ব্যবসা বন্ধপ্রায়, ত্রিপুরার বুক সেলাররা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান

উত্তম চক্রবর্তী

ত্রিপুরা মধ্য শিক্ষা পর্ষদ ২০১৬ সনে নবম ও একাদশ শ্রেণীর এবং ২০১৭ সনে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর নতুন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে। এই পরিবর্তিত পাঠ্যসূচি ভিত্তিক রাজ্য ও বহিরাজ্যের প্রকাশকগণ পর্ষদের পদ্ধতি মেনে বিভিন্ন লেখকের নতুন বই প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমান সরকার ২০১৮ সনে ক্ষমতায় এসেই ২০১৯ সনে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের সঙ্গে নবম ও একাদশ শ্রেণীর পুরো সিলেবাস এন সি আর টি-র ধাঁচে পরিবর্তন করে দেন। পরবর্তী বৎসরে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস পরিবর্তন করেন। আগের নব প্রবর্তিত সিলেবাসে দুইবার মাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর ফলে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রচুর পরিমাণে পাঠ্য বই ছেপে বিক্রি না করতে পেরে ত্রিপুরার বহু প্রকাশক আর্থিক লোকসানের মূখে পড়ে গেছেন। এই পরিবর্তিত সিলেবাসের কারণে রাজ্যের পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশকগণ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জীবন ও জীবিকায় টিকে থাকাই তাদের বড়ো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।। তেমনি ছাত্র সমাজ ও অভিভাবকগণও নানা সমস্যার শিকার। তার মধ্যে আবার দ্বিতীয় পর্যায়ে বই ছাপার বরাতও স্থানীয় প্রকাশকদের দেওয়া হয়নি।

রাজ্যের বুক সেলারদের প্রশ্ন- রাজ্য সরকারের গৃহীত নীতি , " সবকা সাথ সবকা বিকাশ " এবং " লোকাল পর ভোকাল " -এর যথার্থতা এক্ষেত্রে কোথায় ? রাজ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সকল পাঠ্যবই বিগত বহু বছর যাবৎ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সর্বশিক্ষা অভিযানের অর্থে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বর্তমান সরকারও তাই বহাল রেখেছেন। কিন্তু নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বই বর্তমান সরকার বাইরের রাজ্য থেকে ছাপিয়ে এনে সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নগদ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের দিয়ে বিক্রয় করাচ্ছেন যা ভূ-ভারতে কোথায়ও নেই। এন সি আর টি তাদের প্রকাশিত বই সারা দেশে পুস্তক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে (এজেন্সি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্রি বা সরবরাহ করেন। দেশের কোন রাজ্য এভাবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেনি। কিন্তু রাজ্য সরকার শিক্ষক স্বল্পতা থাকা সত্বেও শিক্ষক- শিক্ষিকাদের দিয়ে বই বাণিজ্য করাচ্ছেন। স্কুলে স্কুলে শিক্ষকদের বই বিক্রিতে লাগিয়েছেন। রাজ্যের প্রায় হাজার পাঁচেক পরিবার এই বই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। দপ্তরকে দিয়ে বই ছাপানোর ও বিক্রির সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার পরিবারের রুজি রোজগারের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রকাশনা শিল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে বহু বইয়ের দোকান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। বহু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বই বিক্রেতা, প্রকাশক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন - এটাই রাজ্য সরকারের “ সবকা সাথ, সবকা বিকাশ নীতি” ?

নগদ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ে বই বিক্রি করার ফলে অভিবাবক ও ছাত্র সমাজও অসুবিধায় পড়ে গেছেন। কেননা নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের পক্ষে একসাথে নগদ টাকা দিয়ে বই কেনা সম্ভব নয়। অনেক অভিভাবকদের মতে খোলা বাজার বা বইয়ের দোকান থেকে যখন যেটা সুবিধা, আবার কখনো কিছু নগদে কিছু বাকীতে যখন খুশি তখন কেনা যায়। কিন্তু স্কুলে সেই সুযোগ নেই। স্কুল থেকে একসাথেই সব বই নগদে কিনতে হয়। বিদ্যালয় কর্তৃক বই বিক্রয় বাণিজ্য করার ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেরীতে যাচ্ছে। কোন বই হারিয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সেই বই পাওয়ার সহজ সুযোগ না থাকায় ছাত্র অভিভাবকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। আবার কোন ছাত্র দেরীতে ভর্তি হলে তাদের ক্ষেত্রেও বই –এর যোগান দেওয়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পক্ষে অসুবিধা জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের এই সিদ্দান্তে রাজ্যের পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশনা শিল্প-এর সাথে যুক্ত পাঁচ হাজারের বেশী লোক বিপদে পড়ে গেছেন। মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্যের প্রকাশনা শিল্প। তাতে সরকারের কোন কর্ণপাত নেই। রাজ্যের পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের প্রাচীন ও সর্ব বৃহৎ সংস্থা ‘দি অল ত্রিপুরা বুক সেলারস্ অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এই নিয়ে বহুবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি কথা দিয়েও কথা রাখেননি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে আলোচনা করার জন্য উনার সময় চেয়ে বহুবার আবেদন করেছেন অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সময় দেওয়া তো দূরের কথা তিনি এবিষয়ে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও করেননি। কিন্তু বুক সেলার অ্যাসোসিয়েশন আগরতলা বইমেলা সহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী পুস্তক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে কর্ণপাত না করে তাদেরকে আন্দোলনের মুখে ধাবিত করছেন বলে অ্যাসোসিয়েশন-এর অনেকের অভিমত। রাজ্যের বুক সেলাররা চান তাদের মাধ্যমে বই প্রকাশ ও রাজ্যের স্কুল গুলিতে বিলি হউক। তাহলে এই পেশার সাথে যুক্ত পাঁচ হাজার পরিবার বেঁচে যাবে, পেশাহীন হতে হবেনা।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
18.07.2021Mihir DebClass 9 and 10 all books solution in bengali version