এখানেই কাশী, এখানেই বিশ্বনাথ, ত্রিপুরেশ্বরী
প্রদীপ চক্রবর্তী
রামকৃষ্ণ বলতেন বা উপদেশ বা পরামর্শ দিয়েছেন"শিবজ্ঞানে জীবসেবা" র। অর্থাৎ মানুষকে মানুষের মত ভালবাস, এদের সেবা কর।এই সেবা নিরস্বাথ হতে হবে। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর।এদের সেবা মানেই ঈশ্বরের সেবা করা। যদি বলা হয় তাঁর এই উপদেশ সমাজতন্ত্র কে হার মানিয়ে দিয়েছে বা রামকৃষ্ণ র মত বড় সমাজবাদী আর কে হতে পারে?
আজকের পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ , রেষারেষি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব প্রায় সর্বত্র। এই প্রেক্ষাপটে রামকৃষ্ণ দেবের "যতমত ততপথ"এক চিরন্তন সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে র কথা প্রতিভাত করছে।
সবাইকে তিনি বলতেন"কাঁদো কাঁদো, বেশি করে কাঁদো।আরে না কাঁদলে কি তাঁকে পাওয়া যায়? শিশু যদি না কাদে, মাকি তাঁকে দুধ দেয়?না,দেয় না।মা ভাবে তাঁর সন্তান ভাল আছে, সমস্যা নেই,ক্ষুধাও নেই।এতো অর্থনীতির চাহিদা ও যোগানের তত্বের পরিপূরক।
আধ্যাত্ববাদের প্রসঙ্গে তাঁর উপদেশ"বেশি করে কাঁদো, নির্জনে বসে কাঁদো, নির্জনতার মধ্য দিয়েই তাঁকে পাবে। তাঁর দর্শন,জীবন আলোকিত করবে।তিনিই আবার বলছেন,আরে ভগবানের নাম গান করতে হয়।করতে হয় সাধূসঙ্গ।সাধু সংঘের আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ : সাধূসংঙ্গে আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ঘটে,মন প্রসারিত হয়।ধ্যান করতে হবে মনে,কোনে ও বনে। সর্বদা বিচার করবে। মানে ঈশ্বর ই সৎ,আর সব অসৎ।এসব বললে পরে মন থেকে অনিত্য দূর হয়ে যাবে।
মাষ্টারমশাই বিনীতভাবে জানতে চাইলেন সংসারে কি ভাবে থাকতে হবে? উত্তর এর এই ভাবে। আরে সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে।সংসারে থাকবে সকলকে নিয়ে।সবার সেবা করবে।সেবাটা এইভাবে করবে যাতে তারা মনে করে তুমি তাঁদের লোক। কিন্তু বাপু একটা জিনিষ কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাখবে,এ সংসার অনিত্য, যাদের সেবা তুমি করে,মনে রাখবে এরা তোমার কেউ নয়।দেখনা মানুষের জমিতে চাষীরা কাজ করছে, প্রতিদিন করছে, কিন্তু জানতো এদের মন কিন্তু পড়ে আছে নিজের বাড়িতে।এরা যখন মনিবের বাড়ীতে কাজ করে তখন কিন্তু মনিবের ছেলেমেয়েদের নিজের ছেলেমেয়েদের মত মানুষ করে।আর বলে"আমার রামকৃষ্ণ, আমার হরি। কিন্তু ঠিক জানে এরা এর কেউ নয়।
তাঁর উপদেশ ঈশ্বরে ভক্তিলাভ না করলে যদি সংসার করতে যাও তাহলে কিন্তু আরো জড়িয়ে পড়বে।কেশবদের বলছেন--বন্ধন আর মুক্তি;দু'য়ের কর্তাই তিনি। তাঁর মায়াতেই সংসারী জীব, কামিনী কাঞ্চনের বদ্ধ, আবার তাঁর দয়া হলেই মুক্তি।"ভববন্ধনের বন্ধনহারিনী তারিনী"। যাদের ভক্তি কাঁচা,সে ঈশ্বরের কথা, উপদেশ, ধারনা করতে পারে না। পাকা ভক্তি হলে ধারনা করতে পারে।ফটোগ্রাফের কাঁচে যদি কালি মাখানো থাকে, তাহলো ছবিতে পড়ে রয়েছে যায়। কিন্তু কাঁচের উপর হাজার ছবি পড়ুক একটা ও থাকে না-একটু সরে গেলেই,যেমন কাঁচ তেমনি থাকবে।
ঈশ্বরের উপর ভালবাসা না থাকলে উপদেশ ধারনা হয় না।"
কল্পতরু দিবসে,যিনি রাম,তিনিই কৃষ্ণ,সেই রামকৃষ্ণ সবাইকে বলেছেন"তোমাদের চৈতন্য হোক"।যদি প্রশ্ন করা হয় ভগবানের আসন কোনটি? উওর ফটাফট, হৃদয়।
আবার বলছেন ভক্তের হৃদয় ভগবানের বৈঠকখানা। কিন্তু ভগবান কোথায়? ভগবান কে? সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় দিকনির্দেশনা করে লিখেছেন 'ভগবানের ঠিকানা আপাতত আমাদের জানা নেই। তবে হ্যাঁ,তিনি এসেছিলেন কামারপুকুরে। ঠিক যেভাবে পৃথিবীতে আসতে হয় তিনিও সেভাবেই এসেছিলেন এবং সে পথেই এসেছিলেন।
পরমহংস বিশ্ববাসীর ঠাকুর। তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেননি। এখনো করেন না।তাই তাঁকে বলা হয় বিশ্ব-বেপরোয়া।আরব সন্ন্যাসী বলেছেন"এটার আর ওপার,জীবন ও মৃত্যু একি স্বামীর দুই স্ত্রী।জীবনকে তুষ্ট করলে মৃত্যু অসন্তুষ্ট।দুটিকেই সমান খাতির করতে হবে।শিক্ষক রামকৃষ্ণ বলছেন: জীবনের মূল উদ্দেশ্য ঈশ্বর অনুভূতি।তবে কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ করতে হবে।ত্যাগ না করতে পারলে আমাদের মোহ হবে। এই জগৎ মায়ার। অবিদ্যা দূর করতে হবে।বিদ্যা আধ্যত্নভাব সৃষ্টি করে।জগৎকে সমৃদ্ধ করবে।জীবে দয়া হবে।স্নেহ, ভালবাসা,সততার সৃষ্টি হবে।
যতমত ততপথ র দিশারী শ্রীরামকৃষ্ণ। তিনি নিজেই খৃষ্টান, ইসলাম ধর্ম চর্চা করে ছিলেন।তাই তিনি বলেছেন যতমত ততপথ,যত্রজীব ত এ শিব।জীবে দয়া নয়,শিবজ্ঞানে জীব সেবা করতে হবে। ঈশ্বরের জন্য কাঁদতে হবে। তাহলেই ঈশ্বর তোমার ডাকে সাড়া দেবে।জীবনে ভয়ের শেষ নেই। প্রকৃতি এক ফুৎকারে হাজার হাজার লোকের জীবন দ্বীপ নিভিয়ে দিতে পারে।
টমাস আলভা কেম্পিস লিখেছেন
"The lord is my light and my
deliverence;whom have I to fear? Though a whole
host were arrayed
against me,my hear would be
undaunted."