রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় রাজ্যে সুগন্ধী ধান চাষ
রোমেল চাকমা
খাদ্যরসিকদের ভোজন বাসনা মেটাতে বিরিয়ানি হোক বা পায়েস, সুগন্ধী চালের জুড়ি মেলা ভার। বহিরাজ্য থেকে আমদানি করা সুগন্ধী চাল রাজ্যের চাহিদা মেটাতো। কিন্তু এই রাজ্যের মাটি ও আবহাওয়া সুগন্ধী ধান উৎপাদনের জন্য সহায়ক। রাজ্যে সুগন্ধী চালের একটা ভালো বাজারও রয়েছে। রয়েছে চাহিদাও। এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর রাজ্যে সুগন্ধী ধান চাষে গুরুত্ব দিয়েছে। এরজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সুগন্ধী চাল উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে ও কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তুলতে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর বিগত কয়েক বছর ধরে সুগন্ধী চাল উৎপাদনেও বিশেষ সাফল্য পেয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাতে সুগন্ধী ধান চাষে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
রাজ্যে মূলত তিন প্রজাতির সুগন্ধী চাল উৎপাদন হয়ে থাকে। কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, কালিখাসা, গোবিন্দভোগ ও হরিনারায়ণ প্রজাতির সুগন্ধী ধান চাষ করা হয়। বছরের একটা মরশুমে এর ভালো ফলন পাওয়া যায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছর রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে ২ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ প্রজাতির সুগন্ধী ধান চাষ করা হয়। যেটা চলতি বছর কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টরে। এবছর এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১.৪৪ কোটি টাকা। আবার আগামী বছরে ২ হাজার হেক্টর জমিতে সুগন্ধী ধান উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। দপ্তর। অর্গানিক পদ্ধতিতেই এই প্রজাতির ধান চাষে গুরুত্ব দিয়েছে দপ্তর। লুঙ্গা অংশের জমিতেই সুগন্ধী ধানের ফলন অধিক হয়ে থাকে। যে কারণে রাজ্যে এডিসি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে অধিক পরিমাণে কালিখাসা, গোবিন্দভোগ ও হরিনারায়ণ প্রজাতির সুগন্ধী ধানের চাষ হয়। কাঞ্চনপুর, দামছড়া, গন্ডাছড়া, মল্যাণপুর, মান্দাই, রূপাইছড়ি, করবুক সহ রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় সুগন্ধী ধানের উৎপাদন অধিক মাত্রায় হয়।
দপ্তরের আধিকারিক জানিয়েছে, সুগন্ধী ধান চাষে বর্তমানে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে ৯ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। আর উন্নত ফলনের জন্য প্রতি হেক্টরে ১২ কেজি জৈব সার দিতে হয়। এছাড়া দিতে হয় জৈব ঔষধ। রাজ্যে উৎপাদিত সুগন্ধী চালের বর্তমান বাজার মূল্য কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। দপ্তরের অধিকর্তার অফিস থেকে জেলা ও মহকুমা কৃষি সেক্টরগুলিতে কৃষকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ব্লক স্তরে কৃষকদের নির্বাচন করা হয়। আগামীতে সুগন্ধী ধান চাষ ও চাল উৎপাদনে গতি আনতে আর বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের। সুগন্ধী ধান চাষে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হয়। তাছাড়াও ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিতে একাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর।