এক জায়গার গ্যাস অন্য জায়গায় কাজে লাগাতেই ‘মিশন ইন্দ্রধনুস’
জয়ন্ত দেবনাথ
ও এন জি সি-র গ্যাসে রাজ্যে এক্ষণে ১০৯৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নতুন করে এই মুহূর্তে ও এন জি সি রাজ্যে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা ভাবছেনা। তবে মিশন ইন্দ্রধনুস-এর মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি গ্যাস কূপ থেকে নির্গত গ্যাস-কে একটি জাতীয় গ্যাস বিতরণ প্রনালী বা নেটওয়ার্ক-এ যুক্ত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জাতীয় মহারত্ন কোম্পানী ও এন জি সি। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মিশন ইন্দ্রধনুস গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক-এর কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য মাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং এজন্যে কম করেও ও এন জি সি নয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। তাছাড়া ত্রিপুরায় গ্যাস এর চাহিদা দিন দিন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই লক্ষ্য পূরণে তৃষ্ণা, গজালিয়া ও খুবাল-এ গ্যাস উত্তোলনে কূপ খননের কাজ দ্রুত শেষ করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ত্রিপুরা সরকার ও এন জি সি -র কাছ থেকে এই মুহূর্তে গড়ে বছরে ১৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব হিসাবে পাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কাজেও (সি এস আর) ও এন জি সি রাজ্যের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী স্তরে বিভিন্ন সংস্থার কাজে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। গড়ে কম করেও আট থেকে নয় কোটি টাকা ও এন জি সি ত্রিপুরায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে প্রতি বছর ব্যয় করে থাকে।
তাছাড়া ও এন জি সি -র বিভিন্ন কাজে গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি শ্রমিক কর্মচারীদের সিংহভাগ পদেই স্থানীয় বেকারদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ও এন জি সি –র চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী শশী শংকর সহ সংস্থার চার বোর্ড অব ডিরেক্টর গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী দু’দিনের জন্যে রাজ্য সফরে এসেছেন। রাজ্য সফরকালে ও এন জি সি -র সি এম ডি সহ বোর্ড সদস্যরা আগরতলা এসেট প্রধান ও পি সিং এর উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন। ও এন জি সি -র ‘মহিলা সমিতির’ কনফারেন্স হলে আলোচনাকালে ও এন জি সি -র সি এম ডি ত্রিপুরাইনফো ডট কম প্রতিনিধির বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। নীচে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ও এন জি সি-র সি এম ডি কি জবাব দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন- দেখা যাচ্ছে সি এম ডি সহ ও এন জি সি –র গোটা বোর্ড সদস্যরাই বহুদিন বাদে একসাথে ত্রিপুরায় চলে এসেছেন। কোন খাস উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা? কেননা, আমরা আগে বহুবার দেখেছি সিএমডি বা এধরনের প্রতিনিধিদল একসাথে রাজ্যে এলে কিছু না কিছু নতুন একটা বড় কাজ হয়ে থাকে?
উত্তর- না না, এযাত্রায় এটা আমাদের রুটিন সফর। তবে ও এন জি সি –র ত্রিপুরা এসেটটি সব সময়ই ও এন জি সি –র একটি অতিব গুরুত্বপূর্ন প্রকল্প। এবং ইদানিং লাভজনকও বটে। গত ক’বছর ধরে খুব ভালো কাজকর্ম হচ্ছে। কাজের পরিধি দিন দিনই বাড়ছে। বেশ কিছু নতুন নতুন চিন্তা ধারার বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই চেষ্টা চলছে এখানে ও এন জি সি –র কাজকর্মে কিভাবে আরও বেশী করে গতি আনা যায়। এবং এজন্যেই আমাদের আসা।
প্রশ্ন- বর্তমানে দেশ জুড়ে একটা ব্যাপক আর্থিক মন্দা চলছে। ও এন জি সি –র শেয়ার এর দরও অনেকটাই নীচে নেমে গেছে। এসম্পর্কে কি বলবেন?
উত্তর- না, দেশের আর্থিক মন্দা পরিস্থিতিতে ও এন জি সি –র উপর কোন চাপ নেই। তবে বিশ্বজুড়ে তেল ও গ্যাসের বাজারে যে আর্থিক মন্দা চলছে এর প্রভাব কিছুটা রয়েছে ও এন জি সি –র উপর। কিন্তু তেমন কোন আর্থিক ক্ষতির মুখে এজন্যে পড়তে হয়নি। গত ১০ বছর ধরে সমানে ও এন জি সি লাভ করে চলেছে।
প্রশ্ন- ত্রিপুরায় বর্তমানে ও এন জি সি দৈনিক কি পরিমাণে গ্যাস উত্তোলন করছে, উত্তোলিত গ্যাস এর কতটা কোথায় কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে? এ ব্যাপারে ও এন জি সি -র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
উত্তর- ত্রিপুরাতে ও এন জি সি বর্তমানে দৈনিক ৫.৫৪ মিলিয়ন ঘন মিটার (MMSCMD) গ্যাস উত্তোলন করছে। এর মধ্যে ওটিপিসি, নিপকোর রামচন্দ্রনগর, মনারচক, রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের বড়মুড়া, রুখিয়া এবং টি এন জি সি –র বাড়ী বাড়ী পাইপ লাইনে গ্যাস বিতরনের জন্যে গড়ে দৈনিক ৫.০১ মিলিয়ন ঘন মিটার (MMSCMD)গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। পাঁচটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ও এন জি সি-র গ্যাসে গড়ে রাজ্যে প্রতিদিন ১০৯৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
প্রশ্ন- নিপকো কর্তৃপক্ষ বলছেন গ্যাস পেলে তারা মনারচক-এ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু ও এন জি সি গ্যাস দিতে পারছেনা। এবং সম্প্রতি তারা অতিরিক্ত গ্যাস চেয়ে ও এন জি সি-র কাছে আবেদনও করেছেন। এসম্পর্কে কি বলবেন?
উত্তর- হ্যাঁ, নিপকো-র তরফে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহের একটি আর্জি এসেছে। নিপকো-র প্রস্তাব খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ করা যায়না। গ্যাস উত্তোলনের কাজ চলছে। একটু সময় লাগবে।
প্রশ্ন- মিশন ইন্দ্রধনুস গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে? এতে ত্রিপুরার কি লাভ হবে?
উত্তর- মিশন ইন্দ্রধনুস গ্যাস পাইপ লাইন নেটওয়ার্ক প্রকল্পে কম করেও নয় হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। উত্তর পূর্বের সিকিম সহ আটটি রাজ্যকেই এই পাইপ লাইন নেটওয়ার্ক এ যুক্ত করা হবে, মোট ১৬৫৬ কিমি পাইপলাইন বসবে। এর মধ্যে ত্রিপুরায় ২৫০ কিমি পাইপ লাইন স্থাপন করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
প্রশ্ন- অর্থাৎ, মিশন ইন্দ্রধনুস গ্যাস নেট ওয়ার্ক প্রকল্পে ত্রিপুরার গ্যাস বহিঃরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটা না করে ও এন জি সি কেন রাজ্যে রাজ্যে উত্তোলিত গ্যাস এর ব্যবহার করে এরাজ্যেই নীপকু, পালাটানা, মনারচক-এর মতো বা গ্যাস ভিত্তিক অন্যান্য শিল্প স্থাপনে কেন ও এন জি সি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করছেনা?
উত্তর- হ্যাঁ, মিশন ইন্দ্রধনুস একটি ফ্ল্যাগশীপ প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রথমে ও এন জি সি –র উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবক’টি তৈল উত্তোলন এলাকা বা গ্যাস কূপগুলিকে পাইপ লাইনে যুক্ত করা হবে। রাজ্যে উত্তোলিত গ্যাস কোন কারনে ব্যবহার করা না গেলে সেই গ্যাস পাইপ লাইনে অন্য রাজ্যে বা বহিঃ রাজ্যের অন্য গ্যাস ভিত্তিক শিল্প প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। এর ফলে গ্যাস-এর অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে পালাটানা প্রকল্পের একটি ইউনিট অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর ফলে যে গ্যাস ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল তা করা যাচ্ছে না। এজন্যে ও এন জি সি –র দৈনিক এক কোটি টাকা লোকসান হছে। মিশন ইন্দ্রধনুস প্রকল্প চালু করা গেলে এধরনের লোকসান প্রতিহত করা যাবে।
প্রশ্ন- শোনা যাচ্ছে আই এল এন্ড এফ এস-এর পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্পে যে ২৬% শেয়ার রয়েছে তা তারা ছেড়ে দিতে চাইছে। এবং ত্রিপুরা সরকার চাইছে সেই পুরো শেয়ারটা কিনে নিতে?
উত্তর- হ্যাঁ, আই এল এন্ড এফ এস তাদের ২৬% শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইছে। কিভাবে কাকে এই শেয়ার দেওয়া হবে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। শেয়ার দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারে প্রচুর আইনী প্রক্রিয়া রয়েছ্ব। ও টি পি সি বোর্ড তা খতিয়ে দেখছে। ত্রিপুরা সরকার চাইলে আই এল এন্ড এফ এস-এর পুরো শেয়ার কিনে নিতে পারে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু হয়নি।
প্রশ্ন- পালাটানা প্রকল্পের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। কবে নাগাদ তা ফের চালু হতে পারে?
উত্তর- হ্যাঁ, যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে পালাটানার একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। চেষ্টা চলছে সারাই-র।। আশা করা যাচ্ছে আগামী ১৪ মার্চ- এর মধ্যে সারাই-র কাজ শেষ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন- ও এন জি সি -র কাছ থেকে ত্রিপুরা সরকার বছরে গড়ে কি হারে রাজস্ব বা রয়েলিটি পাচ্ছে?
উত্তর- ২০১৪-১৫ সালে ১২৩ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১৫-১৬ সালে ১৫০.৮১ লাখ, ২০১৬ সালে ১২৩.৫৩ লাখ, ২০১৭-১৮ সালে ১২০.৮১ লাখ এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৬৫.০৮ লাখ টাকা ও এন জি সি -র কাছ থেকে ত্রিপুরা সরকার রাজস্ব হিসাবে পেয়েছে।
প্রশ্ন- প্রতি বছরই ও এন জি সি তে দেশ জুড়ে প্রচুর বেকার যুবকযুবতীদের চাকুরী হয়। ১৯৭২ সাল থেকেই ত্রিপুরাতে কাজ করছে ও এন জি সি । এক্ষেত্রে স্থানীয় যুবকদের ও এন জি সি –র নিয়োগে অগ্রাধিকারের কোন সুবিধা বা স্থানীয় কোটা বলে কিছু রয়েছে কিনা?
উত্তর- না, স্থানীয় স্তরে কোটা সিস্টেম নেই। অগ্রাধিকারেরও কোন সুযোগ নেই। তবে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে যথা সম্ভব স্থানীয় বেকার যুবকযুবতীদের থেকেই নিয়োগ করা হয়। ত্রিপুরাতে তাই হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও হবে।