অর্থনীতির আত্মনির্ভরতার স্তম্ভগুলোর ধ্বংসসাধন : "আত্মনির্ভর ভারত" স্লোগান সীমাহীন জুমলা
পুরুষোত্তম রায় বর্মন
ত্রিপুরা বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে দুটি বিল অনুমোদিত হয়েছে আইনে রূপান্তরের জন্য। একটি বিল হল সরকারি সম্পত্তি রক্ষা সংক্রান্ত। বিলটি এখনো পড়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোন আন্দোলনের ফলে যদি সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয় তবে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সম্পত্তি নষ্টের জন্য দায়ী থাকবে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে । সরকারি সম্পত্তি জনগণের সম্পত্তি । তাই সরকারি সম্পত্তি যারা নষ্ট করেন তাদেরকে কেউ সমর্থন করতে পারেন না। প্রচলিত আইনে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। তাহলে বিশেষ আইন কেন। এর পেছনে রয়েছে অন্য উদ্দেশ্য। গণ আন্দোলনকে দমন করা, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ভীত সন্ত্রস্থ করা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এজেন্ট প্রভোকেটর ঢুকিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করে তার দায় আন্দোলনের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণকারীদের উপর নির্বিচারে চাপানো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা সরকারি সম্পত্তি প্রকাশ্যে ধ্বংস করছে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ জলের দরে বিক্রি করছে তাদের শাস্তি কোন আইনে হবে এবং তাদের শাস্তির জন্য কারা আইন করবে। কিছুদিন পূর্বে বিনিয়োগ ও সরকারী সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বরত দপ্তরের ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোন রকম রাখ ঢাক না করে সগর্বে ঘোষণা করেছেন, "সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হবে"। স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রে কয়েকটি মাত্র সংস্থার অস্তিত্ব ছাড়া কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগে এই সরকার অংশ নেবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বিক্রির গালভরা পোশাকি নাম Asset monetization. সম্পদ থেকে অর্থ সংগ্রহ।
স্বাধীনতার পর জাতীয় অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর জন্য আধুনিক শিল্প গড়ে তোলা ছিল অত্যন্ত জরুরী। শিল্পোন্নত ভারত, কৃষির উপর অত্যধিক নির্ভরতা কমানোর জন্য, দারিদ্রতা হ্রাসের জন্য, বিশ্ব বাণিজ্যের অসম বৃত্ত থেকে ভারতবর্ষকে বের করে এনে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য আনার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল শিল্পায়ন।
সদ্য স্বাধীন গরীব দেশে ভারী শিল্প গঠন ও পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচন্ড সমস্যা ছিল। ব্যক্তি পুঁজির পক্ষে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বিশাল পুঁজি বিনিয়োগের কোন সাধ্য ছিল না। এ ধরনের বিনিয়োগে মুনাফা আসে অনেক দেরিতে। মুনাফার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বহু বছর। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে ভারী শিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় । রাষ্ট্র এগিয়ে আসে পুঁজি জোগাড়ের জন্য। জনগণের কাছ থেকেই করের মাধ্যমে পুঁজির সঞ্চয় ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিকল্পিত অর্থনীতির মাধ্যমে নতুন দেশ নির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উদাহরণ অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। ত্রিশের দশকে মহামন্দার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্য অনুপ্রাণিত করেছিল পরাধীন দেশের নাগরিকদের। তারই প্রতিফলন চল্লিশের দশকে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গঠন। স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগে ভারী শিল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিমানবন্দ,র, তৈলক্ষেত্র , ইস্পাত, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল ,বিমান পরিবহন ইত্যাদি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলো ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব ছিল না। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলো সাহায্য করেছে নুতন নুতন কলকারখানা, সেতু, রাস্তা গড়তে ও খাদ্যে সয়ম্ভরতা অর্জনে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো থেকে বিশাল অংকের অর্থে প্রতিবছর সরকারি তহবিল পুষ্ট হয়। দেশের প্রতিরক্ষা সুরক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধ উপকরন তৈরীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলো বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছে। রেলসহ পরিবহনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কম খরচে সেবা দিচ্ছে দেশবাসীকে। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ও জীবন বীমা নিগম। 1969 সনে 14টি বেসরকারি ব্যাংক জাতীয়করণ এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকের উপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়। স্বাধীনতার আগে 650 টি বেসরকারি ব্যাংক লাটে উঠাতে কোটি কোটি মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। জাতীয়করণের পরেও অনেকগুলি বেসরকারি ব্যাংক লাটে উঠেছিল। সে গুলোকে কোন না কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল। 1952 সালে দেশে ব্যাংকগুলোর মোট 4061টি শাখা ছিল। 1969 সালে ব্যাংক জাতীয়করণ এর সময় দেশে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা ছিল 8262 টি। 2018 সনে ব্যাংক গুলোর মোট শাখার সংখ্যা 11,42,642 টি। 1969 সনে ব্যাংকগুলোতে মোটা আমানত ছিল 5028 কোটি টাকা। 2019 - 20 সনে তা বেড়ে দাঁড়ায় 14746 লক্ষ কোটি টাকা । ব্যাংক জাতীয়করণ না হলে এই অগ্রগতি অসম্ভব ছিল। 1956 সনে 245 টি দেশি-বিদেশি বেসরকারি বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করে এল আইসির যাত্রা শুরু হয় 5 কোটি টাকা মূলধন নিয়ে। বর্তমানের জীবনবীমার মোট সম্পদের পরিমাণ 32 লক্ষ কোটি টাকা এবং বীমাকারীর সংখ্যা প্রায় 40 কোটি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বেসরকারি কোম্পানির প্রথম প্রবেশ 2000 সনে। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এলআইসির মোট চব্বিশটি বীমা কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তিতে 71 শতাংশ বাজার এলআইসিরর দখলে। এলআইসি বিক্রির তুমুল তোড়জোড় চলছে। এলআইসির শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ঢালাওভাবে।
2014 সনে বিজেপি যখন একক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হলো তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা ছিল 28 টি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে অকেজো করার উদ্দেশ্যেই ব্যাংক সংযুক্তিকরণ। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বর্তমানে ব্যাংক সংযুক্তিকরণ এর ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা 28 থেকে কমে দাঁড়িয়েছে 12 তে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জমা সাধারণ মানুষের 148 লক্ষ কোটি টাকার দিকে শকুন নজরে তাকিয়ে আছে দেশি-বিদেশি করপোরেটরা । তাদের জন্যই ব্যাংক বেসরকারিকরণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেসরকারি ব্যাংকগুলো কে সরকারি লেনদেনের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে করের টাকা নেওয়া , পেনশন ও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের লেনদেনের কাজ করবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ।2008 সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ফেল করার মধ্য দিয়ে । ওই সময় আমাদের দেশে মন্দার প্রকোপ তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে থাকার জন্য। আমাদের মত বিশাল দেশে যেখানে অনগ্রসরতা ও দারিদ্রতা রয়েছে ব্যাপক ভাবে এবং সাধারণ মানুষ আর্থিক সক্ষমতা থেকে অনেক দূরে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গ্রাহকদের জমা অর্থের নিশ্চয়তা থাকে। আর বেসরকারি ব্যাংকে ডুবে গেলে গ্রাহকদের কোন সুরক্ষা থাকে না। বর্তমানে আইন আনা হয়েছে ব্যাংক ডুবে গেলে বা লোকসানে গেলে গ্রাহকরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পাবেন । এক অদ্ভুত অবস্থা। কেন্দ্রীয় সরকার লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বিক্রি করতে মরিয়া। নীতি আয়োগ ইতিমধ্যে 12 টি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তালিকা তৈরি করেছে । এগুলোকে বিক্রি করতে হবে। দেশের আত্মনির্ভরতার বনিয়াদকে ধ্বংস করার অভিযানকে বলা হচ্ছে "আত্মনির্ভর ভারত"। বহু কষ্টে গড়ে তোলা আধুনিক ভারতের অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলোকে একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে দুভাগে ভাগ করেছে। স্ট্রাটেজিক ও অস্ট্র্যাটেজিক। পরমাণু বিদ্যুত, প্রতিরক্ষার যন্ত্রাংশের যানবহন ইত্যাদি সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রকে স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো এখনই বিক্রি হবে না । বাকি সব বিক্রি হবে। এক্ষুনি বিক্রি হবে । রেলস্টেশন , রেলের যাত্রাপথ , বিএসএনএল, এম টি এম এল, অপটিক্যাল ফাইবার, 7000 কিলোমিটার জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ সংবহন, তেরোটি বিমানবন্দর 30 টি সহকারী পরিচালক দিন বার্থ, গ্যাস তেলের পাইপলাইন, স্টেডিয়াম সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জমি বাড়ি সব বিক্রি হবে জলের দরে। লম্পট ছেলে চার পুরুষের সঞ্চিত সব সম্পত্তি বিক্রি করবে স্ফূর্তির জন্য, বন্ধুদের উপহার দেওয়ার জন্য। উদার অর্থনীতির হাত ধরে শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের উপর আক্রমণ। বিজেপির পূর্বসূরী জনসংঘ সবসময়ই রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতির বিরুদ্ধে ছিল, মুক্ত অর্থনীতির পক্ষে জনসংঘের ভূমিকা সর্বজন বিদিত। আরএসএস বরাবরই মুক্তবাণিজ্য এর পক্ষে। পাঁচ দশক পূর্বে যখন ব্যাংক জাতীয়করণ ও কয়লা ও জ্বালানি শিল্পের জাতীয়করণ করা হয় তখন আরএসএস তীব্রভাবে জাতীয়করণের বিরুদ্ধে ছিল। মনমোহন সিংয়ের শুরু করা উদার অর্থনীতি আগ্রাসী ধ্বংসাত্মক গতি লাভ করেছে বিজেপির একক শাসনের জমানায়। 1991 থেকে 2014 এর মার্চ অব্দি 24 বছরে বিলগ্নীকরণ এর পরিমাণ ছিল 1,52,790 কোটি টাকা। নরেন্দ্র মোদির 7 বছরের শাসনকালের বিলগ্নিকরন এর পরিমান 3,96,616 কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলির বেসরকারীকরণ এর ফলে সংস্থাগুলোর সম্পদ শুধুমাত্র বেসরকারি হাতে চলে যাবে তা নয় কর্মক্ষেত্রেও এর প্রচন্ড বিরূপ প্রভাব পড়বে। বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকুরী ক্ষেত্রে কোন সংরক্ষণ থাকবে না। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি লোকসভায় জানিয়েছেন সংরক্ষণ নীতি কেবলমাত্র সরকারি সংস্থা গুলোর জন্য প্রযোজ্য। স্ট্র্যাটেজিক বিলগ্নি অর্থাৎ 50 শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় চাকুরী ক্ষেত্রে সংরক্ষণ থাকবে না। অতিসম্প্রতি কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রক জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার 100% বেসরকারিকরণ হবে। বেসরকারীকরণ এর ফলে এয়ার ইন্ডিয়ায় সংরক্ষণ থাকবে না। লোকসভায় প্রশ্ন এসেছিল কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় তপশিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসি দের জন্য কত পদ সংরক্ষিত আছে। সরকারের প্রস্তাবিত বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নির পর এই সংরক্ষণ কমে যাবে কিনা। ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দপ্তরের মন্ত্রী লোকসভায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন, 2020 এর 31শে মার্চ অব্দি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র সংস্থাগুলোর মোট কর্মী 9,19,648. এরমধ্যে 17.44 শতাংশ তপশিলি জাতি অর্থাৎ 1,60,384, 11 শতাংশ তপশিলি উপজাতি অর্থাৎ 99,693, 21 শতাংশ ওবিসি অর্থাৎ 1,98,581. রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলো বেসরকারি হাতে যাওয়ার ফলে একদিকে ব্যাপক ছাঁটাই হবে অন্যদিকে সংরক্ষণের সুযোগ থাকবে না। যে যুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলো বিক্রি করা হচ্ছে সে যুক্তি কোনভাবেই ধোপে টেকে না। সরকারি খরচ নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে বিক্রি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ঘরের খুঁটি গুলোকে বিক্রি করে দিয়ে ঘরকে ঝড় থেকে রক্ষা করা যায় না অথবা ঘরের মেরামতির খরচ কমানো যায় না। খরচ কমানোর নামে ঘরটাই মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। আসলে উদার অর্থনীতির সর্বনাশা পথে লগ্নিপুঁজির কাছে দাসখত দেওয়া সরকারের সামনে একটাই ধ্রুব লক্ষ্য, কর্পোরেট পুঁজির হাতে সম্পদ তুলে দেওয়া। দ্য ইন্ডিয়ান একপ্রেস পত্রিকায় 25শে মার্চ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক অর্থনীতির যুক্তি দিয়েই দেখিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বিক্রি না করে ও সরকারের কাছে বিকল্প আছে। তিনি বলেছেন, "But what alternative does the Government have. The obvious one is to wealth taxation." কিন্তু সে পথে হাটতে রাজি নয় মোদি সরকার । ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের স্বার্থে দেশের সম্পদ - রাষ্ট্রীয় সম্পদ জলের দরে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের হাতে। এর পরিণাম ভয়ঙ্কর হবে। এক ভয়ঙ্কর বিনির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে "আত্মনির্ভর ভারত "। যারা এভাবে দেশের সম্পদ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন কারা পাস করবে। কোন বিধানসভায় বা লোকসভায় এই আইন পাস হবে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনতার আদালতে এই আইন পাস করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের শ্রমিক কর্মচারীরা ও ব্যাংক ও বীমা ক্ষেত্রের কর্মীরা প্রতিরোধের ব্যারিকেড গড়ে তুলছেন। এ শুধু তাদের চাকুরি বাঁচানোর লড়াই নয়। দেশকে বাঁচানোর লড়াই। দেশের অর্থনৈতিক ইমারতগুলো কে রক্ষা করার জান কবুল লড়াই।
রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থাগুলোর সংস্কার প্রয়োজন কিন্তু সংস্কারের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে তুলে দেওয়া বা বিক্রি করে দেওয়া ভয়ঙ্কর অপরাধ। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার কতটা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত নিচের সারণি থেকে কিছুটা ঠাহর করা যাবে।