ছাত্রজীবনে খেলার প্রয়োজনীয়তা
ব্রতজ রায়
February 15, 2025
"ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ।"
'তপঃ' কথার অর্থ হলো 'তপস্যা' । অর্থাৎ, ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা, আর পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করা দরকার। কারন তপস্যা মনের একাগ্রতাকে বৃদ্ধি করে, আরে এই একাগ্রতা একজন শিক্ষার্থীর বিকাশে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
আর যাকে আমরা সহজ ভাষায় খেলাধুলা বলি তার প্রকৃত স্বরূপ জেনে নেওয়া আমাদের অবশ্যই দরকার। এখানে খেলার সাথে ধুলা শব্দটি যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ খেলার সাথে রয়েছে ধুলার সংস্পর্শ। প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে খােলা আকাশের নীচে মুক্ত বাতাসে যে খেলা হয় তা-ই খেলাধুলা।
তবে পড়াশুনার সাথে সাথে শরীরচর্চা ও খেলাধূলা করারও বিশেষ প্রয়োজন আছে। কারণ দুর্বল শরীরে কখনো ভালো ভাবে পড়াশুনা হয় না। তাই স্বামীজী গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
খেলাধূলা আমাদের মনকে সতেজ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন কাজকর্মের অবসানে যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন, পড়াশোনার ক্ষেত্রেও তাই। একঘেয়ে পড়াশোনা ক্লান্তি যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আস অবসাদ। আর ঠিক তখনই ছাত্রজীবনে প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে একমাত্র খেলাধূলা। খেলাধূলার জন্য চাই সবুজ মাঠ। কিন্তু বর্তমান সময়ে আর এই সবুজ মাঠের খুব অভাব দেখা দিচ্ছে। অভাব থাকা সত্ত্বেও স্কুলে বা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন যোগাসনের মধ্য দিয়ে শরীরচর্চা করানো একান্ত প্রয়োজন। সুস্থ শরীরের অধিকারী একজন ছাত্র বা ছাত্রীই পারে সুন্দর কিছু করতে ও লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী হতে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দৌড়ানো বা বিভিন্ন ধরনের খেলাধূলা করলে কেউ অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। এছাড়া মনে কোনো দুষ্টু বুদ্ধি বা কুচিন্তাও আসতে পারবে না ।
খেলাধূলা মূলত দুই প্রকারের। একটা হল ইনডোর গেম আর একটা হল আউটডোর গেম। ঘরে বসে যে খেলা গুলো করা হয় যেমন, লুডো, দাবা, তাস ইত্যাদিকে বলা হয় ইনডোর গেম। আর যেগুলো বাড়ির বাহিরে মাঠে খেলা হয় যেমন- ফুটবল, ভলিবল, কবাডি, ক্রিকেট ইত্যাদিকে বলা হয় আউটডোর গেম।
খেলাধূলা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে আনন্দ দেয় তা নয়, চরিত্রের বিকাশও ঘটায়। খেলাধূলা থেকে নিয়ম-শৃঙ্খলার বোধ জাগে যা চরিত্র গঠনে বিশেষ প্রয়োজনীয়। দলকে নেতৃত্ব দেওয়া, দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মানসিকতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বোধ খেলাধূলা থেকেই জন্ম নেয়। এই সব মানবিক মূল্যবোধ একজন প্রকৃত নাগরিকের একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া খেলাধূলায় হার ও জিত অবশ্যম্ভাবী, কখনও একপক্ষ জয়লাভ করে আর অন্যপক্ষ হারে। এই সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারণা সহজে গ্রহণ করার শিক্ষা পাওয়া যায় খেলাধুলা থেকে। এই শিক্ষা পরবর্তী জীবনের পক্ষে অনেক বেশি জরুরি। সাফল্য ও ব্যর্থতা উপায়কে মেনে নিয়ে জীবনের মূল শিক্ষা দেয় খেলাধুলা।
সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা ও শরীরচর্চা প্রয়োজন এ কথা আমরা সবাই স্বীকার করি। খেলাধূলার মাধ্যমে শরীর সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও ভাতৃত্ববোধের জন্ম হয়। এইসব গুণের বিকাশের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় একজন প্রকৃত মানুষ। আধুনিক সমাজে তাই খেলাধূলার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকেও এ বিষয়ে আরো বেশি নজর দিতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই খেলাধুলার উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এটা একরূপ নিঃসন্দেহ। আমাদের কর্মমুখর জীবনে উৎসাহ আনন্দ লাভের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন হয়। জীবনের সাফল্য লাভের যে লক্ষ্য আমাদের আছে, তা সাধন করতে হলে খেলাধুলাকে জীবন থেকে বর্জন করা চলবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে কোন জিনিসই অধিক মাত্রায় করা উচিত নয়। একজন শিক্ষার্থী সবচেয়ে বড় কর্তব্য হলো পড়াশোনা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করা উচিত। তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে অধিক পরিমাণে খেলা যেন আমাদের পড়াশুনার পথে বাধা সৃষ্টি না করে। যারা পেশা হিসেবে এদিকে গ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি পৃথক। কিন্তু যারা শিক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী হিসেবে খেলাধুলা কি গ্রহণ করতে হবে। খেলাধুলা জীবনের লক্ষ্য নয়, এটা আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপলক্ষ মাত্র, একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
আরও পড়ুন...