।। ছ্যাড়া-বেড়া ।।
অরিন্দম নাথ
আপনারা যারা আমার লেখার সঙ্গে অপরিচিত তাঁদের জ্ঞাতার্থে কয়েকটি কথা বলছি ৷ আমার শরীরে একটি অ্যানামলি আছে ৷ প্রথমে জানতাম না ৷ কয়েক বছর হল বুঝতে পেরেছি ৷ আমার লিভার থেকে সময় সময় এক বিচিত্র এনজাইম ক্ষরণ হয় ৷ এই জারক-রসের প্রভাবে শর্করা জাতীয় খাবার মাদকে পরিণত হয় ৷ ফলে অজান্তেই আমি বেশ নেশার আমেজ পাই ৷ মৌতাত আসে । এমনি মৌতাতের মুহূর্তে প্রায়ই আমি পৌঁছে যাই বিধাতার দরবারে ৷ এইভাবে কয়েক দফা সফর করেছি ৷ যার বর্ণনা অন্যত্র দিয়েছি ৷ তবে এই সুবাদে বিধাতা এবং তাঁর সারাক্ষণের দুই সহচরের সঙ্গে সখ্যতা হয়ে গেছে ৷ মানিকজোড় শুম্ভ-নিশুম্ভ আসলে দুই যমজ ভাই ৷ অসুরের মত চেহারা ৷ ব্যবহার কিন্তু অমায়িক ৷ আগের জন্মে এঁদের একজন ছিলেন অংকের প্রফেসর ৷ অপরজন কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে পড়াতেন ৷ দুই জনেই ছিলেন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী । চিত্রগুপ্ত বিধাতার এক্সিকিউটিভ স্টাফ ৷ তিনি এবং তাঁর সহকর্মীদের মর্ত্য-ফেরত লোকদের আত্মার মধ্য থেকে নিয়োগ করা হয় ৷ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন বিধাতার নির্বাচিত একটি কমিটি ৷ এই কমিটির চ্যায়ারমেন এবং সদস্যদের দেব-দেবীদের মধ্য থেকেই বাছা হয় ৷ চিত্রগুপ্ত এবং তাঁর সহকর্মীরা একটি নির্দিষ্ট সময় চাকুরী করার পর অবকাশ পান ৷ অনেকেই প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি করেন৷ খারাপ কাজ করলে শাস্তি মেলে ৷ ভালো কাজ করলে ইনসেন্টিভ মেলে ৷ স্বর্গ এবং মর্ত্যের টুরিস্ট স্পট ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ মেলে ৷ সাথে আমোদ-প্রমোদের প্যাকেজ ৷
স্বর্গে এখন ভীষণই ছ্যাড়া-বেড়া অবস্থা ৷ এয়ার-পোর্টে শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে আমার দেখা হয় ৷ বিধাতার আদেশে খুঁপিয়া পুলিশের কাজ করছে ৷ অনেকগুলি নতুন কমিটি হয়েছে ৷ স্বর্গে এখন টাল-মাতাল অবস্থা৷ বিধাতা তাই আর রিস্ক নিতে চান না ৷ দুই বিশ্বস্ত অনুচর মারফত প্রতিদিনের ঘটনা প্রবাহের খবরা-খবর সংগ্রহ করেন ৷ একটি পারিজাত গছের ছায়ায় শুম্ভ-নিশুম্ভ দাঁড়িয়ে ছিল৷ আমাকে পেয়ে খুব খুশি ৷ প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে ৷ তাদের দেখেই বুঝতে পারি প্রচুর কথা ওদের পেটে জমেছে ৷ আমি তাই ভদ্র শ্রোতার মত তাদের কথা শুনি ৷ তারা আমাকে বলে, এয়ারপোর্টের দিকে একবার দেখ ৷ আমি তাদের কথামত শূন্যে ভাসমান বিশালাকার বিমানবন্দরের দিকে তাকাই ৷ মুহুর্মুহু বিভিন্ন আকৃতির এবং মডেলর পুষ্পক রথ বা বিমান ওঠানামা করছে । প্রচুর যাত্রী নামছে ৷ কিছু কিছু আবার যাচ্ছেনও ৷ আমি অবাক হই ৷ শুম্ভ-নিশুম্ভ আমাকে ইশারায় আশ্বস্থ করে ৷ একটি কাউন্টারে সাইন-বোর্ড ‘মর্ত্য থেকে অমৃতলোকে আগত যাত্রীরা স্বাগত’ ৷ আরেকটি কাউন্টারে আরেক দল ব্যস্ত পুষ্পক রথের শিডিউল তৈরিতে ৷ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিত্রগুপ্তের সহকর্মীরা মর্ত্যলোক থেকে অমৃতলোকে যাত্রার খবর জানাচ্ছে ৷ সেই খবর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলেও পৌঁছে যাচ্ছে ৷ আমাদের রাজ্যের গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল থেকে পাঁচজন সওয়ারি উঠেছে ৷ সেই ঘোষণাও শুনলাম ৷
শুম্ভ-নিশুম্ভের একজন এবার আমায় খোলাসা করে বলেন, “বর্তমান চিত্রগুপ্ত নতুন নিযুক্ত হয়েছেন৷ মর্ত্যে মানুষকে পাঠানো হয় পরিযায়ী শ্রমিকের মত ৷ তারা কায়িক কিবা মানসিক যেকোনোও ধরনের শ্রম করতে পারে ৷ তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠানো হয় ৷ তোমরা যাকে বল, জীবনের আয়ু ৷ এই আয়ু অনেকটা রিয়েল ভ্যারিয়েবলের মত ৷ তুমি নিশ্চয় রিয়েল এবং ইন্টিগ্রাল ভ্যারিয়েবলের পার্থক্য বোঝ৷”
আমি বুঝতে পারি উনি ছিলেন অংকের প্রফেসর ৷ বলি, “আবছা মনে আছে ৷ অনেকদিন হয়েছে পড়েছি৷”
- “নো প্রবলেম ৷ রিয়েল ভ্যারিয়েবল বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি দশমিক সংখ্যা ৷ মানুষকে যে আয়ু দেওয়া হয় তার কিছুদিন বেশিও বাঁচতে পারে ৷ কিংবা কম ৷ দশমিকের আগে পিছে হেরফের হয় ৷ ইন্টিগ্রাল ভ্যারিয়েবল পূর্ণ সংখ্যা ৷ নট নড়ন-চড়ন ৷ বিধান-চন্দ্র রায় ছাড়া আমার জানামত কেউই পূর্ণ বছর বাঁচেননি ৷ ওনার জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন ছিল জুলাই মাসের এক তারিখ ৷ হয়তো ঘণ্টা, মিনিট বা সেকেন্ডের ভগ্নাংশ থাকবে ৷ অন্যদের ক্ষেত্রে পূর্ণ বছরের পর ভগ্নাংশে বিস্তর ফারাক থাকে ৷ বছর কয়েক আগের কথা ৷ আগের চিত্রগুপ্ত বিধাতাকে বললেন, মানুষ তার আয়ু বাড়িয়ে নিচ্ছে ৷ মর্ত্যে আমরা যেই হারে লোক পাঠাচ্ছি, সেই হারে ফিরে আসছে না ৷ শুনে বিধাতা বললেন, “বিশ্বকর্মাকে ডাক ৷”
চিত্রগুপ্ত বিশ্বকর্মা ওরফে বিশুবাবুকে ডেকে নিয়ে আসলেন ৷ তিনি বিধাতাকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে বললেন, “চিত্রগুপ্ত আমাকে তার সমস্যার কথা বলেছে ৷ ইদানীং লক্ষ্য করছি মর্ত্যের পরিবেশে গিয়ে মানুষেরা ভীষণই সেয়ানা হয়ে যাচ্ছে ৷ সার্কিট ক্লোন করে আয়ু বাড়িয়ে ফেলছে ৷ ভাবছি এবার একটি ভাইরাস ইন-ফিউশন করে দেব ৷ অ্যান্টি-ভাইরাস সহসা বের করতে পারবে না ৷”
শুনে বিধাতা একটু চিন্তা করলেন ৷ তারপর বললেন, “মানুষকে এত আণ্ডার-এস্টিমেট করোনা ৷”
করোনার কথায় বিশুবাবু বললেন, “এক কাজ করলে হয় ৷ বাঁদুরের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকে৷ একে মিউটেশন করে মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেব ৷”
“মহামারী টারি শুরু হবে-নাতো”, বিধাতা জিজ্ঞাসা করলেন ৷
- একদমই না ৷ মাইল্ড ডোজ থাকবে ৷ হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন, আইভারমেকটিন, ভিটামিন সি ইত্যাদি খেলেই সেরে যাবে ৷ তাছাড়া চিত্রগুপ্ত একটু লক্ষ্য রাখলেই হবে ৷
সেই থেকে বেশ চলছিল ৷ চিত্রগুপ্ত তাঁর শ্রমিক আনা নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ৷ এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, আজকাল মানুষের মেধা দেবতাদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে ৷ মানুষের তৈরি অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি দেব-দেবীরা ব্যবহার করেন ৷ অনেক সময়ই গুগল সার্চ করেন ৷ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৷ চিত্রগুপ্তও করতেন ৷ চিত্রগুপ্তের কম্পিউটার হ্যাঁক করে, চাইনীজরা প্রথমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য জেনে নেয় ৷ বিধাতা চিত্রগুপ্তের উপর রেগে যাওয়ার কারণ হচ্ছে তাঁর কম্পিউটার যে হ্যাঁক হয়েছে তিনি বুঝতেই পারেন নি ৷ তাঁর বিখ্যাত জন্ম-মৃত্যুর নথী পর্যন্ত বদল হয়ে যায় ৷ তিনি যখন বুঝতে পারলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে ৷ চাইনীজরা সিনথেটিক করোনা ভাইরাস বানিয়ে ফেলেছে ৷ চাইনীজদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, তারা নকল বানাতে ওস্তাদ ৷ নকল চাল ৷ নকল ডিম ৷ এমনকি, তুমি যদি চায়নাতে যাও, কয়েক ঘণ্টা সময় পেলে তোমার নকলও তৈরি করে ফেলবে ৷ এখনতো স্বর্গে ছ্যাড়া-বেড়া অবস্থা ৷ তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী নিয়ে বিধাতার সংসার ৷ তাঁরা অমৃত পান করে নিজেদের মৃত্যুঞ্জয়ী মনে করতেন ৷ আমরাতো স্বর্গে বস্তুত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ৷ একবার মৃত্যুকে উপভোগ করে নিয়েছি৷ তাই মৃত্যুভয় নেই ৷ কিন্তু দেব-দেবীদের মধ্যে এখন মৃত্যুভয় চেপে বসেছে ৷ তাঁরা সিনথেটিক করোনা বা ভার্চুয়াল করোনাকে ভয় পাচ্ছেন ৷ এর কারণ আছে ৷
এতদিন মানুষ মর্ত্যে যেত নেংটো ৷ ফিরতও নেংটো ৷ এখন অনেক ক্ষেত্রেই এর বিচ্যুতি হয় ৷ করোনায় মারা যাওয়ার সময় অনেকেরই শরীরে আংটি কিংবা অন্য অলংকার থেকে যায় ৷ অনেক সময় ডোম সরিয়ে নেয় ৷ অনেক সময় নেয় না ৷ সৎকারের পর, স্বর্গলোকের পুষ্পক রথে তুলে মর্ত্য থেকে বিদায় জানায় ৷ প্রথমে কেউ এতটা লক্ষ্য করেনি ৷ কিছু ছোটখাটো দেব-দেবী এই অলংকারের লোভ সালাতে পারেন না ৷ তাঁরা বিভিন্নভাবে ছল-চাতুরী করে এই অলংকার হাতিয়ে নেন ৷ আর এই করতে গিয়ে ভার্চুয়াল করোনার সংস্পর্শে আসেন ৷ তাঁদের অনেকেই আক্রান্ত হন৷ মারাও যান ৷ মারা যাওয়ার আগে বিধাতা তাঁদের মানুষ বানিয়ে দেন ৷ তাঁর ভয় স্বর্গে যদি করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ে৷”
- তাহলে সত্যিই দেখছি ছ্যাড়া-বেড়া অবস্থা ৷ এর প্রতিকার হিসেবে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ?
- আগের চিত্রগুপ্তের চাকুরী যাওয়ার কথাতো বললামই ৷ দুইটি কমিটি হয়েছে ৷ কোভিড বা কমিটি অফ ভ্যারাইটিস আইডেণ্টিফিকেশন অফ ডিসিস্ড ৷ আর করোনা বা কমিটি অফ রিয়েল ওরিয়েণ্টেশন অফ ন্যাচারাল অ্যানিম্যাল ৷ প্রতিটি কমিটির মাথায় একজন করে দেবতা আছেন ৷ এরপর আছে বেশ কয়েকটি সাব-কমিটি ৷
- মর্ত্যে কিন্তু কোভিড বলতে আমরা করোনা ভাইরাস ডিজিজ বুঝি ৷
- এখানে একটু পার্থক্য আছে ৷ ন্যাচারাল করোনা ভাইরাসে কিন্তু মানুষ এবং অন্য প্রাণী সবাই মারা যেতে পারে ৷ সিনথেটিক করোনা ভাইরাসে শুধু মানুষ মারা যায় ৷ এখানকার কোভিড কমিটি প্রথমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করেন ৷ সিনথেটিক বা মানুষের সৃষ্ট ভাইরাসে মৃত্যু হলে রিহ্যাবে পাঠানো হয় ৷ অন্যদের দ্বিতীয় কমিটর বরাবরে পাঠানো হয় ৷ সেই কমিটি ওরিজিন্যাল রেকর্ড ঘেঁটে প্রাণীদের ওরিয়েণ্টেশনে পাঠায় ৷
- কিন্তু সিনথেটিক না প্রাকৃতিক করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষটি মারা গেল কি করে যাচাই করা হয় ?
- প্রথমে ফ্রিস্কিং করে অলংকার-পত্র নির্ণয় করা হয় ৷ একটি লিস্ট তৈরি হয় ৷ এরপর ভার্চুয়াল টেস্ট করা হয় ৷ ভার্চুয়াল নদীর জলের সাহায্যে ৷ তোমরা যাকে আকাশ-গঙ্গা বল, সেই নদীর জলের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ৷ এই নদীর জল পান করলে প্রত্যেকে নিজের পছন্দমত স্বাদ পায় ৷ এই জল খাওয়ানোর পর, স্বাদ জিজ্ঞেস করা হয় ৷ কেউ মিষ্টি স্বাদ পায় ৷ কেউ ন্যূনতা ৷ কেউ তিতা ৷ কেউ আরও স্পেসিফিক ৷ হুইস্কির স্বাদ পায় ৷ বিয়ারের স্বাদ পায় ৷ আবার কেউ কোনও স্বাদ পায় না ৷ যারা কোনও স্বাদ পায় না, তারা সিনথেটিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৷ এটা হচ্ছে প্রাথমিক টেস্ট ৷
- চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা এবং ত্বক ৷ মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় ৷ এরমধ্যে জিহ্বার স্বাদ অন্য কোনও কারণেও চলে যেতে পারে ৷
- ঠিক বলেছ ৷ কমপক্ষে তিনটি ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে নিশ্চিত বলা যায় সিনথেটিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৷ এইজন্য পঁচিশটি ভুল-ভুলাইয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে বলা হয় ৷ চাক্ষুষ করার জন্য পাঁচটি ভুল-ভুলাইয়া বা বাতায়ন ৷ সেখানে বিভিন্ন ধরনের ছবি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য থাকে৷ মূক সিনেমাও থাকে ৷ পাঁচটি ভুল-ভুলাইয়া থাকে কানের মান ভঞ্জনের জন্য৷ বিভিন্ন সুরের গান-বাজনা আওয়াজ শুনানো হয় ৷ তারপর পাঁচটি স্থানে সুস্বাদু এবং বিস্বাদ খাবারের আয়োজন থাকে ৷ এরপর আসে বিভিন্ন ফুলের সুবাস, আতর, খাটাশ জাতীয় প্রাণী, গান্ধী পোকা ইত্যাদির সাহায্যে সাজানো পাঁচটি ঘর ৷ সবশেষে আসে স্পর্শ ইন্দ্রিয়ের ভুল-ভুলাইয়া ৷ বরফ, গরম ধাতু, ইত্যাদির পাশাপাশি সুন্দরী মডেল, হ্যান্ডসাম যুবক, মিষ্টি দেখতে বাচ্চা, আদুরে প্রাণী দাঁড়িয়ে থাকে ৷ তারা খুবই ফ্রেন্ডলি ব্যবহার করে ৷ দেখলেই আদর করতে বা আদর খেতে ইচ্ছে করবে ৷ ভুল-ভুলাইয়ার এইসব আইটেমের সবগুলি কম্পালসরি নয় ৷ অপশনালও আছে ৷ মর্ত্য থেকে আসা যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করা হয় ৷ তারপর বিধান দেওয়া হয়৷ অনেকে আবার সহযোগিতা করে না ৷ তাদেরকে বিশুবাবুর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় ৷
- করোনা কমিটি কী করেন ?
- ওনাদের উপরই স্বর্গের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে ৷ মৃতদের মধ্যে কিছু থাকে কো-মোর্বিড রোগী ৷ অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৷ করোনা ভাইরাস হয়তো মৃত্যু তরান্বিত করেছে৷ এক্ষেত্রে দেখতে হবে লোকটি নির্ধারিত সময়ের কত আগে মারা গেলেন ৷ সেক্ষেত্রে আর মর্ত্যে পাঠানো হয় না ৷ রিহ্যাবের চারটি জায়গা আছে ৷ আমোদ-প্রমোদে ভেসে থাকা ৷ সেখানে সব-ধরনের উপকরণ থাকবে ৷ আধ্যাত্মিক চিন্তা এবং প্রকৃতিকে উপভোগ করা ৷ গান-বাজনা, সাহিত্য-শিল্প নিয়ে মেতে থাকা ৷ নতুন একটি সেকশন হয়েছে ভূত হয়ে ভূতোমি করা ৷ শেষেরটি খুবই পপুলার হয়েছে ৷ আগামী-দিনে ভূতের উপদ্রব বাড়ার কথা ৷ বলাবাহুল্য প্রত্যেককে হিসেব করে নতুন জীবনের জন্য লাইফ-টাইম দেওয়া হয় ৷
“আর যারা জীবনের সময় পূর্ণ করে ফেলে, তাদের জন্য ?”, কে যেন পেছন থেকে আমার কানে ধরে এই প্রশ্নটি করে ৷ তাকিয়ে দেখি বিধাতা ৷ তিনি কখন আমাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন লক্ষ্য করিনি ৷ আমি লাগছে বলে বসে পড়ি ৷ আমার মৌতাত টুটে যায় ৷