তপশিলিজাতি কল্যাণ প্রকল্পে সহায়তা পেয়ে বেলাবরের সুকুমার আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন
মনিমালা দাস
ডুকলি ব্লকের বেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সুকুমার দাস। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। পারিবারিক অবস্থা ভাল ছিলনা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। প্রতিদিনের খাবার যোগানোই ছিল কষ্টসাধ্য। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মনোবল হারাননি সুকুমার দাস। আগরতলা গোলবাজারে এক সময় ফল বিক্রি করতেন। কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন না হওয়ায় ফল বিক্রি ছেড়ে তিনি শহরে শুকনো মাছ ফেরি করে বিক্রি করতে শুরু করেন। এতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ হতো। এইভাবেই দিন কাটছিল সুকুমার দাসের। প্রায় ৮ বছর তিনি শুকনো মাছ ফেরি করতেন। তিন স্বপ্ন দেখতেন স্বনির্ভর হওয়ার। কিন্তু স্বনির্ভর হওয়ার জন্য কোন সরকারি সহায়তা পাচ্ছিলেন না। তপশিলী জাতি সম্প্রদায়ের হয়েও সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে নিয়ে সংসার যাতে স্বচ্ছন্দে চলতে পারে সে জন্য তিনি মাছের ব্যবসা। শুরু করবেন বলে মনস্থির করলেন। শুকনো মাছ ফেরি করে উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার খরচ চালিয়ে যা সামান্য কিছু জমিয়ে ছিলেন তা দিয়ে তিনি মাছ কিনে ফেরি করতে লাগলেন আগরতলা শহরে।
২০১৮ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের সুকুমার দাস প্রথম সরকারি সহায়তা পেলেন। এই সহায়তা তার আত্মনির্ভর হওয়ার পথ সুগম হল। সুকুমার দাস ২০১৮ সালে তপশিলি জাতি কল্যাণ প্রকল্পে মৎস্য দপ্তর থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা পান। এই টাকা দিয়ে তিনি বেশি পরিমাণে মাছ কিনে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন রোজ ১০ থেকে ১২ কেজি রুই, কাতলা ও বিভিন্ন রকমারি ছোট মাছ বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করছেন। এই মাছ বিক্রি করে বছরে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা তিনি লাভ করেন। সুকুমার দাসের সংসার এখন আগের থেকে আরও ভাল ও স্বচ্ছল হয়েছে। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ছেলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে।
কোভিড- ১৯ অতিমারির সময়েও তিনি নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য রোজই মাছ ফেরি করে মাছ বিক্রি করছেন। দুই বছরের এই কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনি সরকারি নায্যমূল্যের দোকান থেকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫ কেজি ডাল পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ প্রকল্পে তিনি খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটও পেয়েছেন। তাছাড়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এককালীন ১ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন। করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে সরকারের এই সহায়তা তাকে আশ্বস্থ করেছে। রাজ্য সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ও এক ত্রিপুরা-শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরার লক্ষ্যে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসরত সুকুমার দাসের মত গরিব মানুষেরা সরকারি সহায়তায় আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন।