স্বনির্ভরতার প্রতীক পূর্ব টাকারজলার সুচিত্রা দেববর্মার পুষ্প বেকারি
শিবেন্দু দেববর্মা
জম্পুইজলা মহকুমার পূর্ব টাকারগুলা এডিসি ভিলেজের থাকচাঙ পাড়ার বাসিন্দা ৩৮ বছরের স্নাতক মহিলা সুচিত্রা দেববর্মা। স্বামী ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। স্বামীর রোজগারের উপর নির্ভর না থেকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। জম্পুইজলা মহকুমার সুধা দেববর্মা স্মৃতি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে তার স্কুল শিক্ষা। স্কুল ছাত্রী থাকা অবস্থাতেই তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু পড়াশুনা ছাড়েননি। খুমলুং ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। শিক্ষিত জনজাতি মহিলা হয়েও সরকারি চাকরির অপেক্ষায় না থেকে নিজে থেকে কিছু করার স্বপ্ন ছিলো তার ছোট বেলা থেকেই। সেই লক্ষ্যেই তিনি প্রথমে স্থানীয় জয় মা লক্ষ্মী স্বসহায়ক দলের সাথে যুক্ত হন। এই অসহায়ক দলটি ছিলো সাংকুমা কুরাক মথা ভিলেজ ফেডারেশনের অন্তর্গত। কয়েকটি স্বসহায়ক দল মিলে এই ফেডারেশনটি গঠিত হয়েছিলো। ফেডারেশনের সদস্যারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন কিভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠা যায়। তখন তাদের পরিচয় হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল জীবন জীবিকা মিশনের কো-অর্ডিনেটর রীতা দেববর্মার সাথে। তিনি পরামর্শ দিলেন বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে অগ্রসর হতে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল জীবন জীবিকা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক জীবন দেববর্মাও তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরামর্শ দেন। এতে উৎসাহিত হন সুচিত্রা দেববর্মা। ২০১৯ সালে জম্পুইজলা মহকুমা থেকে ৯ জন উত্তর-পূর্বাঞ্চল জীবন জীবিকা মিশনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন সুচিত্রা দেববর্মা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস আসামের গুয়াহাটিস্থিত ডাউন টাউন ইউনিভার্সিটিতে প্রশিক্ষণ নেন সুচিত্রা দেববর্মা। প্রশিক্ষণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল জীবন জীবিকা মিশন। তিনি পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, প্যাটিস সহ ২৭ ধরনের বেকারির সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এক সাক্ষাৎকারে সুচিত্রা দেববর্মা জানালেন, প্রশিক্ষণের সময় সবকটি বেকারি সামগ্রী তৈরির তিনি মনোযোগ সহকারে শিখেছেন এবং এখন সবকটিই তিনি নিজে প্রস্তুত করতে পারেন।
প্রশিক্ষণ শেষে সুচিত্রা দেববর্মা সাংকুমা কুরাক মথা ভিলেজ ফেডারেশন থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। ফেডারেশন থেকে ঋণ নিলে শতকরা ১ শতাংশ সুদ দিতে হয়। ঋণ নিয়ে সুচিত্রা দেববর্মা ২০২০ সালে খাকচাঙ পাড়ায় বাড়ির পাশেই তার বাবা সুরেন্দ্র দেববর্মার জমিতে ‘পুষ্প বেকারি’ খুললেন। বেকারির ঘর নির্মাণে তার ব্যয় হয় ৩ লক্ষ টাকা। বেকারির খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন ওভেন চুল্লি, মিক্সার যন্ত্র, হ্যান্ড ব্লেন্ডার, ট্রে, টার্ন টেবিল ক্রয় করলেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে। ২০২০-এর সেপ্টেম্বর থেকে নিজের হাতে প্যাটিস, বিস্কুট, কেক তৈরি করা শুরু করলেন। জম্পুইজলা মহকুমায় এমন বেকারি দোকান এই প্রথম। এলাকাবাসী আগে এ সমস্ত সামগ্রীর জন্য জিরানীয়া, চম্পকনগর যেতে হতো। এখন সুচিত্রা দেববর্মার পুষ্প বেকারি থেকেই তারা প্যাটিস, বিস্কুট, কেক কিনছেন। এমনকি পাওয়া যায় জন্মদিনের কেকও। সুচিত্রা দেববর্মা জানালেন এখন তার মাসিক রোজগার প্রায় ১০ হাজার টাকা। রোজগারের এই টাকা থেকে ফেডারেশন থেকে নেওয়া ঋণও পরিশোধ করছেন অল্প অল্প করে। উত্তর-পূর্বাঞ্জল জীবন জীবিকা মিশনের সহায়তায় সুচিত্রা দেববর্মা এখন স্বনির্ভর। সরকারের এই সহায়তা পেয়ে তিনি তার খুশির কথা জানালেন। জনজাতি মহিলা সুচিত্রা দেববর্মা এখন এলাকার আরও অনেকের কাছে স্বনির্ভরতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।