পায়ে শেকল বাঁধা মিডিয়া কখনোই সমাজ বা রাস্ট্রকে খারাপ ছাড়া ভাল কিছু দিতে পারে না!
সুজিত দে
স্বাধীন ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম দেশ ও সমাজের জন্য ভালো অথবা মন্দ দুইই হতে পারে । 3 মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে। অথচ বিশ্বে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হিসেবে ভারতের মিডিয়ার স্থান ১৪২ নম্বরে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশ ভারত। কিন্ত কথায় আছে , যারা স্বাধীনতার কথা বেশী বলে, তারা নাকি অপরকে পদানত রাখতেই বেশী পছন্দ করে। ব্রিটেনের ক্ষেত্রে যে অবস্থা, আমাদের দেশে মিডিয়ার পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ। এ কথাগুলো আমার নয়। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের উপর কাজ করা আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান " রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস" গত ১৩ এপ্রিল তাদের যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতেই এমনটা বলা হয়েছে।
কী বলা আছে প্রতিবেদনে ? বিশ্বের ১৮০ টি দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, তাদের অধিকার, অবস্থান, তাদের উপর সহিংসতা, আইনগত সুরক্ষা এই সব কিছুর উপর ঐ দেশটিতে সাংবাদিকতার সূচক নির্নয় করে থাকে সংস্থাটি। এই নিরীখেই বলা হয়েছে ভারত ক্রমশ স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পেছনের দিকে হাঁটছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২০২০ সালে মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার দেশ হিসেবে ১ নম্বরে নরওয়ে, ২ নম্বরে ডেনমার্ক, ৩ নম্বরে ফিনল্যান্ডের স্থান। আর সাংবাদিকতায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে ১৭৭ নম্বরে চীন, ১৭৮ নম্বরে তুর্কমেনিস্তান, ১৭৯ নম্বরে উত্তর কোরিয়া । বিশ্বের বড় গনতন্ত্রের দেশ ভারত। এখানে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের স্থান ১৪২। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিন এশিয়ার দেশ নেপালের অবস্থান ১০৬, পাকিস্তান ১৪৫, বাংলাদেশ ১৫২ এবং সেনা অভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত আন সাং সুকির দেশ মিয়ানমারের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের সূচক ১৪০।
কিন্ত কেন ভারতের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার এই দীনতা ? প্রতিবেদন বলছে, মিডিয়ার মুক্তচিন্তা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান এখন একনায়কের দেশ রাশিয়া কিংবা ড্রাগ মাফিয়া আর চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য মেক্সিকোর মতো খারাপ দেশের সমগোত্রীয় । কারণ, ভারতে সমালোচনামূলক সাংবাদিকতাকে বর্তমান সময়ে দেশের শাসকশ্রেণির সমর্থকদের দ্বারা রাস্ট্রবিরোধী ও জাতীয়তা বিদ্বেষের তকমা দিয়ে ভয়- ভীতির পরিবেশের কারনে সমালোচনা মূলক সাংবাদিকতাকে দাবিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, মিডিয়ার উপর কঠোর সর্বব্যাপী নিয়ন্ত্রন এই পর্য্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম গনতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের । সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মীদের হামলা, পুলিশী সহিংসতা, , প্রশাসনিক প্রতিহিংসা, অপরাধী দল বা দূর্নীতিবাজ স্থানীয় বাহুবলী ক্ষমতাবানদের দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকতার উপর সরকার ও শাসকের এই নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রনের কারনে সাংবাদিকতার জন্য ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠছে ভারত।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস -- দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকতার মান ও এই পেশার স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। কিন্ত দিন যত যাচ্ছে আমরা তত বেশী নিঃস্ব হচ্ছি। আজ এই দিনটিতে ভাবতে হবে এই স্খলন থেকে বেড়িয়ে আসার পথ। এলবার্ট ক্যামুসের সেই কথাটা আবারও বলব,-- স্বাধীন ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম দেশ ও সমাজের জন্য ভালো অথবা মন্দ দুই'ই হতে পারে, কিন্ত পায়ে শেকল বাঁধা মিডিয়া কখনোই সমাজ বা রাস্ট্রকে খারাপ ছাড়া ভালো কিছু দিতে পারে না --- আমরা যেন তা ভুলে না যাই। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে -তে সবাইকে শুভেচ্ছা। (সংগৃহীত)