আট দফায় বেনজির ভোট কেন বাংলায়, প্রশ্ন বিরোধীদের, মমতাও বললেন ভয়ঙ্কর খেলা হবে!
বিশেষ প্রতিনিধি
২৩৪ আসনের তামিলনাড়ুতে যখন এক দফায় ভোট, সেখানে বাংলার ২৯৪টি আসনে ভোট হচ্ছে ৮ দফায়। সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে এবার বাংলার নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ৭ দফা বাংলার ভোট হয়েছিল, এবার বাংলার ভোট হবে আট দফায়। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পরই শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক তরজা।
২০১১ সালে পরিবর্তনের লড়াই হয়েছিল ছ-দফায়। তারপর ২০১৬ সাত দফায় ভোট হয়েছে। আর এবার অর্থাৎ ২০২১-এর বিধানসভায় আট দফায় ভোট হতে চলেছে। বাংলায় নির্বাচনে এটা সর্বকালীন রেকর্ড। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের। অসমে তিন দফায়, তামিলনাড়ু ও কেরলে এক দফায় ভোট হলেও বাংলায় ভোট হচ্ছে আট দফায়।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বাংলায় নির্বাচনী ঘণ্টা বাজিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় ভোট শুরু হচ্ছে ২৭ মার্চ। তা চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। তারপর ২ মে ভোট গণনা হবে। একটা দফায় সবথেকে বেশি ৪৫ আসনে ভোট হবে। আর সবথেকে কম ভোট হবে ৩০ আসনে। এভাবেই আটটি দফায় ২৯৪ আসনের ভোট গ্রহণ করা হবে।
সুনীল অরোরা ঘোষণা করেন, প্রথম দফায় ২৭ মার্চ ভোট হবে ৩০ আসনে, দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল ৩০ আসনে, তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল ৩১ আসনে, চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ৪৪ আসনে, পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল ৪৫ আসনে, ষষ্ঠ দফায় ২ এপ্রিল ৪৩ আসনে, সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৬ আসনে এবং অষ্টম দফায় ২৯ এপ্রিল ৩৫ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।
একটি জেলায় একাধিক দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে ভাগ করা হয়েছে তিনটি দফায়। এমনকী কলকাতাকেও ভাগ করা হয়েছে দুটি দফায়। এছাড়া উত্তর ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, মালদহ ও মুর্শিদাবাদেও দুটি দফায় ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আট দফাতেই, হারিয়ে ভূত করে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মমতা। বাংলায় কাকে সুবিধা দিতে আট দফায় ভোট? 26 ফেব্রুয়ারি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ভোট বাদ্যি বাজিয়ে দেওয়ার পরই সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্বাচন কমিশনের দিকে স্পষ্ট আঙুল তুলে জানান, খেলা হবে আট দফায়। এই খেলায় হারিয়ে ভূত করে দেব প্রতিপক্ষকে।
মমতা এদিন প্রশ্ন তোলেন, এক জেলায় কেন একাধিক দফায় ভোট করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? মোদী-শাহ কি ঠিক করে দিয়েছেন এই নির্ঘণ্ট? তিনি বলেন, যে জেলায় তৃণমূলের জোর বেশি সেখানে জেলাকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক জেলায় ভোট করা হচ্ছে একাধিক দফায় ভেঙে ভেঙে।
মমতা এ প্রসঙ্গে বলেন, তামিলনাড়ু, কেরল, অসমে ৬ এপ্রিলের মধ্যে ভোট করিয়ে তারপর বাংলায় ২৩ দিন ধরে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। যেভাবেই ভোট করুন না কেন, আমরাই জিতব। খেলা হোক ৮ দফায়, হারিয়ে ভূত করে ছাড়ব। আমি স্ট্রিট ফাইটার, আমিই জিতব। এভাবে আমাকে আটকানো যাবে না।
মমতা বলেন, দয়া করে বিজেপির চোখ দিয়ে বাংলাকে দেখবেন না। বিজেপির পার্টি অফিসে যে লিস্ট ছিল, সেটাই আজ দেখতে পেলাম। বাংলায় প্রচুর পয়সা আসছে। পয়সার অপচয় করবেন না, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন। তাঁর কথায়, দেশে একটাই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী আমি আছি, এত ভয় আমাকে?
অন্যদিকে, এক সময়ে আট দফায় ভোট চেয়েছিলেন মমতাই--মনে করালেন বিজেপি নেতা ! কমিশন এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়--শাহ এবং মোদীর কথাতেই ভোটের দিন ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে ও তার আগে তো মুখ্যমন্ত্রী আট-নয় দফায় ভোট চাইতেন। তাহলে আজ কেন দফা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কটাক্ষ বিজেপি নেতার। একই সঙ্গে বিজেপির প্রাক্তন বিধায়কের দাবি, ২০১১ সালের পরে এই রাজ্যে কোনও ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়নি। ফেরেনি গণতন্ত্রের পরিবেশও। এই পরিবেশ কারা তৈরি করেছে? কেন আজ ৮ দফায় ভোট করতে হচ্ছে? মুখ্যমন্ত্রীকে পালটা প্রশ্ন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের।
অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করতে গেলে আরও কড়া হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এমনটাই মনে করেন সিপিএম নেতা মহঃ সেলিম। তাঁর অভিযোগ, আট হোক কিংবা সাত-হিংসা করার থাকলে তা সব দফাতেই হবে। সেলিমের মতে আট দফায় ভোট হোক, আপত্তি নেই। কেবল সব দফায় যেন স্বচ্ছ ভাবে ভোটগ্রহণ হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। এমনটাই জানিয়েছেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, তামিলনাড়ু, কেরল, অসমে ৬ এপ্রিলের মধ্যে ভোট করিয়ে তারপর বাংলায় ২৩ দিন ধরে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। যেভাবেই ভোট করুন না কেন, আমরাই জিতব। এভাবে আমাকে আটকানো যাবে না। মমতা আরও বলেন, দয়া করে বিজেপির চোখ দিয়ে বাংলাকে দেখবেন না। বিজেপির পার্টি অফিসে যে লিস্ট ছিল, সেটাই আজ দেখতে পেলাম।
সৌগত রায় এদিন ভোট ঘোষণা হওয়ার পর বলেন, 'এভাবে ভোটারদের অসুবিধা হবে। রাজনৈতিক দলগুলির অসুবিধা হবে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বলেছিলেন যে আমাদের রাজ্যে যত সম্ভব কম দফাতেই ভোট হওয়া উচিত। তাও নির্বাচন কমিশন যদি তা মনে না করে, তাহলে কিছু করার নেই। এখন ওদের কাছেই ক্ষমতা।'
পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচন হবে আট দফায়। শুরু ২৭ মার্চ থেকে। ফলপ্রকাশ ২ মে। রাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হলেন বিহারের প্রাক্তন সিইও অজয় নায়েক। থাকছেন দুই বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক মৃণালকান্তি দাস ও বিবেক দুবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার মতে অজয় নায়েক কমিশনের অন্যতম দক্ষ অফিসার। খরচ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকছেন বি মুরলীকুমার।