রাম রাজত্বে্র অ আ ক খ ও সংবাদমাধ্যম পরিক্রমা
প্রদীপ চক্রবর্তী
ক্ষমতার অলিন্দে কানাকানি,ফিসফিস,গুঞ্জন সহসাই রাজ্যষ মন্ত্রীসভায় রদবদল হতে চলেছে। সেই রদবদলে বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজন যেমন বাদ পড়তে পারেন, তেমনই কয়েকজনের দপ্তর রদবদল হতে পারে। এই রদবদলের দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছেন। কেননা অনেকেই চাইছেন মন্ত্রী হতে। আবার একটি অংশ চুপ মেরে বসে আছেন। তাঁরা গতিবিধি তেমন পর্যবেক্ষণ করছেন তেমনি কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়তে পারে তার চুলচেরা অঙ্ক করছেন বলে খবর। এরই মধ্যে খবর হল শহরের দক্ষিণ অঞ্চলের এক প্রভাবশালী শাসক দলীয় বিধায়কের হোটেলে পরিবর্তন কামীরা দুদফায় বৈঠক করে নিয়েছেন। এদের দাবী একটাই মন্ত্রিসভা রদবদল করতেই হবে। এরা নাকি দিল্লীতে দাবী সনদ পাঠিয়ে দিয়েছেন। বলা হচ্ছে দিল্লী যাওয়ায় মুরোদ কারো হয়নি। পাছে যদি বিপ্লবের রোষ,কোপে পড়ে তাহলে ভবিষ্যতে চোখে ছানাবড়া দেখতে হবে। আবার কেউ কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। খবর রাখছেন রাতের অন্ধকারে কে বা কারা মুখ্যমন্ত্রীর আবাসে যাতায়াত করেন।
সবচেয়ে অবাক লাগার ঘটনা এই ১৭ জন নাকি আবার একে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।পারিপার্শিক তথ্যা বলছে যে পরিষদীয় নেতা পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। কেননা রাজ্যে বিজেপি আইপিএফটি সরকার আনার ক্ষেত্রে বিপ্লব দেবের যেমন অসামান্য ভূমিকা রয়েছে তেমনি ভূমিকা রয়েছে সুনীল দেওধরের। তবে বিপ্লব দেব রাম রাজত্বের জন্যক দিনরাত এক করে দিয়েছেন। বিপ্লব দেবের অবদান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একবাক্যেন স্বীকার করেন।
তদোপরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আস্থাভাজন বিপ্লব দেব। পারিপার্শিক তথ্য অনুযায়ী বিপ্লব দেবের সার্বিক কাজকর্মে খোদ প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে কয়েক দফা অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।খবর হল,এই সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন এরা দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড।অর্থাৎ তাদের কাছে এই সব অভিযোগের কোন সারবত্তা নেই। অভিযোগের মধ্যে মুখ্যছ অভিযোগ হল মুখ্যসমন্ত্রী নিজের কাছে ২৭ টি দপ্তর রেখে দিয়েছেন। এরফলে প্রতিটি দপ্তরের কাজকর্ম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে। বহু গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী ফাইল অনুমোদনের অপেক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে পড়ে পড়ে থাকছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করে থাকেন। জরুরী ফাইলে চোখ বুলিয়ে অনুমোদন দিয়ে থাকেন। সরকারী কাজ ব্যাহত হচ্ছে একথা মানতেই রাজি নন মুখ্যমন্ত্রীর অফিস। তবে এটা ঘটনা বিপ্লব বাবু রাত জেগে কাজ করে থাকেন। বাসভবন সূত্রের খবর তিনটের আগে তাঁর বিছানায় যাওয়া সম্ভব হয়না। দিনভর সরকারী ও দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হয় উনাকে। নিন্দুকেরা বলে থাকেন যার হাতে ২৭ দপ্তর, তাঁর পক্ষে নিত্যদিন প্রতি দপ্তরের ফাইল দেখা অসম্ভব।বিক্ষুব্ধদের পক্ষে বলা হয়ে থাকে তাদের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ফোনেও কথা বলা যায় না গুরুতর অভিযোগ। এটা বাস্তব হলে তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। দলীয় বিধায়কদের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা বা কথা বলতে কাঠখড় পোড়াতে হলে তো উদ্বেগের বিষয়।
প্রকাশ,মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। সেখানে আমলাদের তর্জন গর্জন বরাবর চলে। গত দুইবছরে তার সচিবালয়ে একশ্রেণীর পত্রকারদের পূনর্বাসন যেমন দেয়া হয়েছে তেমনি রিডার থেকে পত্রকারদের স্ত্রী, পুত্র,কন্যা,ছেলে,আত্মজনদের পাইকারি হারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাউকে সিএম প্রেসসেল,কাউকে আইটি সেলে বসানো হয়েছে। তদোপরি মিশ্রবাবু, সমুদ্র আছেই। বসার জায়গা নেই। ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। এরা কি করছে তা বিপ্লব বাবুই বলতে পারবেন। অন্যদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে একথা বলা সম্ভব যে সঞ্জয়ের ঠেলায় নাকি কম্পমান অবস্থা সাংবাদিকদের। তখন নাকি হয়ে যায় রবীন্দ্র ভবনের মোড়ে আড্ডামারা পত্রকারদের একটি অংশ। এদের আড্ডার প্রখরতা এত বেশী যে তা,মোমো দোকানীর জান কয়লা হয়ে যায়। এছাড়া দলে পাঁচ,পনেরোতে দশ তো আছেই। একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে? না অস্বীকার করতেই পারবে না।
এবার আসছি গনতন্ত্র, সংবাদপত্র ও তার অধিকার নিয়ে। চতুর্থ স্তম্ভের অধিকার এক্ষনে এরাজ্যে অনেকটা খর্ব। একের পর এক কোপ। প্রথমেই বলে দেয়া হয়েছে পুলিশ সুপার,জেলা শাসক ছাড়া কেউ মুখ খুলতে পারবেন না সাংবাদিকদের কাছে। বলি তাহলে সামান্য একটি ঘটনার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা যে কত দূরহ তা সাংবাদিকরা বলতে পারেন। এসপি, ডিএম নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন এরা কি ভাবে সাংবাদিকদের ফোন এটেন করবে? এই সার্কুলারে সাংবাদিকদের সংবাদসূত্র স্তব্দ হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এর পর বন্ধ করে দেয়া হল স্হানীয় সংবাদ পত্র সরকারী উদ্যোগ ক্রয়। প্রতিবাদ বিফলে গেছে। এবার সাব্রুম প্রসঙ্গ। এসেম্বলি অব জার্নালিস্টদের বক্তব্য সেখানে সরকারী এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি দিয়েছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এটা অস্বীকার করেছেন। অনুগত চ্যানেল গলা মিলালো।কিন্তু বাস্তবতা তো অস্বীকার করা যায় না। এসেম্বলি অব জার্নালিস্ট এর কাছে বক্তব্যের অডিও ভিজ্যুয়াল টেপ রয়েছে। এসেম্বলি অব জার্নালিস্ট গতকাল এসব অভিযোগ বা বক্তব্য দিল্লী দরবারে পেশ করেছে। জানানো হয়েছে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে। এসেম্বলি অব জার্নালিস্ট মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ফল কি হবে তাতো ভবিষ্যৎ বলবে। আপাতত বলা সম্ভব নয়।
এই যখন ঘটনাপ্রবাহ তখন অন্যদিকে আক্রমন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। এদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আগামীদিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন এক মহাচ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।কথা হল সংবাদপত্র তাঁর দায়িত্ব পালন করছে,সমস্যার পাশাপাশি দূর্নীতি তুলে ধরা হচ্ছে। এতে তো সরকারেরই লাভবান হওয়ার কথা। দূর্বল ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সরকার ব্যবস্হা নিতে পারে। কিন্তু না, তা করছে না। উল্টো আক্রান্ত হচ্ছে সংবাদপত্র, সাংবাদিক। সাংবাদিক বান্ধব মুখ্যমন্ত্রী বলে কোন একসময় পরিচিত বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বাধীন সরকার এখন যে ভাবে সার্বিক ভূমিকায় এতে তো তাঁরই জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইতিহাস ভূলে গেলে তো চলবেনা। ১৯৭৫ এ জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছিল,সেনসারসীপ আরোপ করা হয়েছিল। এরাজ্যের সংবাদপত্র জগতের ভীষ্ম ভূপেন দত্ত ভৌমিককে সুদূর ভেলোর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছিল। দীর্ঘ দিন আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী দেশবাসীর অসন্তোষ আঁচ করতে পেরে ভোটে গেলেন, দেশবাসী ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন ইন্দিরাকে। কারাগারে থাকা সাংবাদিকরা মুক্তি পেলেন। দেশবাসী ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসকে। বেশীদিন অটোক্রাটিক শাসন ব্যবস্থা টেকে না, বিশেষ করে এই ভারতবর্ষে।সংবাদপত্রের উপর আক্রমণ তখনই হয় যখন শাসক বেপরোয়া হয়ে উঠে। পারিপার্শ্বিক প্রবাহ বলছে একশ্রেণীর পরামর্শ প্রদানকারীদের ভ্রান্ত পরামর্শে বিপ্লব কুমার দেব সরকার ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হচ্ছেন। সংবাদপত্রকে শত্রুপক্ষের মত বিবেচনা করতে শুরু করেছে।
তবে হ্যাঁ, বিপ্লব কুমার দেব বুঝতে শুরু করেছেন ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করা হচ্ছে তাঁকে। তাই গতকাল তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে বেকার ঠিকেদার,স্হানীয় ঠিকেদার হালে পানি পাচ্ছেন।মুখ্যমন্ত্রী কে বুঝতে হবে সংবাদপত্রের কাজ বগলবাজানো নয়, এদের কাজ ভুলত্রুটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। সেগুলোকেই সংশোধন করে সরকার এগিয়ে যাবে।