আত্মনির্ভর ভারত জগতসভায় শ্রেষ্ঠ হবেই: বিবেকানন্দ
প্রদীপ চক্রবর্তী
স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমচন্দ্র ঘোষ।বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।উনার ভাষায় " তিনি স্বামিজীকে দেখেছেন।বহুবার কথাবার্তা হয়েছে।স্বামিজী তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।বারবার বলেছেন দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য।স্বামিজী যখন বাংলাদেশ সফরে যান তখনই তাঁর সাথে দেখা হয়েছে,বহু কথা হয়েছে।হেমচন্দ্রের ভাষায় স্বামিজী তাঁদের উদ্দীপিত করেছেন।
অগ্নিযুগের সেই বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ এমন কিছু কথা বলেছেন বা উক্তি করেছেন যা গভীর তাৎপর্য বহন করে।তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন,তাঁর সাক্ষাকার নিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠমিশনের মহারাজ স্বামী পূর্নাত্মানন্দ।একবার নয়,পাঁচ পাঁচবার।এই সাক্ষাৎকার বানীবদ্ধ রয়েছে।পূর্নাত্মানন্দ এখন রয়েছেন ঢাকায়।বাংলাদেশ মঠ মিশনের প্রেসিডেন্ট।
বলছিলাম বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের কথা।"স্বামী বিবেকানন্দ ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম" পুস্তকে হেমচন্দ্র ঘোষ একটি নিবন্ধে লিখেছেন "" "ঘরে বাইরে" ও "চার অধ্যায়" উপন্যাস স্বদেশী আন্দোলনের ভীষন ক্ষতি করেছে।"ঘরে বাইরে তে বিপ্লব আন্দোলনের প্রতিনিধি সন্দীপ একটি লম্পট। হেমচন্দ্র ঘোষ লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে অনেকে বলেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন মহান অনুপ্রেরনাদাতা।কিন্তু আমি মনে করি - না তা নয়। বিপ্লবপন্হীদের কারো কারো পদস্খলন হয়েছিল হয়তো। কিন্তু সেকি খুব অস্বাভাবিক?
হাজার হাজার লোক যেখানে যুক্ত সেখানে কিছু কিছু কুলাঙ্গার তো থাকবেই।বরং এটাই স্বাভাবিক। তাই বলেযে অসাধারণ আত্মত্যাগ,দেশপ্রেম ও সাহস দেখিয়েছেন সেটা তো মিথ্যে নয়।সেই দিকগুলিতো রবীন্দ্রনাথের চোখে পড়েনি।পড়েছে শুধু পঙ্কিল দিকটা। সন্দীপের মতো এক লম্পটকে উনি স্বদেশী আন্দোলনের প্রতিভূ হিসাবে অঙ্কিত করে আন্দোলনের প্রতি অত্যন্ত অসহিষ্ণূতার পরিচয় দিয়েছেন; তা করে রবীন্দ্রনাথ ঘোরতর অবিচার করেছেন হাজার হাজার অমর আত্মার শৌর্য ,বীর্য,আত্মত্যাগ এবং স্বদেশপ্রেমের প্রতি।
চার অধ্যায় উপন্যাসে ও বিপ্লববাদের একটি কালিমাময় চিত্র দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।এখানেও রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিহীন।
এ প্রসঙ্গে হেমচন্দ্র ঘোষ বলছেন" আমরা দেখেছি,পুলিশ স্বত:প্রনোদিত হয়ে কারাবন্দী বিপ্লবীদের সেলের মধ্যেঘড়ে বাইরে,চার অধ্যায় পড়ার জন্যে দিয়েছে।কিন্তু পথের দাবী দেয়া হয়নি।বরং রাজদ্রোহিতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পথের দাবী নিষিদ্ধ করা হলে শরৎচন্দ্র এর প্রতিবাদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ কে অনুরোধ করেছিলেন।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে উওর দিয়েছিলেন তা সহানুভূতিহীনতাই ।
অনেকে বলতেই পারেন রবীন্দ্রনাথ তো জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি বর্জন করেছিলেন ।তবে কেন তিনি উপাধি বর্জন করেছিলেন?
শরৎচন্দ্রের পথের দাবী কিন্তু এক অনন্য উপন্যাস।যা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দীপিত করেছিল।সব্যসাচী তারই প্রতীক। হেমচন্দ্র ঘোষের সাথে আলোচনা করেই শরৎচন্দ্র পথের দাবী লিখেছেন।
আমেরিকায় স্বামিজীর জয়জয়কার ভারতে অনুকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।এরমধ্যদিয়ে ভারতবর্ষ নিজেকে নুতনভাবে আবিষ্কার করে।
স্বামিজী ঢাকায় বলেছিলেন " ভারতের উপর দিয়ে বহু বিপর্যয়গিয়েছে।ভাযত বারবার আক্রান্তহয়েছে।কিন্তু তবু ভারত বেঁচে আছে। ভারতবর্ষ চিরকাল থাকবে।কারন ভারতের জীবনীশক্তি ধর্ম এবং আধ্যাতিকতা।আধ্যাত্মিকতা বিধৃত উপনিষদ,গীতা,মহাভারত ও রামায়নে।ঐ আধ্যাত্মিক সম্পদে ভারতবর্ষ একদিন বিশ্বজয় করবে।ভারত আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে।ভারত সে পথেই এগিয়ে চলেছে।অনাগত ভবিষ্যতকে বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব তরুন যুবদের।তার প্রাথমিক পদক্ষেপ ভারতকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্তি এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন। স্বামিজী আরো বললেন"And take it from me that India shall be free .No power on earth can resist this fact and i tell you ,that moment is not very far".
হেমচন্দ্র বলেছেন"স্বামিজীর নিজের মুখে শুনেছি ঠাকুর তাঁকেবলেছিলেন" মনে রাখিস ইংরেজই এদেশের সর্বনাশ করছে।"
স্বামিজী যা বলেছেন পরবর্তীতে তাই হয়েছে,ভবিষ্যত ও ও পথেই চলছে।আত্মনির্ভরতা সেই লক্ষেই।এই আত্মনির্ভরতার কথাই স্বামিজী বার বার বলেছেন।