বলছিলাম আগরতলার এপারটমেন্ট কলচারের কথা
প্রদীপ চক্রবর্তী
উন্নয়ন ও প্রগতির সাথে পাল্লা দিয়ে রাজ্যেও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ছোট-বড় এপার্টমেন্ট। রাজধানী আগরতলা জুড়ে এখন যেন এপার্টমেন্টর ত্যাগ প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে অন্যান্য বিশেষকরে সরকারী নির্মাণ কাজ ও অব্যাহত রয়েছে কম আর বেশি। কিন্তু এই সব নির্মাণ কাজের ফলে রাজ্যের শ্রমজীবী অংশের মানুষজনের কাছে অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে শুরু করেছে। ফলে ওই সব প্রায় কর্মহীন মানুষের মধ্যে অভাব অনটন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
এমনিতেই গ্রামগঞ্জে কাজকর্ম নেই, বিশেষ করে সরকারি কাজকর্ম, যাকে বলে রেগা। এই রেগার কাজ গ্রামীণ মানুষের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। রেগার কাজ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে গ্রামীণ লোকজন বিশেষ করে মহিলারা পরিবার চালাতে বড় ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু এখন নাকি রেগা তো দূরের কথা অন্যান্য কাজ মানে সরকারী কাজ ও নেই। এই যেমন ছোটখাটো জলাশয় তৈরী,পুকুর নির্মাণ,গ্রামীন রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি কাজ ও নাকি উধাও। অবশ্য রেগার কাজে অনেক দূর্নীতি হয়েছে।
কর্মহীনতার ফলে গ্রামের লোকগুলি হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শহরে।নানাজন নানা কাজ করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শহরে রিকশা চালকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মোটরষ্টান্ড,বটতলা,নাগেরজলা, রাধানগর, চন্দ্রপুর আইএসবিটি তে রিক্সা চালক গিজগিজ করছে। প্যাসেঞ্জার পাওয়া খুব মুস্কিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে বাধ্য হয়েই এরা আগে যেখানে ভাড়া কুড়ি টাকা লাগত এখন সেখানে দশ টাকায় ট্রিপ দিচ্ছে। ফিরে আসতে শুরু করেছে দু'জনকে নেয়া। দশ বছর আগে যেখানে একজন প্যাসেঞ্জার পেলে আরেকজনের জন্য ওরা বসে থাকত। কাজের অভাবে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই পুরানো আমল।
গ্রাম গঞ্জে কাজ নেই এ বাস্তব মানতে নারাজ সরকার। হয়তঃ তাঁরাও ঠিক অন্তত তথ্য ও পরিসংখ্যানে। কিন্তু বাস্তব ভিন্ন কথা বলে।
বলছিলাম এপার্টমেন্ট কালচারের কথা। ও অন্যান্য সরকারি নির্মাণ কাজের কথা। সমস্যা হল এই কালচারের সাথে যুক্ত প্রমোটাররা নির্মাণ কাজের জন্য ভিন্ন দেশী শ্রমিক নিয়ে আসছে। এদের আনা হচ্ছে মেদিনীপুর,মালদা, শিলিগুড়ি, আসামের কিছু অঞ্চলে ছাড়াও ঝাড়খণ্ড থেকে।প্রমোটরদের ভাষায় এঁরা নাকি দক্ষ শ্রমিক(Skilled)।যে সাইটেই যাওয়া যাবে, দেখা যাবে সব ভিনরাজ্যের শ্রমিক। অনেকেরই বয়স ১৮ ও পার হয়নি ।১৬/১৭ বছরের ছেলেদের নিয়ে আসা হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী এটা অপরাধ। কিন্তু কে শুনে কার কথা? শ্রম দপ্তরের পরিদর্শনও সম্ভবত নেই।
ভিন রাজ্যের শ্রমিক আনায় রাজ্যের নির্মাণ শ্রমিকরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এই যেমন রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, যোগালী। এদের এখন দূঃসময়। উপায় না দেখে এরা এখন গ্রামে ঢুকে পড়ছে। কম রেইটে কাজকর্ম করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এপার্টমেন্ট কালচার ছাড়াও ভিন্ন দিক রয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।ওই সব কাজে স্হানীয়দের সুযোগ থাকলেও দেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব কাজ রয়েছে,তার প্রায় সব কয়টি করছে বহিরাজ্যের নির্মাণ সংস্হার। কোন কোন ক্ষেত্রে এরা স্হানীয়দের সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছে বা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে নিন্দুকেরা বলে থাকেন।
মাটি কাটার শ্রমিকরা আরো বেকায়দায়। আজকাল জেসিবি, ড্রজারেই বেশী মাটি কাটা ও ভাঙ্গা হচ্ছে। এগুলির সুবিধা অনেক বেশি। একশ শ্রমিকের কাজ একটি ড্রেজার,বা জেসিবিতে এক ঘন্টায় শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এই সব সমস্যা সার্বিক পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলছে।
এই সব শ্রমিকদের জন্য নানা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইন রয়েছে। এগুলো মানাই হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী কর্মরত শ্রমিকদের হেমলেট পড়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু হচ্ছে কোথায়। নির্মাণ সংস্থাকে এগুলো সরবরাহ করার আইনী বিধান রয়েছে। রয়েছে সেফটি ব্যাল্ট বাধার বাধ্যতামূলক বিধান। এগুলি তদারকী করার দায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্হার। শুধু কি তাই এদের অর্থাৎ শ্রমিকদের অসুখ বিসুখে বা চিকিৎসার জন্য রয়েছে ইএস এল আই যেটি শ্যামলী বাজারে রয়েছে। কোন শ্রমিক অসুস্থ হলে সে ওখানে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করাতে পারবে। ওদের সার্টিফিকেট মূলেই শ্রমিকরা ছুটি পাবে। ওই ছুটি হবে সবেতনে। আইএল এস,ওএনজিসি সহ গেইল,ওভাল টিসিএসের স্মার্ট সিটির মিশনের সাথে শ্রমিকরা সেখানেই চিকিৎসিত হয়ে থাকেন।
দূর্ভাগ্যের নির্মাণ কাজের সাথে যুক্ত অর্থাৎ যাঁরা এপার্টমেন্টে কাজ করেন তাদের জন্য সরকারী কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা সুদূর পরাহত।