ধর্ষকের সাথে বিয়ে। শাস্তির বদলে এ ব্যাবস্থা কেন?
নন্দিতা দত্ত
আজকাল এমন ভাবে ধর্ষনকে আইনের হাত এড়াতে এমন ঘটনা র কথা শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা আইন না বুঝেই অনেক কথা বলি। আবার আইন নয়, কিছু পরিস্থিতি ধর্ষিতার সাথে ধর্ষকের বিয়েটা ঘটিয়ে থাকেন সমাজ মেয়েটি নিরাপত্তার কথা ভেবে।
রমাপ্রসাদ বণিকের সহবাস নাটক কে নতুন মোড়কে প্রশ্ন নাম দিয়ে রাঙ্গামাটি নাট্যক্ষেত্রের অভিনীত নাটক টি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছে ২০১৬ সালে উদয়পুরে। সারা ভারত বর্ষের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনীত নাটক টি উচ্চ প্রসংশিত। এবার নিয়ে (১৫ই নভেম্বর ) তিন বার মঞ্চস্থ হল। কি আছে এই নাটকে? আছে এমন প্রশ্ন যা আমাদের নাড়িয়ে দেয়, এবং আরেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
নাটকের ঘটনা হল-যামিনী এক অনাথ মেয়ে। মামাবাড়িতে থাকে। অন্যদিকে মধু ও অনাথ।কেউ কাউকে দেখেনি, চেনেনা। গ্রামে যাত্রা হবে যামিনী র মামা মামী যাত্রা দেখতে যাওয়ার সময় যামিনী কে বলে যায় ফিরতে দেরি হবে। যামিনী কোন দিন যাত্রা দেখেনি। তাই তার বন্ধুকে আগেই বলে রেখেছে মামা মামী যাত্রা দেখতে যাওয়ার পরে ওরা ও যাবে। আবার ফিরে আসবে ওদের ফেরার আগেই।
হাসপাতালে পরোপকারী মধু একটা মেয়েকে কোলে করে নিয়ে আসে, ডাক্তার দেরি করলে ঝামেলা করতে যায়। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে যামিনী র জ্ঞান ফিরলে মধুর কথা জানে।কয়েকদিনের মধ্যে মধুর সাথে ভালো সম্পর্ক হয়। কিন্তু সে শুধু মধুর কথা গলার স্বরে মধুকে চিনতে পারে। একদিন হটাৎ মধুর হাতের ছোঁয়া লাগতে চিতকার করে উঠে।
মধু যামিনী কে বিয়ে করতে চাইলে যামিনী রাজি হয়। বিয়ের পর অন্য জায়গায় এসে ঘর বাঁধে।
কিন্তু সারাদিন যত ভালো সম্পর্ক ই হোক মধু স্ত্রীকে কাছে টানতে পারেনা। মধু কিছুতেই বুঝতে পারেনা কেন যামিনী এমন করে। অন্ধ যামিনী মধুর ছোঁয়ায় চিতকার করে। এর মধ্যে গোবিন্দ দারোগা তদন্ত গুটিয়ে আনে। বুঝতে পারে মধুই যামিনী কে সেই রাতে নেশার ঘোরে ধর্ষণ করেছিল।
এরমধ্যে একদিন রাতে যামিনী র আস্বাভাবিক আচরন মধুর মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সেদিন আবার ও মধু নেশা করে অনেক কথা বলে ফেলে। বুঝতে পারেনা যামিনী শুনে ফেলেছে।
দ্বন্দ্ব এখান থেকে শুরু এবং প্রশ্ন ও। যামিনী কি করবে? টান টান হয়ে দর্শক অপেক্ষা করেন যামিনী র সিধান্তের।
অন্ধ যামিনী যতক্ষন মধুর স্পর্শ না পায় বোঝেনা, কিন্তু মধুর ছোঁয়ায় তার মধ্যে ভয় আঁকড়ে ধরে।
একটি মেয়ে তার কেউ নেই সে অন্ধ মধু ই নিরাপদ এবং স্বামীও। ক্ষনিকের ভুলে যে অন্যায় অত্যাচার মধু যামিনী র উপর করেছিল তার প্রায়শ্চিত্ত করতে যামিনী কে বিয়ে করেনি কি করেছে বোঝা না গেলেও সে যামিনীকে ভালোবাসে এটা সত্য।
আমাদের দেশে ধর্ষিতার সাথে ধর্ষকের বিয়ে দিয়ে সমস্যা র সমাধানের চেষ্টা করা হয়।আদতে কি একটি মেয়ে ধর্ষককে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারে? পারেনা শুধু থেকে যায় নিরাপত্তা এবং দিন গুজরানের জন্য।
মনোজগতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে তা কোনভাবেই মিটে যায়না। ক্রমশ মেয়েটি আর এক দ্বীপে নির্বাসিত করে নেয় নিজেকে। যেখান থেকে সে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসতে পারেনা চায়না। স্বেচ্ছায় সহবাস না হলে তা ধর্ষণ। কিন্ত যে মেয়ে পেটে ভাত পরনের কাপড় আর মাথা গুজবার ঠাই পায় সেটা হারিয়ে জীবনে আর ঝুঁকি নিতে সাহস পায়না।
এই প্রশ্ন আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। ভালোবাসা আর ঘৃণা এক সাথে মনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনা।
প্রয়োগের ক্ষেত্রে নাটক টি মঞ্চ সফল একটি নাটক। নাটক সমাজের দর্পন।এই সময়ে সামাজিক ব্যাধিটি জলন্ত প্রশ্নমুখর।
পরিচালক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। পরান কাকা-পার্থসারথি ভট্টাচার্য, নার্স রূপা নন্দী, মেল নার্স রাজদীপ মজুমদার, রোগী পংকজ ভৌমিক, বিদ্যুৎ হোসেন, দীপংকর দাস, দুলু -প্রিয়াংকা দাস ডাকতার- শুভ্র পাল, গোবিন্দ দারোগা বিশ্বজিৎ ভৌমিক চরিত্র অনুযায়ী যথাযথ অভিনয় করেছেন। যামিনী চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা মজুমদার এবং মধু চরিত্রে উত্তম দাস সাবলীল অভিনয় করেছেন। এবং পুরো নাটক টির গতি টান টান ছিল। অন্যমনস্ক হতে দেয়নি এই মধু এবং যামিনী।
এই ধরনের নাটক যত বেশি অভিনীত হবে মানুষের চেতনায় ঘা মারা সম্ভব হবে।দবচেয়ে ভাল লেগেছে ধর্ষন বোঝাতে পরিচালক কে অবান্তর কিছু দৃশ্য সৃষ্টি করতে হয়নি।
মঞ্চ -পংকজ ভৌমিক, আবহ -রাজীব মোদক, আলো সঞ্জু দাস, পোষাক ও মেক আপ -রূপা নন্দী। নাটকের প্রয়োজন মত প্রত্যেক টি ক্ষেত্রে যথাযথ। পরিচালনা উত্তম দাস। পরিচালক তার কাজটি যত্ন সহকারে করেছেন।
আঞ্চলিকতা আমাদের উচ্চারনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, দু একটি চরিত্রের ক্ষেত্রে এই উচ্চারণ জনিত সমস্যা আছে। এটা চরিত্রগুলি যারা অভিনয় করেছেন তাদের ই শুধরে নিতে হবে।