এখনই স্কুল চালু কি এতটাই জরুরী ছিল?
প্রদীপ চক্রবর্তী
অভাবিত বিরোধীতার মধ্য দিয়েই শিক্ষামন্ত্রী গত 5 অক্টোবর থেকে ফের চালু করে দিলেন স্কুল। এর আগে গাছের নিচে, ডালে, খেতের আলে বসা খেতাবী ক্লাস চালু করা হয়েছিল।যাকে বলা হয়ে থাকে নেইবারহুড ক্লাস। বিশ্বে নজীরবিহীন গাছের নিচে, ডালে, খেতের আলে বসে শিক্ষা দানের পদ্ধতির জনক, অস্বাভাবিক কর্ম তৎপর বলে পরিচিত রতন বাবু কিন্তু কাউকে কোন আমল না দিয়েই স্কুল চালু করলেন যেভাবে এর আগে নেইবারহুড ক্লাস চালু করেছিলেন।পড়ুয়াদের স্বাস্হ্য নিরাপত্তা দেখা হয়নি। মানা হয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন বা নীতি নির্দেশিকা।ছোট ছোট পড়ুয়াদের স্বাস্হ্য ভবিষ্যৎকে জলান্জলি দেয়া হয়েছে। যেখানে গোটা বিশ্ব অতিমারী করোনায় কম্পমান, নিত্যদিন করোনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে হাজার হাজার প্রান, সেখানে কিভাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হল । অথচ এই শিশুরাই কিন্তু আগামী ভারতের ভবিষ্যৎ। এরা সুস্থ থাকলেই দেশ থাকবে, দেশ সঠিক দিশায় চলবে।
এমনিতেই আমাদের রাজ্যে করোনা চিকিৎসা লটরবটর। সর্বত্র এনিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শুধু চিকিৎসা ও ব্যবস্হাজনিত ত্রুটির কারণে বহু প্রান চলে গেছে।কেন্দ্রিয় বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট -এর ফলে চিকিৎসা ব্যবস্হা আপাতত অপেক্ষাকৃত বিজ্ঞানসম্মত হয়েছে। মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এই হার যে রকেট গতিতে বাড়বে না তার কোন গ্যারান্টি নেই। এরমধ্যেই বেশকজন ফ্যাকাল্টিকে এজিএমসি বা জিবি থেকে বদলী করে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ এরাই চিকিৎসার দিকটা দেখভাল করতেন।এরাই কোনভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন করোনা রোগীদের চিকিৎসা। তাঁদের অভিজ্ঞতায় এখনো অনেক করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন।
এই অবস্থায় মফস্বল থেকে বদলী করে আনা চিকিৎসক দিয়ে কোভিড সেন্টার ম্যানেজ করা হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এতে তো করোনা গ্রাফ বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।5 অক্টোবর থেকে শিক্ষা দানের যে দ্বিতীয় প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মূহূর্তে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই পারে। এক্ষেত্রে তো কচিকাঁচারা যেমন বিপন্ন হবে, বিপন্ন হবে তাদের টিকে থাকা, অভিভাবকরা পড়বেন অর্থনৈতিক সংকটে। এক্ষেত্রে কি শিক্ষামন্ত্রীর কোন দায় থাকবে? এই প্রতিবেদক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলে দিতে পারে দপ্তর কোন দায়ভার নেবেইনা। এরা তো পড়ুয়াদে্র দিয়ে সাদা কাগজে অভিভাবকদের স্বাক্ষর আদায় করে এনেছেন। অর্থাৎ বল এখন রতন বাবুর কোর্টে। কোন পড়ুয়া সংক্রামিত হলে তার দায় ভার বর্তাবে অভিভাবকদের উপর।
অন্যদিকে ফরমান জারি করে শিক্ষক শিক্ষিকাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। করোনা আবহেই তাদের বাসে, অটোতে, টমটমে চেপে যেতে হয়েছে স্কুলে। তাদের স্বাস্হ্য নিরাপত্তা নিয়ে নূন্যতম চিন্তা নেই দপ্তরের। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের। বেচারা শিক্ষক শিক্ষিকা। এরা চাকরী করেন। হুমকি দেয়া হয়েছে স্কুলে না গেলে বেতন কেটে দেয়া হবে, কোন ছুটি নেয়া যাবে না। খবর হল স্কুল কর্তৃপক্ষদের বলে দেয়া হয়েছে তাঁরা যেন কারো কোন আবেদন পত্র গ্রহণ না করেন।
অমানবিক ব্যাপার হল ৩/৪ মাস বাদে অবসরে যাবেন এমন শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি বেশী চাপ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী হয়তো অনেক কিছু জানেন কিন্তু আবার অনেক কিছু জানেন না বলে আইনী বিশেষজ্ঞরা বলেন।আরে অবসরে যাওয়ার অন্তত দু'বছর আগে সংশ্লিষ্টকে হোম ফ্যাসেলিটি দিতে হয়। কিন্তু রাম রাজত্বে সব গোল্লায় গেছে।হোম ফ্যাসেলিটি দূরের কথা বরং অনেকেই দূরে বদলী করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ও সংবাদ।
উল্লেখ্য গাছের নিচে ডালে খেতের মাঝে বসে তথাকথিত নেইবারহুড ক্লাস কিন্তু রতনবাবু ইতিপূর্বে চালু করেছিলেন কিন্তু প্রবল চাপ, বিরোধীতায় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে পিছুটান দিতে হয়।এবার শিক্ষামন্ত্রী রতনবাবু কি করতে পারেন এখন তাই দেখার বিষয়।প্রশ্ন হল সারা দেশে যেখানে ৩১ শে অক্টোবর পর্যন্ত স্কুল কলেজ বন্ধ সেখানে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে যেখানে রতনবাবুকে গাছের ডালে ,নীচে, খেতের আইলে বসে শিক্ষা দান চালু করতে হল।খবর হল মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নাকি এখন বুহ্য চাপে রয়েছেন । সেখানে তাঁকে আবার এই ধরনের নুতন চাপে ফেলার কি অর্থ থাকতে পারে? তবে খবরে প্রকাশ রতনবাবুকে এখন বিপ্লব দেব আগের মত আমল দেন না। এড়িয়ে চলছেন। পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ বা ব্যবস্হাপনা এমনই বলছে। ক্ষমতার অলিন্দে কানাকানি ফিসফিস গুন্জন চলছে হয়ত নিকট ভবিষ্যতে অনেকেরই ডাল পালা কাটা হতে পারে।