মোহনভোগ ব্লকের স্বনির্ভর দলগুলি আত্মনির্ভরতার পথ দেখাচ্ছে
অমৃত দাস
ত্রিপুরা প্রাকৃতিক সম্পদে এক সমৃদ্ধ রাজ্য। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে রাজ্য সরকার স্বসহায়ক দলগুলিকে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে উৎসাহিত করছে। শুধু স্বসহায়ক দল নয় উন্নয়নে অংশীদার হতে যারা এগিয়ে আসছেন তাদেরও সরকার থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন এই কাজে স্বসহায়ক দলগুলিকে সহযোগিতা করছে। সোনামুড়া মহকুমার মোহনভোগ ব্লক এলাকার কাজল, জীবনদীপ, দীনদয়াল স্বসহায়ক দলগুলি স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। মোহনভোগ ব্লকের স্বসহায়ক দলগুলি ছাড়াও বাবুলাল নন্দী ও সিদ্দিক মিঞার মত উদ্যোগী যুবকরা এখন সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন, মোহনভোগ ব্লক প্রশাসন ও ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের তত্বাবধানে ব্লক এলাকার মহিলা স্বসহায়ক দলগুলি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন সফল করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ উদ্যোগ প্রকল্পে প্রতিটি স্বসহায়ক দলকে ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কাজল ও জীবনদীপ এই দুটি মহিলা স্বসহায়ক দল বেল থেকে স্কোয়াশ ও জ্যাম তৈরী করছে। দীনদয়াল স্বসহায়ক দল তৈরী করছে আনারসের স্কোয়াশ ও জ্যাম। এরমধ্যে অনেক বেকার যুবক মৌমাছি পালনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বয়ম্ভর হচ্ছেন। যার উদাহরণ মোহনভোগ ব্লকের বাবুলাল নন্দী। তিনি মৌমাছি পালনের মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে সকলকে নয়া দিশা দেখাচ্ছেন। আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বেকারদের স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। সাথে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগও। এরই অঙ্গ হিসেবে মোহনভোগ ব্লক প্রশাসন স্বউদ্যোগী বেকার যুব ও মহিলা স্বসহায়ক দলগুলিকে চিহ্নিত করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছে। এই ব্লক এলাকার বিভিন্ন মহিলা স্বসহায়ক দলগুলি ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে খেজুরের রস থেকে ১০০ শতাংশ অর্গানিক নলেন গুড় তৈরী করছে। এতে ব্যাপক সাফল্য আসছে। শুধু গত মরশুমে ৩ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের নলেন গুড় বিক্রি করেছেন কাজল স্বসহায়ক দলের সোমা বর্মণ, শিউলি দে সহ তাদের সহকর্মীরা। দেওয়ালি মেলা উপলক্ষ্যে গত বছর বাঁশ দিয়ে ইকো ফ্রেন্ডলি প্রদীপ বানিয়েছেন তৈবান্দালের দক্ষ কারিগরগণ। সম্প্রতি সচিবালয়ে মোহনভোগ ব্লকের বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর বাজারজাতকরণের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। স্বসহায়ক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের তৈরী আনারস, বেলের জ্যাম ও স্কোয়াশ বিক্রি করে সাফল্য পেয়েছেন। এমনিতেই তাদের উৎপাদিত স্কোয়াশ ও জ্যামে কোন ধরণের কৃত্রিম রং বা ফ্লেভার মিশ্রণ করা হয় নি। ৫০০ গ্রাম স্কোয়াশের বোতল ও ২৫০ গ্রাম জ্যামের পাইকারি মূল্যে বিক্রি করে ২২ টাকা মুনাফা হয়েছে তাদের। এতে উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্য পেয়েছেন তারা। সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে আনারস ও বেলের চাহিদা বাড়ছে।
এর মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনীতির ভিত যেমন সুদৃঢ় হবে তেমনি গ্রামীণ এলাকার মহিলা সহ বেকার যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে। লাঘব হবে তাদের আর্থিক দৈনদশার। আর এর মধ্য দিয়ে আগামীদিনে মোহনভোগ ব্লক একটি আত্মনির্ভর ব্লকে পরিণত হবে। আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের স্বপ্ন সফল হবে। শুধু স্বসহায়ক দলগুলিই নয়, পিছিয়ে নেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়াসও। একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফুল ও ফল চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই ব্লক এলাকার সফল ও উদ্যমী কৃষক সিদ্দিক মিঞা। তার স্বপ্নের বাগানে ফলেছে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম। মূলত এটি জাপানী প্রজাতির আম। আন্তর্জাতিক বাজারে এটি লাল আম নামে সমধিক পরিচিত। এই আমের স্বাদ অন্য আমের তুলনায় অনেক বেশি। এর পাশাপাশি সিদ্দিক মিঞার বাগানের উন্নত প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের উৎপাদন হচ্ছে। এই কাজে তাকে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে মোহনভোগ ব্লক প্রশাসন।