বলছিলাম সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের উপর এত আক্রমন কেন?
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাংবাদিকদের দমন পীড়ন, পেটানো এই রাজ্যে এখন প্রায় রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনা প্রবাহের সাথে প্রশাসনিক ভাবেও সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের উপর নানাভাবে আক্রমন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এসবের নিন্দা ও বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে একগোষ্ঠী। সেখানেও আবার আভ্যন্তরীন দ্বন্ধ।
বলছিলাম এত আক্রমন কেন? এক হাতে তো আর তালি বাজে না। যারা বিভিন্ন স্হানীয় চ্যানেলে যুক্ত তাদের একটা অংশের বিরুদ্ধে নানা স্তরেই অভিযোগ রয়েছে। এই সব অভিযোগ সদরে করলেও কোন ব্যবস্হা নেয়া হয়না বলে প্রকাশ। মহকুমা স্তরে কর্মরত সরকারী আধিকারিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা যা বলেন শুনলে ভিমড়ী খাওয়ার অবস্থা। তবে মফস্বল প্রতিনিধিদের বড় অংশের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা নেই বলা চলে। অন্তত সাধারণ লোকজন তাই বলেন। অথচ সাংবাদিকতা একটি সন্মানজনক পেশা। কিন্তু এখন সেই পেশা বিশেষ করে যারা প্রিন্ট মিডিয়াতে মফস্বল শহরে কাজ করেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কিছু অসাধু তথাকথিতদের কারনে তাদের সন্মান ধরে রাখাই কষ্টকর।
এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারনে নিজ নিজ এলাকার স্বচিত্র সংবাদ ওই এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পারছেন। আর সংবাদপত্রের তো এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। এক কথায় বলতে গেলে ইদূর দৌড় প্রতিযোগিতার যুগে কে কার আগে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। তবে নিউজ পোর্টাল গুলি এগিয়ে যাচ্ছে সর্বশেষ সংবাদ, ছবি ও ভিডিও নিয়ে। কিন্তু এই সব পোর্টাল-এর বিজ্ঞাপন বরাত মন্দ। তাদের বিজ্ঞাপন আগের চাইতে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন কমিয়ে দেয়া হয়েছে তা সরকারই বলতে পারবে। তবে এটা ঠিক রাজ্যের খবরাখবর ইংরেজি, বাংলায় এরা পৌঁছে দিচ্ছে। সেই সাথে বিশ্লেষন মূলক নিবন্ধ দুই ভাষায় ত্রিপুরাইনফো আপ করে চলেছে।
এটা বুঝতে হবে যে সাংবাদিকতা এত সহজ নয়। এর অ,আ,ক,খ আগে জানতে হবে, পরে নিতে হবে পাঠ। যদিও সেই সব দিন এখন আর নেই। এ রাজ্যে সাংবাদিকতা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এখন একটি স্মার্ট ফোন থাকলেই যথেষ্ট। এখন তো লোকাল ক্যাবল চ্যানেলের প্রতিনিধি হলে কথাই নেই। বেশী লেখাপড়ার দরকার নেই, ভিডিও তুলে পাঠিয়ে দাও। ব্যস হয়ে গেল। এবার যা করার অফিস করবে। আপনি এবার কলার তুলে বাইক নিয়ে ছুটুন। যাওয়া আসার পথে যা জুটে জুটুক। ভালই তো। পার্সের ভেতর তো গান্ধী বেশ কজন ঢুকে যাবে। সান্ধ্য আয়োজন তো আছেই। সবাই বলেন এসব কথা। এটা ওপেন সিক্রেট। অর্থাৎ সবাই জানে। এভাবেই চলে পেশা?
গত বিধানসভা ভোটের আগে যাঁরা দিল্লী গিয়েছিলেন তাঁরা তো এখন দ্বিধা বিভক্ত। এক পক্ষ সরকারের সাফাই গাইছে, অন্যপক্ষ সরকারকে বিঁধছে। কিন্তু প্রশ্ন দুই সাংবাদিক হত্যাকান্ডে সিবিআই-র তৎপরতা কচ্ছপের মত কেন হয়ে গেল? সাংবাদিক কূলের এক পক্ষ এ ব্যপারে মুখ্যমন্ত্রীর তদ্বির সক্রিয়তা চাইছে। এটাই তো প্রত্যাশিত। তৎপরতা বৃদ্ধির জন্যে যেমন প্রভাবশালী পক্ষ বস্তুত চুপ মেরে আছে। কেন তাদের এই ধরনের অবাক করা নিস্ক্রিয়তা? এই প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক নয়। তবে যেহেতু বিষয়টি সিবিআই-র কাছে তাই এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ ঠিক নয়।
অন্য প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে সম্প্রতি ফেসবুকে লাইভ করার পরপর আমবাসার জনৈক পত্রকারকে দৈহিক নির্যাতন করা হয়েছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বিলোনিয়া জেলায় দুই সাংবাদিককে নিগ্রহ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সংগঠন এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রশ্ন হল আইন আছে, আছে আদালত। তারপর কেন দৈহিক আক্রমন? কেন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হচ্ছে? আক্রমনকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? এদের পরিচয় তো সবাই জানে। এরা গৈরিক হওয়ায় কি আইন প্রয়োগ হবে না?