এটিজিডিএ -এর ফেসবুক পেজে প্রশ্ন অকারনে হেনস্তা কেন?
বিশেষ প্রতিনিধি
ডাক্তার নিগ্রহ ও বরখাস্ত সম্পর্কে আজ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে চিকিৎসক মহল। সাংবাদিক সম্মেলন করে আন্দোলন করার হুমকি প্রদান ছাড়াও এটিজিডিএ তাদের ফেসবুক পেজে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা ড়য়েছে। কি বলা হয়েছে এটিজিডিএ -এর ফেসবুক পেজে নীচে তা হুবহু তোলে দেওয়া হলো তাদের ফেসবুক পেজ থেকে:
কার সাথে যুদ্ধ করব? করোনা ভাইরাসের সাথে না অকারণ হেনস্থাকারীদের সাথে?
ডাক্তাররা কি সমাজের শত্রু? ডাক্তাররা থাকায় খুব অসুবিধা হচ্ছে সমাজে? তবে ত্রিপুরার প্রত্যেকটি ডাক্তারকে বরখাস্ত করে দিলেই হয়!! সব সমস্যার নিরসন!!
আজকে AGMC & GBP হাসপাতালের এসিটেন্ট প্রফেসার ডাঃ উত্তম ভট্টাচার্যকে সাস্পেন্ড করা হয়েছে। এই ডাক্তারবাবু ভগত সিং কোভিড সেন্টারে করোনা পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার দায়ীত্বে ছিলেন। যে কোভিড কেয়ার সেন্টারের একশ মিটার এরিয়ার মধ্যে প্রবেশ করতে ভয় পান প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্তা,- ভাবেন করোনা ভাইরাস উনাকে আক্রমন করে মেরে ফেলতে পারে,- সেই কোভিড কেয়ার সেন্টারে পজিটিভ রোগীদের মধ্যেই ডাঃ উত্তম ভট্টাচার্য সাতদিন থেকে ডিউটি করছিলেন। না,- কোন কারন উল্লেখ করা হয়নি সেই সাস্পেনসন অর্ডারে। তিনি রোগীদের চিকিৎসা কাজে কোনরূপ ভুল বা গাফিলতি ও করেননি৷
তবে বিভিন্ন লোকমুখে জানা গেছে,- গত কয়েকদিন পূর্বে আগরতলার একজন জনপ্রতিনিধি সেই ভগৎ সিং কোভিড সেন্টারে প্রবেশ করে রোগীদের ফল বিতরণ করেছিলেন। সেই ঘটনাকালে ডাঃ ভট্টাচার্য সেখানে ডিউটিরত ছিলেন। ডাঃ ভট্টাচার্য যেহেতু সেই জনপ্রতিনিধিকে বাধা দেননি, বা উনাকে পিপিই কিট দিতে বাধ্য হয়েছিলেন,- তাই শাস্তিস্বরূপ ডাক্তারবাবুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আমরা এই অনায্য সাস্পেনশন অর্ডারে হতবাক,- এবং সেই সাথে মর্মাহত। ডাক্তারের কাজ শুধু রোগীর চিকিৎসা করা। ভগত সিং কোভিড কেয়ার সেন্টারের বাকী সব দায়ীত্ব,- খাদ্য, জল সরবরাহ, পরস্কার পরিচ্ছনতা, সিকিউরিটি, লাইট সবকিছুর দায়ীত্ব বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যাক্তিদের উপর দেওয়া আছে। তবে কেন সবকিছুর জন্য ডাক্তারকেই দায়ী করা হবে? কেন সেই ডাক্তারকে বরখাস্ত করা হবে?? পুলিশের দায়িত্ব কি ডাক্তার পালন করবে?
ডাক্তারকে হেনস্থা করে কিছু প্রশাসনিক কর্তাব্যাক্তিরা খুব যেন আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। গত ২রা অগাস্ট উদয়পুর শহরে এক অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারবাবুর অবৈধ গর্ভপাতের ক্লিনিক পরিদর্শন করতে যান সেখানকার ডি.এম সাহেব। খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ!! সাথে নিয়ে যান উদয়পুর ত্রিপুরা সুন্দরী হাসপাতালের এক মহিলা ডাক্তারকে,- যিনি অল্প কিছুদিন হল সরকারি চাকরিতে জয়েন করেছেন,- যার প্রশাসনিক কোন অভিজ্ঞতা প্রায় নেই বল্লেই চলে। সেখানে গিয়ে ডি.এম সাহেব খুব হম্বিতম্বি করেন, খুব বীরত্ব দেখালেন। মিডিয়া এবং পাব্লিকের সামনে,- সাথে নিয়ে যাওয়া সেই মহিলা ডাক্তার, ডাঃ নিষ্ঠা দাসকে প্রচন্ড অপমানজনকভাবে ধমক দিয়ে গালিগালাজ করেন। খুব মেজাজ টেজাজ দেখালেন সেই অল্প বয়সী মহিলা ডাক্তারের উপর। সরকারি দায়ীত্বের নমুনা দেখাতে সাথে কিছু মিডিয়ার লোকও নিয়ে গেছিলেন তিনি। সেই মিডিয়ার প্রচারিত ভিডিও তেই উনার সেই অভব্য ব্যাবহার প্রকাশিত হয়েছে। উনি নিজেকে খুব তড়িৎকর্মা অফিসার হিসাবে প্রমান করে সেই মহিলা ডাক্তারকে ধমক দিয়ে বেশ আত্মপ্রসাদ লাভ করলেন।
কিন্তু, স্বাভাবিক ভাবে কয়েকটা প্রশ্ন তো আসেই। যে অবৈধ গর্ভপাতের ক্লিনিক তিনি সেদিন বন্ধ করতে গিয়েছিলেন সেই ক্লিনিক তো বেশ অনেক বৎসর যাবত চলে আসছে উদয়পুর শহরে। ডি.এম সাহেব এবং তার পুলিশ এতদিন যাবত জানতেন না এই অবৈধ ক্লিনিকের কথা? শহরের মধ্যিখানে এই ক্লিনিক রমরমা ব্যাবসা করে আসছে,- অথচ প্রশাসন জানেনা,- তা কি হয়? যদি না জেনে থাকেন তবে তা প্রশাসনের ব্যার্থতা। আর যদি জেনে ও এতগুলি বৎসর প্রশাসন তা বন্ধ করতে উদ্যোগ না নিয়ে থাকে,চুপচাপ বসে থাকে - তবে তো নানা সন্দেহ আসে মনের ভিতর।
ডি.এম সাহেবের সাথে পরিদর্শনে তো CMO বা SDMO যাওয়ার কথা!! উনি সাথে করে একজন নতুন, অনভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারকে কেন নিলেন? কেন তিনি CMO অথবা SDMO কে আসতে বাধ্য করেননি? সরকারি ডিউটি পালন করার সময় মিডিয়া নিয়ে যাওয়ার কি যৌক্তিকতা? সেই মহিলা ডাক্তার যদি সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কোন ভুল করে থাকে,- তবে তিনি আইন অনুযায়ী সরকারী নিয়মের মধ্যে থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতেই পারতেন। মিডিয়ার সামনে সেই মহিলা ডাক্তারকে বাজে ভাবে গালিগালাজ করে সামাজিক ভাবে হেনস্থা করার অধিকার উনাকে কে দিল?
ক্ষমতার চেয়ারে বসে অহংকার আর দম্ভের বশে যা খুশী তা করলে, - বেশীদিন তো চুপ থাকা যায় না!!
যদি ডাক্তার সাস্পেনশন করতে এত উৎসাহ,- তবে সব ডাক্তারকে সাস্পেন্ড করে দিলেই হয়!! আরো বেশী মজা পাওয়া যাবে৷ বেশ একটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যাবে!! আপনারা কত্ত বেশী ক্ষমতাবান, - তা সকলে বেশ ভাল করেই বুঝতে পারবে।