , কীভাবে বিশ্বব্যাপী উদীয়মান প্রযুক্তিগুলির প্রভাবে স্থানীয় পরিবর্তনগুলি প্রভাবিত হতে পারে ? এর উত্তর পেতে আমরা বৃহত্তর প্রসারিত নাও হতে পারি। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটিং সুবিধাগুলির উন্নতি কল্পের ও প্রয়োগের সাথে জড়িত, এখনও ভারতে যা পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের অনুভূতি বিশেষত ভারতের পক্ষে অসাধারণ, যা দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য বিকাশ এনেছিল। তাছাড়া ইন্টারনেট বিপ্লবের পথ সুগম করে এটি ভারতকে বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিংয়ের নেতৃত্বে পরিণত করার ক্ষমতা দিয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটিতে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান ও তৈরি হয় ।
সুতরাং, আমাদের কি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পাশাপাশি ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, অ্যাডভান্সড রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অফ থিংস ইত্যাদির মতো উদীয়মান প্রযুক্তির প্রয়োগের অনুরূপ ফলাফল আশা করা উচিত? উত্তরটি অবশ্যই হ্যাঁ।
৮০- এর দশকের গোড়ার দিকে, জাতীয়স্তরে, ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে, প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরী করার এক অসাধারণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । প্রথম পদক্ষেপটি ছিল শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক তৈরি এবং তাদের দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেই প্রশিক্ষণকে সম্প্রসারিত করা । এর দরুন, আমরা প্রত্যক্ষ করেছি দেশজুড়ে শত শত ইনস্টিটিউট ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং / অথবা তৎসম কোর্স প্রদান করা শুরু করে।
আমি, এখানে, ‘ সম্ভবত ’ শব্দটি ব্যবহার না করে আরও সংক্ষিপ্ত সুরে উদীয়মান প্রযুক্তির অধীনে কোর্সগুলির জন্য শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক উৎপাদনের পুরাতন পদ্ধতির সমর্থন করে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের এই ধরণের কোর্স গুলিতে নিজেদের তালিকাভুক্ত করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে চাই ।
ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত পেশার ৬০ শতাংশের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কার্যক্রম থাকবে যা প্রযুক্তিগত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে। সেই সময়ের মধ্যে, বিশ্বব্যাপী জিডিপি ১২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে যা থেকে ভারত সম্ভবত ১৬ শতাংশ শেয়ার বা অতিরিক্ত ১. ৯২ ট্রিলিয়ন ডলার পাবে।
এই মাইলফলক অর্জনের জন্য আমাদের একটি সম্মিলিত মানসিকতা থাকা দরকার যা নীতি নির্ধারক, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্তরের উদ্যোগকে একটি নিখুঁত বাস্তুসংস্থান -এর আকার দিতে পারবে। সেই বাস্তুতন্ত্রে সমস্ত অংশীদারদের, বিশেষত পিতামাতা এবং শিক্ষার্থীদের কুণ্ঠাহীন অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এই সকল উদীয়মান প্রযুক্তির গুরুত্ব আরো ভালো করে বুঝে ওঠার জন্য, পাঠকরা নিচে উল্লেখিত ইউটিউব ভিডিওটি দেখতে পারেন। "The Next Global Superpowers Are Racing For Future World Domination" শিরোনামটিকে বর্তমান আলোচনার প্রেক্ষাপট বলে মনে করা হয়:
https://www.youtube.com/watch?v=9dgpuzawqn8&list=PL6RtDifeYrRZe37RMmNg3_JhrAgGAMrYL.
লেখক পরিচিতি: ডঃ কে.রায় এর মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সিঙ্গাপুর এবং ভারতের আইটি শিল্পে ৩৩+ বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি দুটি স্টার্ট-আপ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং তার বেশ কয়েকটি প্রকাশনা ও রয়েছে। মূলত ভারত ও বিদেশ এর বেশ কিছু গবেষক, ডেটা সায়েন্স ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে তার তত্ত্বাবধানে গবেষণার কাজ করছেন। তিনি টেকনো ইন্ডিয়া আগরতলার (টিআইএ) [বর্তমানে টেকনো কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং আগরতলা (টিসিইএ) ও টেকনো মেইন সল্ট লেকের (টিএমএসএল) প্রাক্তন অধ্যক্ষ। বর্তমানে তিনি টেকনো ইন্ডিয়া গ্রূপ এর ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে কর্মরত ।
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন শ্রীমতী সুস্মিতা মজুমদার, সহ অধ্যাপিকা, টেকনো কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং আগরতলা।