রাতের শহর আগরতলা - দ্বিতীয় পর্ব
প্রদীপ চক্রবর্তী
এই শহর অজানা অন্ধকারে গ্রাস করতে চলেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে এদের তৎপরতা। এখানে ওখানে দ্রুত বাইক চারনা ওদের। বাইক থামতেই ওদের প্রায় ঘিরে ধরছে। এতক্ষণ এদের অপেক্ষায় ছিল ওরা। নিত্য দিনের মত আজও ওরা অপেক্ষায় ছিল। দিনের পর দিন ওরা অপেক্ষায় থাকে।
বলছিলাম হরেক রকম নেশা জাতীয় ট্যাবলেট ও কফসিরাপের ব্যবসার সাথে জড়িত যুবকদের কথা। এদের সংখ্যা নেহাত কম ও নয়, আবার তেমন বেশী ও নয়।এসব নিষিদ্ধ দ্রব্য বিক্রি বা যোগান দিয়েই এরা শহরকে নিদ্রায় আচ্ছন্ন করছে। এদের বড় খদ্দের এক শ্রেণীর কর্মহীন, শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুবক ও যুবতীরা।আর রিক্সায় শ্রমিকদের বড় অংশ। দুপুর নাগাদ রিকশা শ্রমিকদের ওই অংশ বাড়ী থেকে বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে আসে। মোটরষ্টান্ড,জিবি বাজার,লেইক চৌমুহনীর বাঁধ,চন্দ্রপুর আইএসবিটি,মঠ চৌমুহনী সহ নানা অংশে যে সব রোড সাইড চা ষ্টল রয়েছে তার আশপাশেই ছড়িয়ে থাকে বা জটলা করে থাকে। প্রায় প্রতিটি চা ষ্টলেই রাখা থাকে মাদক দ্রব্য, ট্যাবলেট, ডেনড্রাইট। প্রায় দিনই দেখা যাচ্ছে রিক্সা চালক দের ওই সব দোকানীদের সাথে ফিসফিস কথা বলে, মুড়ানো কাগজের প্যাকেট নিয়ে দ্রুত কেটে পড়তে। মোটরষ্টান্ড এলাকার মোড়ে এক ভদ্রলোক আলো আধারীতে চা বেচাকেনা করে।লোকজন বলে থাকে নেশা জাতীয় পন্য বিক্রি করাই ওর মূল ব্যবসা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চা খেতে প্রতিবেদক ওই দোকানে যায়। হঠাৎ এক উসকোখুসকো যুবক এসে শ খানেক টাকা দিয়ে দোকানীকে তাড়াতাড়ি দিতে বলল।এদিকে ওদিকে তাকিয়ে এক টুকরো কাগজে মুড়ে তিনটি ডেনড্রাই-র টিউব দিয়ে দিল দিশাহারা ওই যুবককে। হাতে পেতেই সে দ্রুত পড়ে পড়ল। মিনিট ত্রিশেক ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম চা-র জন্য। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪/৫ খদ্দের এল, নিয়ে গেল ডেনড্রাইট। এর পর বিক্রেতা চা দিলেন,আমরা চা খেলাম। দেখলাম সব কিছু।সবাই সব জানে,দেখছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওদের ভবিষ্যৎ পরিনীতির চিত্র।
এই চিত্র গোটা আগরতলার ।হাত বাড়ালেই,মং দিলে সব ই পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষজন সব জানেন, কমবেশি, কিন্তু হয়তো বা জানেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। যদিও মঙ্গলবার পূর্ব থানার পুলিশ চিওরন্জন এলাকার এক নেশা কারবারীকে। আখাউড়া স্থলবন্দরে সোমবার বিএসএফের হাতে আটক হয় ইয়াবাসহ এক যুবক। বাইক পেট্রোলিং আছে,আছে সিটি কন্ট্রোল,থানা পুলিশ সহ গোয়েন্দারা। কারা কি করছে ,তা তাঁরাই বলতে পারবেন,সাধারণ্যে বলা সম্ভব নয়।
তবে পুলিশের একাংশ আধিকারিক তাদের অক্ষমতা স্বীকার করেন। তাঁদের বক্তব্য পুলিশ সব ই জানে, অনেক কিছুই করতে পারে,তবে অনেক কিছু নির্ভর করে শাসকদের সদিচ্ছার উপর।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় যেভাবে কর্মহীন, শিক্ষিত যুবকরা নেশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে তা ভবিষ্যৎ র পক্ষে অন্ধকার ডেকে আনবে।
মোটর ষ্ট্যান্ড এলাকার বিওসির মোড়ে প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা নাগাদ এক যুবতী গাড়ী থেকে নামতেই বাইকধারী এক যুবক এগিয়ে এসে ওর হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।ওই যুবতী ও ভীড়ে মিশে যায়। ওই যুবতী একা নয়,ওর মত এমন অনেক যুবতী মাদকের নেশায় আসক্ত।সিটি সেন্টারের সামনে ও ওদের দেখা যায়। শ্যামলীবাজার কোয়ার্টার কমপ্লেক্স এলাকায় তো মোবাইলে অর্ডার যায়। মূহুর্তের মধ্যেই পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয়। শুক্রবার, শনিবারে চলে জমাটি ব্যবসা।