করোনা ছাড়াই জীবনের ছন্দপতন/ অনিশ্চয়তার কালো মেঘের ছায়া
প্রদীপ চক্রবর্তী
লকডাইন,নৈশ আইন জনিত কারণে অধিকাংশ লোকজন প্রায় গৃহবন্দী। যদিও একটি অংশ আরোপিত বিধি অমান্য করে বেপরোয়া ভাবে ঘোরাফেরা করছে। তাদের সামাল দিতে কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে।
করোনার চেইন ভাঙতে অথবা রুখতে প্রশাসনের বড় হাতিয়ার লকডাউন। এরাজ্যেও দীর্ঘ লকডাউন হয়েছে। দফায় দফায় লকডাউন এরপরে নৈশ আইন। তা এখনও বলবৎ রয়েই গেছে। সম্ভবত আগামীদিনে তা অব্যাহত থাকবে। তবে এই নৈশ আইন বলবৎ থাকলেও বাইক চলাচল বন্ধ হয়নি। বন্ধ হবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কেননা পুলিশ আটকালেও মাফলার ধারীরা নিজেদের গেরুয়া নেতা বলে পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এটা নিত্যদিনের কথা।
কিন্তু মুশকিল হয়েছে অন্যত্র। করোনা ছাড়াই অন্যান্য রোগ বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন ডায়াবেটিক রোগীরা। এদের সবচেয়ে বড় দাওয়াই দুবেলাই হাঁটা। কিন্তু এখন তাঁরা হাঁটতেই পারছেন না। যাদের বয়স ৬০ র বেশি , তাঁরা হাঁটতেই গেলে পুলিশ বলে দিচ্ছে না বেরুনোর জন্য। ভাল পরামর্শ। কিন্তু এতে তো সুগার লেবেল বেড়ে যাচ্ছে। সুগার লেবেল বেড়ে যাওয়াতো বিপজ্জনক। কেননা সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে চোখের দৃষ্টি কমে আসছে। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী সুগার বেড়ে যাওয়ায় অর্থ কিডনির ক্ষতি।এমন ক্ষতি যে অতিরিক্ত সুগার কিডনি ডেমেজ করে দেয়।
চিকিৎসকতো দূর্লভ। এদের ফোন করলে দাওয়াই দিচ্ছে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।সেই সাথে বলছে ৩/৪ বার ইনসুলিন নিতে।অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। বিকল্প নেই। অন্যদিকে ইনসুলিন ও পাওয়া যাচ্ছে না ৪/৫ ফার্মেসী ঘুরে ইনসুলিন সংগ্রহ করতে হয়।
করোনার আগে আইজিএম থেকে ব্যবস্হাপত্র দেখালে বিনা পয়সায় ইনসুলিন দেয়া হত। কিন্তু ২/৩ মাস হল তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মরার উপর খাড়ার ঘা। যেখানে লক্ষ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করছে সেখানে কেন এই পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হল তার কোন জবাব নেই।
এমনিতেই হাসপাতালে এখন লোকজন কম যেতে চান। মূলতঃ করোনা এবং অব্যবস্হা জনিত কারনেই লোকজন হাসপাতাল এড়িয়ে চলেন। একান্ত যাদের বিকল্প নেই তাদের তো যেতেই হয়। সুগারের ফলে যেমন দৃষ্টি শক্তি কমিয়ে দেয়,কিডনির ক্ষতিও করে। হাসপাতাল গুলিতে অন্য রোগের চিকিৎসা তো এখন হয়না।যদিও ফলাও করে বলে দেয়া হয়েছে ক্যান্সার বিল্ডিং এ যাওয়ার জন্য।যারা গিয়েছেন তারা বুঝেছেন চিকিৎসা কাকে বলে।কাউন্টার ফাঁকা। চিকিৎসক নেই।এখন নয় তখন বলে রোগীদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এটা বলা হচ্ছে রাজধানীর এজিএমসি র কথা।আইজিএম এ তো চিকিৎসা পরিষেবা গোল্লায় উঠার উপক্রম। অথচ আইজিএম রাজধানীর প্রানকেন্দ্রে।
অন্যদিকে করোনার বিধিনিষেধের কারনে বিশেষ করে মাক্স বেঁধে রাখায় হার্টের সমস্যা বাড়ছে। হার্টের চিকিৎসা যারা করেন তাঁদের চেম্বারে ঠাসা ভীড়।এই যেমন কার্ডিও কেয়ার। ওখানে তো ২০/২৮ দিনের মধ্যে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ নেই।৩০০/ দিয়ে নাম বুক করলে পরে ২৮/৩০ দিন বাদে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পাবেন। অন্য যে কজন আছেন তাদের বেলায় ও একই অবস্থা।মুকুট রায়,ডায়াবেটলজিষ্ট ।উনার কাছে যাওয়া মানে ৪৫/৬০ দিন বাদে এপয়েন্টমেন্ট মিলবে।
তো যাবেন কোথায়,কাকে দেখাবেন?
করোনায় তো দিশেহারা মানুষ। এমনিতেই নেই বেঁচে থাকার নূন্যতম গ্যারান্টি।তাদোপরি চিকিৎসকরা যেন আকাশের চাঁদ।
বলি যাবেন কোথায়? একটিই জায়গা আছে আর তা -সিড়ি।