একদিকে জন্ম দিন পালনের হিড়িক, অন্যদিকে বীরবিক্রম - এর স্বপ্ন মুখথুবড়ে পড়ার প্রহড় গুনছে
প্রদীপ চক্রবর্তী
একদা রাজন্য শাসিত এরাজ্যের মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য দেববর্মণের 113 তম জন্মজয়ন্তী আজ। করোনা জনিত কারনে সীমিত ভাবে এই দিবস পালন করা হয়েছে। সরকারী ভাবে এই দিন পালিত হয় বেনুবন বিহারে। রাজপরিবার কি ভাবে এই দিনটি পালন করছে তা ওরাই বলতে পারবে।ইতিহাস বলে বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য দেববর্মণ আধুনিক ত্রিপুরার রুপকার। যদিও তাঁর জন্মদিনে কোন স্হানিয় সংবাদপত্রে এক লাইনেরও কিছু বের হয়নি। দূর্ভাগ্য আর কাকে বলে।রাজধানী আগরতলাতো বটেই রাজ্যের যেখানেই যাওয়া যাবে সেখানেই বীরবিক্রম এর স্মতি জড়িয়ে আছে।সিঙ্গারবিল বিমানবন্দর থেকে শুরু করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার এসে এর নাম পরিবর্তন করে মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসাযোগ্য কর্ম কান্ড। এই নাম পরিবর্তনের ফলে দেশ বিদেশে ত্রিপুরার নাম অধিকতর ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।যদিও ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের নাম বিদেশে নানা ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একক প্রচেষ্টায় হউক বা বৃহৎ প্রচেষ্টায় হউক। আগরতলা বিমানবন্দরের ভূমিকা লঘূ করে দেখার কোন অবকাশ নেই।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গড়ে তোলা হয়েছিল সিঙ্গারবিল বিমানবন্দর।শুধু সিঙ্গারবিল নয়, খোয়াই, কমলপুর, কৈলাশহর বিমানবন্দরও তখনই গড়ে তোলা হয়। সামরিক প্রয়োজনতো বটেই যোগাযোগের জন্যও বিমানবন্দর স্হাপনের অন্যতম কারন। এক্ষেত্রে বীরবিক্রম এর নাম উল্লেখ করতেই হয়।বীরবিক্রমের অবদান উল্লেখ করতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। স্বল্প পরিসরে তার অবদান বিবৃত করাও বীরবিক্রম কে লঘু করে দেখানোর সামিল।তবু রেখাপাতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বীরবিক্রম এর রাজত্ব কালে আগরতলার বহুমুখী উন্নয়ন হয়েছিল। বীরবিক্রম আগরতলার জন্য বহুমুখী কর্ম পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এই যেমন বিদ্যাপত্তন। কলেজ টিলা এলাকাকে কেন্দ্র করে বিদ্যাপত্তনের রুপরেখা করা হয়। গড়ে তোলা হয় কলেজ। যার নাম এমবিবিকলেজ। ওখানে এখন তিনটি ডিগ্রী কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, আইন কলেজ রয়েছে।বিদ্যাপত্তনের চৌহদ্দি একে দিয়েছিলেন তিনি।বিশাল এলাকা। একদিকে জগহরিমুড়া, ধলেশ্বরের বৃহৎ অংশ, হাওড়া নদীর দক্ষিণ অংশ এবং আশ্রমচৌমুহনী। পরিকল্পনা ছিল এর মধ্যে থাকবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি। কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান নেই। বরং বিদ্যাপত্তনের জায়গার অধিকাংশ জবর দখল হয়ে গেছে।সরকারী ও বেসরকারী মদতে। অভিযোগ অর্থের বিনিময়ে জমির পরচা গোঁজা মিল দিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার ধলেশ্বর এলাকায় যত বাড়ীঘর রয়েছে একটিরও পরচা নেই। আইনত পরচা না থাকলে আইনগতভাবে জমির মালিক নয় জবরদখল কারী।প্রফেসর কলোনীতে যত বাড়ীঘর রয়েছে তাঁরা একজনও জমির মালিক নন। বেআইনি জবরদখল রোধে সরকার আগেও না এখনো কোন ব্যবস্হা গ্রহন করেনি।অথচ পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ এই কলেজ ক্যাম্পাস এমবিবি কলেজ। ওখানে রয়েছে বড় স্টেডিয়াম। কত ক্রিকেট হয়েছে জাতীয় স্তরের। এখন তা ইতিহাস।কলেজটিলা এখন অস্তিত্বের সংকটে।যদিও সম্প্রতি হয় কিছু কাজে হাত দেয়া হয়েছে। বহু আবাসিক অর্থাৎ কোয়াটার ছিল।ছিল প্রকৃতির খেলা। সবুজ হাসত। এখন সবুজ হারিয়ে যেতে বসেছে।পুরানো কোয়াটার গুলি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে বর্ন চোরাদের দল।কলেজ লেইক গুলি কোনভাবে অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। বিপ্লব কুমার দেব স্বপ্ন দেখেন অনেক কিছু। কিন্তু এদিকে তার নজর আছে কিনা বলা কঠিন। অথচ এটি তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে।
বহু জলা বেদখল হয়ে গেছে। এখনো হচ্ছে। পুকুরগুলো ও বেদখল। নিজের নামে করে অনেকে ভরাট করে প্লটে প্লটে চড়া দামে বিক্রি করেছে। আবার কেউ কেউ বাহারী ফ্ল্যাট বানিয়েছে। জবরদখল কারী দের মধ্যে এমন কজন রয়েছেন যারা শিক্ষক তা করেছেন।আবার ভোট এলে নানা দলের প্রার্থী হয়ে পয়সা কামিয়েছেন। এটা সবাই জানে।বিদ্যার নামে এমন অভিনব অবিদ্যার খেলা সবাই তা দেখে। দেখেও না দেখার ভান করে আছে।এবার আসা যাক পুরাতন রাজভবনে, উত্তর গেইট, জ্যাকসন গেইট প্রসঙ্গে।রাজভবনকে মিউজিয়াম হিসেবে গড়ে তোলা যেতেই পারে। কিন্তু হচ্ছে কোথায়? প্রধান ফটক হাঁ করে থাকে। গবাদিপশুর বিতরন যখন তখন। আরো কত কিছু হয় কে জানে!উওর গেটকে দৃষ্টি নন্দন করে তোলা যেতে পারে। হচ্ছে না। উওর গেইট থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত রাস্তার দূধারে ঘোড়াশাল ছিল। ঘোড়াশাল এখনো তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অথচ এটি সংস্কার করে সংরক্ষিত স্হান হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে। হচ্ছে কৈ? এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কবছরের মধ্যে এর অস্তিত্ব থাকবেই না। কেননা ইতিমধ্যেই জবর দখল শুরু হয়েছে।জ্যাকসন গেইট থেকে প্যারাডাইস, বটতলা রাস্তার দু'পাশে ছিল পথিকের বিশ্রাম, পথচলার রাস্তা।আজ সব জবর দখল। কে কাকে ঠেকাবে! সব অদ্ভুত ব্যাপার এই রাজ্যে।
রাজন্যযুগের স্হপতি, স্মৃতিগুলি একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে,হয়ে যাচ্ছে জবরদখল,অথচ ঐতিহাসিক স্মৃতিগুলি ধরে রাখা বা টিকিয়ে রাখার কোন প্রয়াস দেখাই যাচ্ছে না। রাজন্য আমলের মূল্যবান গাছগুলো তো সেই কবেই ইতিহাসে স্হান করে নিয়েছে।এগুলি পথিকদের যেমন ক্ষনিকের জন্য আশ্রয় দিত, তেমনি পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ছিল। উন্নয়নের নামে শুধু এরাজ্যেই নির্বিচারে গাছগাছালী কেটে ফেলা হয় অথচ অন্যত্র তা নেই।রাজন্যযুগের সব স্মৃতি যেমন অতীতের পাতায় যাওয়ার অপেক্ষায় তেমনি বীরবিক্রম মানিক্য বাহাদুর এর স্বপ্ন মুখথুবড়ে পড়ার প্রহড় গুনছে।আজ তো এসব নিয়েই ভাবনা চিন্তা করা উচিত।