পিএন্ডএনজি নিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর প্রবন্ধ

ধর্মেন্দ্র প্রধান

ধ্বংসাত্মক অস্ট্রেলিয়ান বুশফায়ারের ফলে ভয়ঙ্কর ভৌগলিক এবং কার্বন নিঃসরণকে ঘিরে আবারও তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এবং ঠিক কারণেই তাই হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা ০.৩ থেকে ১.৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মাঝারি পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত থাকলেও আমরা কেউই জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারি না। আমাদের অবদান সমষ্টিগত, তাই প্রাসঙ্গিক কারণে চেষ্টাও সমষ্টিগত হতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য ও পুনঃভারসাম্য শক্তির মিশ্রণের রোডম্যাপে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। তবে, আমাদের উন্নয়ন চক্রের এই পর্যায়ে ভারত জীবাশ্ম জ্বালানী সম্পূর্ণরূপে ছাড়বে এমন প্রত্যাশা করা অন্যায় হবে। ভারতবর্ষের মাথাপিছু নির্গমন আজ বিশ্বের গড় মাত্রার নীচে অর্থাৎ ১.৬ টন সিও২, যেখানে বিশ্বব্যাপী গড় ৪.৪ টন, আর বিশ্বব্যাপী মোট সিও২ নির্গমনের অংশটি প্রায় ৬.৪ শতাংশ। তা সত্ত্বেও, জ্বালানী উৎপাদন ডি-কার্বনাইজ করতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে পরিবর্তনের জন্য কমপক্ষে দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে।

সেই মত, আমরা ধারাবাহিকভাবে নীতিগত উদ্যোগ গ্রহণ করছি, নীতিমালা পুনর্নির্মাণ করছি এবং ভারতকে গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরবর্তী প্রজন্মের পরিকাঠামো তৈরি করছি৷ শুরুতে ভারতের প্রাথমিক জ্বালানী মিশ্রণে গ্যাসের অংশীদারিত্বকে বর্তমান ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদী কর্তৃক নির্দেশিত লক্ষ্যমাত্রাকে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে। যেমন গ্যাস-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে কিছু ঘটনা ও পরিসংখ্যানের মত বিষয় সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরা হয়েছে৷

প্রাথমিক শক্তির ঝুড়িতে বিশ্বের গড় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাগ প্রায় ২৪ শতাংশ। একমাত্র ভারতীয় রাজ্য হলো গুজরাট যেখানে বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় বেশি পরিমাণে মিশ্রিত হয়, যা প্রায় ২৫ শতাংশ৷

গত পাঁচ বছরে আমাদের গ্যাস ব্যবহারের ইচ্ছা অনুধাবন করে গ্লোবাল গ্যাস মার্কেটের মানদণ্ডের সাথে সংযুক্ত করে ২০১৪ সালে দেশীয় গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থাকে রূপান্তর করেছি, অনুসন্ধান ও উৎপাদন ব্যবস্থায় বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে ২০১৬ সাল থেকে বিপণন ও মূল্য নির্ধারণের স্বাধীনতা দিয়েছি, রাজস্ববৃদ্ধি থেকে লক্ষ্যমাত্রার মোড় ঘুরিয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বাধীন ভাবে ব্লক পুরষ্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছি, নতুন টার্মিনাল তৈরি করে বিদ্যমান সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এলএনজি আমদানি ক্ষমতা বাড়িয়েছি এবং দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশগুলিকে গ্যাস গ্রিডের সাথে ২৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্প এবং ১৬৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর-পূর্ব অঞ্চল গ্যাস গ্রিড প্রকল্পে যুক্ত করছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্যাসকে সহজলভ্য করতে এই প্রকল্পগুলিতে প্রায় ১০,৭১৯ কোটি টাকার মূলধন সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালের বাজেটের বক্তৃতায় জোর দেওয়া হয়েছে আগামী বছরগুলিতে কচ্ছ থেকে কোহিমা ও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীকে জাতীয় গ্যাস গ্রিড পাইপলাইনে সংযুক্ত করার কাজ সম্পন্ন করা হবে৷

আমরা ৪০০ টিরও বেশি জেলা এবং জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশকে শহর এলাকাকে সিটি গ্যাস বিতরণ (সিজিডি) নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে যুক্ত করতে জোর দিয়েছি। সিজিডির মাধ্যমে বাড়িঘরে, শিল্প ও বাণিজ্যিক ইউনিটের পাশাপাশি পরিবহন জ্বালানীতে (যেমন পিএনজি) স্বচ্ছ রান্না জ্বালানী সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী দশকে এই খাতে ১২০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷

প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি জৈব বর্জ্য থেকে অর্থনৈতিক মূল্য আহরণের করতে কমপ্রেসড বায়ো গ্যাস এবং বায়ো ম্যানুয়র তৈরি করার জন্য "সাসটেইনেবল অল্টারনেটিভ টোওয়ার্ডস এফরডেভল ট্র্যান্সপোর্টেশন" (এসএটিএটি) নামে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরজন্য পৌরসভার কঠিন বর্জ্য, চিনি শিল্পের বর্জ্য (প্রেস কাদা) এবং কৃষি অবশিষ্টাংশের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে৷ আমাদের তেল ও গ্যাস পিএসইউগুলি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে সিবিজিকে স্থির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রথম ১০ বছরের ছাড়ের জন্য তাদের ব্যবহারের প্রচারে এগিয়ে এসেছে। দেশে বায়োমাসের প্রাচুর্য বিবেচনা করে, সিবিজি স্বয়ংচালিত, শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে আসন্ন বছরগুলিতে সিএনজির পরিপূরক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে সিবিজি প্ল্যান্টগুলি প্রাথমিকভাবে স্বাধীন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে স্থাপন করা উচিত। এই প্লান্টগুলিতে উৎপাদিত সিবিজি সবুজ পরিবহনের জ্বালানী বিকল্প হিসাবে বিপণনের জন্য সিলিন্ডারগুলির ক্যাসকেডগুলির মাধ্যমে ওএমসির জ্বালানী স্টেশন নেটওয়ার্কগুলিতে স্থানান্তরিত করা হবে।

সম্ভাব্য বিকল্প, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশ-বান্ধব জীবাশ্ম জ্বালানী হিসাবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) মাঝারি ও ভারী যানবাহনের জন্য নতুন ভাবে উঠে আসছে৷ দেশে এলএনজি-ভিত্তিক পরিবহণ বাস্তুতন্ত্রের বিকাশের সূচনা করতে সোনালী চতুর্ভুজ বরাবর এলএনজি ফিলিং স্টেশন তৈরি করার জন্য জোর দেওয়া হয়েছে। পরিবহন খাতে এলএনজির ব্যবহার আমদানি বিলও হ্রাস করবে।

গ্যাস পরিকাঠামো উন্নয়নের এই উদ্যোগ প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করেছে এবং সেইসাথে গ্যাস শৃঙ্খল জুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করবে৷ ভারতীয় বাজারে দক্ষ মূল্য আবিষ্কারের জন্য নিখরচায় গ্যাস ট্রেডিং এক্সচেঞ্জ স্থাপনের মাধ্যমে একটি বাজার তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, পাইপলাইন শুল্ক কাঠামো তৈরি করে এবং জিএসটির আওতায় প্রাকৃতিক গ্যাসকে অন্তর্ভুক্ত করে কর শৃঙ্খলা রক্ষা করাও গ্যাসভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার মূল চাবিকাঠি হবে।

আমাদের চাহিদা মেটাতে আমরা গ্যাসের উৎসে ভৌগলিকীকরণে বৈচিত্র্য আনতে চলেছি। ভারত কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজি আমদানি করে। তবে এলএনজির বর্তমান দাম অপ্রত্যাশিত হওয়া সত্বেও বিদ্যুৎ খাত এবং ইস্পাত শিল্পের মতো এমন কয়েকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহার বাধ্যতামূলক হিসাবে এই গ্যাসকে বেছে নিতে হচ্ছে৷

সুতরাং, গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলিকে বিদ্যমান দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি চুক্তিগুলি বিদ্যমান বাজারের অবস্থার সাথে সাযূজ্য রেখে পুনরায় স্বাক্ষর করার মধ্যে নিখুঁত ব্যবসায়িক ধারণা রয়েছে৷ আমাদের সবচেয়ে বড় লাভ হ'ল আমাদের বাজারের আকার এবং এখানে শক্তির ক্ষুধা বাড়ছেই৷


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
মন্তব্যের তারিখ (Posted On)মন্তব্যকারির নাম (Name)মন্তব্য (Comment)
09.02.2020Sudip Sinhaভালো লাগলো স্যার।