ভাইরাস উলটপুরান চলতেই থাকবে? আনন্দের মধ্যে শংকা ত্রিপুরা জুড়ে
প্রদীপ চক্রবর্তী
যেখানে বাঙালি, সেখানেই ঢাকে কাঠি। ঢাক কুড়কুড় করে বোল উঠতে শুরু করেছে। চলছে সান দেয়া। আবার রং তুলিতে শিল্পী ফুটিয়ে তুলছেন দশভূজা। মন্ডপে মন্ডপে ব্যস্ততা। তবে এবার আর তেমন ব্যস্ততা নেই। অন্যদিকে রাজধানী মুখী গ্রামের লোকজনের। সবাই কিনতে চায়। সামর্থের মধ্যে কেনাকাটা। পূজো বলে কথা।নুতন জামা কাপড় শাড়ী আরো কত কিছু চাই। বলি চাইতে তো হবেই। বছরের এই ৪ দিনের মধ্যেই তো আনন্দ। কিন্তু এই আনন্দের মধ্যেই যে শঙ্কা। শঙ্কা ভাইরাস সংক্রমণের। গোটা বিশ্ব জুড়ে ভাইরাস সব কিছু উলট পালট করে দিয়েছে। আমাদের ছোট্ট রাজ্যেও তার ব্যতিক্রম নয়। সবাই দৌড়াচ্ছে করোনাতঙ্কে। কখন কাকে কিভাবে করোনা থাবা বসায় তার কোন গ্যারান্টি নেই। যদিও দাওয়াই সামাজিক দূরত্ব বজায়, মুখ আবরনী আর সেনিটাইজার ব্যবহার। এই সুযোগে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী দুহাতে মুনাফা লুটছে। লুটপাটের শেষ নেই,এ অনন্ত।
রাজ্য সরকার পূজার জন্য ইতিমধ্যে সতর্কতা জারী করেছে। নানা বিধি নিষেধ জারীর সাথে ব্যবস্হার কথা বলেছে। কিন্তু হলে কি হবে? এখনই যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে সামনের দিনগুলি ভয়ঙ্কর। মৃত্যুর গ্রাফ অনেক নীচে নেমে এসেছিল। কিন্তু শুক্রবার আবার বেড়ে চার হয়েছে।
বাজার, দোকান, রাস্তা লোকজনের গমগম করছে। মাক্স, সামাজিক দূরত্ব লাটে উঠেছে। যানবাহনে গাদাগাদি। তো সংক্রমণ তো হবেই। বলি সতর্কতা অবলম্বন করেই যেখানে করোনার সংক্রমন থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না সেখানে বিধিমালা না মানা তো হারিকিরি ডেকে আনার সামিল।
অথচ বিধিমালা সম্পর্কে রাজ্য সরকার নানাভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ফেষ্টুন,প্লেকার্ড টানিয়েছে। প্রচার চালানো হচ্ছে অবিরাম। কিন্তু এত কিছুর মাঝেই আশংকা মাথা চাড়া উঠেছে। অবাক কান্ড হল যে পথ চলতি মানুষজন নিজেরাই বলাবলি করছেন যে পূজার পর করোনা এ রাজ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকে আনবে।
নিজে মাক্স দেবেন না, সামাজিক দূরত্ব মানবেন না বা মানছেন না আবার নিজেই বলছেন নানা আশঙ্কার কথা। এ যেন এক অদ্ভূত রাজ্য। নিজেরা কিছুই মানছেন না আবার বড় বড় কথা বলছেন।
বলা হচ্ছে সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কা। যে আশঙ্কা করোনা সংক্রমনের। এই যে শুক্রবার সন্ধায় আগরতলা থেকে ধর্মনগর ডেমো ট্রেন গেল তাতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। যাত্রীরা সব গাদাগাদি করে গেছেন। সামাজিক দূরত্বের তো বালাই নেই, নেই থার্মাল চেকিং। যারাই ট্রেন দেখেছেন তারা তাজ্জব বনে গেছেন। সবার মুখেই এক কথা- করোনা সংক্রমণ আটকানো রাজ্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে শুক্রবার রাজধানীর শপিং মলে ক্রেতার ভীড় উপচে পড়েছে। যারা দেখেছেন তারা তাজ্জব বনে গেছেন। খোদ রাজধানীর বুকে একিভাবে হয়? কোথায় প্রশাসন,স্বাস্হ্য দপ্তর, পুলিশ। সব যেন একাকার। মফস্বল শহরের অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
এদিকে স্বাস্হ্য দপ্তরের খবর পশ্চিম জেলায় সংক্রমণ প্রায় এগারো হাজার জনের। সক্রিয় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তথ্য ব্যবস্হাপনা বলছে আগরতলা পুর নিগমের ১১টি ওয়ার্ডের সার্বিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কেননা এই জেলায় পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৩০% । ব্যবস্হাপনা বলছে অক্টোবর মাসে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারী তথ্যে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৩২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার ১.১১। পজিটিভিটি রেট ৬.৮৪%। তবে এখন হোম কোয়ারেনটাইনে রাখা হচ্ছে।সুস্হতার হার ৮৯.১৭%।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন শীতে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠছে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকেই ব্যবস্হা বা পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।