একজন ডাক্তারের জীবন
রিয়া সুলতানা
March 6, 2025
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাতুল, যার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষকতা করতেন । রাতুল যখন ছোট ছিল, সে ভাবত ইঞ্জিনিয়ার হবে কখনো ভাবত মডেল হবে, আরো কত কি। কিন্তু একদিন তার বাবা-মা তাকে একটি স্বপ্ন দেখালো , বিখ্যাত ডাক্তার হওয়ার । কিন্তু তখন সে জানতো না যে, ডাক্তার হওয়ার জন্য কি কি করতে হয় ।ক্রমে ক্রমে সে বড় হতে লাগলো, যখন নবম শ্রেণীতে পড়তো তখন সে একজন ডাক্তার কি করে হওয়া যায় তা জানতে শুরু করল , তার সহপাঠীরা বা আশেপাশের লোকজন তার স্বপ্নের কথা জানতে পেরে বলে ডাক্তার হওয়া এতটা সহজ বিষয় নয়,চাইলেই ডাক্তার হওয়া যায় না, ডাক্তার হতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয় ,অনেক টাকার প্রয়োজন হয় ।কিন্তু তার মা-বাবা সব সময় তাকে বলতো মানুষের কথায় কান না দিতে ,কারণ মানুষ তো পেছনে পেছনে কথা বলবেই । তার এবং তার বাবা -মায়ের কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে অল ইন্ডিয়া নিট পরীক্ষায় বসে। প্রথমবার সে অল্পের জন্য ভালো ফলাফল করতে পারল না। তখন চারদিক থেকে লোকজন নানা কথাবলতে শুরু করল । আশেপাশের লোকজন মা-বাবাকে বলতে শুরু করল যে, এত টাকা-পয়সা খরচ করে কি লাভ হল, ছেলে তো কিছুই করতে পারল না। তখন মা বাবা আর আগের মত ঠিক থাকতে পারল না । বাইরের লোকের অসন্তুষ্টি এবং মা বাবার অসন্তুষ্টি ,এসব কিছু রাতুলকে ভাবিয়ে তুলেছিল । সে কয়েকদিন অন্ধকার ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার পর ভাবে জীবন তো- হেরে যাওয়ার নাম নয় ,এখানে এসে সে ছেড়ে দিতে পারে না ।মানুষের অবহেলা যেন আরো পরিশ্রমী ও সাহসী করে তুলে এবং এক বছরের কঠোর পরিশ্রমের পরে সে খুব ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করে ।সে একটি ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে যায় ।তারপরে তার এবং তার মা বাবার স্বপ্ন পূরণ হয় । সে হার্টের ডাক্তার হিসেবে একটি ভালো হাসপাতালে চাকরিতে যোগ দেয় । হাসপাতালে সে সমস্ত রোগীকে অল্প পয়সায় এবং কোন কোন সময় পয়সা ছাড়াও চিকিৎসা করত । সে চার বছর ধরে অনেক মানুষের চিকিৎসা করেছে, অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু একদিন এমন এক ঘটনা ঘটে গেল যা তার জীবনকে পাল্টে দিল । একজন রোগী যখন তার কাছে আসে তখন সে দেখতে পায় যে, রোগীটির বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই কম। এই অবস্থায় তাকে বাঁচাতে হলে অপারেশন করতে হবে, যে অপারেশনে হয়ত বা তার প্রাণও যেতে পারে।যদি তাকে বাঁচাতে হয় তাহলে রাতুল কে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে ।তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিল যে, সে অপারেশনটি করবে। তারপর দীর্ঘ চার ঘণ্টার অপারেশন করে যখন রোগীটিকে বের করা হয়, তখন একটু পরেই সে মারা যায়। যে লোকটি হয়তো বা আর বাঁচলেও ২-৩ দিন বাঁচতো, সে অপারেশনের বিছানাতেই মারা যায়। তা দেখে রোগীর পরিবার চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় এবং তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ লিখিয়ে আসে। রাতুলের বিরুদ্ধে মামলা চলতে থাকে এবং চাকরি চলে যায়। তাকে শুনতে হয় ,সে ডাক্তার হওয়ার যোগ্য নয়। সে একজন অপরাধী। রাতুলের এখন ডাক্তারের চাকরি নেই, একজন সাধারণ মানুষ হয়ে জীবন যাপন শুরু করে। একদিন সন্ধ্যার সময় সে ছাদে বসে বসে ভাবতে থাকে, এটাই কি ডাক্তারের জীবন। যে স্বপ্ন রাতুল ও তার মা -বাবা দেখেছিল- ডাক্তার হয়ে একদিন মানুষের সেবা করার,সে কি তা আর কখনো করতে পারবে না?তার ছোটবেলার দেখা স্বপ্ন এভাবে মিথ্যে হয়ে যাবে। যে ডাক্তার হওয়ার জন্য সে দীর্ঘ এত বছর নিরলস পরিশ্রম করে গেছে, তাকে কি আজ শুনতে হলো সে ডাক্তার হওয়ার যোগ্য নয়, সে মানুষকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু সে তো তাকে ভালো করারই চেষ্টা করেছিল। তাকে যদি সে অপারেশন না করতো তাহলেও তাকে বাঁচানো যেত না। তাই তাকে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। সে চার বছরে অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল। কিন্তু ওই সব কথা আজ কারো মনে নেই। আর তাই রাতুলের মনে বারবার প্রশ্ন জাগে এটাই কি একজন ডাক্তারের জীবন ?এভাবে হাজারও প্রশ্ন চলতে থাকে রাতুলের মনে।
আরও পড়ুন...