71-এর স্মৃতিস্তম্ভ সরানো ঠিক হয়নি, যারাই করেছেন ত্রিপুরার ইতিহাস জানেন না

বিভূ ভট্টাচার্য

প্রতিটি শহরেরই গৌরবময় কিছু ইতিহাস ও ঐতিহ্য থাকে। এগুলো সুরক্ষা ও সংরক্ষণের দায় এবং দায়িত্ব সভ্য সমাজের।গণতান্ত্রিক দেশে জনগনণের কান্ডারী হিসেবে সরকার এ দায়িত্ব পালন করবেন এটাই কাম্য।শহরের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য নির্মাতাদের এ মৌলিক বোধ না থাকলে ইতিহাসপ্রিয় , সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষের এগিয়ে এসে কথা বলা জরুরি। কিন্তু, এ সময়টুকুতো মানুষকে দিতে হবে ! সরকার পরিচালকদের এ বোধ না থাকলেও প্রায় দুশো বছরের পুরনো শহরে সুশিক্ষিত, ইতিহাসবোধ সম্পন্ন মানুষজন রয়েছেন। তাঁরা জানেন-- কেন ? কীভাবে ? এই স্মৃতিস্তম্ভ টি তৈরি করা হয়েছিল।কেন এটি পোস্টঅফিস চৌমুহনীতেই করা হয়েছিল। কেন এখানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধের কামান রাখা হয়েছিল। আগরতলায় বসবাসকারী ইতিহাসের সাক্ষী শ্রদ্ধাভাজন মানুষরা আজও রয়েছেন। তাঁরা জানেন । তাদের সঙ্গে কথা বলা যেত। তা না করে করোনা কার্ফু চলাকালীন সময়ে সরকারের মনে হল পঞ্চাশ বছরের পুরনো বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি -বিজরিত ,শহর প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে ফেলতে হবে ! এবং ৩ জুলাইয়ে ভেঙে ফেলা হল। একে বর্বরতার সৌন্দর্য(!) কীর্তন ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে !

দায়িত্বশীল সাংবাদিক বন্ধুরা ছুটে গিয়ে হতিহাস ধংসের নির্মমতার এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেন। সেই থেকে আগরতলাসহ সারা রাজ্যের মানুষ হতবাক। ইতিহাস ও ঐতিহ্যহীন কর্তা ব্যক্তিরা জানেন না , ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সময় আগরতলার এই পোস্ট অফিস চৌমুহনীই ছিল আন্দোলনের কেন্দ্র । আগরতলা তখন বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সামরিক রাজধানী । তাই, তৎকালীন পাকিস্তানি হনাদার বাহিনীর আক্রমণে যখন নির্মম নির্যাতন ও হত্যার উৎসব চলছে তখন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির দাবিতে এই পোস্ট আফিস স্কয়ারে সারাদিনব্যাপী প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। কবিতা হয়েছে, গান হয়েছে, সংগ্রামী আলোচনা হয়েছে । ত্রিপুরা রাজ্যের জাতি উপজাতি উভয় অংশের মানুষ বাংলাদেশের মানুষের এই সংগ্রামকে সেদিন নির্যাতিত জনতার অভ্যুত্থান হিসেবে দেখেছিলেন। আর এই স্মৃতি স্তম্ভটিতো নির্মিতই হয়েছিল বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতের বীরসেনানী, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে নিহত এরাজ্যর সাধারণ মানুষদের স্মৃতির প্রতীক হিসেবে। ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্র, আগরতলা শহর এবং সারা রাজ্যের মানুষের পক্ষ থেকে এ রকম একটি ধংসাত্বক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে স্মৃতি স্তম্ভটি যথাস্থানে স্হাপনের দাবি জানাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি এ দাবি পূরণে সরকার সদর্থক ভূমিকা পালন করে ইতিহাস ধংসের প্রায়শ্চিত্ত করবেন।

(বিভু ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্র)


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
11.07.2021NILADRI PAULPresent young generation are actually do not have any interest on 1971 war factors and its consequences on the livelihood of Tripura-bengali community.