সাংবাদিকদের উপর এত আক্রমণ কেন ?
প্রদীপ চক্রবর্তী
দেশের এমন কোন আর রাজ্য আছে কিনা যেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পদে পদে কন্টকিত। রাজধানী সহ মফস্বল শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ হচ্ছে। দৈহিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শুধু কি তাই তাদের বাড়ীঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক আক্রমনে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রবীন, ভদ্র, শিক্ষিত যারা তাঁরা এঅবস্হা চলতে থাকলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ/সংশয় রয়েছে। কুমারঘাটে তপন বনিকের বাড়ীতে আক্রমন চালিয়ে ভাঙচুর করা হল। তার অসুস্থ পিতা মাতা আক্রমনে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ল।
তপন বনিক ভদ্র, শিক্ষিত, নম্র। সাংবাদিকতা পেশায়ও সিনিয়র। সে আদব কায়দা খুব ভালো করেই জানে। সম্ভবত তপন বনিক দূরদর্শনের সাথেও যুক্ত। ওর অন্যায়, অপরাধ কি তা আক্রমনকারীরা বলতে পারবে। কিন্তু আমরা যেটা বলতে পারি সেটা হল তপনের অপরাধ হল সে একটি নির্মিয়মান কাজ নিয়ে খোঁজ খবর করছিল।এটাই এদের আতে ঘা লাগে। বড় কিছু দূর্নীতি পাছে বেড়িয়ে পড়ে ভেবে বা আশঙ্কায় গেরুয়াধারীদের ক'জন আক্রমন চালিয়ে বসল।
অবাক কান্ড। একের পর এক সাংবাদিক আক্রমন হচ্ছে, পুলিশ নামকে ওয়াস্তে তদন্ত করছে। ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট। এরপর সব ফুসফাস। কোথায় আছি আমরা? কোথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী? কে সুনিশ্চিত করবে পত্রকারদের নিরাপত্তা? পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। যদি উদাসীন না হয়েই থাকে তাহলে কেন আজও আক্রমনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে না? বলছি আইনী ব্যবস্থার কথা।
সম্ভবত এই ধরনের দমনপীড়নের শুরুয়াত হয়েছিল রাজ্যের প্রথমসারির সংবাদ পত্র স্যন্দনে মধ্যরাতে পুলিশের তল্লাশি অভিযানের মধ্য দিয়ে। সেই যে শুরুয়াত হল এখনও তা অব্যাহত রয়েছে উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম ও উনকোটিতে। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা। ছুটে যাচ্ছেন এসেম্বলি অব জার্নালিস্টদের প্রতিনিধিদল। ওরা বৈঠক করছেন। সাংবাদিকদের অভয় দিচ্ছেন। নানাস্তরে ডেপুটেশান দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দেয়া হয়েছে। কি হবে তা বলা মুশকিল। কিন্তু ইতিহাস বলছে সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ, নির্যাতন করে কোন শাসক বেশী দিন ক্ষমতায় টিকতে পারেনি। এ রাজ্যের শাসক দল তো সম্ভবত সেই ইতিহাস মনে করতে পারছে না বা ইতিহাস থেকে পাঠ নিতে পারছেনা। ভবিষ্যতে পারবে কিনা তা বলবে সময়। অবশ্য বিপ্লব কুমার দেবের গদী টলমল বলেই সংবাদ।