আঠারমুড়ায় স্তব্দ জীবনের জয়গান। উন্নয়নের অর্থে হরির লুঠ, প্রশাসন নির্বিকার

প্রদীপ চক্রবর্তী

৩০ বছর আগে যেমন ছিলো এখনো ঠিক তেমনি আছে। বরং এখন আরো বেশি উদ্বেগজনক। এদের একটি বড় অংশ এখনো লাকড়ি বিক্রি করে পেটের ভাত জুগায়।পানীয় জল সংকট বরং অধিকতর তীব্র। স্বাস্হ্য পরিষেবা লাটে। পঠন পাঠন গোল্লায়। বরাদ্দ অর্থ অন্যদের পেটে। অন্যবলতে পাঞ্জাধারী রাঘববোয়ালের পেটে। এমনকি করোনার জন্য বরাদ্দ চাল, অর্থ ও গেরুয়াবাবুরা গায়েব করে দিয়েছে। উন্নয়নের অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে এরা আর আগরতলা, তেলিয়ামুড়ায় ইমারত গড়ছে। বিলাসবহুল গাড়ি তো একটা কিনে তো আরেকটা কিনে ছেড়ে দেয়।

বলছিলাম আঠারমুড়া, পাদদেশের জনজাতি অধূ্ষিত অঞ্চলের জনজাতিয়দের জীবন যন্ত্রনার কথা। শুনলে অবাক হয়ে যাবেন অনেক গ্রাম,পাড়া চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। এই সব পাড়া, গ্রাম এখন খুঁজেও পাওয়া যায় না। সেই ১৯৯০/১৯৯১ সালে দিনরাত সফর করেছি আঠারমুড়ার বিস্তীর্ণ উপজাতি মহল্লায়। তখন অভাব অনটন ছিল তীব্র।২/৩ দিনে কারো পেটে খাবার জুটত না। বিয়ন্তীরা ক্ষুধার যন্ত্রনায় মা-র শুকিয়ে যাওয়া স্তন চুষত। শুকিয়ে যাওয়া স্তনে দুধ না পেয়ে সদ্যজাত শিশু স্তন চাটত। এগুলি তো নিত্যদিন দেখেছি। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা। সাথে ছিলেন শব্দকুমার জমাতিয়া। তদানীন্তন যুব সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক। অত্যন্ত জাঁদরেল নেতা। জনজাতিয়দের জন্য অন্তহীন প্রান। গ্রাম থেকে পঞ্চায়েত, ব্লক, এসডিএম, ডিএম অফিসে জনজাতিয়দের জন্য কড়া নাড়তেন। এর তদ্বির তদারকীতে বুভুক্ষুদের পেটে অল্পবিস্তর খাবার জুটত। অন্তত তখন।

সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম আঠারমুড়ায়। বিবেকের টানেই অল্পবিস্তর টিলাটঙ্কর ভেঙেছি। ভেবেছিলাম সেই ক্ষুৎকাতর জনজাতিদের হয়ত এখন দেখব না। এখনতো নিশ্চিত ভাবেই এদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। এরা হয়তো এখন অটো, টমটমে চলাচল করেন। পোড়াকপাল,অটো ,টমটম চলবে কি, রাস্তাই যে নেই। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে করা লিংক রোড বেলিংন্ক হয়ে আছে। হেঁটে চলাচল করাই দূস্কর। গিয়েছিলাম রাইহামসা, বিলাইহাম, বিলাধন, বিলাইকামী, চৌরতন, বাহুরাম, নবজয় রিয়াং পাড়া। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তুইথামপুই, কৃষ্ণ মনি রিয়াং পাড়ার খোঁজ নিয়েছি।

প্রথমেই হোঁচট খেতে হয়েছে মুঙ্গিয়াবাড়ী গিয়ে। বাজারে বনের সবজি, ফসল নিয়ে বসে আছেন জনজাতিয়রা। লাকড়ি নিয়ে বসে আছে খদ্দেরের আসায় অন্তত ৭০/৭৫ জন। হ্যাঁ, এঁরা কোনভাবে কাপড় পেঁচিয়ে আছে। নানা কথার ফাঁকে এঁরা জানাল কাঠ বিক্রি করে এদের জীবন চালাতে হয়। খদ্দের পাওয়াই যায়না। সাতসকালে পাহাড়ে ছুটে যায় এঁরা। বনের ডালপালা কুড়িয়ে বাজার চলে আসেন। বিক্রি হলে কপাল ভাল, না হলে তো সর্বনাশ। ঘরে যে ছেলেমেয়েরা বসে আছে। চাল পেলে ভাত জুটবে,অন্যথায় কাঁদতে কাঁদতে নিদ্রাদেবীর কোলে আশ্রয় নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

এই যে ছবি এটা কিন্তু ১৯৯০-র জোট সরকারের আমলের নয়, এই ছবি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব,মেবার জমাতিয়াদের আমলের। সবই দেখা, শোনা নয়। ১৯৯০ এ ছিল মুখ্যমন্ত্রী সুধীর রঞ্জন মজুমদার আর এখন তো বিপ্লব কুমার দেব। ১৯৯০ এ কংগ্রেস-যুব সমিতি জোট সরকার এখন মানে ৩০ বছর বাদে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার।

৩০ বছরে আঠারমুড়া ও সন্নিহিত অঞ্চলের পরিস্হিতির বিশেষ করে জনজাতিয়দের আর্থ সামাজিক বিকাশ ঘটেনি। বরং পরিস্হিতির অবনতি হয়েছে। স্হানীয়রাই জানালেন উন্নয়ন শিকেয় উঠেছে।উন্নয়নের নামে চলছে পকেট ভারীর যজ্ঞ। পানীয় জলের জন্য কদিন আগে হাজরায় রিগ নিয়ে খনন চালানো হয়। কিন্তু জলের স্তর পাওয়া যায়নি। এখন বিকল্প স্হানে চেষ্টা চলছে।

এদিকে বিধায়ক অতুল দেববর্মার বাড়ী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় চার কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল। সড়ক হয়েছে নামমাত্র কিন্তু অধিকাংশ অর্থ নেপোদের পেটে গেছে। এটা সবাই জানে। লোকজন বলাবলি করেন মুঙ্গিয়াকামী ব্লকের ভাড়ারে কামড় বসিয়েছে জনৈক অপু ঘোষ। আগে সিপিএম এখন কট্টর বিজেপি। তাঁর হুমকিতে ব্লক, এসডিএম নাকি থড়থড়িয়ে কাঁপে।

আঠারমুড়ার জীবনযন্ত্রনা এখন করোনা অতিমারী পেছনে ফেলে বেঁচে থাকার আর্তনাদ উঠেছে।অভিযোগ, প্রশাসন এখন ঠুঁটো জগন্নাথ। এরা সব জেনেও না জানার ভান করে আছেন। বিজেপি আইপিএফটি সংঘাতে প্রশাসন মুখ থুবড়ে পড়ছে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.